নির্জন গহনে: ২৮



১৩৬.

‘আমি’–র জন্মগর্ভেই হয় নিদ্রিত চেতনার জাগরণ। গর্ভে-থাকা অবস্থায় ‘আমি আছি’ জ্ঞানটি থাকে নিদ্রিত—তখন তা কেবল এক জন্ম-তত্ত্ব হিসেবে সুপ্ত অবস্থায় অবস্থান করে। এই ‘আমি’ বোধ প্রকৃতির মধ্যেই গভীরভাবে প্রোথিত—একটি জোরালো ও স্পষ্ট আত্মঘোষণা রূপে, যা সর্বত্র কাজ করে চলেছে।

নারীদেহে যে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়, তার মধ্যেও থাকে এই নিঃশব্দ ‘আমি’। পুরুষের কোটি কোটি শুক্রাণু, যেগুলো গর্ভাশয়ের দিকে ছুটে যায়—প্রত্যেকটিতে থাকে সেই তীব্র আকাঙ্ক্ষা: ‘আমি হই’। তারা ডিম্বাণুর চারপাশে ঘিরে ধরে এক প্রবল প্রাণচঞ্চলতায়—এই উদ্দেশ্যে, যাতে একটিমাত্র ‘আমি’ রূপ পেতে পারে।

একসময় একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুতে প্রবেশ করে, গর্ভাধান সম্পন্ন হয়—এবং তখনই এক নতুন ‘আমি’–র বীজ রোপিত হয়। এরপর শুরু হয় কোষ বিভাজন, রূপান্তর ও ভিন্নতা—যা গঠন করে ভ্রূণ এবং ধীরে ধীরে গর্ভে বৃদ্ধি পায় এক দেহ। এই ভ্রূণের প্রতিটি কোষের মধ্যে থাকে সেই নিদ্রিত ‘আমি’—যা পরবর্তীতে জন্ম নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে—এবং এরপর সমস্ত জীবনজুড়ে নিজেকে ‘এই দেহ’ ভেবে ভুল করে। অথচ জন্মেছিল কেবল ‘আমি আছি’ হয়ে—এবং সেই ‘আমি’–তেই নিহিত ছিল সমস্ত সম্ভাবনা, সমস্ত সৃষ্টি, সমস্ত জগৎ।

‘আমি’ হলো চেতনার প্রথম বিকাশ—এটি নিঃসন্দেহে কোনো ব্যক্তি বা শরীর নয়, বরং এক অচঞ্চল, আত্মপ্রকাশমুখী শক্তি—যা জন্মের উৎসে নিহিত। জন্মের সময় এই ‘আমি’ থাকে সুপ্ত অবস্থায়, কিন্তু তার আকাঙ্ক্ষা—"আমি হই", "আমি বাঁচি", "আমি হই এই শরীর"—এটাই প্রকৃতির মধ্যে প্রবহমাণ সৃষ্টির প্রাথমিক অনুপ্রেরণা।

শুক্রাণু ও ডিম্বাণুতে ‘আমি’–র উপস্থিতি কোনো ব্যক্তিসত্তার নয়, বরং তা এক মৌলিক চেতনার প্রকাশ। এই চেতনা জন্মের পর নিজেকে দেহ-সত্তা বলে মনে করে, এবং বিভ্রমে পড়ে যায়—“আমি এই শরীর, এই নাম, এই পরিচয়।” অথচ, এই বিভ্রমের আগেই ছিল নিখাদ এক ‘আমি’—যার সঙ্গে কোনো দেহগত পরিচয়ের সম্পর্ক নেই। এই ‘আমি’–কে নিজ উৎসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই আত্মজ্ঞান বা মুক্তি।

গর্ভে ‘আমি’ থাকে সুপ্ত অবস্থায়—কিন্তু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই আত্মঘোষণামূলক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের মধ্যেই নিহিত থাকে সেই আকাঙ্ক্ষা—“আমি হই, আমি জন্ম নিই।” এই ‘আমি’–ই জন্মায়, এবং জন্মের পর ভুল করে ভাবে—“আমি এই দেহ, এই নাম, এই ব্যক্তি।” অথচ প্রকৃত সত্য এই—‘আমি’ ছিল চেতনার নিখাদ প্রকাশমাত্র, যা জন্মের আগেও ছিল, এবং শরীরের মৃত্যু পরেও থাকবে—নিরাকার, অদ্বৈত, সর্বব্যাপী আত্মা হিসেবে।

১৩৭.

