কিছু-কিছু ভালোবাসা বন্ধুত্বে হারিয়ে যায়। কিছু-কিছু বন্ধুত্ব ভালোবাসায় হারিয়ে যায়। হায়! কিছু কিছু ভালোবাসা ভালোবাসায়ও হারিয়ে যায়! যে বন্ধুত্বের শুরু ভালোবাসা থেকে, সে বন্ধুত্বের চাইতে যে ভালোবাসার শুরু বন্ধুত্ব থেকে, সে ভালোবাসা কম ক্ষণস্থায়ী।
আমি আশাকেই বিয়ে করবো।
কী বলছিস এইসব? মাথাটাথা ঠিক আছে?
ঠিকই বলছি। আমরা যখন বড় হবো, তখন বিয়ে করবো।
সেইসময় আশা থ্রিতে, পল্লব ফাইভে। আশার দাদা সুজয়ের বন্ধু পল্লব। এটা শোনার পর থেকে সুজয় আশাকে পল্লবের সাথে মিশতে দিত না। অবশ্য সুজয় মাকে এটা বলে দেয়ার পর মা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন। একটা ব্যাপার একটু বলি। ছোটদের মধ্যেও কিন্তু এই সূক্ষ্ম-সূক্ষ্ম মানবিক বোধগুলি কাজ করে। আমার এখনও মনে আছে, আমি যখন খুব ছোট ছিলাম, থ্রি-ফোরে পড়ি এরকম, তখন আমাদের পাশের বাসায় সম্পা দিদি থাকতেন। উনি দেখতে অতিসুন্দরী ছিলেন। যেদিন উনাকে দেখতে ছেলেপক্ষ আসত, সেদিন আমার ভীষণ মনখারাপ হতো। কোনও ছেলে সম্পা দিদির দিকে তাকালে আমার খুব রাগ হতো। মনে হতো, সম্পা দিদি আমার চাইতে এতো বড় কেন? ঠাকুর, আমাকে বড় করে দাও না, যাতে সম্পা দিদিকে বিয়ে করতে পারি। ছোটদেরকে দেখলেই আমরা যারা ভাবি, ও তো এখনও ছোট, কিছুই বোঝে না, তাদেরকে দেখলে ছোটরা মনে-মনে ভাবে, “এই বেকুবটা কী কিউট করে ভাবে!” আজকালকার ছোটরা সব বুঝে না বোঝার ভান করে চুপ করে থাকে। আমরা যেটা ক্লাস টেনে উঠে বুঝতে শিখেছি, এখন ছোটরা সেটা ক্লাস ফোরেই বুঝে ফেলে। ছোটরা সব বড় হয়ে গেছে ইদানিং!
আশারা থাকত ঢাকার উত্তরায়, আর পল্লব ওর সেজোকাকুর বাসায় থেকে পড়াশোনা করতো। মাঝেমাঝেই সুজয়ের সাথে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে আশাদের বাসায় আসত পল্লব। নিজে পড়াশোনা করুক আর না করুক, আশাকে সবসময়ই পড়াশোনা করতে বলতো। আশাকে অংক করিয়ে দিত, ট্রান্সলেশন করিয়ে দিত, পড়াশোনার ব্যাপারে উৎসাহিত করতো। এটা নিয়ে আশার মা-বাবা দুইজনই খুব খুশি হতেন। স্কুলে সুজয়ের চাইতে পল্লবের রেজাল্ট ভাল ছিল। আশা যখন ক্লাস সেভেনে, তখন একদিন পাটিগণিত করাতে-করাতে পল্লব বলে বসল, “আশা, জানো, আমি না তোমায় ভালোবাসি। তুমি কি আমাকে ভালোবাসবে?” “দাদা, আমি তো আপনাকে এমনিতেই ভালোবাসি অনেক আগে থেকেই!” “সত্যি-সত্যি?” “হ্যাঁ, আসলেই।” “তাহলে আজকে থেকে আমরা রিলেশনে