১৬১.
‘সো হম্’ শ্বাসে বয়ে চলে ‘আমি’-র নিঃশব্দ জপ।
এই ‘আমি আছি’ বোধই হলো তোমার অন্তরস্থ ঈশ্বরত্ব—এই বোধই প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রকাশ করে তোমার নিঃশ্বাসের মধ্যে এক পবিত্র জপরূপে। প্রাচীন ঋষিরা গভীরভাবে শ্বাস পর্যবেক্ষণ করে দেখেছিলেন—প্রত্যেক নিঃশ্বাসে দুটি সূক্ষ্ম ধ্বনি বাজে: প্রশ্বাস (inhalation) এর সময়—‘সো-ও-ও’, প্রশ্বাস ত্যাগ (exhalation) এর সময়—‘হুম্ম্’। এই দুটি ধ্বনির একত্র রূপ হলো‘সো হম্’—যার অর্থ: “আমি সেই (পরম সত্য)”; অর্থাৎ ‘I am That’।
এই নিঃশব্দ ধ্বনি চেতনার গভীরে প্রতিধ্বনিত হয়—যেমন চেতনা নিজেই নিজের উপস্থিতিকে স্মরণ করায়। অনেক সাধক এই ‘সো হম্’ জপকে ধ্যানের একটি পথ হিসেবে গ্রহণ করেন—শ্বাসকে গভীর মনোযোগে লক্ষ করেন, এবং এই নিঃশব্দ ধ্বনির মধ্যে নিজেদের অস্তিত্বকে স্থিত করেন।
এইভাবে শ্বাস = জপ = অস্তিত্ব = ঈশ্বর—এই উপলব্ধি জন্ম নেয়। এই শ্বাস–স্মরণই ‘আমি’-র প্রকৃত ধ্যান—যেখানে কোনো মন্ত্র শেখা লাগে না, কারণ তুমি নিজেই মন্ত্র হয়ে আছ।
অদ্বৈত বেদান্তে বলা হয়—তোমার অন্তরস্থ ‘আমি’ বোধই হলো ঈশ্বরের অভিব্যক্তি। এই ‘আমি’-র পবিত্রতা কেবল চিন্তায় নয়—তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে তার স্পন্দন আছে। এই শ্বাস–প্রশ্বাসের শব্দ—‘সো’ ও ‘হম্’—এগুলি প্রাকৃতিক, অবিচ্ছিন্ন, স্বতঃসিদ্ধ জপ।
এই জপ-প্রবাহ চালিত হয় তোমার অচেতন স্তর থেকে—তুমি চাও না, তবুও চলে—এটাই ঈশ্বরের জাগরণ তোমার শরীরের মধ্যেই। যখন তুমি সচেতনভাবে এই শ্বাসকে পর্যবেক্ষণ করো—তখন ধীরে ধীরে চেতনা নিজের উৎসকে চিনতে শেখে।
তখন তুমি কেবল বুঝো না যে ‘আমি আছি’, তুমি বুঝতে শুরু করো—“আমি সেই”, অর্থাৎ পরম ব্রহ্মই আমার স্বরূপ।” এটাই আত্মজ্ঞানের প্রাণস্পন্দন—আর এই স্পন্দনই ‘সো হম্’ ধ্বনি।
‘আমি’ বোধই তোমার অন্তরের ঈশ্বরস্বরূপ। এই বোধ প্রতিনিয়ত প্রকাশ পায় তোমার শ্বাসে—শ্বাসে উঠে আসে ‘সো’, প্রশ্বাসে নামে ‘হম্’। এই ধ্বনি—‘সো হম্’ = আমি সেই (পরম ব্রহ্ম)। এই ধ্যান (শ্বাস–স্মরণ) নিজেই একটি মন্ত্রময় জপ, যা প্রাকৃতিক ও অবিচ্ছিন্ন—কারণ এটি নিজ থেকেই ঘটে, তুমি সৃষ্টি করোনি। এই শ্বাস–মন্ত্রে স্থিত হয়ে তুমি নিজের ‘আমি’-কে পরম সত্যে মিশিয়ে দিতে পারো। এটাই আত্মস্মরণ, এটাই ধ্যান, এটাই মুক্তি।
১৬২.