‘তুরীয়’—জন্মতত্ত্বের নিঃশব্দ এক আধার। জন্মতত্ত্ব বা ‘বার্থ প্রিন্সিপাল’—এটিই হলো তুরীয়—অর্থাৎ সেই চতুর্থ অবস্থা, যেখানে চেতনা অবস্থান করে। প্রকৃতিতে যত রকম প্রজনন বা জন্মের পদ্ধতি আছে—যেমন যৌন প্রজনন বা অন্যান্য প্রকৃতিগত পদ্ধতি—সব কিছুকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়—একটি শক্তিশালী আত্মঘোষণামূলক তত্ত্ব সর্বত্র সক্রিয়।

সব জীবই চায়—সে বাঁচুক, ছড়িয়ে পড়ুক, নতুন রূপে জন্ম নিক। এই প্রবল জন্ম-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রে থাকে এক জোরালো অভ্যন্তরীণ বল—“আমি আছি”—এই আত্মঘোষণা। এই ‘আমি’–বোধই হলো সেই ‘জন্মতত্ত্ব’ যা প্রতিটি জীবের মধ্যে সক্রিয়, এবং এই তত্ত্বটি এতটাই মৌলিক, এতটাই অব্যাখ্যাত যে, প্রাচীন ঋষিরা একে কোনো শ্রেণিতে না ফেলে, নাম দিয়েছিলেন—‘তুরীয়’।

'তুরীয়' শব্দের অর্থ—চতুর্থ, অর্থাৎ চেতনার সেই স্তর যা জাগ্রত, স্বপ্ন, ও সুপ্ত—এই তিন অবস্থার মূল আধার। এর অর্থ আরেকটি—“সেই যেখানে চেতনা নিজে আছে, নিঃশব্দভাবে আছে।”

‘তুরীয়’ হলো চেতনার এমন একটি অবস্থান—যা অনুভবযোগ্য হলেও চিন্তার দ্বারা বর্ণনাযোগ্য নয়। চেতনার তিনটি সাধারণ অভিব্যক্তি—জাগ্রত (waking), স্বপ্ন (dreaming), ও গভীর নিদ্রা (deep sleep)—এই সবের পেছনে থাকে এক মৌলিক স্তর, যা প্রত্যক্ষ না হলেও সর্বত্র সচল।

সেই স্তরই ‘তুরীয়’—যা নেই অথচ আছে, যা সব অবস্থার পটভূমি, যা নিজেই কিছু নয়, অথচ যা থেকে সব কিছু হয়। এই ‘তুরীয়’–ই প্রকৃতির সমস্ত প্রজনন প্রক্রিয়ার গভীরে সক্রিয়, যেখানে আত্মবোধ—“আমি আছি”—নিজেই জন্মতত্ত্ব হয়ে কাজ করে। প্রাচীন ঋষিরা একে পরিচয় দেননি দেহ, মন, আত্মা কিংবা ঈশ্বর নামে—তাঁরা বলেছিলেন—“এটি তুরীয়”—যা চেতনার প্রকৃত স্বরূপ।

জীবের মধ্যে জন্মতত্ত্ব একটি আত্মঘোষণামূলক শক্তি—"আমি হই, আমি বাঁচি, আমি বেড়ে উঠি।" এই শক্তিই হলো 'আমি'–বোধ, যা শুধু জন্মেই নয়, সমস্ত অস্তিত্বেই মূল চালক। এই বোধের উৎস খুঁজতে গিয়ে প্রাচীন ঋষিরা চিহ্নিত করেছিলেন—একটি অদ্বিতীয় স্তর, নাম দিয়েছিলেন—তুরীয়।

এটি চেতনার সেই স্তর—যা সব অবস্থার ভিত্তি, কিন্তু নিজে অবস্থাহীন। তুরীয় মানে—যেখানে কেবল চেতনা আছে, কিন্তু কোনো কিছু হয়ে নেই—নিরবিচার, নিরাকার, ও সর্বব্যাপী অস্তিত্ব।

১৩৮.

