প্রাপ্তমনস্কদের জন্য

 এক।
(দুপুরের আগেআগে মুভিটা দেখেই ফোন দিলাম। উদ্দেশ্য, আগের রাতের রাগ ভাঙানো।)
: আচ্ছা, আপনি ‘শাপমোচন’ দেখেছেন? উত্তম-সুচিত্রার?
: জানি না।
: না জানার কী আছে? দেখেছেন কি না, বলুন।
(উত্তর নেই।)
: কী হলো? বলবেন না? কালকের কথাটা নিয়ে এখনো রেগে আছেন?
: আপনার সাথে রাগ করা আর একটা গাছের সাথে রাগ করা একই কথা। আমি গাছের সাথে রাগ করি না।
(মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো। ধরেই নিয়েছিলাম, মেয়েটার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার দৌড় বেশ ভালো হলেও বাংলার দৌড় বেশিদূর না। ইঞ্জিনিয়ারিং-পড়া খুব কম মেয়েরই ল্যাঙগুয়েজ সেন্স ভাল। ভাবলাম, রিস্ক একটা নিয়েই নিই। কী আছে আর জীবনে! এরকম প্র্যাক্টিক্যাল ফাজলামো করার সুযোগ তো আর সবসময় আসে না!)
: যাক্ বাবা, বাঁচা গেলো! আপনার আর কোনও রাগ নেই। তার মানে, আপনার রাগমোচন হয়ে গেছে। রাইট?
: ইসস্! মোটেও না। রাগমোচন এখনও পুরোপুরি হয়নি, বাকি আছে।
(ভাবলাম, এই রে, সেরেছে! মেয়ে জানে নাকি ওই শব্দটার মানে! এখন কী না কী বলে বসবে!)
ভয়ে-ভয়ে বললাম: তা, কী করলে ম্যাডামের রাগমোচন হবে?
: (কিছুটা আহ্লাদি আবদারের ঢঙে) মোভেনপিক আইসক্রিম খাওয়াতে হবে। নাহলে কিছুতেই রাগ কমবে না!
: ওকে, নো প্রবলেম! আজকে বিকালেই খাওয়াবো! এরপর রাগমোচন হবে তো?!
: (বেশ অভিমানী সুরে) ....... হুঁ।
(ফিলিং . . . . . . . সাধু, সাধু! বৃষ্টি আসিবার পূর্বেই ঝড় থামিয়া গেলো।)
মনের সুখে মুজতবার সাথে সুর মিলিয়ে মনেমনে গাইলাম . . . . . . .
রসের আইসক্রিম, এতো রস তুমি কেনো ধরেছিলে হায়!
বেআকুব মেয়ে যুদ্ধ ভুলিয়া লুটাইলো তব পায়।

দুই।
প্রথম দর্শনেই তাহাকে অখণ্ড মনোযোগের সহিত পর্যবেক্ষণে সানুরাগ হইলাম এবং কিয়ৎক্ষণ বাদে সন্ধুক্ষিত মন এই আপাত মীমাংসায় উপনীত হইলো যে উহাকে আমর্শনে সুখানুভূতির আরো উতরোত্তর বৃদ্ধি ঘটিতে পারে। উহাকে নিকটে টানিয়া লইলাম, অতঃপর উহার সমস্ত শরীর স্বীয় হস্তচালনায় সুনিবিড় সংবাহন করিতে প্রবৃত্ত হইলাম। তাহাতে অন্তর্বাহ উত্তেজনা বাড়িলো বৈ কমিলো না। মনোদৈহিক শিহরণের অবভাসে মনস্থির করিলাম, উহাকে অনতিবিলম্বে নিরাভরণ করিয়া অধিকতর স্পর্শসুখরত হইবো। ধীরেধীরে উহাকে দিগ্বাস করিলাম এবং সুখের বিষয়, অনম্বর হইতে উহার কোনওরূপ ওজর দেখিলাম না। অতঃপর উহার সকল গোপন রন্ধ্র আবিষ্কার করিতে-করিতে অগ্রসরমান হইতে লাগিলাম। সাধিত্রশৃঙ্গারকৌশলে আমার পূর্ব অনভিজ্ঞতাহেতু কীসে উহার ইন্দ্রিয়সমূহ চূড়ান্তোপগমে জাগিয়া উঠিয়া উন্মাদিত হয়, তাহা অজ্ঞাত ছিলো। ক্রমেই স্পষ্ট হইলো, উহার আকস্মিক রাগবিস্ফারণ হইয়াছে। বুঝিলাম, রাগমোচন ব্যতীত উহার পুলকিত শীৎকার সুদূরপরাহতই থাকিবে। এই উপলব্ধির উত্তরভাগে যথার্থ প্রকরণে উহার মৈথুনোত্তর নিধুবনে এইরূপ রমণে পূর্ববীতস্পৃহ আমার এই প্রতীতির অভাব্য আবির্ভাব হইলো: স্মার্টফোনটা আরও আগেই কেনা দরকার ছিল!

