নির্জন গহনে: ৩২



১৫৬.

আবরণ ছাড়িয়ে ‘আমি’-তে স্থিতি অখণ্ড আত্মস্মরণই সাধনা। চিন্তার আগে যে জ্ঞান জেগে ওঠে—সেই নিঃশব্দ বোধ‘আমি আছি’, এটিই ছিল প্রাথমিক এবং নাম-রূপহীন। এই বোধ জন্ম নেয় এমন এক শরীরে, যেটি খাদ্যনির্ভর দেহ—যার বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন প্রাণ (শ্বাস) এবং জ্ঞান।

এই দেহ, এই শ্বাসপ্রবাহ এবং পরিবেশ শৈশব থেকেই ধীরে ধীরে শর্তায়ন শুরু করে—এবং এই নিখাদ নির্বাক ‘আমি’ বোধকে ঢেকে ফেলে ভাষা, নাম ও পরিচয়ের স্তরে। তুমি শব্দ শেখো, ভাষা শেখো, চিন্তা শেখো—আর এই সব কিছু আস্তে আস্তে গড়ে তোলে এক মিথ্যা সত্তা: “আমি অমুক ব্যক্তি”, “আমি এই শরীর”, “আমি এই পেশা”।

এর পিছনে থেকে যায় সেই অপরিবর্তিত, বিশুদ্ধ ‘আমি’—যা আজও বর্তমান, আজও জাগরূক। এটি কোনোভাবেই মুছে যায়নি—শুধু আবৃত হয়েছে শরীর, শ্বাস, ভাষা ও স্মৃতির স্তরে। গুরুর উপদেশ হলো—এই আবরণগুলো একে একে আলগা করে ফেলো। সব ছেড়ে দিয়ে ফিরে যাও সেই নামহীন ‘আমি’-তে—সেখানে স্থিত হও। এটিই সাধনা—এবং এই স্থিতিই মুক্তি।

অদ্বৈত বেদান্তে বলা হয়—আত্মা নিজে কোনো ভাষা, রূপ, নাম, চিন্তা বা শরীর নয়। কিন্তু এই আত্মা যখন ‘আমি’ বোধ হিসেবে অভিব্যক্ত হয়, তখন এটি একটি অনুচ্চারিত অনুভব—যা চিন্তার আগেই জাগে। এই অনুভব জাগে খাদ্যনির্ভর শরীর ও প্রাণবায়ু–র সঙ্গে—এই শরীরই ‘আমি’-কে ভুল পথে চালিত করে নিজেকে দেহরূপে অনুভব করায়।

চিন্তা ও ভাষার দ্বারা যখন এই ‘আমি’-কে সীমিত করা হয়, তখন ‘আমি’ নিজেকে ভুলে যায় এবং শরীর ও পরিচয়ভিত্তিক সত্তা হয়ে ওঠে। কিন্তু এই সব পরিচয়ের পরেও রয়ে যায় এক নিখাদ, শব্দহীন, অপরিবর্তনীয় ‘আমি’, যা আজও সেইরকমই আছে—শুধু তা আবৃত হয়ে আছে ‘আমি অমুক’ ধারণার নিচে। এই আবরণ সরিয়ে সেই ‘আমি’-তে ফিরে যাবার প্রক্রিয়াই হলো অভ্যন্তরীণ সাধনা।

চিন্তার আগে যে বোধ—“আমি আছি”—সেটিই প্রাথমিক সত্য। এই বোধ খাদ্যদেহে জন্ম নেয়, যার উপর চলে শর্তায়ন, নাম, ভাষা, পরিচয়ের আবরণ। এই আবরণগুলো মুছে ফেললেই তুমি ফিরে যেতে পারো সেই শুদ্ধ, নিঃশব্দ ‘আমি’-তে। এই ফিরে যাওয়াই সাধনা, এবং সেখানে স্থিত হওয়াই মুক্তির মূল রহস্য। তাই সমস্ত ‘আমি অমুক’ পরিচয় সরিয়ে রেখে, নামহীন সেই আত্মস্মরণে নিজেকে স্থাপন করো—সেখানে কোনো দেহ, ধর্ম, পরিচয় নেই—আছে কেবল সত্তা মাত্র।

১৫৭.