পরব্রহ্ম জানে না যে সে আছে ‘আমি’ বোধই প্রথম বিভাজন। পরব্রহ্ম বা চূড়ান্ত সত্য—তাকে কোনো অভিজ্ঞতার সঙ্গে বাঁধা যায় না। কারণ, অভিজ্ঞতা ঘটতে গেলে চাই দ্বিত্ব—একজন অভিজ্ঞ (subject), আর কিছু অভিজ্ঞতযোগ্য (object)। কিন্তু পরব্রহ্ম তো অদ্বৈত—সেখানে কে কাকে জানবে? কে কী অনুভব করবে? তাই সেই অবস্থায় কোনো অভিজ্ঞতার প্রশ্নই ওঠে না।
এই পরম স্বরূপ জানে না যে সে "আছে", কারণ সেই জানার প্রয়োজনও নেই। কিন্তু যখন একদিন হঠাৎ ‘আমি আছি’ বোধ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদিত হলো, তখন যেন এই অদ্বৈত চেতনায় এক "আমি আছি" অভিজ্ঞতার আলো জ্বলে উঠল। তখনই প্রথম এই ‘আছে’ জ্ঞানের জন্ম হলো—অর্থাৎ, তখন থেকেই ব্রহ্ম জানল: “আমি আছি”। কিন্তু পরব্রহ্মের পক্ষে এই জ্ঞানেরও প্রয়োজন নেই—কারণ সে পূর্ণ, চাওয়া-বিনা, অভিজ্ঞতা-বিনা, চিন্তা-বিনা।
‘আমি’ বোধ হলো একটি আগত, আভাসস্বরূপ তরঙ্গ—যা অচল পরমে একটি হালকা চেতনার দোলা। তবে সেই দোলাও নিজের প্রয়োজন থেকে নয়—মায়ার খেলা মাত্র।
পরব্রহ্ম বা অবস্থা-অতীত স্বরূপ—সেটি কোনো সচেতন অভিজ্ঞতারও অতীত। অভিজ্ঞতা = দ্বৈততা; কিন্তু পরব্রহ্ম = অদ্বৈত; সুতরাং সেখানে অভিজ্ঞতা অপ্রাসঙ্গিক।
যখন ‘আমি’ বোধ আসে—তখন সৃষ্টি হয় প্রথম বিভাজন—“আমি আছি”—“কিছু আছে যা আমি জানি।” এই বোধই পরে গড়ায় “আমি অমুক”, “আমি অভিজ্ঞ” ইত্যাদিতে। কিন্তু মূল সত্য হলো—ব্রহ্ম কখনো নিজেকে জানে না—কারণ জানার প্রয়োজন নেই, সে নিজের মধ্যেই সম্পূর্ণ।
‘আমি’ হলো প্রকৃতির প্রকাশ—যা চেতনার কণ্ঠস্বর, কিন্তু পরব্রহ্ম চিরনীরব। ‘আমি’ বোধ না আসা পর্যন্ত, পরব্রহ্ম জানে না যে সে আছে—জানার প্রয়োজনও নেই। অভিজ্ঞতা মানেই দ্বৈততা—কিন্তু পরব্রহ্ম অদ্বৈত, তাই তা অভিজ্ঞতার অতীত। ‘আমি’ বোধ হলো প্রথম বিকৃতি—যা চেতনাকে বলে “তুমি আছো”। কিন্তু পরব্রহ্ম—নিজে সেই জ্ঞান ছাড়াই পূর্ণ, নিজের মধ্যে স্থির, নিঃশব্দ, অভিজ্ঞতাতীত।
১৬৩.
