মানবজীবনে একধরনের স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে। সময়ে সময়ে সেটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সামাজিকভাবে শেখা কিছু অভ্যাস, যা আমাদের নিরাপদ রাখার জন্য তৈরি।
ভয় আর সন্দেহ—এই দুই অনুভূতিকে প্রথমে জীবনের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ—রাস্তা পার হবার আগে ‘সন্দেহ’ আমাদের সতর্ক করে—“গাড়ি আসছে কি না খেয়াল করো।” ধন্যবাদ, সন্দেহ!
আবার স্কুলে যাবার পথে ছোট্ট কোনো জলাশয় দেখে মনে হলো, লাফিয়ে পার হব। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল, নতুন জুতো পায়ে আছে। ভিজে গেলে মায়ের বকুনি খাব। বরং একটু ঘুরে ওদিক দিয়ে যাই। ধন্যবাদ, ভয়!
এখন পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক। ভয় আর সন্দেহ এখানে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
কিন্তু সমস্যা হলো—ভয় আর সন্দেহ তাদের ভূমিকা নিয়ে অতিরিক্ত আত্মম্ভরী হয়ে যায়। তখন তারা প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের পিছু নিতে আর শাসন করতে শুরু করে, এমনকি যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানেও। মনের ভেতর তৈরি হয় এক অবিরাম কোলাহল—“যদি এমন হয়... যদি ওটা না হয়... সাবধান... সে মানবে না... তারা করবে না...”
এই স্থায়ী উদ্বেগ আমাদের ঠেলে দেয় সেই অবস্থায়, যেটাকে হেনরি ডেভিড থোরো বলেছেন—“বেশিরভাগ মানুষ শান্ত হতাশার জীবনযাপন করে।”
এর ফল হলো—আমরা ফলাফলের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। প্রতিটি ঘটনার আগে মনে হয়—“যদি সামলাতে না পারি?” সেই ভয় আবার ভয় তৈরি করে। আর এভাবেই ভয় আর সন্দেহ হয়ে ওঠে নীরব হতাশার অন্তঃস্রোত।
এতে কী হয়? মানুষ আসলে মেনে নেয়। ভালো লাগুক না লাগুক, সে মেনে নেয় এটা ভেবে যে, মেনে না নিয়ে আর কীই-বা করার আছে? এখানে ভালো লাগা মন্দ লাগার কিছু নেই, যা করতে হবে, তা পছন্দ না হলেও করতেই হবে।
এর ক্রমানুশীলনে যা হয়—যখন স্ট্রেস হাজির হয়, তখন আর আতঙ্ক লাগে না। বোঝা যায়—সে আসলে সাহায্য করতে এসেছে। তার উদ্দেশ্য আমাদের মনোযোগ বাড়ানো, কর্মদক্ষতা উন্নত করা, আর শান্ত অথচ সজাগ রেখে লক্ষ্যপূরণের পথে এগিয়ে দেওয়া।