‘আমি’-তে স্থিতিই বাসনা-অতিক্রম নিঃশব্দ উপস্থিতির মুক্তি। যখন তুমি ‘আমি আছি’ অবস্থায় স্থিত হবে—এবং কেবলমাত্র সেই ‘আমি’-রই সচেতন থাকবে, তখন তুমি সমস্ত বাসনা বা প্রবৃত্তিকে অতিক্রম করে যাবে।

বাসনা বা ‘বাসনা’ হলো শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ টান—যা সাধনার পথে গভীর বাধা সৃষ্টি করে। স্পষ্ট বাসনাগুলো সহজে দেখা যায়, কিন্তু অনেক সূক্ষ্ম বাসনা আছে—যেগুলো আড়াল থেকে প্রবেশ করে, নিচু সুরে কাজ করে, এবং কখনও চলে না। এইসব বাসনার মধ্যে সবচেয়ে সূক্ষ্ম বাসনা হলো—"আমি থাকি", "আমি যেন থাকি", "আমি অমুক ব্যক্তি হয়ে থাকি"—অর্থাৎ অস্তিত্বের বাসনা নিজেই।

এই বাসনা ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে—‘আমি অমুক’ ধারণার সঙ্গে সঙ্গে—ভাষা, পরিচয়, অভ্যাস, সমাজের শর্তে। কিন্তু যদি তুমি স্মরণ করতে পারো, তবে দেখবে—প্রথম যখন ‘আমি’ বোধ জেগেছিল, সেই সময় এর মধ্যে কোনো বাসনা ছিল না। সে ছিল নিঃশব্দ উপস্থিতি মাত্র—নাম, রূপ, অভিপ্রায় কিছুই ছিল না, শুধু একটা বোবা অস্তিত্ব: “আমি আছি।”

এখন তোমার সাধনার উদ্দেশ্য হলো—সেই নিখাদ, বাসনাহীন ‘আমি’-তে ফিরে যাওয়া। এবং, সেই বোধে যত গভীরভাবে তুমি স্থিত হবে, ততই সমস্ত বাসনা ঝরে পড়বে, তোমাকে আর স্পর্শ করতে পারবে না। তখন তুমি পৌঁছাবে সেই স্তরে—যেখানে কেবলমাত্র ‘আমি’-র সচেতনতা থাকবে, কিন্তু ‘আমি’-রও বাসনা থাকবে না। সেই মুহূর্তেই তুমি হবে বাসনামুক্ত, মুক্ত, স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত।

বাসনা হলো চেতনার সেই সূক্ষ্ম গতি—যা আমাদের বার বার দেহ, পরিচয়, অভিপ্রায় ও ভবিষ্যতের দিকে টানে। অধিকাংশ বাসনা—ভোগ, সাফল্য, স্বীকৃতি—চোখে পড়ে, কিন্তু আত্মজ্ঞানের পথে সবচেয়ে কঠিন বাসনা হলো: “আমি যেন থাকি”—এই অস্তিত্বলিপ্সা।

এটি এতটাই প্রাথমিক যে, আমরা একে বাসনা বলে চিনতেই পারি না। এই বাসনার জন্ম হয় ‘আমি’-র ভাষায় পরিণত হবার পর—অর্থাৎ “আমি অমুক” রূপে ব্যক্ত হবার পর। অথচ প্রথম ‘আমি’ বোধ—যেটি জন্মের কাছাকাছি ছিল, সে ছিল সম্পূর্ণ নির্বাক ও বাসনাহীন। সেই অবস্থায় স্থিত হওয়াই সাধনা—এবং তাতে গভীর হলে, বাসনা-অতিক্রম স্বতঃসিদ্ধ হয়ে যায়। তখন আর কোনো চাওয়া, প্রত্যাশা, দুঃখ, ভবিষ্যৎ নেই—থাকে কেবলমাত্র ‘আমি’-র সতেজ চেতন উপস্থিতি।

