নিঃশব্দের আত্মদর্শন



: তার সুগভীর অনুনয় বুঝি আপনাকে ব্যথিত করে না?
ব্যথিত যদি করেই থাকে, তবে—তাকে আপনার গভীর আলিঙ্গনের আরাধ্যে রেখেও কেন সেই ব্যাকুলতার স্পন্দন অপ্রকাশিত রেখে চলেছেন?
প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে, সে কি আসতে চায়নি আপনার সন্নিকটে?

: চেয়েছিল।
জানতে পারেনি আজও—আমার হৃদয় যে তাকে গ্রহণে ব্যাকুল।

: কোনো প্রাপ্তির প্রত্যাশা বুঝি করছেন না তবে?

: কখনো কি করেছিলাম?

: হা হা হা...
আপনি ধীরে ধীরে সকল প্রত্যাশা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হলেও, তার প্রণয়ের অন্তরালে আপনার প্রত্যাশা পুঞ্জীভূত থেকেছে অনন্তকালের আশ্রয়ে।

: ভালোবাসা বোঝানো কি এত সহজ?
তার প্রণয়ের প্রকাশিত রূপে আমার হৃদয়ে যে অকল্পনীয় প্রলয় ছুঁয়ে যায়, তা যদি সে একবার বুঝতে পারত, তাহলে বুঝি আমাকে পাবার ব্যাকুলতায় নিজেকে অতলে হারিয়ে ফেলতে, অস্থিরতায় মগ্ন হতো—আমাকে জড়িয়ে রাখত তার গভীর আলিঙ্গনের স্নিগ্ধতায়।

: নিশ্চয়ই।
তবে, শুরুটা আপনাকেই করতে হবে।
এখন আত্মকেন্দ্রিক হবার আর কোনো সুযোগ নেই।
আমি তো কেবলই আপনার প্রণয়ের অনুভূতিকে জাগ্রত করতে সক্ষম। কিন্তু আমার অস্তিত্বকে স্বীকার করতে, আবশ্যিকভাবেই আপনাকে তাকে গ্রহণ করতে হবে।

আপনার সত্তাজুড়ে প্রণয়ের এ অনুভূতি কেবল তার স্পর্শ গ্রহণেই ব্যাকুল।
নিজের সঙ্গে আলাপচারিতার দীর্ঘশ্বাসে, যে জেনেছিল আপনারই অনুভূতির গভীরতা— তাকে প্রণয়ের সাক্ষী করতে, অনুরতির গভীরতা জানাতে, ভিন্ন কোনো গ্রহণযোগ্যতার প্রয়োজন কি আছে?
কতটা ভেবেছেন আপনি? আপনি কি এ বিশ্বাসে নিজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ নন?

: অবশ্যই।
অন্য কোনো প্রকৃষ্টতায় তাকে বিবেচনা করতে চাওয়া—চরম অজ্ঞতায় প্রণোদিত, নিজ অনুভূতির দগ্ধ পীড়নের দৃশ্যমান রূপক মাত্র।
মায়া তো বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতিপক্ষ নয়, বরং ভিন্ন এক অন্তর্লীন আলোড়ন।
এই অনুভবে কি প্রণয়ের পথে হাঁটতে চাওয়াটাই শ্রেয়?

: হা হা হা...
আপনি বুঝি তার মায়ায় পড়েছেন?
কখনো জানতে পেরেছেন—তার প্রতি আপনার মায়ার আচ্ছন্নতার অবশ্যম্ভাবিতা?

: আমাকে অধিষ্ঠিত করতে পারলে—অর্থাৎ, একমাত্র ভালোবাসার অনুভূতিকে ধারণ করতে পারলেই, তাঁকে আপনার হৃদয়ে স্থান দিতে পারবেন।
এটাই হবে আপনাদের অনন্তযাত্রার সূচনালগ্ন।


অনতিক্রম্য মায়ার আচ্ছন্নতা সরিয়ে, হৃদয়ের দ্বাররক্ষী আসন্ন প্রণয়ের সাক্ষীকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করতেই—
এই মুহূর্ত অসহনীয় ভালোবাসার মাত্রাবদ্ধ অনুভবে নড়েচড়ে উঠছে।