ডেটলাইন ২৫ জানুয়ারি ২০১৫ একই টবে পাশাপাশি দুটি অর্কিডের গাছ ঝুলছে। একটি ঠায় দাঁড়িয়ে, অপরটি বাঁকানো। বাঁকানোটি ধনুকের মতন করে সোজাটিকে দুই প্রান্তে ছুঁয়ে ঘিরে আছে। আকৃতিটা দেখাচ্ছে ইংরেজি ‘ডি’-এর মতো। মাঝখানের ফাঁকটায় চোখ রেখে শিশিরে-ভেজা ৬টা বেগুনি অর্কিড পেরিয়ে ওই দূরের পাম ট্রি’র ঘুমভাঙা দেখতে দেখতে ৫ নম্বর ডরমিটরির সামনের করিডোরে শুক্লা পঞ্চমীর ভোর শুরু হলো। গত বছর সরস্বতী পুজোর দিনে এই ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম: “সরস্বতী পুজো হয় ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ঠিক আগে আগে৷ ঈশ্বরের কী লীলা, কী ‘ইশারা’! এই পুজোয় অনেকেই ভবিষ্যৎ লক্ষ্মী খুঁজে ফেরে৷ পেয়েও যায় কেউ কেউ৷ কিংবা নারায়ণ (লক্ষ্মীর বর)৷ কেবল সরস্বতীই পারেন আপন ভগ্নীপতিকে অন্য নারীর বাহুলগ্ন করে দিতে৷ বর হিসেবে বর দেয়া! শুধু এই পুজোতেই এক দেবীর আরাধনায় অন্য দেবীর কৃপালাভ সম্ভব৷ সরস্বতীর কৃপায় লক্ষ্মীলাভ! বিদ্যাদেবীর মাহাত্ম্যে ষোলোকলায় ভক্তের (প্রকৃত) মনোবাসনা পূর্ণ! আহা আহা! প্রতিমায় মায়ের এত রূপ! আহ্, কী অপূর্ব! অর্ধেক নারী তার, অর্ধেক কল্পনা৷ অথচ, এই ধরাধামের সরস্বতীদের তো সেই রূপ দেখি না! তাহলে কি ধরেই নেব, মানুষ (মৃৎশিল্পী) কখনো কখনো ঈশ্বরের চেয়েও মহত্তর শিল্পী? . . . না, সবসময় তা নয়৷ প্রতিমার মতো সুন্দরীদেরও পাঠানো হয়েছে এই ধরাধামে৷ এই টাইপের মেয়েদের দুনিয়াতে পাঠানোই হয় একটা মহান অ্যাসাইনমেন্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে—অনেক ছেলের মাথা খারাপ করে দিয়ে অন্য একটা সত্যি সত্যি মাথা-খারাপ ছেলের ঘরে চলে যাওয়া৷ যে-মেয়ে মাথা-খারাপ টাইপের ছেলে পছন্দ করে না, সে সুন্দরী হতে যাবে কোন দুঃখে? যা-ই হোক, এ সবই নিছক স্বগতোক্তি৷ মুখচোরার দল মুখরার দলের কাছে মুখ থুবড়ে পড়েছে যুগে যুগে৷ এটাই নিয়ম, এটাই নিয়তি৷ পৃথিবীতে অতি আইরনিক নিষ্কাম কর্ম হলো, অন্যের প্রেয়সীকে দেখে খুশি খুশি মনে প্রখর দারুণ অতি দীর্ঘ দগ্ধ দিনেও গুনগুন করা...আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ বৃষ্টি তোমাকে দিলাম...আরও ট্র্যাজিক হলো, কিছু ভেঙে-যাওয়া সম্পর্ক, যেগুলো জোড়া লাগার আগেই ভেঙে গেছে৷ মানে 'আমি কেন বলতে যাব আগে' এই অহংকার মাথায় নিয়ে কী এক তীব্র প্রতীক্ষায় বসে থেকে থেকে দীর্ঘ বাজে ফেইসবুক স্ট্যাটাসে ক্লান্তি থেকে মুক্তি খুঁজতে গিয়ে ছোট্ট একটা কথায় অবশেষে চিরমুক্ত হওয়া: সে পাইল, ইহাকে পাইল! (আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে...) বলদের এই বেদনা বলদ ফেইসবুকে প্রসব করে না, হার্টবুকে সখেদে রেখে রেখে তা দেয়৷ এইসকল নিষ্কাম কর্মে ঈশ্বর বরবরই নিস্পৃহ নির্লিপ্ত উদাসীন৷ কর্মফল শুধুই বিধাতার পরিহাস৷ যারা এই পুজোয় নিজের সাথে নিজে একা সুখে আছেন, তারা আগামী পুজোয় কারো সাথে একা একা শান্তিতে থাকুন৷ বিদ্যার সাধনায় নিবেদিত জগতের সকল ব্যাচেলরের বিদ্যাসাধনা ধনের দেবীর সাক্ষাতে সাঙ্গ হউক৷ ওম্ শান্তি!” ভেবেছিলাম, এ বছর ঢাকা ভার্সিটির জগন্নাথ হলে পুজো দেখব। হলো না। অগত্যা আজকের দিনে পিএটিসি’র পুজোয় শান্তি খোঁজার আশা নিয়ে দিনের শুরু। ভোরবেলায় মাঠে গিয়ে জানলাম, যারা বিদ্যাদেবীর চরণে অঞ্জলি দিতে ইচ্ছুক, তাদের পিটি করতে হবে না। আহা! কী আনন্দ! একদৌড়ে রুমে চলে এলাম। এসেই ঘুম! ঘুম ভেঙে দেখি, রুমমেট পিটি সেরে ফিরেছেন। বিছানা ছাড়লাম, স্নান-টান সেরে সোজা পুজোমণ্ডপে। আজ বহু বছর পর নির্জল অঞ্জলি দিলাম। ব্রাহ্মণের উচ্চারিত মন্ত্রগুলো ভুলভাল আবৃত্তি করে মাকে প্রণাম করে ক্লাসে গেলাম। মায়ের নৈবেদ্য হয়—মন্ত্রে নয়, প্রসাদে নয়, ঘটায় নয়; বরং প্রকৃত নৈবেদ্য হয়—শুধুই হৃদয়ে আর কর্মে। জীবন আমাকে এখনও পর্যন্ত এ-ই শিখিয়েছে। আজ ক্লাসে এক স্যার খুব মজার একটা কথা বললেন। “আমরা যখন জয়েন করি এইটিফাইভে, তখন পিএটিসি ট্রেনিংয়ের সময় এক সিএসপি অফিসার ক্লাসে এসে বলেছিলেন, “এখন সিভিল সার্ভিসের সূর্য অস্তগামী, আর তোমরা এখন সার্ভিসে এলে।...একটু পরে উনি আবার বললেন, এই ছেলেরা, শোনো, এত ভাববার কিছু নেই। আমরা যখন জয়েন করি ২০ বছর আগে, তখনও আমরা এই কথাই শুনেছিলাম।” এরপর উনি আমাদের বললেন, “এই ধরনের কথাবার্তা চিরন্তন। কে কী বলল, সেটা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর দরকার নেই। সূর্য অস্ত যাক, আর উদিতই হোক, তুমি আকাশে থাকার সুযোগ পেয়েছ, তোমাকে থাকতে হবে ভালোভাবে, এটা মনে রাখবে সবসময়।” এটা নিয়ে আরও কিছু কথা হয়ে গেল। মজার মজার সব কমেন্ট! আমি হাসছি আর ভাবছি, আহা! বাঙালির ২ ভেদ: মতভেদ আর মদভেদ। কেউ কেউ বললেন, পড়াশোনায় যারা বেশি ভালো, তাদেরকে সিভিল সার্ভিসে আরও বেশি সুযোগসুবিধা দেওয়া উচিত। আমার খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, সিভিল সার্ভিসে পড়াশোনা জানারই তো কোনো দরকার নেই। এখানে জয়েন করতে শুধু ২টা জিনিস লাগে: পরীক্ষা দেবার জন্য গ্রাজুয়েশনের সার্টিফিকেটটা আর চাকরির পরীক্ষায় পাশ করা। আর কিছুই না! আরেক স্যার এলেন, যিনি পড়ানো শুরু করার দেড় মিনিটের মাথায় ঘুমিয়ে পড়লাম। স্যারের চেহারায় জাদু আছে। চেহারাটাই ঘুমের ওষুধ ঘুমের ওষুধ টাইপের। আমার কী দোষ! স্যার হিসেবে উনি অনেক ভালো। ক্লাসে ঘুমোলে সামনাসামনি এসে পড়লেও কিচ্ছুটি বলেন না। আমি বিশ্বাস করি, ভালো পড়ানও নিশ্চয়ই। আমি ঘুমঘুম চোখে শুনেছি, স্যার কিছু ভালো ভালো কথাও বলেছেন। এই যেমন, আমরা সবাই সবাইকে আর নিজেদেরকে ঠকাচ্ছি, মুড়িওয়ালা ইউরিয়া-মেশানো