আছি। রাজি?” “হুঁ।” “এটা কিন্তু কাউকেই বলা যাবে না। মনে থাকবে?” “মরে গেলেও বলবো না। দাদা জানলে তো আমাকে মেরেই ফেলবে, আপনাকেও আর আসতে দেবে না। বাবাও আপনাকে খারাপ ভাববে।” “বাহ্! তুমি তো খুব লক্ষ্মী মেয়ে!” আশার লাজুক চাহনিতে প্রথম প্রেমের প্রেমিকের মুখ থেকে প্রথম প্রশংসা শোনার উত্তেজনা না-বলা ভাষায় হারিয়ে গেল। কিশোরীবেলার প্রেমের ঝড় পৃথিবীর ভয়ংকরতম ঝড়ের চাইতেও তীব্র।
আশার সাথে পল্লব সারাক্ষণই ওর পড়াশোনা নিয়ে কথা বলতো। আশা চাইতো, কখনও-কখনও ভালোবাসার গল্পও হোক, কিন্তু পল্লব সেটা কখনওই করতো না। ওকে বিভিন্ন বই ধার দিয়ে পড়তে বলতো, ভাল করে পড়াশোনা করলে আশা অনেক বড় হতে পারবে, এসব বলতো। বড়-বড় মানুষের জীবনের গল্পও শোনাত। কখনও-কখনও আশার স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত আর ওর ছুটি হলে ওর সাথে হাঁটতে-হাঁটতে ওর বাসার একটু দূরে ওকে ছেড়ে কাকুর বাসায় চলে যেত। “তোমাকে ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে।” “বাংলাটা নিজে নোট করে পড়লে ভাল হয়।” “প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অংক না করে ঘুমাবে না।” পড়াশোনা নিয়ে এরকম রাজ্যের যত কথা। ওদের সম্পর্কটা ছিল যতটা না প্রেমের, তার চাইতে অনেক বেশি বন্ধুর মতো। কাকুর বাসায় অনেক কষ্টে থাকতে হতো পল্লবকে। কাকুর অগোচরে কাকি অনেক কথা শোনাতেন, বাসার সব টুকিটাকি কাজ করিয়ে নিতেন। পল্লব ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকেই টিউশনি করতো হাতখরচ আর পড়ার খরচ চালানোর জন্য। আশা যখন ক্লাস নাইনে, তখন বান্ধবীদের সাথে কথা বলার জন্য ওর বাবার মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করার পারমিশন পেত। বাবা যখন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতেন, তখন অনেক কষ্টে ফোনটা হাতে পেয়েই একটা দোকানের নাম্বারে মিসডকল দিত আশা। বিকেলের টিউশনিশেষে বাসায় ফেরার সময় পল্লব সেই দোকানে বসে থাকত মিসডকলের অপেক্ষায়। এরপর ফোন করে ১০-১৫ মিনিট সারা দিনের সব কথা শেয়ার করতো ওরা। কখনও-কখনও বেশি সময় মোবাইল ফোনে কথা বলার অপরাধে আশার হাতে ফোনটা দিতেন না বাবা। তখন ওর সাথে কথা বলতে না পেরে পল্লব সারারাত কাঁদত। কাকুর মোবাইল থেকে চুরি করে রাজ্যের সমস্ত কষ্টগুলি আশার কাছে পাঠিয়ে দিত। সেসব মেসেজ পড়ে আশাও কাঁদতে থাকত। পল্লবের