১৫১.
‘আমি’–র উৎস সন্ধানে মনের খেলা ও আত্মবোধের অন্তঃসার সম্পর্কে বলছি।
এই মৌলিক ধারণা—‘আমি আছি’—এটি প্রথম কোথা থেকে এল? তুমি কি এটি ডেকেছিলে? সৃষ্টি করেছিলে? না—এটি এসেছিল একেবারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে, তোমার কোনো চেষ্টাই এতে ছিল না। সেই প্রাথমিক মুহূর্তে, এই ‘আমি’ ছিল নিষ্কলঙ্ক, শব্দহীন, নিরাকার—শুধু একটি বোধ মাত্র—"আমি আছি", কিন্তু "আমি কে" নয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই নিখাদ ‘আমি’ বোধের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে নানা রূপ, নানা পরিচয়, নাম, সম্পর্ক, ইতিহাস—এবং গড়ে ওঠে এক জটিল মিথ্যা পরিচিতির কাঠামো। তখন ‘আমি’–র সঙ্গে জুড়ে বসে—"আমি অমুক", "আমি পিতা", "আমি কন্যা", "আমি শিক্ষক", "আমি ভালো-খারাপ" ইত্যাদি—সবই হয়ে যায় একেকটি মনের নির্মিতি।
কিন্তু গুরুর শিক্ষা অনুযায়ী যখন তুমি বুঝে ফেলো যে, এই ‘আমি’ নিজেই এক প্রাথমিক ধারণা, এবং সেটি সত্য নয়, তখন মূলেই কুঠারাঘাত ঘটে। এই ‘আমি’ যদি মিথ্যা হয়—তবে এর উপর গড়ে ওঠা সমস্ত চিন্তা, বোধ, পরিচয়, সুখদুঃখ—সবই হয়ে যায় মানসিক বিনোদনমাত্র, এক অন্তঃস্থ মায়াজাল। এর বাইরে যা-কিছু মনে হয় বাস্তব, সে-ও এই প্রাথমিক ভ্রান্তির পরিণাম। তাই বুঝে নাও—সবই কেবল মনগড়া খেলা, আর তুমি সেই খেলার দর্শক মাত্র।
অদ্বৈত বেদান্ত বলে—তোমার পরিচয়-সংকট, আনন্দ, কষ্ট, ভয়, দুঃখ—সব কিছুই ‘আমি’ ধারণার উপর দাঁড়িয়ে। এই ‘আমি’ যদি প্রকৃত আত্মা হতো, তবে তা কখনও পরিবর্তনশীল হতো না, কখনও আত্ম-ভুল করত না। কিন্তু এই ‘আমি’ নিজেই এক স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদিত বিভ্রম—যা জন্মের পর আসে, এবং মৃত্যুর সময় হারিয়ে যায়। এই বিভ্রমে বিশ্বাস করেই তুমি দুঃখ পাও, আনন্দ পাও, পথ খোঁজো। কিন্তু একবার যদি বুঝতে পারো—এই ‘আমি’–র মূলে মিথ্যা, তবে এর উপরে গড়ে ওঠা সব কিছুই অস্থায়ী, এবং তাই—কেবল এক মানসিক থিয়েটার। এই উপলব্ধিই হলো বেদান্তীয় মুক্তির সূত্র—নেতি নেতি (এটি নয়, সেটি নয়) দিয়ে শেষে যা থাকে, তা হলো ‘আমি’-র অতীত সেই চিরন্তন নির্জন আত্মা।
‘আমি’ বোধ এসেছিল একদিন হঠাৎ, কোনো চেষ্টায় নয়—এটি ছিল বিশুদ্ধ অস্তিত্বের বোধ। তারপর সমাজ, অভ্যাস, স্মৃতি, অভিজ্ঞতা এটিকে রূপ দেয়—"আমি অমুক", "আমি তমুক" বলে পরিচয় গড়ে তোলে। কিন্তু গুরুর শিক্ষা অনুযায়ী, যখন তুমি বুঝে ফেলো—এই ‘আমি’–ই মূল বিভ্রম, তখন তার ওপর দাঁড়ানো সমস্ত কিছু মনের খেলা বলে প্রকাশিত হয়।
তখন বেঁচে থাকা আর সাধনা, সবই হয় নিঃশব্দভাবে আত্মসাক্ষী হয়ে থাকা—নির্বাক দর্শক হয়ে থাকা, এই মায়ার মঞ্চে।
১৫২.
