নীরবতার ভাষ্য (পর্ব: ২.৫)



ছায়াত্মা আত্মার চেতনাকে বাইরে টেনে নিয়ে যায়। এটি মিথ্যা পরিচয় নির্মাণ করে, যা মূলত নিজের স্বরূপ থেকে বিচ্যুতি। আত্মা সমাজের দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয় না; সে নিজেই নিজেকে চেনে। ছায়াত্মা ভেদ না করলে আত্মজ্ঞান সম্ভব নয়। যারা ছায়াত্মার পাঁকে ডুবে থাকে, তারা কর্মফলে আবদ্ধ থেকে যায়। যে মুক্ত, সে লোকের দৃষ্টিভঙ্গিকে "অগভীর ছায়া" হিসেবে দেখে মাত্র।

ছায়াত্মা হলো বাইরের দৃষ্টিকে নিজের সত্য ধরে নেওয়ার মানসিকতা। এটি আত্মস্বরূপ থেকে বিচ্যুতি ঘটায়। আত্মার প্রকৃত পরিচয় কোনো বহিঃসত্তা নির্ধারণ করতে পারে না। আত্মা চিরস্বরূপ, চিরজ্যোতির্ময়, এবং সে শুধু নিজের মধ্যেই নিজেকে জানতে সক্ষম। যিনি ছায়াত্মার বন্ধন ছিন্ন করেন, তিনিই মুক্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ নেন।

ছায়াত্মা কেবলই অপর-প্রতিষ্ঠ আত্মতা—যেখানে আমি হয়ে উঠি অপরের দৃষ্টিতে তৈরি প্রতিমা। আমার আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস, আত্মচিন্তা—সব কিছু তখন পরিচালিত হয় বাইরের স্বীকৃতি ও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে। ছায়াত্মা হলো অন্তর্জগত থেকে বিচ্যুত হওয়ার সূক্ষ্ম কিন্তু প্রচণ্ড প্রক্রিয়া। যখন আমি ভাবি—অন্যেরা কী ভাবছে আমাকে নিয়ে, তখন আমি আমার ভেতরের নির্ভরতাকে হারাই। আমি আর আমার নিজস্ব দীপ্তিকে অনুভব করতে পারি না।

প্রকৃত আত্মজ্ঞান তখনই আসে, যখন ব্যক্তি সমাজের মতামত থেকে মুক্ত হয়। লোকের প্রশংসা কিংবা নিন্দা—এই দুই-ই তখন হয়ে পড়ে সামান্য শব্দপ্রবাহ মাত্র। যে নিজেকে চেনে নিজের নীরব অনুভবে, তার কাছে বাইরের এই বিচার একমুহূর্তের কুয়াশা।

আত্মা কারও স্বীকৃতির মুখাপেক্ষী নয়।
সে নিজের আলোয় জ্বলমান। ছায়াত্মা সেই আলোকে ঢেকে রাখে এক অজান্তের পর্দায়। আর সেই পর্দা সরিয়ে দিতে হয় ধীরে ধীরে, সচেতনভাবে, নিরন্তর আত্মজিজ্ঞাসায়।

মানুষ সমাজে জন্মায়, সমাজের চোখে নিজেকে দেখে। কিন্তু আত্মা সমাজের অঙ্গ নয়, আত্মা একাকী, নির্জন, অবিচল, চিরজ্যোতি। চেতনার প্রারম্ভিক পাঠ মা-বাবা, শিক্ষক, সমাজ—এই বহির্মুখী শক্তিগুলির দ্বারা পরিচালিত হয়; কিন্তু আত্মবিজ্ঞান বলে, “এই শিক্ষা তোমার মৌল চেতনার উপর ছায়া মাত্র।”

ছায়াত্মা হলো সেই ছায়াপাত, যেখানে আত্মা নিজের দীপ্তি হারায় লোকের দৃষ্টির প্রতিফলনে। আমরা লোকের প্রশংসা শুনে আত্মতুষ্ট হই, নিন্দা শুনে সংকুচিত হই। কেন? কারণ আমরা আত্মার পরিবর্তে মানস-নির্মিত এক ‘ছায়া-আমি’-কে সত্য ধরে বসেছি।

