ধূসর মৃত্যুর মুখ: ১

আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি গত বছর, আমার পুরো পরিচয়টা গোপন রাখতে চাইছি। আমি ২০১৮ সালে একটা সম্পর্কে জড়াই, সে আমার ব্যাচমেট। আগেই বলে রাখি, তাদের তুলনায় আমাদের ফ্যামিলি অনেক সচ্ছল। তার সাথে সম্পর্ক হবার কয়েক মাস পর আমাকে সে আর্থিক-সহ বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যার কথা বলে। যখন আমি তার সাথে সম্পর্কে জড়াই, তখন আমার মাথায় একটা জিনিসই ছিল, যদি আমি লাইফে বড়ো কিছু হই, তবে তাকে নিয়েই একসাথে বড়ো হব। যখন সে নিজের সমস্যার কথাগুলো বলতে লাগল আমাকে, আমি তাকে টাকা দিতে থাকতাম, আমার নিজের শখ-আহ্লাদ পূরণ না করে হলেও আমি তারটা ঠিক রাখতাম।




সে আমাকে সবসময় অন্য মেয়েদের সাথে তুলনা করত। ক্লাসে যে ভালো, তার সাথে তুলনা দিয়ে বলত, আমি যেন তার মতো হই; তার এক্স ছিল, এমনকী তার সাথেও তুলনা দিত—আমি এসব কথা পছন্দ করতাম না, তারপরও বলত। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, সে নাকি আরও অনেক মেয়ের সাথে ফ্লার্ট করে। সে কিন্তু পড়াশোনায় অনেক ভালো। সে আর আমি আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তার রেজাল্ট আমার থেকে অনেক ভালো। তার দৃষ্টিভঙ্গি এমন ছিল সবসময় যেন আমি তার সামনে কিছুই না। সবসময়ই তার এক্সের উপস্থিতবুদ্ধি নিয়ে আমার সাথে তুলনা দিত।




আমি যতটুকু বুঝেছি, তার আমার সম্পদের দিকেও নজর আছে। সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের ছবি নিয়ে ইনবক্সে আমার ফ্রেন্ডকে কমেন্ট করেছে দৈহিক সৌন্দর্য নিয়ে। বিষয়টা আমার এবং আমার ফ্রেন্ডের ভালো লাগেনি। তার মোবাইলে একদিন আমি অন্য মেয়ের ছবিও পাই, তখন সে ধরা খায় এবং মিথ্যা কথা বলে। আমি তাকে সবসময় টাকা দিয়ে সাহায্য করতাম, কিন্তু সে এমন ব্যবহার করত, মনে হতো যেন সে-ই উলটো আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করছে।




আমার অনেক বড়ো হবার স্বপ্ন ছিল। অথচ আমি নিজে কোচিংয়ে ভর্তি না হয়ে তাকে টাকা দিয়ে দিয়েছি; তাকে ভর্তি করানো এবং অন্যান্য অনেক কাজেই বড়ো অঙ্কের টাকা দিয়েছি। তার সাথে প্রতিনিয়ত বাড়াবাড়ি করার কারণে আমি আমার পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাই, অথচ সে নিজের পড়াশোনা ঠিকই রেখেছে; এই মুহূর্তে আমি তার আচরণ সব গুছিয়ে বলতে পারছি না। তার আচরণগুলো মেনে নিতে না পেরে আমি ব্রেকআপ করে ফেলি, কিন্তু কয়েক মাস পর পর আমি নিজেই নক দিয়ে ফেলি। আমি সবসময় তার সব কথা নিয়ে সাফার করেছি, তবু সে আমার জীবনে থাকল না। আমি যে লাইফে কাউকে বিয়ে করব, এমন চিন্তাও এখন আমার মাথায় আসছে না, কেমন জানি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি; ওদিকে আমার পরিবার, আমি অনেক বড়ো কিছু হই, সেটা আশা করে।




আমি ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি, নিজেকে যে পড়াশোনা করে সামনে এগিয়ে নেব, সেই সাহস আমার আর আসছে না; যেন হেরে গেছি আর হারিয়ে গিয়েছি! আর সে কী করে দেখুন—আমাদের এখন সম্পর্ক নেই, তারপরও আমার পেছনে লোক লাগিয়ে রেখেছে…আমি কী করি না করি অথবা এগোচ্ছি কি পেছোচ্ছি, তার আপডেট জানতে।