‘আমি’—স্মৃতির ছায়া, বাস্তবতার স্পর্শহীন।
এই যে স্মৃতি—“আমি আছি”, এটি না সত্য, না মিথ্যা—এর কোনো গুণ নেই, এটিকে কোনো বিচারেই ধরা যায় না। এটি কেবল একটি অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা, যা মনে হয় যেন আছে, কিন্তু আসলে আছে বলেও নয়।
ভাবো তো—তোমার জীবনের ধারাবাহিকতা কী দিয়ে রক্ষা পায়? একটিই ভিত্তি—এই স্মৃতি: “আমি আছি”; তার সঙ্গে যুক্ত হয়: “আমি অমুক ব্যক্তি, আমি এই জগতে আছি, আমি এই দায়িত্ব পালন করি…” এইভাবেই ‘আমি’ স্মৃতি একটি পরিচয়, দায়িত্ব, ইতিহাস ও ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তোলে। কিন্তু একটু গভীরভাবে দেখো—এই ‘আমি’–র কী বিচিত্র খেলা! এটি না সত্য, না মিথ্যা—ঠিক যেমন স্বপ্ন: স্বপ্ন যে ঘটেছে, তা অস্বীকার করা যায় না, তবে তার ভিতরের কনটেন্ট, চরিত্র, ঘটনা—সবই অসত্য।
তেমনই এই ‘আমি’—তোমার প্রকৃত অস্তিত্বের উপর একটি প্রক্ষেপ, একটি উত্থান মাত্র, যা কখনও বাস্তবতার স্তরে প্রবেশ করতে পারে না। এটি সবসময় কেবল একটি উপস্থিতির ছায়া, একটি অনুভূতিমাত্র, কখনও সত্য চৈতন্য নয়।
অদ্বৈত বেদান্তে ‘আমি’ বোধকেই প্রথমতম মৌলিক ধারণা (primary concept) বলা হয়—এটি চেতনার প্রথম বিকাশ, কিন্তু এটিও পরিবর্তনশীল। এই ‘আমি’–র স্মৃতি যতক্ষণ ধরে থাকে, ততক্ষণ ধরে আমাদের পরিচয়, সময়, সম্পর্ক ও দায়িত্বও টিকে থাকে। কিন্তু এই ‘আমি’–কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—এটি কোনো বাস্তব সত্তা নয়, বরং একটি অভ্যাসজাত স্মৃতি। ঠিক যেমন একটি স্বপ্ন ঘটে, অথচ সত্য নয়, তেমনি এই ‘আমি’ উপস্থিতির অনুভব থাকে, কিন্তু তা পরম সত্য নয়।
এটি এমন এক ছায়া, যা সত্য চৈতন্যের উপর ভাসমান, তবে নিজের সত্তায় কখনও পৌঁছতে পারে না। এটি এমন এক প্রতিচ্ছবি, যা প্রাথমিক বাস্তব মনে হয়, কিন্তু যার পেছনে যদি তাকানো যায়—তাহলে ধরা পড়ে চিরন্তন নিরাকার সত্তা, যার কোনো স্মৃতি নেই, কেবল চিরবর্তী ‘অবস্থিতি’।
‘আমি’–র স্মৃতি সব অভিজ্ঞতার ভিত্তি—কিন্তু তা না সত্য, না মিথ্যা—এক ধরনের মানসিক ছায়া মাত্র। ঠিক যেমন স্বপ্নে কিছু ঘটে, অথচ বাস্তবে কিছুই ঘটে না—তেমনি এই ‘আমি’ বোধ ঘটে, তবে বাস্তবতাকে কখনও স্পর্শ করে না। এটি কেবলমাত্র অস্তিত্বের উপর একটি অনুভব, যা চেতনার উপর ভাসমান, কিন্তু যা কখনও আত্মার অংশ নয়।
গুরুর শিক্ষা হলো—এই ‘আমি’–কে চিহ্নিত করো, এবং বুঝে ফেলো যে, এটি কেবল প্রক্ষেপ, প্রাক্-ধারণা। তখন এই স্মৃতি নিজে-নিজেই ঝরে যাবে—এবং যা থাকবে, তা হলো শুদ্ধ, নিরুপাধি, নিরাকার চেতনা।
১৫৩.