মুড়ি বেচে সেই টাকা দিয়ে ফরমালিনযুক্ত আম কেনে। স্যারের জন্য অ্যাত্তোগুলা দোয়া! আজ দুপুরে ভাত খাইনি, পুজোর প্রসাদ খেয়েছি। ভুনা খিচুড়ির সাথে লেবু চিপে সবজি (লাবড়া) আর টসটসে চমচম মেখে কচকচে কাঁচা মরিচ দিয়ে খেলাম। খেয়ে দেখতে পারেন। সত্যি বলছি, খেতে সিরাম লাগে! আমার আগের ৩টা রেসিপি নিশ্চয়ই আপনাদের ভালো লেগেছে। কী? লাগেনি? এবারও লাগবে। আমি বলি, বিশ্বাসে মিলায় টেস্ট, তর্কে বহুদূর! সোয়া ২টায় ক্লাস শুরু। খেয়ে-দেয়ে কোনো কাজ ছিল না; আক্ষরিক অর্থেই। গোলাপবাগানের ঘাসের কাছাকাছি দিয়ে দাঁড়ালাম। মাঘের দুপুরে মাথায় বাজছে, পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেইদিন ফিরে আর আসবে কি কখনো...ঘাসের উপরে পিছলে পিছলে খেলছে দুপুরের সোনামাখা রোদ, লম্বা লম্বা ঘাসের ডগায় ডগায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে দুষ্টু ফড়িং...কী যে আনন্দ ওর! ওকে জীবিকার প্রয়োজনে জীবনটাকে থমকে দিতে হয় না পিএটিসি’র ট্রেনিংয়ে। নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে উঠলাম, যে-জীবন ফড়িঙের দোয়েলের—মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা...এই মিষ্টি নরোম রোদে কুয়াশা উবে যায়, হাতের কফির ধোঁয়াটুকু ফুরোয়, ক্লাসে ছোটার সময় এসে নির্মমভাবে ডাকে। শান্ত দুপুরবেলার শুনশান ক্লাসঘর। স্যার বলছেন, “আপনারা দেখুন, আমরা চলি মোদি আর ওবামার পরামর্শে। কখনো কখনো আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে মোদি একটা বড়ো সমস্যা।” একজন বলে উঠলেন, “স্যার, আমাদের দেশের যে-সমস্যা, সেটা মোদি-সমস্যা না, সেটা গদি-সমস্যা।” রব উঠিল, “সাধু সাধু!” স্যার বললেন, “এই যে আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক আর আইএমএফ’য়ের কথামতো চলি, এটা কিন্তু ঠিক না। ওদের পরামর্শ আফ্রিকার জন্য খাটলেই যে বাংলাদেশের জন্যও খাটবে, এমন তো নয়। বাংলাদেশ তো আর আফ্রিকা নয়।” স্যারের কথা শুনে ভাবছিলাম, সেদিন এক বিউটি পার্লারের সামনে দেখি, বিশাল ছবি সাঁটা। ওতে ওই পার্লারের চিফ বিউটিশিয়ান ইউকে থেকে ইউকে’র বিউটিশিয়ানদের কী-একটা যেন অ্যাসোসিয়েশন থেকে অ্যাওয়ার্ড নিচ্ছেন। সেটা দেখে যে-সব মেয়ে উৎসাহিত হবে, তাদের বলছি, ইউকে আর বাংলাদেশের মেয়েদের স্কিনের গঠন কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই ওই বিউটিশিয়ান যদি ইউকে থেকে ওদের স্ট্যান্ডার্ডে অ্যাওয়ার্ড পেয়ে থাকেন, তবে সেটা ইউকে’র মেয়েদের স্কিনের সাথে মানানসই পরিচর্যার জন্য, এতে বাংলাদেশি মেয়েদের খুশি হয়ে ওই পার্লারে ভিড় করার তো কোনো কারণ দেখি না। অবশ্য আমরা বিদেশি কুত্তার লাথি খেতে বড়োই আরামবোধ করি। (‘কোথাও কেউ নেই’-র একটা ডায়লগ মনে পড়ে গেল: “কুকুররে কুত্তা কইলে কুকুর মাইন্ড করে।” কেন পড়ল? কোনো কারণ নেই, এমনিই!) ইকোনোমিক্সের স্যার এসে জিজ্ঞেস করলেন, গ্রোথ আর ডেভেলপমেন্টের মধ্যে পার্থক্য কী? আমার খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে—এটা গ্রোথ। আর, আমার সন্তান যেন থাকে ফ্রাইড রাইসে—এটা ডেভেলপমেন্ট।” পারলাম না। আহা জেন্টলম্যান হবার বড়ো জ্বালা! আমি যাচ্ছেতাই (দয়া করে ভেঙে পড়ুন, আই মিন ভেঙে ভেঙে পড়ুন, যা ইচ্ছে তা-ই) করার এবং বলার অধিকার চাই। ক্লাসে নিড আর গ্রিডের কথা এল। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এলেন একজন। এ জগতে, হায়, সে-ই বেশি চায়, আছে যার ভূরি ভূরি...আমার মাথায় ঘুরছিল ‘সংশপ্তক’-এর খলিল...টাকা আমার চাই, নইলে জমি...প্রজেক্টরের ক্যানভাসে ভাসছেন গান্ধীজি...The world has enough for everyone's need, but not enough for everyone's greed...ভালো কথা, এসব কিছু খেয়াল করেছি জেগে জেগে ঘুমিয়ে। মনে মনে আওড়াচ্ছি...আমি বলছি না ক্লাসে মন থাকতেই হবে; আমি চাই, অন্তত একটা ক্লাস আমি না ঘুমিয়ে করি, সে ক্লাস যতই বোরিং হোক না কেন!...আমি ক্লাসে বরাবরের মতোই পেছনের দিকের সারিতে বসেছিলাম। স্যারের দিকে ভয়ে তাকাচ্ছিলাম না। স্যার যে আমাকে দেখছিলেন, এমনও নয়। তবে ভয়টা কীসের? ঘটনা হলো, স্যারের অ্যাপিয়ারেন্সে কী-একটা যেন আছে। তাকালেই কোত্থেকে যেন শান এসে মাথায় বাজতে থাকে...মুসু মুসু হাসি দেউ মালাই লাই...আর স্যারকে খালি কাতুকুতু দিতে ইচ্ছে করে। সমস্যা তো! তারচে’ থাক, তাকানোর দরকার নাই। আর পারলাম না, হা হা করে হেসেই ফেললাম...আহা, স্যারকে দেখে নয়। স্যার লাইফ এক্সপেক্ট্যান্সি নিয়ে বলার সময়ে এক কলিগ আবেগমথিত কণ্ঠে আবৃত্তি করে উঠলেন, “স্যার, কবি তো বলেই দিয়েসেন, মরিতে ছাহি না আমি সোন্দর বুবনে…” ও আল্লা! দড়ি ফালাও! গুরুদেবরে কবর থেইক্যা তুইল্যা নাও! ওইখানে থাকলে এই বুইড়া মইরা ভূত হইয়া যাইব তো! স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার চাকরির বয়স কত?” খুব বলতে ইচ্ছে করছিল, “স্যার, চাকরি হলো মেয়েমানুষের মতো। কথা শোনে না। পূর্বে যেতে বললে পশ্চিমে যায়, উত্তরে যেতে বললে দক্ষিণে যায়। যা বলি তা বোঝে না, যা বলি না তা আরও বেশি করে বোঝে। একটু এদিক-ওদিক করলেই গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। দুটোর সামনেই হুজুর হুজুর করতে হয়। কত কায়দা-কসরত করে মান ভাঙাতে হয়! থাকলে জ্বালা, না থাকলে তো আরও বেশি জ্বালা। মেয়েমানুষের বয়স জিজ্ঞেস করতে হয় না, স্যার।” না, এসব বললাম না। টার্গেটে পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এর চাইতে প্রকাশ্য অপরাহ্ণলোকে সুখনিদ্রাযাপনে দলে দলে মিছিলে মিছিলে শরিক হওয়া উত্তম। স্যারের