দুর্ভোগ আর কষ্টের কথা পড়ে পড়ে আশার মনের মধ্যে এক ধরনের মায়া কাজ করতো। কিন্তু সে কখনওই বুঝতে পারেনি, সেটা কি ভালোবাসা, নাকি অন্যকিছু। পল্লব কখনওই আশার সাথে প্রেমালাপ করতো না, যতক্ষণই কথা হতো, ততক্ষণই সে আশার পড়াশোনা নিয়ে ওকে ইন্সপায়ার করতো। ভাল-ভাল বই পড়তে বলতো। কখনও-কখনও ওর জন্য নিজে সাজেশন্স রেডি করে বিভিন্ন বই ঘেঁটে-ঘেঁটে নোট করে দিত, ওকে নিজের পড়াবই উপহার দিত।
ক্লাস নাইনে পড়ার সময় যে ‘ভালোবাসি’ বলাটা হয়েছিল, এইচএসসি ক্লাসে এসে সেটা স্রেফ অভিভাবকসুলভ বন্ধুত্বে রূপ নেয়। আশা তখন ক্লাস নাইনে, বন্ধু হিসেবে পল্লবের সঙ্গে সে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। পল্লবের কেয়ার ওর ভীষণ ভাল লাগত। ওর জীবনটা খুব গোছানো হয়ে উঠল। ও আর কোনও ছেলের কথা খুব একটা ভাবত না, পল্লবের ফোনের অপেক্ষায় থাকত। এর মধ্যে টিউশনির টাকা জমিয়ে পল্লব একটা নকিয়া ১১০০ মডেলের সেট কিনে ফেলেছিল। আশার মধ্যে পল্লবের প্রতি এক ধরনের মানসিক নির্ভরতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। একদিন পল্লবের ফোন না এলে সে গুছিয়ে পড়াশোনা করতে পারত না। ভালোবাসা থেকে স্বচ্ছন্দ বন্ধুত্বের জন্ম হয়েছিল।
পল্লব এইচএসসি পাস করে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে গেল। আশা সেসময় ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর ছেলেমেয়েরা মুক্ত পাখির মতোই উড়তে শুরু করে। বিশাল আকাশে অনেক গুলি পাখি উড়ে। সেখানে একটা পাখির আরেকটা পাখিকে হঠাৎ করেই ভাল লেগে যায়। সেই ভাললাগাটাকে পাখিটা ‘ভালোবাসা’ ভেবে নিয়ে ভুল করে। পল্লব ভার্সিটিতে উঠেই প্রেমে পড়ল ওদের ক্লাসের মল্লিকার। সে মেয়েটি দেখতেশুনতে খুবই সরল আর চুপচাপ গোছের ছিল। কথাবার্তায় কেমন জানি এক ধরনের মায়া ছিল। ওর স্নিগ্ধতা পল্লবকে মুগ্ধ করেছিল। আট মাস প্রেম করার পর পল্লব জানতে পারল, ওদের পাড়ার আরেকটা ছেলের সাথে সেই ক্লাস সিক্স থেকেই মল্লিকার রিলেশন। সেই ছেলেটি ইস্টওয়েস্টে বিবিএ থার্ড ইয়ারে পড়ে। মল্লিকা ইচ্ছে করেই পল্লবকে কিছুই বলেনি। এসব নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি করে ওরা নিজেদের মধ্যে ব্রেকআপ করে ফেলে। পল্লব ভাবতে লাগল, মায়াবী চোখের সব মেয়েই কি মল্লিকার মতন করে দারুণ গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারে?