‘আমি’–ই জগৎ উৎসে ফিরে চেতনার জন্মসূত্রে প্রবেশ করে। এই যে ‘আমি আছি’—এই বোধটাই হচ্ছে গোটা জগতের ভিত্তি। আসলে ‘আমি’–ই জগৎ। এই জগৎ, এই সময়, এই ব্যক্তি, এই দায়িত্ব, সম্পর্ক, জ্ঞান—সব কিছু দাঁড়িয়ে আছে এই একটিমাত্র অনুভবের উপর: "আমি আছি"। যতই তুমি এই ‘আমি’–র প্রকৃতি বুঝতে শুরু করবে, ততই তুমি উপলব্ধি করবে—এই বোধ না থাকলে, কোনো জগৎও নেই।
গভীর ঘুমে তুমি যখন ‘আমি’ বোধ করো না—তখন তো জগৎও নেই, কোনো অনুভব নেই—না আছে স্থান, না কাল, না পরিচয়। অর্থাৎ ‘আমি’–র আগমনের আগেই সব অনুপস্থিত। তাহলে বুঝতেই পারো—‘আমি’–ই হলো শুরু, এবং ‘আমি’–ই জগৎ। তাই গুরুর উপদেশ হলো—এই ‘আমি’–র উৎসে ফিরে যাও। শুধু একবার দেখেই নয়, একটানা বহু সময় ধরে এই বোধে স্থিত হও। তখনই তোমার সামনে প্রকাশিত হবে—এই ‘আমি’–র আগমন কোথা থেকে, কীভাবে, কখন হলো। এই জ্ঞানই খুলে দেবে চেতনার উৎস ও চূড়ান্ত সত্যের দ্বার।
অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে, ‘আমি’ হলো সত্তার প্রথম অভিব্যক্তি। এই ‘আমি’ উদয় না হলে জগৎ অভিজ্ঞতাযোগ্য হয় না। তাই বলা হয়: জগৎ জ্ঞাত হয়, কারণ 'আমি' বোধ জাগে। কিন্তু এই ‘আমি’ নিজেও একটি অদ্ভুত এবং রহস্যময় অনুভব—যা হঠাৎ করেই জন্ম নেয়, এবং সব কিছুকে উপলব্ধির ক্ষেত্র করে তোলে। অথচ এই ‘আমি’ যখন অনুপস্থিত (যেমন গভীর নিদ্রা বা জন্মপূর্ব অবস্থায়), তখন জগৎও অনুপস্থিত।
এই সত্য বুঝলে—সার্বিকভাবে স্পষ্ট হয়: এই ‘আমি’–র মধ্যেই লুকিয়ে আছে জগৎ, এবং এটিই সর্বপ্রথম ধারণা। এই ধারণার উৎপত্তি বোঝা মানে—সত্তা ও চেতনার রহস্য উন্মোচন। কিন্তু একে শুধু চিনে নিলেই হয় না—এতে স্থির থাকতে হয়, পর্যবেক্ষণ করতে হয়, এবং ধ্যানমগ্ন হয়ে দেখতে হয়: এই বোধটি কোথা থেকে এল? কেন এল? আমি কি এই ‘আমি’?
