১২১.
প্রকৃত সাধনার একটিই পদ্ধতি—স্থির ও অটল বিশ্বাস। গুরু যা দেন, তা কোনো বাহ্যিক মন্ত্র বা ক্রিয়া নয়, বরং একটি দৃষ্টি-উন্মোচন: "তুমি শরীর নও, তুমি কেবল সেই শব্দহীন ‘আমি’—যে কেবল অস্তিত্বমাত্র।"
যারা বহু গ্রন্থ পড়েছে, এক গুরু থেকে আরেক গুরুর কাছে ছুটে গেছে, তারা চিরকাল খুঁজে এসেছে কোনো ‘বিশেষ দীক্ষা’ বা ‘গূঢ় পদ্ধতি’। তারা প্রত্যাশা করে থাকে কিছু গোপন মন্ত্র বা অলৌকিক উপায়, কিন্তু যখন সত্য গুরুর মুখোমুখি হয়, তখন শুনতে পায়—"সাধনার কোনো পদ্ধতি নেই, কেবল একটিই বিষয়—দৃঢ় বিশ্বাস যে তুমি শরীর নও।"
এই বোধ অতি সহজ, সরল, মৌলিক এবং গভীর। এর মধ্যে নেই কোনো ধর্মীয় আচার, জাতি, সম্প্রদায় বা বিশ্বাসের প্রয়োজন। এই আত্মোপলব্ধি—“আমি কেবল সেই ‘আমি আছি’, দেহ নয়”—ই সর্বোচ্চ জ্ঞান, এবং এটাই প্রকৃত দীক্ষা।
আত্মজ্ঞান বা মুক্তির পথে কোনো বাহ্যিক ক্রিয়া বা আচরণকে অপরিহার্য বলা হয় না। এখানে গুরু শিষ্যকে কোনো ‘পদ্ধতি’ শেখান না, বরং কেবলমাত্র ‘অস্মিতার’ এক মৌলিক বোধে স্থাপন করেন। "আমি শরীর নই"—এই ধারণা কেবল চিন্তায় নয়, গভীর বোধে রূপান্তরিত হলেই তা সত্য রূপে প্রকাশ পায়। ‘আমি’ জ্ঞান যখন ভাষাহীন, চিন্তাহীন, নিছক অনুভবমাত্র হয়ে ওঠে—তখনই শুরু হয় প্রকৃত আত্মজাগরণ।
এই পথ কোনো ধর্ম বা দর্শনের সীমানায় আবদ্ধ নয়, এটি সর্বজনীন এবং আত্মগত। তাই গুরু কেবল ‘জ্ঞান’ দেন না, তিনি কেবল সেই জ্ঞানচক্ষু খুলে দেন যার মাধ্যমে শিষ্য নিজের সত্য স্বরূপ চিনতে পারে।
গুরু আসলে কিছু শেখান না, কেবল বোঝান—“তুমি দেহ নও”। এই জ্ঞানই যথেষ্ট, যদি তা অভ্যন্তরের বিশ্বাসে পরিণত হয়। মন্ত্র, পদ্ধতি, আচার—এসব নয়, শুধু নিঃশব্দ আত্মবোধ—এই 'আমি'—ই একমাত্র সত্য। একে অনুভব করাই প্রকৃত দীক্ষা, আর সেটিই হলো মুক্তির সূত্র। এই পথ সরল হলেও গভীর, সহজ হলেও পরিপূর্ণ, এবং এটি কোনো ধর্মীয় কাঠামোর ওপর নির্ভর করে না—বরং এটি স্বয়ং ‘চেতন অস্তিত্ব’-এর নিজস্ব প্রকাশ।
১২২.
