নির্বাক আমার শহরে

সেদিন একাদশী, শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া;
তোমার নামে দু-চার লাইন ঝরেছে কবিতা।
বুনো হাওয়ায়, পিঠের বাঁকে এলিয়ে দিলেম কেশ,
শুভ্র-নীল রঙের ভিড়ে, কাটছিল দিন বেশ!
দুলিয়ে হাওয়ায় বাসরলতা, স্বপ্নসুখের রেশ!
আহা! আমার কাটছিল দিন বেশ!

গোলাপকুঁড়ি, নীলপদ্ম,
নয়তো চুড়ি, শশীকান্ত
মাস্টারবাড়ি, হাতেখড়ি...
হয় বঙ্কিম, নয় চন্দ্রগুপ্ত
ফাগুন এলেই রবিঠাকুরের গীতিকাব্য!

আমার দিনগুলো সব রঙিন ছিল,
রাতগুলো সব নিকষ কালো;
জানো, আমার নিজের একটা চাঁদও ছিল!

শেষ প্রহরে ভেজা ট্রেনে,
চলতি পথে ধুম্রজালে,
একের পর এক শব্দযোগে
কী যেন এক মায়া খুঁজত!
চাঁদটা আমার রসিক বড়ো!

লক্ষ্মীপুজোয় মুখুজ্জেবাড়ি,
কিংবা ইদে নীল শাড়ি আর কাঁচের চুড়ি,
ধুপধুনো আর ছানা-সন্দেশ,
বাদ যেত না সেমাই-পায়েস।
বৈশাখেতে পান্তাইলিশ, বসন্ত এলে রাঙা গোলাপ,
শরৎ এলে একজোড়া দুল, কাশবনেতে প্রেমের আলাপ!
শিশিরভোরে পিঠেপুলি, বর্ষা নামলে জলকেলি!
বন্ধুরা সব একযোগেতে দুঃখমুখোশ ছুড়ে ফেলি।

নাট্যমঞ্চে, গভীর সংলাপে,
কখনওবা গীতসন্ধ্যায় সুরের গুঞ্জনে,
ছায়ানটে নাচের ছন্দে, রাগ-অনুরাগের অমীমাংসিত দ্বন্দ্বে,
বটের ছায়ায় খোশগল্পে,
মেতে ওঠে কপোত-কপোতী দলে দলে।
এতসব আয়োজনে, আমার সঙ্গী বলতে...
এক চাঁদ আর নিহত দীপের সলতে!

ভাবছ, আমার চাঁদ কি তবে কথাও বলে?!
যার ভালোবাসা রয় অসীম দূরত্বে 
আর কে হবে তার সঙ্গী অতন্দ্র প্রহরে?
হোক না সে চাঁদ...নির্বাক আমার শহরে!