তিন।
আজ আমি একি দেখলাম!! শেড ল্যাম্পের আলোআঁধারি খেলায় অনঙ্গের নির্মম আকস্মিক আবির্ভাব! উফফ্...!!! কী বঞ্চনা! কী বেদনা! কী দহন! অসহ্য ঈর্ষা!!!
আজ যেনো ওর সমস্ত শরীর জেগে উঠেছে ভাবী রাগমোচনের সম্ভাবনায়! ভেতরের সবটুকু শারীরিক উষ্ণতা-শিহরণ স্পষ্ট চোখের ইশারায়, চাহনিতে। ক্ষণেক্ষণে শরীরটা কেঁপেকেঁপে উঠছে। দেহের ছন্দোবদ্ধ রন্ধ্রেরন্ধ্রে জেগে-ওঠা সুস্পষ্ট কামনা। গোলাপি ঠোঁট দুটোতে আজ কী এক আশ্চর্য মুহূর্তের যাদুতে লজ্জার শেষ বাঁধটুকুও অবশিষ্ট নেই! দেখলাম, ঠোঁটযুগলের ছান্দিক কাঁপুনিতে প্রেমরসের ধারায় মিলিয়ে যাচ্ছে কামনার্ত উদ্গিরণে-শিহরণে বন্ধ হয়ে-যাওয়া মায়াবী চোখজোড়ার এলোমেলো করে দেয়া অভিব্যক্তি! সেই অপরূপা তার মুখের ভেতরে যেন সবকিছুই মিশিয়ে ফেলতে চাইছে পাগলের মতো ঠোঁটযুগলের নিপুণ চালনায়। জিভ ঠোঁট দাঁত নিষ্ঠীবন সবকিছু মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! এই অনন্ত তৃষ্ণার যেন কিছুতেই সমাপ্তি না ঘটে, উর্বশী মনেপ্রাণে এইটুকুই চাইছে যেন বারবার। প্রগাঢ় চুম্বনের নেশায় পেয়ে বসেছে আজকের এই মোহিনীকে! চুম্বনে-চুম্বনে তরুণী কী এক তপ্ত আগুনে সকল শরীরী জ্বালা নিভাতে আত্মাহুতি দিয়েই চলেছে মুহুর্মুহু। সে আজ সবটুকু পুরোপুরি না নিয়ে আর না দিয়ে কিছুতেই ছাড়বে না। তার সমস্ত শরীরমন জুড়ে জেগে ওঠা হাজার বছরের পুরনো চিরন্তন ঝড় আজ আর থামবে না বোধ হয়। ঘড়ির কাঁটা থেমে যায়নি, থমকে গেছে যেন। আজকের সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত শেষ হয়ে ভোর হলেও সবকটা গানের পাখি গান ভুল মেরে বসে থাকবে! রোদের আলতো ছোঁয়ায়ও এই নিবিড় চুম্বনের খেলা ফুরোবে না। বৃষ্টি হোক, তুফান বয়ে যাক, সপ্তসমুদ্র উদ্বেল হোক; লীলা বেড়েই যাবে শুধু। শীতের পর বসন্ত আসুক, বসন্তের পরে গ্রীষ্ম, গ্রীষ্মের পরে বর্ষা, বর্ষার পরে আবার শীত---যা-ই আসুক, যাক; এই মায়াবী চারুলতার কিছুই এসে যায় না ওতে; এরই মাঝে শরৎ-হেমন্ত পর্যন্ত মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে! হায়! ঋতুবদলেরও অসহায় শীতল নিঃস্পৃহতা! নারীর শরীরের আদিম তৃষ্ণা জেগে উঠলে চুম্বনতৃষা যে কতটা নেশা জাগায়, উন্মাতাল করে দেয়, আজ তা লুকিয়ে-লুকিয়ে দেখলাম, অনুভব করলাম কোন এক দুর্জ্ঞেয় কম্পনে। তন্বীর গোলাপী সরু ঠোঁটদুটো পেরিয়ে যখন জিভের ডগার শরীর-জাগানো আর্দ্র কামনাস্পর্শ ছান্দিক লয়ে ওর নিজের চুল কপাল কপোল চিবুক ঘাড় পেরিয়ে নিম্নগামী, তখন রোমাঞ্চে যেনো ফড়িঙের ঘন শিহরণ ওর দেহে জেগে উঠতে দেখলাম; আহহ্! ওর দেহপল্লবের কামনার্ত দোলায় আর চোখের তারার উন্মাতাল নৃত্যশৈলীতে আজকের মুগ্ধ সন্ধেটাও দুলছিল। সত্যিসত্যিই!!
হে ঈর্ষা জাগানিয়া আইসক্রিম, তোমার আইসক্রিমজীবন ধন্য! হে ঈশ্বর! যদি এই জন্মে এতোটুকুও পুণ্য করে থাকি, পরজন্মে আমাকে আইসক্রিম করে পাঠিয়ো। ক্ষণিকের ছিটেফোঁটা আয়ুতেও অনন্তকালের সুখে জীবন কাটানোতেই সুখ! বিষাদঘেরা অনন্ত আয়ুর কী দাম, বলো?