‘আমি’-র জন্ম ও ‘অজন্মা’র জাগরণই—‘I am’-এর জন্ম এবং চেতনার অজন্ম স্বরূপে প্রতিষ্ঠা। যখন তুমি গভীরভাবে অনুভব করতে শেখো যে—এই ‘আমি আছি’ বোধটাই আসলে জন্মলাভ করেছে, তখন তুমি নিজেই সেই জন্মহীন স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করো।
তোমার ভেতরে এখনও গভীরভাবে গেঁথে আছে—“আমি জন্মেছি, এবং একদিন আমি মারা যাব।” এই বিশ্বাস থেকেই সব ভয়, উদ্বেগ ও আকুলতা জন্ম নেয়। কিন্তু গুরুর নির্দেশ অনুসরণ করে, যখন তুমি কেবল ‘আমি আছি’, এই অনুভবে বার বার ফিরে যাও এবং সেখানে নিরবিচারে স্থিত থাকো—তখন একসময় একটি অনন্য অভিজ্ঞতা ঘটে—তুমি দেখতে পাও‘আমি’ বোধটাই এসেছে, জন্মেছে, আবির্ভূত হয়েছে।
আর সেই উপলব্ধির সঙ্গেই তুমি দাঁড়িয়ে যাও এক ভিন্নতর অবস্থানে—যেখানে তুমি কেবল চেতনা, কেবল দর্শক—যার কোনো জন্ম নেই, কোনো মৃত্যু নেই, নেই কোনো আসা-যাওয়ার বৃত্ত।
আত্মজ্ঞান মানে হলো—নিজের প্রকৃত স্বরূপকে চিনে ফেলা। সাধারণভাবে আমরা নিজেদের শরীর বা ‘আমি’ চিন্তাটিকেই নিজের পরিচয় হিসেবে গ্রহণ করি। কিন্তু গভীর ধ্যান ও গুরুবাক্যের আলোকে যখন আমরা ‘আমি আছি’ এই অনুভবে স্থিত হই, তখনই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়—এই ‘আমি’-বোধ নিজেই এক ঘটনা, এক সাময়িক অবস্থা। জন্মেছে কেবল ‘আমি আছি’-র জ্ঞান, আমি নিজে নয়।
এই উপলব্ধি আত্মাকে তার প্রকৃত জায়গায় স্থাপন করে—অজন্মা, নিরাকার, নিরবিকার চৈতন্যরূপে। এই চৈতন্যই দেখছে ‘আমি’ কে, এমনকি দেখছে জন্ম ও মৃত্যুকেও—কিন্তু নিজে কখনোই সেগুলোর দ্বারা স্পর্শিত হয় না। একমাত্র এই উপলব্ধি ভয়কে বিনাশ করে, কারণ ভয় কেবল ‘আমি দেহ’ এই বিভ্রমেই জন্ম নেয়।
আমরা যা ভেবে এসেছি—যে, "আমি জন্মেছি", তা আদৌ সত্য নয়। জন্ম লাভ করেছে কেবল ‘আমি আছি’ এই উপলব্ধি, এবং সেটিও সাময়িক। যখন এই সত্য অনুধাবন হয়, তখন সাধক নিজেকে চিনতে পারে—সে কোনো নাম, রূপ, শরীর বা মন নয়—বরং সেই অজন্মা চৈতন্য, যার মধ্য দিয়েই ‘আমি’ ও জগতের সব অভিজ্ঞতা দেখা হচ্ছে। এই আত্মজ্ঞানই হলো মোক্ষ, ভয়মুক্তি, এবং সত্য উপলব্ধির চূড়ান্ত ধাপ।
১২৩.
‘আমি’–র বিলয় ও পরব্রহ্মের নিঃশব্দ উন্মোচন কীভাবে ঘটে?
যখন এই ‘আমি আছি’ বোধটিরও বিলয় ঘটে—তখন যা অবশিষ্ট থাকে, সেটাই প্রকৃত স্বরূপ: নির্জন, নিরাবরণ, নিরবিচার, নিরাকার এবং পরিচয়হীন। একে বলা হয়—পরব্রহ্ম, অর্থাৎ পরম সত্য—যে কেবলমাত্র আছে, কোনো কিছু হয়ে ওঠে না।
‘আমি’ বোধের অন্তর্ধান মানেই সমস্ত ধারণা, সমস্ত বিভ্রমের অবসান। তখন আর কোনো সীমাবদ্ধ ‘আমি’ থাকে না—থাকে কেবল সেই মৌলিক চৈতন্য—যার নেই কোনো নাম, রূপ, গুণ, কিংবা পরিচয়। ভাবো—যে-সত্তা অনন্ত, নামহীন, রূপহীন—তার আবার গুণ কেমন করে থাকবে?