আমার জাজ অথবা ফরেন ক্যাডার হবার ইচ্ছে। সে একদিন আমাকে রাস্তায় ফেলে চলে যায়; সেদিন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “তুমি কী হবে? বিসিএস ক্যাডার হবে না?” আমি উত্তরে বলেছিলাম, “না, আমি বিসিএস ক্যাডার হব না।” এটা শুনেই সে আমাকে ফেলে চলে যায়, আমার পুরো কথা না শুনেই। আমি এরপরই তাকে বলতাম, আমার বিচারক হবার ইচ্ছে। সে আমাকে সবসময় অবমূল্যায়ন করত, তাই আমার ভেতরে যে-প্রতিভা ছিল, সেটাও শেষ হয়ে গেছে; এখন আমার এমন অবস্থা হয়েছে যেন আমি আর কিছুই হতে পারব না।




তার প্রতি আমার জেদ কাজ করে এবং আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি ফরেন ক্যাডার ও জাজ, দুটোই হব। কিন্তু আমি তার কথা এবং ব্যবহার থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারিনি, আমি এখনও কষ্ট পাচ্ছি, আর নিজের অজান্তেই তাকে টেক্সট করে ফেলছি। আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না, অনেক কষ্ট হচ্ছে।




আরও একটা কথা। সে এখন আবার ফিরতে চাইছে, তবে তার সব কথাই আমার কাছে ট্রিকি মনে হচ্ছে। আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারব, সে ফিরতে চাইছে আমার টাকার লোভে। আমি এসব কষ্ট মন থেকে ঝেড়ে ফেলে যেন তাকে ক্ষমা করে দিই, সেজন্য সে আমাকে টেক্সট করেছে বার বার। বিশ্বাস করুন, আমার মন থেকে ক্ষমা আসে না তার জন্য, আমি ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট পেয়েছি এক ওর‌ই কারণে। অথচ মানুষটা এমনভাবে মনে গেঁথে গেছে যে, আমি অন্য কাউকে নিয়ে ভাবতে পর্যন্ত পারছি না! আমি লাইফে আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারব না।




যা-ই হোক, আমাকে এখন এগোতে হবে। আমাকে দুটো লক্ষ্যই তাড়া করছে। আমাকে পাওয়ারফুল হতে হবে। কিন্তু আমি স্পিরিট ধরে রাখতে পারছি না; তার স্মৃতিগুলো, তার দেওয়া কষ্টগুলো মুছে ফেলতে পারছি না। আমাকে যে সবসময় ছোটো ভেবেছে, সহজসরল ভেবে এত কথা শুনিয়েছে, অবমূল্যায়ন করেছে, তার জন্য হলেও আমি নিজেকে প্রমাণ করতে চাই; পারব যেদিন, সেদিন হবে আমার দিন। আমি সবসময় তার বিশ্বাস চেয়েছি, এর বেশি কিছু চাইনি। আর সে আমাকে সেটাই দিতে পারেনি।




একটু প্রথম থেকে শুরু করি, আমার পরিবার মধ্যবিত্ত। আমার বোন বেশি। বোনেরা বড়ো এবং ভাইগুলো ছোটো। আমাদের যেহেতু মেয়ের সংখ্যা বেশি, সম্পত্তিও আছে বেশ। বোনেরা পড়ুয়া, ভালো ছাত্রী। তাই আমাদের আপন চাচা-চাচি তখন আমাদের পছন্দ করত না, কারণ আমরা এগিয়ে থাকি, ওরা সেটা চাইত না। ওরা সবসময় চাইত আমাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে, রীতিমতো পুলিশ-মামলা-সংঘর্ষ লেগেই থাকত। আমার আব্বু সম্পত্তি এবং মামলা সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো ধারণা রাখেন, তাই আমাদের চৌদ্দগুষ্টি আমাদেরকে এড়িয়ে চলতে পারত না, আব্বু পুরো গুষ্টির জায়গাজমি রক্ষণাবেক্ষণ করতেন।