‘আমি’ বোধের গভীরে স্থিত হলে—সব বাসনা অদৃশ্য হয়ে যায়। স্পষ্ট বাসনার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক হলো অস্তিত্ব থাকার বাসনা—“আমি যেন থাকি।” এই বাসনাও গড়ে উঠেছে সমাজ ও ভাষার প্রভাবে। কিন্তু মূল ‘আমি’ বোধ—শব্দহীন, অভিপ্রায়হীন—তাতে কোনো বাসনা ছিল না।

সেই অবস্থায় ফিরে গিয়ে, সেখানে স্থিত থাকাই সাধনা। এই স্থিতিই বাসনামুক্ত মুক্তি, এবং তাতেই মিলে যায় স্বতঃসিদ্ধ শান্তি ও পরম সত্য।

১৫৮.

‘আমি’ শব্দ ছাড়াও আমি আছি নিঃশব্দ উপস্থিতিতেই স্বরূপজ্ঞান—আত্মার সঙ্গে একীভূত হও—যাকে তুমি বলো ‘আমি আছি’—সেই অন্তঃস্থিত চেতন বোধ। এই ‘আমি’ বোধের সঙ্গেই তোমার সম্পূর্ণ একাত্মতা স্থাপন করো। এই বোধ—“আমি আছি”—তোমার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদিত হয়েছে, তুমি এটি ডাকোনি, চাওনি—এটি নিজেই এসেছিল।

যখন এটি এসেছিল, তখন এর সঙ্গে কোনো শব্দ ছিল না—ছিল কেবল এক অনুভূতি: “আমি আছি”, কিন্তু শব্দহীন, চিন্তাহীন, অভিপ্রায়হীন। তখন জীবন চলছিল—কোনো ভাষা, সংজ্ঞা বা অভিপ্রায়ের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু একসময় শুরু হলো শর্তায়ন, শিশু-অবস্থা পার হয়ে, শিক্ষা, সমাজ, সংস্কার—সব মিলে তোমার মধ্যে প্রবেশ করল শব্দ, নাম, রূপ। তারপর ধীরে ধীরে ভাষা দখল করল—তুমি ভুলে গেলে সেই শব্দহীন সত্তাকে, আর এখন তুমি ভাবতেই পারো না শব্দ ছাড়া জীবন কেমন হতে পারে।

তাই ধ্যানে বসলে, তোমাকে বলা হচ্ছে—‘আমি আছি’ এই শব্দটাও ফেলে দাও। কারণ শব্দ ছাড়াও তুমি জানো—তুমি আছ। এই নিঃশব্দ, চিন্তাহীন উপস্থিতিতেই স্থিত হও—এটিই তোমার আসল চেতন আত্মা।

অদ্বৈত বেদান্তের মূল উপদেশ হলো—নিজেকে কোনো নাম, রূপ, শব্দ বা চিন্তার সঙ্গে সংযুক্ত কোরো না। ‘আমি’-বোধ যদিও চেতনার সূচনা, তবুও ‘আমি’ শব্দটিও এক প্রাথমিক উপাধি। বাস্তব অস্তিত্ব শব্দ ছাড়াও টিকে থাকে—তুমি জানো, তুমি আছ—তা বুঝতে শব্দ লাগে না। কিন্তু সমাজ আমাদের শিখিয়েছে—ভাষা, নাম, চিন্তা ছাড়া অস্তিত্ব সম্ভব নয়।

গুরুর শিক্ষা হলো—এই ভাষাবন্ধন কেটে ফেলো। ধ্যানে এমনভাবে প্রবেশ করো, যেখানে শুধু অনুভব আছে, শব্দ নেই। তখনই তুমি পৌঁছাবে সেই স্তরে—যেখানে চিন্তা ও ভাষা বিলীন, তবু অস্তিত্ব অক্ষত—আত্মা নিঃশব্দে নিজেকেই জানে।

