প্রিয় নীলেশ, আপনি তো খুব লিখতে ভালোবাসেন,
তো একটা বোকামেয়ের গল্প লিখবেন?
সেই মেয়েটি সারাটাজীবন একটা পাথরকে ভালোবেসেছে।
সেই পাথর মেয়েটিকে বারবার তাড়িয়ে দেয়…
তবু মেয়েটি তার কাছে থাকতে চায়, তার যত্ন নিতে চায়, তার সাথে কথা বলতে চায়…
ওর কথা লেখার সময় আপনার মনে মেয়েটি ভর করুক…
আপনি ওর দুঃখ বুঝুন, ওর যন্ত্রণা বুঝুন…
এরপর, ইচ্ছে হলে মেয়েটিকে আপনার কলম দিয়ে
নাহয় খুব করে বকে দেবেন, নীলেশ!
ওকে দেখে সবাই শিখুক, বুঝুক,
ভালোবাসলে এতটা বোকা না হলেও হয়।
আপনার গল্পের শেষে মেয়েটিকে অনেক কাঁদাবেন।
যেন কাঁদতে কাঁদতে ওর দুচোখ অন্ধ হয়ে যায়…
ওকে দেখার পর এই পৃথিবীতে আর কেউ যেন
এমন আন্তরিক প্রেমিকা না হয়।
বোকা মেয়েগুলির প্রেমে মনের চাইতে
ছলনা অনেক বেশি থাকুক, নীলেশ!
আপনি চুপ করে আছেন কেন?
লিখবেন না? আপনার কলম সায় দিচ্ছে না?
আপনি লিখুন! লিখে ফেলতে আপনি পারেন, আমি জানি।
নীলেশ, আরও কিছু প্রণাম এসে পড়ুক আপনার পায়ে…
আরও কিছু নারী আপনার জন্য প্রার্থনা করুক।
একটা কথা। মাথায় রাখবেন,
জীবনের কোনও একটা পর্যায়ে আপনি একসময় জানবেন,
আপনি অনেক সম্মান পেয়েছেন,
অনেক নামডাক, কুড়িয়েছেন তা-ও,
বিশুদ্ধ যে প্রেম, তাকে বানিয়েছেন এই জীবনের পরাকাষ্ঠা,
তবু অতটা কল্পনা কিংবা মেধা থাকা সত্ত্বেও আপনি এখনও,
প্রেম কী, তা-ই বুঝলেন না!
আমি জানি, নীলেশ, আপনি এখন হুট্ করে বলে ফেলবেন,
আমি ভীষণ জাজমেন্টাল, আমি একটা যা-তা, আমি আরও অনেক কিছুই…
বললে বলুন। আমি কেবল শুনব, আর নিরুত্তর থাকব।
এই মূর্খের কথাগুলি আজকের তারিখ দিয়ে ডায়রিতে লিখে রাখুন, নীলেশ।
আজ থেকে বছর দশেক পর, কিংবা আরও পরে,
একদিন নিশ্চয়ই জানবেন, আমি ভুল ছিলাম না,
আপনার কিছু ভুল হয়েছিল, আপনি কখনও তা বুঝতে চাননি।
সেদিন এই হতভাগিনীকে আপনার দেওয়া জাজমেন্টাল উপাধি থেকে
একটু মুক্ত করে দেবেন…বেচারিকে একটু নিঃশ্বাস নিতে দেবেন!
আপনার মনে থাকবে তো, নীলেশবাবু?
সেদিন, আমি যদি বেঁচেও না থাকি, আমার আরাধ্য নিশ্চয়ই
এই মুক্তির খবর আমার কানে পৌঁছে দেবেন।
সেদিন আমার আনন্দের দিন, বড়ো খুশির দিন, স্বীকৃতির দিন।
আপনি লিখছেন, আপনার অনেক পাঠক আছে।
ওরা কেউ আপনাকে ভালোবাসে না, তাই বোঝে না।
ওরা আপনাকে কিছুই বলে না, কেননা ওদের ভাবনায় আপনি নেই।
ওরা আপনার কবিতা বোঝে, আপনাকে নয়, নীলেশ!
ওরা আপনাকে হাততালিতে রাখে, কখনও জীবনে রাখে না।
নীলেশ, আমি চাই, আপনি একদিন সত্যটা বুঝুন।
আমি আপনাকে আমার প্রার্থনাতে রাখি…রাখব শেষদিন পর্যন্ত।
মিথ্যে জেনে ভালোথাকার চাইতে সত্যটা বুঝে মন্দথাকা অনেক ভালো।
আমি জানি, সত্য এসে সামনে দাঁড়ালেও আপনি ঠিক সামলে নেবেন।
সত্যটা জানুন, নীলেশ! আপনার চোখকে নয়, হৃদয়কে জিজ্ঞেস করে দেখুন।
তার পায়ের কাছে বসে মাথানত করে শুনুন, সে কখনও মিথ্যে বলে না।