বাবা জিনিসটা যে কী, কী আর বলব! আব্বু সবাইকে এত এত আদর করেন, যে যখন যেটা বলে, যে যখন যেটা খেতে চায়…বলতে গেলে সব চাহিদা এক নিমিষেই হাজির করে দিতেন, তিনি যেন আলাদিনের চেরাগ! আর মা তো মা-ই! সবসময় এই দু-জন মানুষের কাছ থেকে এত পেয়েছি…এখনও পাচ্ছি। ওঁরা বারণ করে না কোনো কিছুতেই, যদিও আমরা এখন বড়ো হয়েছি।




যা-ই হোক, আমি অনেক চঞ্চল, পটু, সেয়ানা অবস্থায় হেলেদুলে লাইফ কাটাই। এত মাস্তি করেছি ছোটোবেলায়, এত বদমাস-চোর ছিলাম যে, আমার স্বীকৃত একটা নামই ছিল…বান্দরের হাড্ডি। সবার বড়ো আদরের ছিলাম আমি। কিন্তু যখন সম্পত্তির সমস্যা বেড়েছে, সবার আদর কোথায় যেন দূরে চলে যায়। পড়াশোনায় রীতিমতো ফাঁকিবাজ ছিলাম। ওসব গল্প বলে শেষ হবে না।




আস্তে আস্তে শৈশব পেরিয়ে কিশোরী হই। ক্লাস এইটে তখন, অনেক বন্ধু-বান্ধব জুটল। আমি কিন্তু জীবনের বাস্তবতা কী, সেটা জেনেছি কয়েক মাস আগে। কারণ আমি যে-পরিবারে বড়ো হয়েছি, সেখানে কখনও কষ্ট কী বুঝিনি বা কারও কাছ থেকে দুইটা কটু কথা শুনিনি—মানে রাজার মতো থাকা যাকে বলে আর কি, তেমনই ছিলাম!




আমি ধরতে গেলে এর আগেও সম্পর্কে ছিলাম। যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন আমার অনেক ফ্রেন্ডের মধ্যে একটা ফ্রেন্ড ছিল। আমি তার সিনিয়র ছিলাম। আমার খুব জমত তার সাথে। আমি কিন্তু পড়ুয়া সাজতাম তার সামনে। আমরা পরস্পরকে তুই করে বলতাম। সে কিন্তু আমার চেয়েও ভীষণ চোর, পড়াশোনায় তার একেবারেই মনোযোগ নেই। আমি তাকে উপদেশ দিতাম পড়াশোনা করার জন্য। দু-জনের মধ্যে একধরনের আবেগ কাজ করত, দু-জন স্কুলে গেলে একজন আরেকজনকে খুঁজতাম। টিফিন-ব্রেক দিলে সে আমাকে বলত, “চলে যাচ্ছি।” আমি বলতাম, “কোথায় যাচ্ছিস? আবার আসবি ক্লাসে, নাহয় তোর খবর আছে!”




আমরা কিন্তু একটা ভিন্ন পথ ব্যবহার করতাম, আর সেটা হলো, চিঠি লিখতাম একে অপরকে। এটা অবশ্য আমার আইডিয়া ছিল। সে চিঠি লিখত, কিন্তু ভুলে ভরা থাকত, আমি ভুলেও তাকে এটা বলতাম না, কারণ তার ভুল লেখার মাঝেও আমি আনন্দ পেতাম, একটা সুখ পেতাম।




দু-জনে দু-জনের নাম রেখেছিলাম। আমি যে অনেক চাপ দিতাম পড়াশোনার জন্য, তার পরিবারের তার দুইটা ছোটো ভাই আর একটা বড়ো ভাই সেটা জানত। আস্তে আস্তে আমার তাদের সাথেও ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। তার পরিবারের সদস্যরা অনেক ভালো। অনেক সম্মান দিত, মানে যে-কয়জনের সাথে পরিচয় হয়েছে, তাদের কথা বলছি, ছোটো ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতাম মাঝে মাঝে। আমরা দু-জনে অনেক কথা বলতাম ফোনে। আমাদের টেলিফোন ছিল, অনেক কথা বলতে বলতে মাসের শেষে আমাদের বিলটা এত বাড়ত যে, আব্বু ইনভেস্টিগেশন শুরু করলেন, কেন এত বিল বাড়ছে। যা-ই হোক, আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বেঁচে গেছি সেই যাত্রায়। ফোনে আলাপ হতো…যেমন সে আমার গান শুনতে পছন্দ করত। আমি গান শোনাতাম, শুধু হাস্যরসাত্মক কথাই হতো আমাদের।




স্কুল ছুটির পর ফুটবল ম্যাচ হতো। তাদের হাউজের কোনদিন খেলা আছে, অপেক্ষা করতাম। যেদিন তার খেলা থাকত, আমি ছুটির পর দেরি হলেও ফ্রেন্ডদের নিয়ে দেখতাম, সে কিন্তু লাজুক ছিল। আমি দেখছি বলে খেলতে পারত না লজ্জায়। আমি অনেক হাসতাম আর মনে মনে বলতাম, তুই লজ্জা পেলেও কী, আমি আজকে তোর খেলা দেখবই!