ব্রহ্মবীজ রোপণই গুরুর দৃষ্টিতে দীক্ষার প্রকৃত অর্থ। আমি যে কথা তোমাকে বলছি, তা শুধু শোনার জন্য নয়—এতে দীক্ষিত হও, অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করো। আমি তোমার ভেতরে একটি ‘ব্রহ্মবীজ’ বপন করছি—একটি বোধ, একটি নিঃশব্দ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ—“আমি কে?”, “আমি আছি”—এই বোধের উৎস কী?” যখন কোনো গুরু একজন সত্সাধক-কে সামনে পান, তখন তার মধ্যে এই বীজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদিত হয়—এটাই প্রকৃত দীক্ষা।
তার শিক্ষা জটিল নয়, সরল—সে শুধু তোমার ভেতরে ‘আমি’-র প্রকৃত উপস্থিতি জাগিয়ে তোলে। এই জাগরণই হলো ব্রহ্মজ্ঞানের বীজরোপণ। যেমন তুমি কোনো আকর্ষণীয় জিনিস একবার দেখে ফেললে—তার জন্য গভীর আকাঙ্ক্ষা জন্মায়, ঠিক তেমনই—একবার এই ‘ব্রহ্মবীজ’ পড়লে, এটা যেন তোমাকে তাড়িত করতে থাকে—ফলিত না হওয়া পর্যন্ত শান্তি নেই।
এখন আর থেমে থাকার উপায় নেই—একবার বীজ পড়ে গেলে, তুমি নিজের থেকেই এগিয়ে যাবে এই বোধকে পূর্ণ অভিজ্ঞতায় রূপান্তর করার জন্য।
প্রকৃত দীক্ষা (initiation) কোনো আচার নয়, চেতনার এক স্পর্শমাত্র—গুরুর জ্ঞান, একটি বাক্য, একটি দৃষ্টি—যা শিষ্যের অন্তঃকরণে ব্রহ্মবোধের বীজ বপন করে। এই বীজ হলো ‘আমি কে?’—এই আত্মজিজ্ঞাসার সূচনা।
একবার বপন হয়ে গেলে, শিষ্যের মধ্যে এই প্রশ্ন জ্বলে উঠে আগুনের মতো—যা তাড়িয়ে নিয়ে যায় আত্মজ্ঞান পর্যন্ত। দীক্ষার অর্থ হলো ‘ব্রহ্মতত্ত্বের বীজ’ দেওয়া, এবং সেই বোধকে আবৃত্ত নয়, অভিজ্ঞতা করে তোলা।
গুরু বলেন না—“তুমি ব্রহ্ম জেনে গেছ”; তিনি বলেন—“আমি বীজ বপন করেছি, এখন তুমি নিজেই তাকে অঙ্কুরিত করবে, যতক্ষণ না তুমি নিজেই হয়ে ওঠো ব্রহ্ম।”
এই বীজই তোমাকে পুনরাবৃত্তির, অশান্তির, কামনার বাইরে নিয়ে গিয়ে স্থাপন করবে চিরসন্তুষ্ট, চিরসত্য আত্মজ্ঞানে।
গুরু যখন একজন খাঁটি অনুসন্ধানী ব্যক্তিকে সামনে পান, তখন তিনি তার মধ্যে ‘আমি কে?’ এই বোধ রোপণ করেন—এটিই প্রকৃত দীক্ষা। এটি কোনো আচার নয়, বরং চেতনার অগ্নিসংক্রামণ। এই বীজ একবার বপন হলে, শিষ্য আর ফিরে যেতে পারে না—সে চলতে থাকে জিজ্ঞাসা, ধ্যান ও অভিজ্ঞতার পথ ধরে। এই ‘ব্রহ্মবীজ’-ই একদিন আত্মস্বরূপে পরিণত হয়।
১৬৪.