সব কিছু—যেগুলোর কোনো নাম, রূপ, পরিচয় আছে—তা তো এই অগুণ, নিরাকার স্বরূপের উপর উপস্থিত মাত্র। আর এই ‘উপস্থিতি’র গোড়ায় যে-বিভ্রম দাঁড়িয়ে আছে—তা হলো সেই প্রথম মিথ্যা ধারণা—‘আমি আছি’। কিন্তু যেহেতু প্রকাশের জন্য আমাদের কেবল ভাষা-শব্দই ভরসা—তাই এই চিরন্তন, অবর্ণনীয় স্বরূপকে আমরা নাম দিয়েছি—পরব্রহ্ম বা পরম অস্তিত্ব।
‘আমি আছি’—এই জ্ঞানটিও আদতে এক সাময়িক ধারণা, এক মৌলিক বিভ্রম—যার ভিত্তিতেই জগত, পরিচয়, অনুভূতি ও পৃথক সত্তার ধারণা গড়ে ওঠে। কিন্তু যখন এই ‘আমি’ বোধেরও বিলয় ঘটে—তখন যে-সত্তাটি টিকে থাকে, সেটি আর কোনো সীমিত আত্মসত্তা নয়। সেটি হলো পরম চৈতন্য—যা কখনও আসেনি, কখনও যায় না,
কোনো গুণ-ধর্মে আবদ্ধ নয়, এবং নিজেকে কোনো নাম-রূপে প্রকাশও করে না।
‘আমি’-বোধই মূলত চেতনার প্রথম ধারণা, আর তার ওপরে গড়ে উঠেছে এক জগৎ—পরিচয়, সম্পর্ক, অনুভূতি, জীবন-মৃত্যু। কিন্তু এই ‘আমি’–র বিলয় ঘটলে—সব মায়া ও ধারণা মুছে যায়, থেকে যায় কেবল ‘নিশ্চিত অস্তিত্ব’—যা ব্যাখ্যার অতীত, উপলব্ধির অতীত, ভাষারও অতীত। একে ভাষার সীমায় এনে বলা হয়—পরব্রহ্ম।
‘আমি’ বোধ যতদিন আছে, ততদিনই জগৎ আছে—ততদিনই তুমি একজন ব্যক্তি, নামধারী সত্তা, বিভ্রমে আবিষ্ট। কিন্তু ‘আমি’–র বিলয় মানেই মায়ার অবসান, সকল গুণ, পরিচয়, ধারণা ও ব্যক্তিত্বের পরিণতি—শূন্যতায় নয়, অসীমতায়। তখন তুমি আর ব্যক্তি নও, তুমি নিজেই সেই অবিকল্প, অগুণ, অজন্মা—যাকে বলা হয় পরব্রহ্ম। এই অবস্থাই হলো—ভাষার ঊর্ধ্বে, চিন্তার ঊর্ধ্বে, দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে চূড়ান্ত মুক্তি।
১২৪.