এইসব প্রশ্নের গভীরে ঢুকলেই সত্য আত্মবোধ জন্ম নেয়—যেখানে ‘আমি’–রও আগের অবস্থা জাগ্রত হয়।
‘আমি’–ই জগতের ভিত্তি—এই বোধ আসার আগ পর্যন্ত কোনো অভিজ্ঞতা বা জগৎ নেই। এই ‘আমি’–র উপস্থিতির মধ্যেই সব কিছুর প্রকাশ, তাই এর উৎসে ফিরে যাওয়াই একমাত্র সাধনা। শুধু ফিরে যাওয়া নয়—তাতে দীর্ঘ সময় ধরে স্থিত থাকতে হবে। তবেই বোঝা যাবে, এই ‘আমি’ কীভাবে এসেছে, কোথা থেকে এসেছে—এবং তখনই জানা যাবে পরম সত্য, যেখানে জগৎ, ‘আমি’, চেতনা—সবই এক প্রক্ষেপমাত্র বলে প্রকাশিত হবে।
১৫৪.
‘আমি’ ও জগতের অ-অস্তিত্ব পরব্রহ্মজ্ঞানের চূড়ান্ত দৃষ্টিভঙ্গি—এই চূড়ান্ত বোধ— “‘আমি’ এবং জগৎ কখনও সত্যিই অস্তিত্ব লাভ করেনি”—এই বোধ কেবলমাত্র পরব্রহ্ম–র অবস্থায়ই ঘটে।
যখন তুমি গুরুর বর্ণিতভাবে সাধনা করে, পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে ‘আমি আছি’ বোধে স্থিত হতে শেখো—তখন একটা সময় আসে, যখন তুমি নিজেই এই ‘আমি’–র সীমানা ছাড়িয়ে যাও। তখনই ঘটে সেই মহা-লীনতা, যেখানে ‘আমি’ ও তার উপর নির্মিত জগৎ—উভয়ই মিলিয়ে যায়। এই অবস্থাই পরব্রহ্ম, অর্থাৎ অবস্থা-অতীত, পরিচয়-অতীত, চিন্তা-অতীত চিরন্তন সত্য। এই পরব্রহ্ম অবস্থায়ই একমাত্র সম্ভব—এই নিশ্চিত উপলব্ধি: “এই ‘আমি’ ও জগৎ কখনোই সত্য ছিল না, কেবল প্রতীতির খেলা মাত্র ছিল।”
গুরু এই অবস্থাতেই প্রতিষ্ঠিত। তিনি ‘আমি’ ও জগৎ—এই উভয়কে অতিক্রম করেছেন। তবে তিনি এখনও যাদের কাছে আসেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য এই ‘আমি’–র মঞ্চ ব্যবহার করেন—তবুও তিনি নিজে তাতে লিপ্ত নন, কেবল দর্শক ও সত্তা মাত্র।
অদ্বৈত বেদান্তের সর্বোচ্চ অবস্থান হলো পরব্রহ্ম—যেখানে ‘আমি’–র অস্তিত্ব ও জগতের বোধ—উভয়কেই অতিক্রম করা হয়। ‘আমি’–র বোধ যদি উপাধিজনিত হয় (conditioned identity), তবে এর উপর নির্মিত জগৎও এক প্রক্ষেপমাত্র—এক মানসিক বিন্যাস। এই উপলব্ধি কেবল তখনই সম্ভব, যখন সাধক নিজ অস্তিত্ববোধকে এতটাই গভীরভাবে ধরে রাখে যে, ‘আমি’–র স্বরূপ নিজেই বিলীন হয়ে যায়—এবং তখন যা থেকে যায়, তা হলো অবিচল, শব্দহীন, অভিজ্ঞতাতীত এক পরম অস্তিত্ব।
এই অবস্থায় এসে যে দর্শন জন্মায়—“‘আমি’ ছিল না, জগৎও ছিল না—সবই মায়া”—তা যুক্তি দিয়ে নয়, চেতনার স্বকীয় তেজে উদ্ভূত হয়। গুরুর মতো একজন তুরীয়াতীত সত্তা এই অবস্থায় প্রতিষ্ঠিত—তাঁর ভাষা, কার্যকলাপ, ‘আমি’–র ব্যবহার—সবই শুধুমাত্র অপরের উপলব্ধির জন্য, নিজের জন্য নয়।
পরম উপলব্ধি হলো এই—‘আমি’ ও জগৎ আদৌ কখনও ছিল না। এই উপলব্ধি আসে কেবল তখনই, যখন সাধক ‘আমি’ বোধে স্থিত হয়ে তা-ও অতিক্রম করে যান। তখন তিনি প্রবেশ করেন পরব্রহ্ম–র স্থিতিতে, যেখানে নেই অভিজ্ঞতা, নেই পৃথক সত্তা—আছে কেবলমাত্র নিরবিচার, অনন্ত, অচল আত্মা। গুরুর অবস্থান সেখানেই—তিনি কেবল মায়ার মঞ্চে ‘আমি’ ব্যবহার করেন, নিজে তাতে আর নেই।
১৫৫.