ওদিকে আশার সাথে পল্লবের আগের মতোই কথা হতো। মল্লিকার সাথে ব্রেকআপ হয়ে যাওয়ার পর সে আশাকে মল্লিকার কাছ থেকে প্রতারিত হওয়ার পুরো ঘটনাটি জানায়। এটা শুনে আশা পল্লবের প্রতি আরও মায়ায় জড়িয়ে পড়ে। মেয়েরা কেন যে হুটহাট করে কোনও কারণ ছাড়াই মায়ায় জড়িয়ে পড়ে, সেটা মেয়েরা নিজেরাই জানে না। পল্লবের একদিন কী মনে হল, সে আশাকে বলে বসল, “আশা, আমি সেই ছোটবেলায় তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। তখন বিয়ে কী, সেটাও বুঝতাম না। এরপর বলেছিলাম, আমাদের রিলেশন হয়ে গেছে। আমিই পরে সে রিলেশনটাকে ঠিকভাবে এগিয়ে নিতে পারিনি। সব দোষ আমারই। এতদিন পর এসে কেন জানি না, আমি তোমাকে হঠাৎ মল্লিকার জায়গায় স্থান দিয়ে ফেলেছি। তোমাকে আমার মল্লিকার মতো লাগে। আমি বুঝতে পারছি না, আমি কী করবো।” এটা শুনে আশার ভীষণ রাগ হল। “কেন আমাকে মল্লিকার মতো লাগবে? এতদিন পর আবারও এলেন যখন, আমাকে আমার মতো করে ভেবে উনি কাছে এলেন না কেন? আমি কেন আরেকজনের জায়গা নিলাম?” কিন্তু পল্লবকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে ওটা না বোঝার ভান করে কথা চালিয়ে গেল। ওর ভয় ছিল, যদি এটা বললে পল্লব কথাবলা বন্ধ করে দেয়? সেসময় পল্লবের ফোনই ছিল আশার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। সেদিনের পর থেকে আবারও পুরনো দিনগুলির মতো একদিন আশার সাথে কথা বলতে না পারলে পল্লব পাগলের মতো হয়ে যেত।
একদিন কী যেন একটা নিয়ে দুজনই রেগে গেল। এক পর্যায়ে আশা বলল, “দেখুন, আপনি আসলে আমাকে ভালোবাসেন না। আপনার জীবন থেকে মল্লিকা চলে গেছে বলে আমার প্রতি আপনার এক ধরনের মোহ কাজ করছে। তাছাড়া আমি ছাড়া আপনার তেমন কোনও বন্ধুও নেই। একদিন অন্য কাউকে পেয়ে যাবেন, সেদিন এই আশাকে ভুলে আবার ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবেন। তখন আমি কী করবো? দেখুন, এভাবে করে জীবন চলে না। আপনি সবসময়ই জীবন নিয়ে একটা ঘোরের মধ্যে থাকেন। আপনি আমাকে প্রেমিকা বানালেন, এরপর আবার বন্ধু বানালেন, এখন আবারও প্রেমিকা বানাতে চাইছেন। এটা হয় নাকি? আপনি কী চান, সেটা আপনি নিজেই জানেন না। আমার সাথে রিলেশন করার দরকার নেই। তার চাইতে আমরা বন্ধু ছিলাম, বন্ধুই থাকি। সে-ই ভাল!”
“আশা, প্লিজ এভাবে করে বোলো না। আমি জানি, আমি অনেক ভুল করছি। তোমার প্রেমিক হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তোমার বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। এটা আমি ঠিক করিনি। আর কোনওদিনই এটা হবে না। প্রমিজ।”
“দেখুন, আপনি শুধু আমার সাথে মিশছেন বলে আমাকে ভাল লাগছে। অন্য একটি মেয়ের সাথে মিশে দেখুন, ওর মধ্যে আমাকে খুঁজে পাবেন। এরপর ওকেও ভাল লাগবে। আপনার এতো মেয়েকে ভাল লাগলে, যার সাথে কথা হবে তারই প্রেমে পড়ে গেলে, সেখানে আমার আলাদা অস্তিত্ব কোথায়?”