‘আমি’–র অনুপস্থিতিতে কে থাকে?—অভিজ্ঞ আর অভিজ্ঞতার বিলয়।
‘আমি আছি’ এই বোধের অনুপস্থিতি কাউকে দিয়ে অনুভব করানো যায় না; কারণ সেখানে কোনো ‘কেউ’ থাকেই না। এই অনুপস্থিতি এমনভাবে উপলব্ধি করতে হয়—যাতে অভিজ্ঞ আর অভিজ্ঞতা এক হয়ে যায়। কিন্তু তুমি এতটাই দ্বৈততায় গাঁথা যে, সবসময় মনে করো—নিশ্চয়ই ‘কেউ’ থাকবে, যে-‘শূন্যতা’, ‘নিরাকারতা’ বা ‘আমি’-র অনুপস্থিতি অনুভব করবে।
এই দ্বৈতবোধই মনের কাজ—কারণ মন কেবল বিষয় ও দর্শক, ভাবনা ও ভাবুকের বিভাজনেই অস্তিত্ব পায়। তাই, এই সত্যকে জানার জন্য প্রথমে তোমাকে মনকে অতিক্রম করতে হবে। মন যেখানে জন্ম নেয়, সেই উৎসস্থলে—‘আমি’ বোধে—তুমি যদি যথেষ্ট সময় স্থিত থাকো, তাহলে একসময় এই ‘আমি’ নিজেই বিলীন হয়ে যায়। তখন না থাকে পৃথক অভিজ্ঞ, না থাকে আলাদা অভিজ্ঞতা—উভয় মিলে যায় এক নিঃশব্দ, অদ্বৈত সত্তায়। এটাই তোমার প্রকৃত স্বরূপ—যা ভাষার অতীত, চেতনারও অতীত, শুধু নিঃসীম উপস্থিতি—যাকে কোনো নাম দেওয়া যায় না।
আমরা চিরকাল ধরে জগৎ ও নিজেকে অভিজ্ঞ এবং অভিজ্ঞতাজনিত বিভাজনের ভিতরে দেখি—এটাই দ্বৈততার শিকড়। আমাদের ধারণা, এমনকি ‘শূন্যতা’ বা ‘নির্গুণ অস্তিত্ব’-ও কেউ একজন অনুভব করবে। কিন্তু, যেখানে ‘আমি’ নেই, সেখানে ‘কেউ’ নেই, সেখানেই প্রকৃত অভিজ্ঞতা—যেখানে ‘আমি দেখছি’ অথবা ‘আমি অনুভব করছি’ এই চিন্তা-রেখাও নেই।
এই অদ্বৈতবোধে পৌঁছানোর জন্য মনকে (যে-দ্বৈততায় বিভাজন সৃষ্টি করে) থামাতে হয় অথবা তার ঊর্ধ্বে উঠতে হয়। আর এই অভ্যন্তর যাত্রার একমাত্র পথ—‘আমি আছি’ বোধে অবস্থান। যখন সেই অবস্থানে স্থির হওয়া যায়, তখন এক মুহূর্ত আসে—যখন ‘আমি’ বোধটিও বিলীন হয়ে যায়, আর তখনই অভিজ্ঞ ও অভিজ্ঞতা মিলিয়ে যায়; যা থাকে, তা কোনো ব্যক্তি নয়, কোনো চেতনা নয়—বরং সেই মৌলিক, অচল, নিরবিকার, অদ্বৈত উপস্থিতি—যা কখনও পরিবর্তিত হয় না।
‘আমি’ বোধের অনুপস্থিতি অনুভব করা যায় না ‘কারও’ দ্বারা, কারণ সেখানে কেউ থাকে না—কেবল একটাই উপস্থিতি থাকে। মন কেবল দ্বৈততায় কাজ করতে পারে, তাই সেই অবস্থা তার নাগালের বাইরে। এই বোধে পৌঁছাতে হলে মনকে ছাড়াতে হয়, আর তা সম্ভব হয় ‘আমি’–র উপর স্থির হলে। যথেষ্ট সময় ধরে ‘আমি আছি’–তে স্থিত থাকলে, একসময় সেটিও হারিয়ে যায়—তখন অভিজ্ঞ ও অভিজ্ঞতা একাকার হয়ে যায়, এবং তুমি নিজেকে খুঁজে পাও তোমার প্রকৃত, ভাষাতীত, অদ্বৈত স্বরূপে।
১২৫.