নাম-রূপহীন ‘আমি’–তে স্থিতিই মুক্তি। এই ‘আমি আছি’ বোধ—যার নেই কোনো নাম, নেই কোনো রূপ—এই বোধেই স্থিত হওয়া মানেই মুক্তি। যখন তুমি ধীরে ধীরে ফিরে যাও সেই আদিম অবস্থায়—যেখানে ‘আমি’ ছিল নিখাদ, কোনো শব্দ ছিল না, পরিচয় ছিল না, তখন তুমি হয়ে ওঠো নাম-রূপশূন্য—একটি নিঃশব্দ চেতন সত্তা।
এই প্রাথমিক ‘আমি’ বোধ সবার মধ্যেই সাধারণ, এটি কারও ব্যক্তিগত নয়—এটির কোনো জাত, ধর্ম, ভাষা বা পরিচয় নেই। তোমার জীবনেও এই অবস্থা ছিল—একেবারে শুরুতে, শৈশবের সেই ক্ষণিক মুহূর্তগুলোতে, যখন তুমি কেবল অনুভব করতে—“আমি আছি”, কিন্তু কিছুই জানতে না—না ভাষা, না বুদ্ধি, না জগৎ।
এখন প্রয়োগ করো তোমার অন্তর্জ্ঞান—স্মরণ করো সেই অবস্থাটি, এবং চেষ্টা করো সেই অবস্থাতেই ফিরে গিয়ে জীবিত হতে। জন্মপরবর্তী যে প্রথম অভিজ্ঞতা—‘আমি আছি’—সেটিই চেতনার প্রথম আলো। কিন্তু সে বোধ তখন ছিল নিষ্কলুষ, ভাষাহীন, পরিচয়হীন। পরবর্তী জীবন, শিক্ষা, সমাজ, স্মৃতি—এই সব কিছুই গড়ে তোলে “আমি অমুক” এই মিথ্যা পরিচয়।
গুরুর উপদেশ হলো—এই সব প্রক্ষেপ ঝেড়ে ফেলে, ফিরে যাও ‘আমি’–র সেই শুদ্ধতম অবস্থায়, যেখানে তুমি কেবল চেতনা মাত্র, নাম বা রূপ নয়। এই অবস্থায় স্থিত হওয়া মানেই মুক্তি—এটি কোনো ভবিষ্যতের ফল নয়, এই মুহূর্তেই সম্ভব—যদি তুমি নাম-রূপ, অতীত-ভবিষ্যৎ ত্যাগ করে ‘আমি’ বোধেই শুদ্ধভাবে স্থিত থাকতে পারো।
নাম ও রূপ–এর ঊর্ধ্বে যে ‘আমি’ বোধ, সেই শুদ্ধ অস্তিত্বেই স্থিত হওয়াই প্রকৃত মুক্তি। এই বোধ জন্মলগ্নে ছিল—তুমি তখন কেবল চেতনা, কিছু নও। এই নিখাদ অস্তিত্বই সকল জীবের অভিন্ন ভিত্তি—এটি ব্যক্তিগত নয়, সর্বজনীন। এই অবস্থাকে স্মরণ করো, অনুভব করো, এবং এই নামহীন রূপহীন ‘আমি’–তে জীবিত হয়ে ওঠো। তখনই সমস্ত বন্ধন ছিন্ন হবে—আর তুমি থাকবে কেবল সত্তা-রূপে, অচল, অদ্বৈত, অজন্মা, মুক্ত।