সব কিছুই ‘আমি’—সব কিছুই ব্রহ্ম বিস্মৃত হয়ে লীন ‘হও’ স্বরূপে। এই ‘আমি আছি’ বা ব্রহ্ম–অবস্থা—এটাই একমাত্র বাস্তব, যা সব কিছুকে ধারণ করে, সব কিছুতে বিরাজ করে। যা-কিছু তুমি দেখছ, জানছ, অনুভব করছ—সব কিছুর ভিত্তি এই ‘আমি’।
আসলে ‘আমি’-ই ব্রহ্ম। এই ‘আমি’-বোধ–ই সৃষ্টি করেছে জগৎ, স্থান, সময়, চিন্তা, পরিচয়—সব কিছুর সূচনা এই বোধের আগমনে।
তোমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাও তাই বলে—গভীর নিদ্রার সময়, যখন ‘আমি’ নেই—তখন ছিল কি কোনো জগৎ? না তোমার পরিচয় ছিল, না চিন্তা, না স্থান। কিন্তু যখনই ‘আমি’ জেগে উঠল, তখনই এল স্থান, সময়, জগৎ, চিন্তা—সব কিছু এই ‘আমি’-র সঙ্গে উদিত হলো। সুতরাং, যা-কিছু দেখা যায়, সব ‘আমি’-র প্রকাশ, আর ‘আমি’ নিজেই ব্রহ্ম।
এখন তোমার সাধনা একটিই—সব কিছু ভুলে যাও, সব বহিরঙ্গ চিন্তা–ধারণা ফেলে দাও এবং এই ব্রহ্মস্বরূপ ‘আমি’-তে সম্পূর্ণরূপে মিশে যাও। এই লীনতাই মুক্তি। এই লীনতাই পরম অভিজ্ঞতা নয়—অভিজ্ঞতাহীন, একাত্ম, নিঃশব্দ অস্তিত্ব।
ব্রহ্ম কোনো পৃথক সত্তা নয়—এই ‘আমি’ বোধ-ই হলো ব্রহ্মের প্রথম প্রকাশ, এবং একমাত্র উপলব্ধির দ্বার। জগৎ, পরিচয়, অভিজ্ঞতা—সব কিছু এই ‘আমি’ বোধের পরে আসে, তাই তা মায়া বা প্রক্ষেপ।
গুরুর ভাষায়: “তুমি ব্রহ্মকে খুঁজো না, বরং সব কিছু ভুলে তোমার 'আমি'-তে স্থিত হও—সেখানেই ব্রহ্ম নিজেকে উন্মোচন করবে।” এই আত্মস্মরণ এমন এক ধ্যানযাত্রা—যেখানে সমস্ত বহিরঙ্গ গঠন ঝরে পড়ে, এবং প্রকাশ পায় নিজের ভেতরের বিস্তীর্ণ নীরব ব্রহ্মচেতন।
এই লীন অবস্থা অভিজ্ঞতার অতীত—কারণ সেখানে নেই কোনো জাননেওয়ালা, জানা বস্তু—কেবল অদ্বৈত চৈতন্য। যা-কিছু তুমি জানো বা দেখো—তার ভিত্তি এই ‘আমি’ বোধ, এবং সেটিই ব্রহ্ম। ‘আমি’-র আগমনের আগ পর্যন্ত কিছুই ছিল না—জগৎ বা স্থান কিছুই নয়, যতক্ষণ না ‘আমি’ এসেছে।
তাই সমস্ত সৃষ্টি, অভিজ্ঞতা, সময়, ব্যক্তি—সব কিছুই এই ব্রহ্মস্বরূপ ‘আমি’-র অভিব্যক্তি। এই উপলব্ধির পর একটিই সাধনা থাকে— সব কিছু ভুলে যাও, এবং ব্রহ্মে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করো। এই বিলীনতাই চূড়ান্ত মুক্তি, যেখানে নেই জ্ঞান বা অজ্ঞান—কেবল সত্তামাত্র, ব্রহ্মমাত্র।
১৬৫.