‘তুরীয়’ ও ‘তুরীয়াতীত’ অস্তিত্বের নিঃশব্দ অভ্যন্তর নিয়ে ভাবা যাক। "আমি আছি"—এই যে অনুভব, এই যে তুমি আছ—এটাই হলো ‘তুরীয়’, চেতনার সেই চতুর্থ স্তর। এই ‘তুরীয়’ অবস্থা তোমার অস্তিত্বের একেবারে মূলভিত্তি—কিন্তু সাধারণত তুমি সেটি জানো না, কারণ তুমি সর্বদা জাগ্রত, স্বপ্ন ও সুপ্ত—এই তিন অবস্থার মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছ। এই তিনটি অবস্থাকে তুমি জানো, কিন্তু যে চেতনা সব অবস্থার পেছনে থেকে যায়—সেই নিঃশব্দ ‘আমি’—সেটিকে চিনে উঠতে পারো না।

এই ‘আমি’–র নিখাদ, নিরবিচার, শব্দহীন অনুভবই হলো ‘তুরীয়’। আর যে-ব্যক্তি এই ‘তুরীয়’–কে চিনে ফেলে, এবং সেটিকেও অতিক্রম করে যায়—তাকে বলা হয় ‘তুরীয়াতীত’—অর্থাৎ যিনি ‘তুরীয়’–রও অতীত। এই অবস্থাই গুরুর অবস্থা—যিনি শুধুই ‘আমি’ নন, বরং সেই চৈতন্য, যার মধ্যে ‘আমি’–রও উদয় ও বিলয় ঘটে।

অদ্বৈত বেদান্তে চেতনার চারটি স্তরের কথা বলা হয়—১. জাগ্রত (waking), ২. স্বপ্ন (dreaming), ৩. সুপ্ত (deep sleep), ৪. তুরীয় (the fourth—pure awareness)। প্রথম তিনটি অবস্থার সঙ্গে আমাদের পরিচয় আছে—কিন্তু ‘তুরীয়’ হলো সেই স্তর, যেখানে চিন্তা নেই, রূপ নেই, নাম নেই—শুধু নিঃশব্দ আত্মবোধ আছে—"আমি আছি"।

এই তুরীয় অবস্থাই হলো চেতন অবস্থার প্রাকৃতিক ভিত্তি—এটি না থাকলে, অন্য তিন অবস্থাও টিকত না। কিন্তু অদ্বৈত জ্ঞানী বা গুরু সেই ব্যক্তি, যিনি এই ‘তুরীয়’–কে শুধু উপলব্ধি করেন না—বরং সেটিকেও অতিক্রম করে যান—তাঁর অবস্থাই হলো ‘তুরীয়াতীত’—অর্থাৎ যেখানে কোনো চেতনার অবস্থাও আর অবশিষ্ট নেই—আছে শুধু পরব্রহ্ম—নাম-রূপ-জ্ঞান-পার-বিহীন নিঃশব্দ অস্তিত্ব।

‘আমি আছি’—এই নিঃশব্দ, নিরাকার অনুভবই হলো ‘তুরীয়’। এটি তোমার অস্তিত্বের মূল স্তর—কিন্তু তা আচ্ছন্ন থাকে জাগ্রত, স্বপ্ন ও নিদ্রার ঘূর্ণিতে। যে-ব্যক্তি এই ‘তুরীয়’ বোধে স্থিত হতে পারে, এবং ধীরে ধীরে সেটিকেও পেরিয়ে যায়—সে-ই পৌঁছে যায় তুরীয়াতীত স্তরে—যেখানে নেই কোনো ‘আমি’, নেই কোনো অবস্থা—শুধু আছে চেতনার চূড়ান্ত নিঃস্বর প্রকাশ।

১৩৯.