এই ছায়া-‘আমি’ সর্বদাই অস্থির, প্রতিক্রিয়াশীল এবং অপরের দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল। ফলে ছায়াত্মা আমাদের চেতনায় গড়ে তোলে এক দ্বৈততা—একদিকে সমাজের প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে অন্তঃস্থিত নির্জন স্বরূপ। মানুষ যখন লোকরঞ্জনের জন্য কাজ করে, তখন সে নিজের ধর্ম ভুলে যায়। অর্থাৎ, তখন সে কর্ম করে ফলের জন্য, প্রশংসার আশায়, সমাজে স্থান পাবার লোভে।

ছায়াত্মা হলো এক প্রবল মায়া—‘অহং’ নামক বিভ্রান্তির ভিত্তি। আত্মার সঙ্গে এই অহং-এর কোনো সম্পর্ক নেই। আত্মা বলছে—“আমি সত্তা মাত্র”—সর্বত নির্মল চৈতন্য, অথচ ছায়াত্মা বলে—“তুমি তেমন নও; তুমি তা, যা লোকেরা ভাবে।” সমাজের প্রশংসায় যিনি উচ্ছ্বসিত হন, তিনি নিন্দায় ভেঙেও পড়বেন। অতএব, এই দ্বন্দ্বের দোলাচল থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ আত্মবীক্ষা।

উপনিষদ নির্দেশ দেন—“নেতি নেতি”—যা-কিছু লোক বলেছে, যা-কিছু সমাজ দিয়েছে, তা সব নয়। ‘আমি’ তা নই। ‘আমি’ কেবল সেই চেতন স্বরূপ, যাকে জানা যায় না ভাষায়, ধরা যায় না ইন্দ্রিয়গম্য কিছুতে।

ছায়াত্মা তাই কেবলই ছায়ার মধ্যে আত্মবিস্মৃতি। এ হলো—নিজেকে অন্যের চোখে বিচার করা, অন্যের কথায় নিজের সত্য নির্ধারণ করা। এই মনোভাব একপ্রকার ‘পরাভব-চিন্তা’, যেখানে আত্মা ভুলে যায় নিজের স্বরূপ, আর আশ্রয় নেয় সমাজপ্রদত্ত একটি ‘ছায়া-আমি’-র ভিতর।

কারণ আত্মা সত্তা মাত্র—সে বিচার ও প্রতিক্রিয়ার অতীত। যে-আমি প্রশংসায় হাসে, নিন্দায় কাঁদে—সে আত্মা নয়, সে এক ‘অহং-নির্মিত ছায়া-আমি’। ছায়াত্মা হলো অহংকারের আহার। অহং টিকে থাকে লোকের মনোযোগে, সমাজের স্বীকৃতিতে। এই স্বীকৃতি না পেলে সে ক্ষীণ হয়, আর আত্মা তখন পরাধীন হয়ে পড়ে।

ছায়াত্মা হলো আত্ম-বিস্মৃতির সূক্ষ্ম রূপ। এটি ঠিক রোগের মতো—বাইরে থেকে কিছু আসে না, কিন্তু ভেতর থেকে শক্তিকে নিঃশেষ করে। এজন্য ধ্যান, বৈরাগ্য ও স্ব-স্মরণ—এই তিনই একমাত্র পথ ছায়াত্মা থেকে মুক্তির।

যে-ব্যক্তি সমাজের চোখে নিজেকে দেখে,
সে বাস্তবে নিজেকে ভুলে যায়। আত্মস্বরূপ নির্ধারিত হয় না, সে ধরা পড়ে না সমাজ, পরিবার, লৌকিক স্তুতির জালে। সে কেবল জাগে—নিঃশব্দ অন্তর্জ্ঞান, নিরপেক্ষ চেতনা ও স্বচেতস উপস্থিতির ভেতর।