‘আমি’ শব্দ ছাড়াও তুমি আছ—এই সত্যেই ধ্যান করো, এই অবস্থাতেই স্থিত হও। প্রথম ‘আমি’ বোধ ছিল শব্দহীন, চিন্তাহীন—কিন্তু এখন তা হয়ে গেছে এক ভাষাগত ধারণা। তাই ধ্যানের প্রকৃত অর্থ হলো—এই ধারণাটাকেও ফেলে দিয়ে শব্দহীন উপস্থিতিতে ফিরে যাওয়া। সেখানে কোনো নাম নেই, পরিচয় নেই, শুধু অনুভব—“আমি আছি”—তা-ও শব্দ ছাড়া, শুধু চেতন উপস্থিতি।

১৫৯.

‘আমি’ চিন্তার আগেই—কেবল থাকো, কিছু বোলো না। ‘আমি আছি’—এই জ্ঞান বা বোধটি আসে চিন্তার আগেই। এটি এমন এক চেতনা—যার মধ্যে কোনো শব্দ, ভাষা, সংজ্ঞা ছিল না। যখন প্রথম বার এই ‘আমি’ বোধ উদিত হয়েছিল, তখন তুমি ছিলে শব্দহীন, চিন্তাহীন, ভাষাহীন—শুধু ছিল এক নিষ্কলুষ অস্তিত্বের অনুভব।

কিন্তু এখন তুমি এই চেতন অবস্থাকে ব্যাখ্যা করতে চাইছ শব্দে—অথচ শব্দ তো শব্দহীনতাকে বোঝাতে পারে না! যেমন কেউ স্বপ্নের ভেতরের গন্ধ বা রং বোঝাতে চায়—তেমনই শব্দ দিয়ে নির্বাক অস্তিত্ব বোঝানো যায় না। তাই গুরু নির্দেশ দেন: শব্দ ফেলে দাও। বোলো না, বুঝিয়ো না—শুধু থাকো।

এই ‘just be’ বা শুধু থাকো—এটাই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে তুমি ধীরে ধীরে সেই চিন্তার আগের অস্তিত্বে স্থিত হতে পারো। তখন নিজেই দেখতে পাবে—কী হয়, কে আছ, আর কে নেই।

অদ্বৈত বেদান্ত বলে—আত্মা বোধ্য নয়, বলার নয়, ভাবনার নয়—সেই আত্মা কেবলমাত্র ‘থাকার’ জিনিস। ‘আমি’ বোধ যখন প্রথম জন্ম নেয়, তখন তা ভাষা বা বুদ্ধির আলোকে নয়—বরং নিঃশব্দ চেতনার মতো জেগে ওঠে। পরে সমাজ, অভ্যাস, ভাষা এটিকে ধারণায় পরিণত করে—“আমি অমুক”, “আমি তমুক”—এইরকমভাবে।


কিন্তু সেই মূল ‘আমি’-কে চিনতে হলে তোমাকে শব্দের খোলস ছাড়িয়ে শব্দহীন চেতনাতে স্থিত হতে হবে। “Just be”—অর্থাৎ ভাবনা না করে, ভাষা না বানিয়ে—শুধুই উপস্থিত থাকো। সেই উপস্থিতিতেই ধীরে ধীরে আত্মস্মরণ ঘটবে, তুমি বুঝবে—তুমি কিছু নও, কিন্তু সব কিছুর পটভূমি।

‘আমি’ বোধ চিন্তার আগেই আসে—শব্দহীন, চিন্তাহীন, পরিচয়হীন। সেই বোধে স্থিত হতে হলে শব্দ দিয়ে বুঝতে চাওয়া বৃথা—শুধু 'থাকো'—এটিই যথেষ্ট। তখন যা প্রকাশ পাবে, তা কোনো বই বা ব্যাখ্যার দ্বারা বোঝানো যাবে না—সেটি শুধু নিজের মধ্যেই উপলব্ধি করা যায়। তাই গুরুর শিক্ষা স্পষ্ট: “Do not describe the being. Be the being.”