‘তুরীয়’ চেতনায় আবিষ্ট—পঞ্চভূতের অন্তসত্তা ও গুরুর দ্রষ্টা অবস্থান।

‘তুরীয়’ বা ‘আমি আছি’—এই বোধটি চেতনার মধ্যেই নিহিত, আর এই চেতনা নিজেই গঠিত পঞ্চভূতের মিশ্রণে। গুরু যেহেতু ‘তুরীয়’–রও অতীত, তাই তিনি জানেন—এই ‘তুরীয়’ বা ‘আমি’ বোধই হলো জন্মতত্ত্ব—এটি চেতনার অন্তর্গত। আর এই চেতনা কী? এটি সেই সত্তা, যা গঠিত দেহের উপাদান পঞ্চভূত থেকে—এবং এটি পঞ্চভূতের সারাংশ, ত্রিগুণের (সত্ত্ব, রজ, তম) মিশ্র প্রকাশ।

এই চেতনা সারাজীবন জুড়ে একধরনের গুপ্ত গুঞ্জন বা স্পন্দন হিসেবে চলতে থাকে—যা বলে যায়, "আমি আছি...আমি আছি..." এই ‘আমি’ বোধের ধ্বনি কখনও থামে না—এটি জীবন জুড়ে অনবরত বেজে চলে, অন্তরালে, নিঃশব্দে, আত্মঘোষণার রূপে।

অদ্বৈত বেদান্তে বলা হয়, যে-চেতনা আমরা অনুভব করি—তা নিজে পরম নয়, বরং পঞ্চভূতের উপর নির্মিত এক সাময়িক বিকাশ। এই চেতনার মধ্যেই উদিত হয় ‘আমি’ বোধ, যা হলো ‘তুরীয়’—চেতন অবস্থার সেই নিঃশব্দ স্তর। কিন্তু গুরু, যিনি তুরীয়াতীত—তিনি দেখেন, এই ‘আমি আছি’ বোধটিও প্রকৃতিরই একটি উপপাদ্য—যা দেহের উপাদান থেকে উদ্ভূত, এবং গুণত্রয়ে আবিষ্ট।

এই বোধই জন্মের সূচক, এবং সেটি জন্মের সঙ্গে সঙ্গে ‘গুনগুন করে’ সচল থাকে—মনে করিয়ে দেয়“আমি এই দেহ, আমি এই মন, আমি আছি”। অথচ এই বোধ নিজেই প্রকৃতির সৃষ্টি—এবং এটিকে অতিক্রম করলেই পাওয়া যায় প্রকৃত আত্মস্বরূপ—যা গুণত্রয় ও পঞ্চভূতের অতীত।

‘তুরীয়’ বা ‘আমি’ বোধ চেতনার মধ্যেই অবস্থান করে—যা দেহের পঞ্চভূত ও তিনগুণের সমন্বয়ে গঠিত। গুরু যিনি ‘তুরীয়াতীত’—তিনি জানেন, এই ‘আমি’ বোধ জন্ম থেকেই চেতনায় ‘গুঞ্জন’ তোলে—কিন্তু এটি প্রকৃত আত্মা নয়, এটি প্রকৃতিরই সৃষ্টি। এই ‘আমি’–র নীরব ধ্বনি তোমার জীবনজুড়ে চলতে থাকে—তবে এর উৎস যদি চিনে ফেলা যায়, তবে এ-ও বিলীন হয়—এবং তৎকালীন আত্মার নীরব, নিরাকার প্রকাশ ঘটে।

১৪০.