‘আমি’—সে এক দ্বিমুখী প্রহরী বন্ধু ও বিভ্রমের প্রতারক।
শৈশবে যে-‘আমি আছি’ জ্ঞানটি প্রকাশ পেয়েছিল—সে-ই তোমার জীবনের সবচেয়ে সূক্ষ্ম প্রতারক, যে তোমায় মায়াকে সত্য বলে বিশ্বাস করিয়ে তুলেছে। এই ‘আমি’ বোধ এক অদ্ভুত সত্তা—একদিকে তা তোমার পথপ্রদর্শক বন্ধু, অন্যদিকে আবার ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তিকর শত্রু।
বন্ধু হিসেবে, এই ‘আমি’ তোমায় নিয়ে যেতে পারে নিজ প্রকৃত স্বরূপে—যদি তুমি সেটিতে স্থিত হও এবং এর ঊর্ধ্বে উঠতে চাও। কিন্তু শত্রু হিসেবে, এই একই ‘আমি’ তোমায় বিশ্বাস করিয়েছে—তুমি কেবল একটি দেহ, একটি ব্যক্তি, এই পৃথিবীতে জন্ম-নেওয়া এবং মৃত্যুর জন্য অপেক্ষমাণ এক অস্তিত্ব।
এই দ্বিমুখী মুখোশধারী সত্তা—যার এক মুখ সত্যের দিকে ইঙ্গিত করে, অন্য মুখ তোমায় বেঁধে রাখে মিথ্যার জালে। এই দ্বৈত প্রকৃতি—‘আমি’ বোধের দ্বিমুখিতা—তোমাকে বুঝতে হবে। এ যেন দ্বাররক্ষক—যার এক হাতে মুক্তির চাবি, আর অন্য হাতে বন্ধনের জাল।
অদ্বৈত বেদান্তে ‘আমি’ জ্ঞানকেই বলা হয় মৌলিক বিভ্রম, তবে এই বিভ্রম নিজেই মোক্ষের দিকেও ইঙ্গিত করতে পারে—যদি সেটির প্রকৃতি বুঝে ফেলা যায়। শৈশবে যখন আমরা প্রথম উপলব্ধি করি—"আমি আছি", তখন থেকেই এই ‘আমি’–বোধ নিজেকে শরীর-মন-পরিচয়ের সঙ্গে জুড়ে দেয়। ফলে আমরা একে সত্য মেনে নিই, এবং মনে করতে থাকি—আমার জন্ম আছে, মৃত্যু আছে, আমার নাম আছে, পরিচয় আছে।
কিন্তু এই বোধটি আসলে সত্যের ছায়া—যা সত্য-স্বরূপের দিকে যেতে পারে, আবার মায়ার চক্রেও বেঁধে রাখতে পারে। এটি রোমান দেবতা জানুসের (যার নাম থেকে জানুয়ারি মাসের নাম এসেছে) মতো এক দ্বিমুখী দেবতা—যার এক মুখ ভবিষ্যতের দিকে, আরেক মুখ অতীতের দিকে। ঠিক তেমনই, ‘আমি’–র এক মুখ মুক্তির পথে সহচর, অন্য মুখ বেঁধে রাখে বিভ্রান্তির জালে। এই দ্বৈত প্রকৃতিকে চিনে ফেললেই তুমি ‘আমি’–কে অতিক্রম করতে পারবে।
‘আমি’ বোধই মূল বিভ্রান্তি—কারণ এটি জন্ম দেয় ব্যক্তি পরিচয়ের। আবার এই ‘আমি’ বোধই একমাত্র পথ, যা ধরে তুমি নিজের প্রকৃত রূপ চিনতে পারো। তাই এটি একসঙ্গে বন্ধুও, শত্রুও—একই সত্তা তোমায় দেখায় মুক্তির পথ, আবার বেঁধেও রাখে মায়ার ফাঁদে।
একে যদি তুমি ঠিকমতো চিনে ফেলো—তাহলে সে আর তোমায় প্রতারিত করতে পারবে না। তখনই তুমি ছাড়িয়ে যেতে পারবে এই বিভ্রান্তিকর 'আমি'–র সীমা, এবং স্থিত হতে পারবে সেই সত্য স্বরূপে—যার কোনো নাম নেই, রূপ নেই, জন্ম-মৃত্যু নেই।