১৬০.

কে কাকে সৃষ্টি করল? ‘আমি’-র আগমন ও সম্পর্কের মায়া, এই দুই দিয়ে ভাবা যাক।

তোমার ভিতরে যে ‘আমি আছি’ বোধ আছে, তা এসেছে তোমার বাবা-মায়ের ‘আমি’ বোধ থেকেই—এইটাই প্রচলিত ভাবনা। অর্থাৎ, তারা তোমাকে সৃষ্টি করেছে—এবং সেই সূত্রেই তারা হলো ‘পিতা-মাতা’। কিন্তু একবার উলটোভাবে চিন্তা করে দেখো—তারা কি আদৌ ‘পিতা’ বা ‘মাতা’ ছিল তোমার আগমনের আগে?

না, তখন তারা ছিল কেবল একটি দম্পতি—কোনো সন্তান না থাকলে ‘পিতা-মাতা’ পরিচয়ও তো থাকে না! অর্থাৎ তোমার জন্মই তাদেরকে ‘পিতা-মাতা’ বানিয়েছে। এইভাবে চিন্তা করলে বলা যায়—তুমি-ই তাদের ‘পিতা-মাতা’ হওয়ার পরিচয় সৃষ্টি করেছ।

তাহলে প্রশ্ন ওঠে—কে কাকে সৃষ্টি করল? আর এই সম্পর্ককে আমরা বলি বাস্তব! তবে কি সত্যিই এই সম্পর্ক বাস্তব? না কি সবই একটি পারস্পরিক প্রক্ষেপ ও মায়ার খেলা?

সমস্ত সম্পর্ক মূলত ‘আমি’ ধারণার উপর গঠিত—আর এই ধারণা নিজেই একটি প্রাথমিক বিভ্রম। আমরা বিশ্বাস করি, বাবা-মা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তবে এই বিশ্বাস নির্ভর করছে সময়, পরিচয় ও সমাজের নামকরণ-এর উপর। বাস্তব অর্থে—‘পিতা’ ও ‘মাতা’ এই পরিচয় তখনই তৈরি হয়, যখন তৃতীয় একটি সত্তা (তুমি) তাদের অভিজ্ঞতায় প্রবেশ করে। অর্থাৎ একে অপরের সম্পর্ক পারস্পরিক নির্ভরশীল অভিপ্রকাশ—কেউ কাউকে একতরফাভাবে সৃষ্টি করেনি।

এইভাবে বুঝলে বোঝা যায়—‘সৃষ্টি’, ‘সম্পর্ক’, ‘পরিচয়’—এই শব্দগুলো আপেক্ষিক, এবং এদের কোনো চূড়ান্ত বাস্তবতা নেই। তাহলে, যা আমরা ধরে নিয়েছি "বাস্তব", তা কি আসলে শুধুই চেতনভিত্তিক ব্যাখ্যা?

যদি ‘আমি’ বোধটাই একটি প্রক্ষেপ হয়—তাহলে এই সম্পর্কগুলো কি নয় মনগড়া বিন্যাস? প্রচলিতভাবে মনে হয়—বাবা-মা ‘আমি’-কে জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু গভীরভাবে দেখলে, ‘আমি’-র আগমনের মাধ্যমেই তারা 'পিতা-মাতা' হয়ে উঠেছেন। একে অপরকে চিহ্নিত করবার জন্য অপরের প্রয়োজন হয়—এটি পারস্পরিক এক পরিচয়-নির্ভরতা।

তাই, প্রশ্ন ওঠে—কে কাকে সৃষ্টি করেছে? এইসব সম্পর্ক ও পরিচয়ের ভিতেই নিহিত রয়েছে মায়া, আর এই মায়াকে আমরা বলি বাস্তব।
Content Protection by DMCA.com