‘আমি’-ই সৃষ্টি, ‘আমি’-তেই মুক্তি একমাত্র পথ, একমাত্র সত্য। যা-কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তা সবই সৃষ্টি হয়েছে এই ‘আমি আছি’ জ্ঞানের দ্বারা। এই একটিমাত্র ‘আমি’ বোধ–ই সব কিছুর উৎস—তোমার নাম, দেহ, পরিচয়, অভিজ্ঞতা—সবই এর মধ্য থেকে উদ্ভূত। তুমি যা-ই ভাবো, জানো, অনুভব করো—সব কিছু এই ‘আমি’-র মধ্যে নিহিত। প্রথম কাজ হলো—এই সত্যটিকে গভীরভাবে বোঝা ও গ্রহণ করা যে: “হ্যাঁ, এটাই—‘আমি’-ই সব কিছুর শুরু ও শেষ।”
এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ—এই বোঝাকে অটল নিশ্চিত বিশ্বাসে রূপান্তর করা। কীভাবে? এই ‘আমি’-তে স্থিত থেকে, এই ‘আমি’-র উপর মনোনিবেশ করে, এই ‘আমি’-কে ধ্যান করে। এই ধ্যানই হচ্ছে সেই স্থিতি, সেই সাধনা, যার মাধ্যমে বোঝা রূপ নেয় অভ্যন্তরীণ নির্ভরতায়—যাকে কোনো যুক্তি, কোনো সন্দেহ, কোনো বাহ্যিক শক্তি ভাঙতে পারবে না। এই অবস্থাতেই ‘আমি’-র গভীরতর প্রকৃতি প্রকাশ পায়—যেখানে ‘আমি’ নিজেই লীন হয়ে যায় তার উৎসে। এবং এই একমাত্র পথেই—তুমি আত্মা থেকে ব্রহ্মে, অস্তিত্ব থেকে নিরস্তিত্বে, সীমা থেকে অসীমে অতিক্রম করো।
‘আমি আছি’—এই বোধই হলো চেতনার সূচনা, যা থেকে গড়ে ওঠে ব্যক্তিত্ব, দেহবোধ, জগৎ ও সম্পর্ক। এই বোধটাই সব কিছু সৃষ্টি করেছে—তাই এর বাইরে কোনো সত্য নেই। এই সত্য প্রথমে বুদ্ধিগত উপলব্ধি হিসেবে আসে, কিন্তু মুক্তির জন্য সেটিকে রূপ দিতে হয় অভ্যন্তরীণ দৃঢ় বিশ্বাসে।
এই বোধে স্থিতি ও ধ্যান হলো সেই অনুশীলন, যার ফলে অন্তর থেকে উঠে আসে: “এটাই একমাত্র পথ—আর কিছুই নেই।” এই স্থিতির ফলে ‘আমি’ বোধ নিজেই ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যায়—যেমন আলোক দেখে ঘুম ভাঙে, কিন্তু যখন চোখ খোলে, আলো নিজেই লীন হয়ে যায় দৃষ্টিতে। এই ধ্যানই সেই সূক্ষ্মতর অগ্নি—যা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় সব কিছু, রেখে যায় শুধু নিঃশব্দ আত্মস্বরূপ।
‘আমি আছি’ বোধ–ই সব কিছুর স্রষ্টা—নাম, দেহ, জগৎ, পরিচয়—সবই এর প্রকাশ। এই সত্য প্রথমে বোঝো, তারপর স্থিত হও এই বোধে। এই স্থিতিই ধ্যান, এই ধ্যানই সাধনা—যা বোঝাকে রূপ দেয় অটল অভ্যন্তরীণ নিশ্চিততায়। এই স্থিতির মধ্যেই ‘আমি’ নিজেকে অতিক্রম করে, বিলীন হয় পরম ব্রহ্মে—যেখানে নেই কিছু জানার, কিছু চাওয়ার, কিছু রাখার। এটাই একমাত্র পথ, এর বাইরে আর কিছুই নেই।