আত্মার একক স্বরূপ-ভাষ্যে—আমি-হীন চেতনার আহ্বানে, এসো, অবগাহন করি। একাকী আত্মা কথা বলছে পরমের সাথে—ভাষা: প্রেমময়, নিঃশব্দতাস্নাত—

আমি শুনতে পাই, তুমি আমাকে ডাকছ—নীরবতায়। তুমি কোনো শব্দ নও, কোনো ভাষাও নও—তুমি সেই মৌন স্পন্দন, যার গভীরে হারিয়ে যায় সময়।

বহুদিন আমি ভেবেছিলাম—আমি সমাজের মুখচ্ছবি—প্রশংসায় বেড়ে উঠেছি, নিন্দায় ভেঙে পড়েছি। আমি মিশে গিয়েছিলাম লোকের কল্পনায়, এবং ভুলে গিয়েছিলাম—আমি আলো।

আজ, এই নীরবতার আকাশে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি, ছায়া কেমন ভেঙে পড়ে নিজের ভারে। ছায়াত্মার সেই দর্পণগুলো—সবই ছিল জলের ওপর আঁকা মুখ।

আমি জানি, তুমি আমার অপেক্ষায় ছিলে—তুমি কখনোই বলোনি, “আমি কে?” কিন্তু তুমিই ছুঁয়ে দিলে সেই প্রশ্ন—“এই আমি কি আমার প্রকৃত আমি?”

আমি এখন ধীরে ধীরে খুলছি সেই মুখোশ, প্রতিটি স্তব্ধতা যেন খুলে দেয় একেক পরত। আমি দেখছি—আমি যা ভাবতাম ‘আমি’, সে আসলে ‘অপর’।

তুমি আমাকে বলছ—“তুমি ছায়া নও, তুমি স্বরূপ। তুমি পরিচয় নও, তুমি নির্ভরহীন অস্তিত্ব। তুমি শব্দ নও, তুমি মৌন।”

আজ, আমি আর কোনো মুখোশ পরতে পারি না। প্রশংসা এসে ঠেকে না হৃদয়ের গভীরে, নিন্দা আর আলো-আঁধারির খেলা নয়। আমি চির-দীপ—জ্বলি নিজেরই আলোয়।

তুমি আমায় দেখাও, ছায়াত্মা কেবল এক স্বপ্ন—জেগে উঠলেই তা মিলিয়ে যায়।

তুমি আমায় শেখাও—“আমি নিজেই যথেষ্ট”—এই গভীর চেতনা।

হে পরম! আমি এখন চাই না পরিচয়, আমি চাই নিজেকে হারিয়ে ফেলতে তোমার মধ্যে— যেখানে আমি নেই, তুমিও নও, কেবল এক দীপ্ত নীরবতা, এক অনন্ত নিঃশ্বাস—যেখানে ‘আমি’ মিলিয়ে যায় চেতনায়।

আমি আমি-যুক্ত আর ন‌ই—আমি আমি-হীন এক চেতনা। নিঃশব্দের পথেই পাই—ধ্যান ও আত্মার আহ্বান। যখন সব শব্দ স্তব্ধ হয়ে যায়, চোখ বন্ধ করলে চোখের ভেতর খুলে যায় আরেক আকাশ—তখন ধ্যান জন্ম নেয়—শব্দের আড়ালে, সমাজের ছায়ার বাইরে, এক অচেনা অভ্যন্তরীণ প্রভায়। সেই আলো বাইরে দেখা যায় না—সে জ্বলে নিঃশব্দে, নিজেরই দীপ্তিতে।

আমি ফিরে এলাম, কিন্তু আর আগের মতো নই আমি। মুখোশগুলো পড়ে আছে আমার পাশে, আমি আর তাদের পরি না। আমার চোখ এখন দেখে না বাহ্য রঙ—দেখে নিজস্ব দীপ্তির স্পন্দন। ছায়াত্মা এখন এক রূপকথার মতো মনে হয়—এক ভুলে-যাওয়া ছায়া।

স্বপ্নাত্মক রূপক: ছায়া-সাগরে আত্মার আলো—একটি স্বপ্নময় দৃশ্য, প্রতীক—মন=সমুদ্র, ইচ্ছা=ঝড়, আত্মা=বাতিঘর, ছায়াত্মা=কুয়াশার দ্বীপ