যখন অ্যাসেম্বলি হতো ইয়া বড়ো মাঠে, আমি কিন্তু তাকে অনেকগুলো লাইনের মধ্য থেকে খুঁজে নিতাম, সে-ও আমাকে খুঁজে নিত। আমরা যেহেতু সিনিয়র, সেহেতু আমাদের আগে ক্লাসে যেতে দিত। আমি ক্লাসের ফার্স্ট বেঞ্চে বসি, শত ব্যস্ততার মাঝেও দরজায় তাকিয়ে থাকতাম, সে আমার ক্লাস পার করে তার ক্লাসে যেত, আমিও তাকে সামনে থেকে পেছনের দরজায় দেখে বিদায় দিতাম।




ক্লাস টেন, তখন ধরতে গেলে আমার মধ্যে একটু ম্যাচুরিটি কাজ করছে, তখন ভাবলাম, আমরা যদি সারাটা জীবনের জন্য এক হতে পারি! তাই তাকে খোলাখুলি বললাম, দ্যাখ্‌, আমার পরিবারে পড়াশোনার জন্য অনেক চাপ দেয়। তুই যদি চাস, আমরা এক হই, তাহলে তুই ভালো করে পড় যেন আমার আব্বু-আম্মু খুশিতে তোকে মেনে নেয়। আর তখন একটা জিনিসই কাজ করছিল, বাবা-মা’কে কষ্ট দিয়ে বিয়ে করতে আমি পারব না। শুধু এটুকুই, তখন প্রশ্ন আসেনি, কেন এই সম্পর্কে আমি জড়াচ্ছি! যা-ই হোক, আমি তখন আনাড়ি বলা চলে! মাথায় শুধু ছিল, কাউকে খুব ভালোবাসব আর সে-ও আমাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসবে! এমন চিন্তা ওই পিচ্চি বয়সে কীভাবে আসে, আমি জানি না।




তার সাথে আলাপের মুহূর্তে আমরা যা ইচ্ছা, তা-ই বলতাম। দু-জন দু-জনকে তুই করে বলতাম, কিন্তু কখনোই মনে হয়নি, কেউ কাউকে অসম্মান করছি কিংবা কারও প্রতি কারও অসম্মান আছে। দু-জনের ভালো খারাপ দিক, যেমন পরিবারে কী হচ্ছে না হচ্ছে সবই বলতাম, মনের যত দুঃখ-কষ্ট থাকত, তাকে সব উজাড় করে বলতাম। মনে কখনও এটা কাজ করেনি যে, সে আমাকে পরে আঘাত করবে, সে কখনও করেওনি। আগেই বলেছি, সে পড়ুয়া না, পড়াশোনা তার জন্য যম। তারপরও আমি তাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে এটা-ওটা পড়তে বলতাম। একজামের আগের দিন কী কী লাগবে মোবাইলে ডেসক্রিপশন লিখতাম…এটা নেবে ওটা নেবে, একজামে কেমন থাকবে, কীভাবে আনসার করবে—তার সবসময় কেয়ার করতাম। সে এসএসসি’তে ফেইল করে, তখন আমি তাকে অনেক জোর করি, অনেক কষ্টে সে এই ধাপটা পার করে।




ও যখন এসএসসি পাশ করে, তখন আমি ইন্টারমিডিয়েটে। তখন থেকে নতুন যুদ্ধ শুরু হয় আমার। আমার চাচা-চাচি আর আমার কাজিন আব্বুকে অনেক চাপ দেয়, জায়গাজমি নিয়ে সমস্যা করে। তখন থেকে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। যখন আমরা বড়ো হয়েছি, কলেজে পড়াকালীন আম্মু সমাজে মানসম্মান বিষয়টা নিয়ে অনেক বোঝাত। বলত, কারও সাথে যেন সম্পর্ক না করি। যদি করি, তাহলে কোনোদিনই সমাজে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারব না, নানান মানুষের উদাহরণ দিত। একটা ভয় কাজ করেছে তখন থেকে, কেননা ইতোমধ্যে আমি একটা সম্পর্কে, অনেক বড়ো বোঝা মাথায়।