“আশা, প্লিজ এভাবে করে বোলো না। তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে আমি কী নিয়ে বাঁচব? জানো, আমার এ জীবনে যত সুখ, যত কষ্ট, সব কিছুই একমাত্র তুমিই জানো। যে কথা আমি আমার ফ্যামিলি, বন্ধুবান্ধব, ছোটভাই, এমনকি নিজেকেও বলতে পারি না, সেগুলি আমি তোমাকে বলি। কিছু-কিছু কথা আমি ডায়রিতে পর্যন্ত লিখতে সাহস পাই না, কিন্তু তোমাকে বলি। প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন কিছু লুকানো ব্যাপার থাকে, যেগুলির মুখোমুখি সে সারাজীবনেও দাঁড়াতে পারে না, মনের ভুলেও সেসব কিছু ভাবতে চায় না, ডায়রিতে লিখে রাখা তো অনেক পরের ব্যাপার! আমি তোমাকে সেসব কথাও অকপটে স্বাচ্ছন্দ্যে বলতে পারি। ডায়রিতে কোনও কথা লেখার আগে একটু ভাবতে হয়, সাজাতে হয়, কিন্তু তোমাকে নির্ভাবনায় সবকিছুই বলা যায়, কিছুই সাজাতে হয় না। এমনকি, যে কথা আমি মল্লিকাকেও বলিনি কোনওদিনও, সে কথাও তুমি জানো। এটাকে তুমি কী বলবে? ভালোবাসা নয়? তুমিই বলো!”
অনেক ছেলেই এই ভুলটি করে। একটি মেয়ের কাছে ভালোবাসা নিবেদন করার সময়ে আরেকটি মেয়ের কথা বলে ফেলে। ছেলেরা এটা বলে মেয়েটির কাছে তার নিজের সততা ও ভালোবাসার প্রমাণ দিতে চায়। আর মেয়েটি এটা শুনলেই মুহূর্তের মধ্যে চরম বিরক্ত হয়ে উঠে। সেদিন সে কারণেই হোক, কিংবা অন্য কোনও কারণেই হোক, আশা পল্লবকে ‘হ্যাঁ’ ‘না’ কিছুই না বলে ফোনটা রেখে দিল।
এর প্রায় একমাস পর প্রথম বারের মতো পল্লবকে আশা কনফেস করল, “আপনাকে ভালোবাসি।” মেয়েরা যখন একবার মন থেকে ‘ভালোবাসি’ বলে ফেলে, তখন পুরো দুনিয়া অন্য দিকে গেলেও ভালোবাসার মানুষটির সাথেই থেকে যায়। এইচএসসি পাস করার পর আশা বুয়েটে সিএসই’তে চান্স পেয়েও সেখানে ভর্তি না বাসায় অনেক যুদ্ধ করে ভর্তি হয়ে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে। উদ্দেশ্য একটাই, যাতে ভার্সিটি লাইফটা দুজন এক সাথে কাটাতে পারে। সকালে একসাথে নাস্তা করা থেকে শুরু করে দুপুরের লাঞ্চ, বিকেলের নাস্তা, রাতের খাবার ওরা এক সাথেই খেত। পল্লব ওকে আগের মতোই পড়াশোনার ব্যাপারে, নতুন বইপড়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করতো। আশাও অনেক পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে ডিপার্টমেন্টে ভাল রেজাল্ট করতো। ধীরে-ধীরে আশার বাসায়, অন্য বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ব্যাপারটা জেনে গেল। পল্লবকে ওর বাসায় ভাল ছেলে হিসেবে জানত বলে ওদের সম্পর্কটাকে কেউ খারাপভাবে নেয়নি।
সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। ফ্রেন্ডরা জানত, ওরা সুখী কাপল। ওরাও দিব্যি ছিল, কিন্তু পল্লব মাঝেমধ্যেই অন্য কয়েকজন মেয়ের প্রতি এক ধরনের আকর্ষণ অনুভব করতো; চেহারার, ব্যক্তিত্বের, কথাবার্তার, রুচির। পল্লবের এই পুরনো ভুলটা নিয়ে ওদের মধ্যে ঝগড়া হতো। ওই ঝগড়া পর্যন্তই। এরপর আবারও সব ঠিক হয়ে যেত। এর মধ্যে ওরা দুজন মিলে ভার্সিটিতে একটা অর্গানাইজেশন গঠন করে। কালচারেল অর্গানাইজেশন, নাম সুরবন্ধন। পল্লব ছিল সুরবন্ধনের ফাউন্ডিং প্রেসিডেন্ট আর আশা ট্রেজারার। আস্তে-আস্তে সেই সংগঠনে সদস্য বাড়তে লাগল। সংগঠনের পেছনে রাতদিন সময় দিতে গিয়ে আশার সাথে পল্লবের একটু একটু দূরত্ব তৈরি হতে লাগল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে সবার সাথে কথা বলতো, আশা রাতে ফোন করলেই দেখত, কল ওয়েটিং, আশা অপেক্ষায় থাকত, কিন্তু ওকে ফোন না করেই পল্লব ঘুমিয়ে পড়ত। কখনও-কখনও রাত ৩টা পর্যন্তও কল ওয়েটিং থাকত; আশা জেগে থাকত। ভাবত, কথা হবে, কিন্তু পল্লব কলটা শেষ করেই ঘুমিয়ে পড়ত। জিজ্ঞেস করলে বলতো, “সংগঠনের কাজে কথা বলেছি।” প্রায়ই আশা ফোন করলেও ধরত না, কিন্তু অন্যদের ফোন ঠিকই ধরত। আশা সারাদিন ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য অপেক্ষা করে থাকত, কিন্তু পল্লবের সময় হতো না। একই অর্গানাইজেশন আশা নিজেও সামলাত, কিন্তু ওদের সম্পর্ককে কখনওই গুরুত্বহীন হয়ে যেতে দেয়নি। পল্লবকে এটা নিয়ে কিছু বললেই তুমুল ঝগড়া বেধে যেত ওদের মধ্যে। নিজ থেকে আশার সাথে দেখা করতে চাইত না, নানান ধরনের রিহার্সেল, প্রোগ্রাম অর্গানাইজিং, সদস্য সংগ্রহ, সদস্যদের সময়দেয়া, এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকত। আশা বেশি-বেশি কৈফিয়ত চাইত বলে পল্লব একটা সময়ে ওর সাথে প্রচুর মিথ্যেবলা শুরু করে, কোনও দোষ করলেও ভুলস্বীকার করতো না। অথচ এ দুটি কাজ সে আগে কখনওই করেনি। সারাদিনে মিলে ওর একটি বারের জন্যও আশাকে দেখতে ইচ্ছে করতো না। এটা নিয়ে আশা ওর উপর প্রায়ই রেগে যেত আর বকাঝকা করতো। তবে এ কাজটি আশা কখনওই অন্যকারোর সামনে করেনি। পল্লব ওকে বোঝানোর চেষ্টা করতো, আর আশা বুঝতে না চাইলে ওকে ঝগড়াটে ডাকতো, ব্রেকআপ করে ফেলতে চাইত। পল্লব হঠাৎ করেই বদলে যেতে শুরু করল।
ব্রেকআপের কথা আশা কখনওই সিরিয়াসলি নিত না। ভাবত, ব্যস্ততা কমে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। রিলেশনের ক্ষেত্রে, মেয়েরা, যা-ই ঘটুক না কেন, চূড়ান্ত অঘটন ঘটার আগ পর্যন্ত ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’ নীতিতে বিশ্বাস করার জন্মগত প্রতিভাসম্পন্ন।
এভাবে করে দিনের পর দিন শত অপমান আর অবহেলা মুখ বুজে সহ্য করতো আশা। কখনও-কখনও রাগে আর অভিমানে ফেটে পড়ত। পল্লবকে অনেক কথা শুনিয়ে দিত। একটাসময়ে পল্লব আশার ঝগড়াঝাঁটিতে বিরক্ত হয়ে সংগঠনের আরেকটা মেয়ের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ওর নাম ছিল লায়লা, খুবই চমৎকার আবৃত্তি করতো। মেয়েটা আশার কথা জানত, কিন্তু পল্লবের সাথে অনেক