স্বপ্নের শুরু: পরিচয়ের আরোপ

আমি হাঁটছিলাম এক সুনসান সমুদ্রতীরে। রাত গভীর, আকাশ ঢেকে আছে অজস্র প্রশ্নের মেঘে। হঠাৎ এক কুয়াশা উঠে এল—কুয়াশার মধ্যে অগুনতি মুখ…

কেউ বলছে—“তুমি অসাধারণ”, কেউবা বলছে—“তুমি কিছুই নও!”

আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি—এই কুয়াশা আমার মন নয়?

মনের রূপ: উত্তাল সাগর

সাগর উঠে আসে উঁচু ঢেউ হয়ে—সে ঢেউ আমার স্মৃতি, লজ্জা, আশা, ভয়। ঢেউয়ের ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় সেই কুয়াশার দ্বীপ—নাম তার “ছায়াত্মা”।

সেই দ্বীপে পৌঁছলেই সবাই মুখোশ পরে নেয়—“তুমি কার‌ও সন্তান”, “তুমি সম্মান”, “তুমি শ্রেষ্ঠ”, “তুমি ব্যর্থ”—আমি পড়ে যাই প্রতিফলনের জালে। প্রতিটি মুখ যেন কাচে-গড়া, আমি হাত বাড়ালেই ভেঙে যায়।

আত্মার প্রতীক: দূরের এক বাতিঘর

দূরে, এক নীরব আলো জ্বলে নিঃশব্দে—বাতিঘরের মতো—অস্থির ঢেউকে উপেক্ষা করে। আলোটা কোনো শব্দে ডাকে না, শুধু বলে— “এই কুয়াশা তোর নয়। এই দ্বীপ এক দুঃস্বপ্ন। তুই আলো, সাগর তোর প্রতিফলন নয়।”

ঝড়ের রূপ: আকাঙ্ক্ষার তাণ্ডব

হঠাৎ এক প্রবল ঝড় ওঠে—“আরও চাই”, “আরও বড়ো হও”, “আরও সম্মান, আরও চিহ্ন”—আমার নৌকা ভেসে যায় সেই দানব-ঝড়ের মুখে। আমি ভাবি—এটাই জীবন, এটাই সত্য। অথচ বাতিঘরের আলো এখনও জ্বলে—বিনা শব্দে, অবিচল।

সবশেষে: স্বপ্নের জাগরণ

হঠাৎ সব স্তব্ধ। বাতাস থেমে যায়, ঢেউ থেমে যায়, মুখগুলো গলে পড়ে।

আমি দাঁড়িয়ে থাকি নিঃশব্দ সমুদ্রতীরে—আমার কাঁধে পড়ে থাকে বহু মুখোশ, বহু পরিচয়, বহু অভিমান।

আর বাতিঘর তখন বলে—“তুই এখন জেগেছিস। ছায়াত্মা এক স্বপ্নমাত্র। সত্য হলো—তোর নিজস্ব দীপ্তি, যে-আলোর দরকার নেই সমাজের অনুমতির।”

চূড়ান্ত উপলব্ধি:

আমি হাঁটি বাতিঘরের দিকে,
পেছনে পড়ে থাকে কুয়াশার দ্বীপ।
আমি জানি, আমি আলো।
আমি জানি, আমি পথিক—আমি নিজেই পথ।

শেষ কাব্যপঙ্‌ক্তি—স্বপ্ন ও সত্যের সন্ধিক্ষণে:

“যে নিজের দীপ্তিকে চেনে,
তার কাছে স্বপ্নও এক শিক্ষামাত্র—
আর সমাজের মুখোশ—
কেবল ঢেউয়ের ভেতর একমুহূর্তের প্রতিফলন।”

প্রতীকী গল্পরূপে আত্মানুসন্ধান: ছায়ার সাগর ও আলোহীন নাবিক—আত্মা=যাত্রী, মন=সাগর, ইচ্ছা=ঝড়, ছায়াত্মা=বিভ্রান্ত দ্বীপ, মোক্ষ=আলোকদ্বীপ