তখন আমি তাকে বললাম, দ্যাখ্‌, আমি আব্বু-আম্মু’র অজান্তে সম্পর্কটা করেছি। তুই যদি সত্যিই আমাকে পেতে চাস, তাহলে তোকে ভালো করে পড়তে হবে, নাহয় আমাদের এক হওয়া সম্ভব নয়। অনেক বোঝাতাম…আচ্ছা, তার কতই-বা বয়স যে, সে আমার পরিস্থিতি অনুভব করতে পারবে? কারণ একটা মেয়ের পরিপক্বতা চলে আসে একটা ছেলের অনেক আগেই। আমার মনে আছে, আমি তাকে পেইন দিতাম এসব বলে বলে যে, আর মাত্র পাঁচ-ছয় বছর আছে, আমাদের সব সেট করতে হবে। তুই যদি পড়াশোনা করিস, টাকা-পয়সা না থাকলেও অন্তত পড়াশোনাটা দেখে মেনে নেবে। প্লিজ, ভালো করে পড়! আমি তাকে অনেক চাপ দিতাম। কিন্তু তার একদমই অপছন্দের জিনিস ছিল পড়াশোনা।




শেষমেশ সে এইচএসসি’তে ফেইল করে। আমার মধ্যে তার পরেও আশা কাজ করছিল… না, আমি আমার ভালোবাসাটাকে জয় করব। আমি তাকে জোর করে পড়াব। আমি তাকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছি, সে তবু একজাম দেয়নি। মাত্র দুই বিষয়ে ফেইল করেছে সে; আমি তাকে বুঝিয়েছি, তা-ও সে একজাম দিলই না। উলটো সিদ্ধান্ত নিল, সে দেশের বাইরে চলে যাবে।




আমি তাকে বললাম, আচ্ছা, তোর পড়াশোনা নাহয় হয় না, ঠিক আছে, আমি সেটা মানছি, কিন্তু অন্য কিছু তো করতে পারবি। আমি আইডিয়া দিয়েছিলাম, তুই ক্রিকেট খেল, খেলতে খেলতে একটু নাম হবে, তখন আমি আব্বু-আম্মু’কে বলতে পারব। সে বলল, তার আব্বু-আম্মু ক্রিকেট খেলতে দিবে না। শুনে আমার খুব খারাপ লাগল। খেলবে কি খেলবে না, এটা তো তার ইচ্ছা। তার আব্বু-আম্মু না দেবার কে! তারপর বলেছি, তুই আর্মিতে জয়েন কর। এটা দিয়ে হলেও আব্বু-আম্মু’কে মানিয়ে নেব। আমার কম বয়সে একটা জিনিস কাজ করছে যে, মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে বিয়ে করতে পারব না, আর যে মা-বাবা আমার জন্য এত কষ্ট করেছেন, তাদেরও আমাকে নিয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছা আছে।




ওকে আমি বলেছি, আচ্ছা, কিছু প্ল্যান থাকলে আমার সাথে শেয়ার কর, যাতে তোকে নিয়ে আমি একটু স্বস্তি পাই। আমি চাই, আমাদের এই সম্পর্কটা একটা নাম পাক, আমরা যাতে স্বাধীনভাবে একে অপরের হাত ধরে একসাথে থাকতে পারি। সে আমাকে কিছুই বলত না, শুধু বলত, আল্লাহ যা করে। আমি বলতাম, কিছু তো বল, আমি একটু স্বস্তি পাই! যা-ই হোক, তাকে একজাম দেওয়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, সে দেয়নি। আমার সাথে কোনো প্ল্যানও করেনি। সে বাইরের দেশে চলে যায়। তখন খুব কেঁদেছিলাম, পাগলের মতো কেঁদেছিলাম, বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, সে চলে গেছে।




এসব ভাবার সময় আমার অঝোরে কান্না আসে।
Content Protection by DMCA.com