বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান—মূলধারার ও স্বতন্ত্র উভয়ই—আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রাণশক্তিকে চেপে ধরেছে এবং তার গভীর জ্ঞানকে বিকৃত করেছে। ফলে আজ অনেক মানুষ মূল শিক্ষার সৌন্দর্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, বরং অন্য কোথাও খোঁজ করে। এতে তারা আসল বার্তাটিকেই হারিয়ে ফেলে।
কিন্তু আধ্যাত্মিক সত্য কোনো ক্লাব নয়, যেখানে কিছু গৎবাঁধা নিয়ম না মানলে তুমি ক্লাবের বাইরে পড়ে যাবে। এই সত্যের বার্তা সহজ—একে অপরকে ভালোবাসো। ভালোবাসার মধ্যেই দেখা দেয় সেই পরম উপস্থিতি, যা এনে দেয় পূর্ণতার আনন্দ।
আমার জীবনের সবচেয়ে হতাশার সময়ে আমি নিজের কাছে এক শপথ করেছিলাম—“যদি আমি এই দুঃখ থেকে মুক্তি আর শান্তি পাই, আমি জীবনের বাকি সময় মানুষকে বলব—এটা সম্ভব।” পরে জানলাম, বৌদ্ধধর্মে এ ধরনের প্রতিজ্ঞার নাম 'বোধিসত্ত্ব সংকল্প'।
দীর্ঘদিন আমি অনুপ্রেরণাদায়ী আলোচনা করেছি। শ্রোতাদের মধ্যে নানা মতের মানুষ ছিলেন। আমার বক্তব্যে আমি মিশিয়ে বলতাম—রুমির কবিতা, বৌদ্ধ শিক্ষা, জেন-উপমা, হিন্দুদর্শন, নানা ধর্মগ্রন্থের উপমা। কারণ একবার অন্তরের দরজা খুলে গেলে বোঝা যায়—সব আধ্যাত্মিক পথে আসল বার্তাটা একই।
আধ্যাত্মিক বাণী মানে কখনোই শুধু লিখিত শব্দ নয়; এর আসল অর্থ জীবন্ত অভিজ্ঞতা। কেবল বই বা ভাষ্যের সঙ্গে লেগে থাকলে অভিজ্ঞতার গভীরতাই হারিয়ে যায়। সময় এসেছে যখন জনপ্রিয় ধর্মীয় সংস্কৃতির বেলুনে আঘাত করা জরুরি—আধ্যাত্মিক জন্ম মানে শুধু মুখে প্রার্থনা নয়, বরং প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা; পরম সত্যের প্রত্যাবর্তন আসলে হৃদয়ের ভেতরে ঘটে, এ বাইরের কোনো নাটকীয় ঘটনায় নয়। এসব শুনে অনেকের হয়তো অস্বস্তি হবে, তাঁরা সরে যাবেন। সরে গেলে বরং ভালো, তেড়ে না এলেই হয়। ভিন্ন পথের আনন্দ ভিন্ন মানুষ নিতে চায় তো নিক না!
হতাশাজনক ব্যাপার—মানুষ বহু বছর এসব শোনার পরও আবার সেই একই গৎবাঁধা বিশ্বাসে ফিরে যায়—ভয়, শাস্তি, শর্ত, “ক্লাবের নিয়ম”। আসলে—এই ধর্মের বেলুন ফাটানো প্রায় অসম্ভব। তাই মঞ্চ ছেড়ে লেখালেখিই সহজ ও নরম—একটি ছোট্ট ফেইসবুক পোস্টও যথেষ্ট। এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন কাণ্ডজ্ঞান ও সহনশীলতা।