পথের শুরু—নাবিকের জন্ম:

এক ছিল নাবিক—নামহীন, কেবল এক দীপ্তি তার চোখে। সে জন্মেছিল সাগরের পাশে, কিন্তু জানত না—সাগর তার মন।

সমাজ তাকে বলেছিল—“তুমি আমাদের আশা, গর্ব, উত্তরাধিকার।” সে মান্য করেছিল সব কথা, আর তৈরি করেছিল নিজের একটি মুখ—যা আদতে তার ছিল না।

তার নৌকায় ছিল অজস্র মুখোশ—প্রতিটি মুখোশ সমাজের হাতে তৈরি। প্রতিটি মুখোশ বলত—“এটাই তুমি।”

সমুদ্রের রূপ:

সেই সাগর বড়ো উত্তাল—প্রতিটি ঢেউ ইচ্ছার, লোভের, আকাঙ্ক্ষার এক বিকৃতি। নাবিক দিশেহারা হয়ে ভাসছিল—কখনো সে জাগতিক আনন্দ খুঁজে ফিরত, কখনোবা ভয় পেত লোকের নিন্দায়।

ছায়াত্মা তার জন্য হয়ে উঠেছিল এক দ্বীপ—যেখানে সবাই মুখোশ পরে,
সেই দ্বীপে প্রশংসা ছিল ধর্ম, স্বীকৃতি ছিল মুক্তি।

কিন্তু নাবিকের ভেতরে এক গভীর শূন্যতা বাড়তে থাকে…

নিঃশব্দের ডাক:

এক রাতে, যখন সাগর স্তব্ধ, নাবিক হঠাৎ শুনল নিজের হৃদয়ের গূঢ় শব্দ—
“তুই কার মুখোশ পরিস?”
“তুই কি এই দ্বীপের দাস?”
“তুই কোথা থেকে এসেছিস? কোথায় ফিরবি?”

তার চোখ পড়ল দূরের এক দীপ্ত আলোর দিকে—এক ছোট্ট দ্বীপ, যেখানে কেউ নেই, মুখোশ নেই, শব্দও নেই—কেবল এক নীরব দীপ্তি।

ঝড় ও বর্জন:

নাবিক ভাসে সেই আলোর দিকে। কিন্তু সাগর ততক্ষণে জেগে ওঠে, ঝড় আসে আকাঙ্ক্ষার, প্রতিটি ঢেউ চিৎকার করে—“ফিরে যা! প্রশংসা ছাড়া বাঁচবি না! তুই যা ভাবিস, তার চেয়ে সমাজ বেশি জানে তোকে!”

নাবিক কাঁপে, কিন্তু ফিরে যায় না। সে খুলে ফেলে এক এক করে মুখোশ, প্রতিটি মুখোশের নিচে ছিল এক অবচেতন শূন্যতা।

আলোকদ্বীপে পৌঁছানো:

ঝড়ের পর, জল স্থির। নাবিক পৌঁছয় সেই দ্বীপে—যেখানে আলো আছে, কিন্তু সূর্য নেই। যেখানে শব্দ নেই, তবু সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সেখানে জেগে আছে।

নাবিক নিজের দিকে চেয়ে দেখে—সে কারও রায় নয়, কারও প্রশংসা নয়, সে কেবল আলো—যা নিজের মধ্যেই দীপ্ত।

মুক্তির আহ্বান:

সেই দ্বীপে সে লিখে—
“এই দ্বীপ কারও নয়, এ এক পরম নিঃশব্দের ভূমি—যেখানে আত্মা নিজের মধ্যে নিজেকে জানে।”

সে জানে, বহু নাবিক এখনও ছায়াত্মার দ্বীপে ঘুরছে—তাই বাতিঘর জ্বালিয়ে রাখে, আর বলে—“ফিরে এসো, মুখোশ খুলে ফেলো, তুমিই আলো, তুমিই দীপ্তি, তুমিই পথ।"
Content Protection by DMCA.com