একটা মহৎ গুণ হলো, স্যার বেশিরভাগ সময়েই সামনের বেঞ্চের স্টুডেন্টদের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পড়ান। পেছনে ইচ্ছেমতো ঘুমোনো যায় (শুধু নাক না ডাকলেই হলো)। স্যারের একটা কথা দিয়ে ক্লাসপর্বের ইতি টানছি। “তোমরা খেয়াল করলে দেখবে, পলিটিশিয়ানরা যেমন ধরনের লোকই হন না কেন, সাধারণ মানুষের কাছে কিন্তু ওদের গ্রহণযোগ্যতা আমাদের চাইতে অনেক বেশি। কারণ, সাধারণ মানুষ বোঝে, ব্যুরোক্র্যাটদেরকে ফোন করলে ওরা হয়তো রিসিভই করবেন না, কিন্তু পলিটিশিয়ানদেরকে ফোন করলে রিসিভ করে কথা অন্তত বলবেন। ওদের ভোট যে পরের বারও লাগবে।” কথাটি খুব ভালো লাগল। আজ থেকে হ্যান্ডবল খেলার সেশন শুরু হবে। এর আগে শুনেছি, এই খেলাটা দুনিয়ার সবচাইতে রিস্কি গেমগুলোর একটি। বিকেলে একটু আগেভাগে মাঠে গিয়েই স্যারকে যথাসম্ভব বলদ-বলদ গোবেচারা-টাইপ মুখের ভাব নিয়ে কাঁচুমাচু হয়ে বললাম, “স্যার, আমি কোনো খেলাধুলা পারি না। এই জীবনে কোনোদিনই ফুটবলে একটা লাত্থিও মারি নাই, স্যার। আমাকে এই সেশন থেকে কাইন্ডলি একজেম্পশন দেওয়া যায় না, স্যার?” হায়! চিঁড়ে ভিজল না। খেলা শেখানো শুরু হলো। হ্যান্ডবল খেলার ট্রেইনারের ইংরেজি বলার একটা নিজস্ব ধরন আছে। ওঁর ব্যক্তিগত গ্রামার এরকম: Infinitive+ Noun+ Verb! এই যেমন, Try to ball throw...Hold to ball pass...উনি শেখালেন কীভাবে মাঠে ‘অদৃশ্য’ হাফ-সার্কেল ‘দেখে’ ডিফেন্সের জন্য ওই বরাবরে দাঁড়িয়ে যেতে হয়! আমরা হাত-পা মনের আনন্দে এদিক-ওদিক ইচ্ছেমতো ছুড়ে ছুড়ে তাধিন তাধিন নৃত্যের স্টাইলে মাঠময় দৌড়োতে লাগলাম। আহা! সে ক্যাডার-নৃত্য এক বিচিত্র দৃশ্য! একজন আমাকে প্রমাণ করে দিলেন, হ্যান্ডবলের বলটির কনফিগারেশন এমনই যে, হাত ইনজুরড করার সব পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করা আছে। আপনি যেভাবেই খেলুন না কেন, এই বল এসে আপনাকে আহত করবেই! ওঁর হ্যান্ডবলের বলফোবিয়া দেখার মতো। যত বারই ওঁর দিকে বল আসছিল, উনি “ও আল্লাগো!” “ও আম্মাগো!” ইত্যাদি শব্দে চিৎকার করতে করতে বলটি লুফে নিয়েই মাটিতে ফেলে দিচ্ছিলেন। বেচারা ইনজুরড হবার অপেক্ষাতেই ছিলেন, এবং হলেনও। মাঠ থেকে ফিরে সন্ধেয় কফিকর্নারে আমরা সবাই কালকের গ্রুপ প্রেজেন্টেশন প্রিপেয়ার করতে বসে গেলাম। কফির ধোঁয়ায় স্লাইড বানানোর ধুম পড়ে গেছে। কেউ কেউ রীতিমতো গবেষণা করতে বসেছেন। এসব কাজ করার সবচাইতে সহজ উপায় হচ্ছে: ক্লাসিক-প্লে করার চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে সরাসরি ভালোভাবে কাজ চালানোর মতন কিছু-একটা রেডি করার কাজ শুরু করে দেওয়া। আর শুরু করার সবচাইতে সহজ বুদ্ধি হলো, সত্যি সত্যি শুরু করে দেওয়া। প্রেজেন্টেশন তৈরি হলো। All credit goes to Google & Nescafé!