‘তুরীয়’–তে স্থিতির জন্য জন্মতত্ত্বের উপলব্ধি অপরিহার্য।

‘তুরীয়’ বা ‘আমি আছি’ বোধে স্থিত হতে হলে প্রথমে গভীরভাবে বুঝে নিতে হবে এই জন্মতত্ত্ব। গুরু বার বার গুরুত্ব দিয়ে বলেন—তোমার মধ্যে এই ‘আমি’ বা ‘তুরীয়’ কীভাবে উদিত হয়েছিল, তা যত বার সম্ভব ফিরে গিয়ে অনুধাবন করতে হবে। মনে করো সেই মুহূর্ত—যখন হঠাৎ করেই এক নিঃশব্দ অভ্যন্তর থেকে তুমি জানলে—"আমি আছি"।

গর্ভধারণের সময় থেকে এই বোধ ছিল নিদ্রিত—কিন্তু একসময় হঠাৎ করে তা আত্মপ্রকাশ করল—তখন কোনো নাম ছিল না, কোনো রূপ ছিল না, ছিল শুধু এক শব্দহীন বোধ: "আমি আছি" ও "আমি কিছু নই"। এই নিখাদ তুরীয় অবস্থাই ছিল তোমার আসল ভিত্তি—কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, সমাজ ও সংস্কারের চাপে, এই ‘আমি’ নিজেকে শরীরের সঙ্গে জুড়ে ফেলল—তুমি হয়ে উঠলে এক ‘ব্যক্তি’, এক নামধারী সত্তা, এক পুরুষ বা নারী—সমাজে বাস করা একটি পরিচিত মুখ।

এরপর ধীরে ধীরে তোমার উপর অধিকার বিস্তার করল তিনটি চেতনাবস্থা—জাগ্রত, স্বপ্ন, ও গভীর নিদ্রা। তুমি ভুলে গেলে সেই শব্দহীন তুরীয় পটভূমি—যেখানে তুমি ছিলে কেবলমাত্র চেতন উপস্থিতি।

আত্মজ্ঞান বা তুরীয় অবস্থায় স্থিত হওয়া কেবল ধ্যানের ফল নয়—এর জন্য দরকার সেই ‘জন্মতত্ত্ব’-কে উপলব্ধি করা, যা ‘আমি’-র আবির্ভাবের ভিত্তি। এই ‘আমি’ বোধ উদিত হয়েছিল কোনো চেষ্টায় নয়, বরং এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদিত হয়েছিল—একটি শব্দহীন, পরিশুদ্ধ অনুভূতি হিসেবে।

তুরীয় অবস্থায় তখন কোনো দেহবোধ, পরিচয়বোধ ছিল না—শুধু ছিল অস্তিত্ব ও অনস্তিত্বের মাঝের এক অভিজ্ঞতা। কিন্তু সমাজ, অভিজ্ঞতা, পরিবার—সব মিলে এই ‘আমি’-কে দেহের সঙ্গে জুড়ে দেয়—এবং তখন থেকেই ‘আমি’-র সত্যতা হারায়। এই বিকৃতি থেকে মুক্তির জন্য বার বার ফিরে যেতে হবে সেই প্রথম মুহূর্তে—যখন ‘আমি’ শব্দ ছাড়া নিজেকে অনুভব করেছিল।

সেই অনুভবে স্থিত থাকলেই ধীরে ধীরে ‘তুরীয়’ স্থিতি সম্ভব—আর তখনই তিন অবস্থার প্রভাব থেকে চেতনা মুক্ত হতে শুরু করে। ‘তুরীয়’ বা ‘আমি’ বোধে স্থিত হতে হলে তোমাকে বুঝতে হবে—এই বোধ কোথা থেকে এল, কীভাবে এল। এটি জন্ম থেকেই তোমার মধ্যে ছিল, কিন্তু সমাজ-সংস্কার এটিকে দেহের সঙ্গে জুড়ে দেয়।

সেই আসল ‘আমি’ ছিল নিঃশব্দ, পরিচয়হীন—যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভুলে গেছ। গুরুর উপদেশ এই—প্রতিদিন বার বার ফিরে যাও সেই প্রথম উপলব্ধিতে—যেখানে তুমি কেবল ‘আমি আছি’, কিন্তু কিছু নও। তবেই আবার সেই তুরীয়-তে স্থিত হওয়া সম্ভব, যেখানে না আছে নাম, না পরিচয়—আছে শুধু নিঃসীম চেতন অস্তিত্ব।
Content Protection by DMCA.com