সময় দিত। ও চাইত, যাতে পল্লব আশাকে ছেড়ে ওর কাছে চলে আসে। ওর কথায়, ব্যবহারে, কবিতায় ওর প্রতি পল্লবের অসীম মুগ্ধতা কাজ করতো। “লায়লাই আমার জীবনের প্রেরণা। ওর ডেডিকেশন দেখলে যে কেউই অবাক হয়ে যাবে। ওর কাছ থেকে আমি শিখেছি, কীভাবে করে জীবনের বাজে সময়গুলিতে হাসিখুশি থাকা যায়। তোমার সাথে যতক্ষণই থাকি, ততক্ষণই চরম অশান্তির মধ্যে থাকি। ওর কাছে গেলেই একটু শান্তি পাই।” আশা এসব শুনলে ভয় পেয়ে যেত। অনেক অনুনয় করে সরিটরি বলে আগের সমস্ত অবহেলা ভুলে গিয়ে পল্লবের যা যা ভাল লাগে, তা তা-ই করতে চেষ্টা করতো। পল্লব তারপরও বলতো, “আমি জানি, তুমি আবারও ঝগড়া করবে। আমি তোমার সাথে আর আগের মতন এনজয় করি না। আমি ব্রেকআপ করে ফেলবো।” আশা এটা শুনলে কাঁদতে শুরু করে দিত, আর তখন আবার ওকে সরিটরি বলে শান্ত করে পল্লব নরম সুরে কথা বলতো। আশা নিজেও রেগে গেলে অনেক কিছুই মুখে বলে ফেলত, কিন্তু কখনওই ব্রেকআপ করার কথা ভাবেনি। ৮ বছরের সম্পর্ককে এতো সহজে ভাঙা যায়!
আশার ভেতরে-ভেতরে জানা হয়ে গিয়েছিল, কিছু একটা ভুল হচ্ছে, কিছু একটা ভুল হচ্ছে! তবে এই ভাবনাটাকে সে পাত্তা দিত না খুব একটা।
“আচ্ছা, আপনার ফোনে তো মিসডকল অ্যালার্ট চালু আছে। আপনি ব্যস্ত থাকেন, কল ওয়েটিং পাই, কখনও-কখনও আপনার ফোনের চার্জও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আপনি তো জানতে পারেন যে আমি আপনাকে ফোন করছি। তাহলে এরপর আপনি কোনওদিনই কলব্যাক করেন না কেন? আমি আপনাকে সারাদিনই মিস করি। আপনি কি আমাকে কখনওই মিস করেন না? যদি করেনই, তবে আমার মিসকরার ব্যাপারটা নিয়ে সবসময়ই ঝগড়ার সূত্রপাত ঘটান কেন? আমি আপনাকে আর চিনতে পারি না ইদানিং। আপনার কাছে আমার চাইতেও সংগঠন বড়? আপনার কি লায়লাকেই ভাল লাগে? নাকি, অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেছেন? দেখুন, আপনার অন্য কাউকে ভাল লাগতেই পারে। খুবই স্বাভাবিক এটা। ওরকম কিছু হলে আমাকে জানান।”
“দেখ আশা, তোমার সঙ্গ আমার আর ভাল লাগে না। আমি যে অন্য কারোর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি, সেটাও নয়। কিন্তু এটা ঠিক, আমি অন্য কারোর সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসি। আমি তোমাকে বলবো না, ও কে। ওকে যে আমি ভালোবাসি, তাও না। তবে আমি ওর সাথে থাকতে ইজি ফিল করি। যত কিছুই হোক, এটা শিওর, তোমাকে আমি ছাড়ছি না।”
পল্লব অন্য একটি সিম থেকে সংগঠনের নাহার নামের একটি মেয়ের সাথে কথা বলতো। সেসময় আশা ওকে মোবাইলে পেত না। জিজ্ঞেস করলে বলতো, “মোবাইলে চার্জ ছিল না।” নাহারকে বলতো, “আশার সাথে আমার শুধুই ঝগড়াঝাঁটি হয়, তাই আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেছে। ওর সাথে আমার হবে না।” আশার সাথে যেসব ছবি তুলত, আশাকে সেসব ছবি ফেসবুকে দিতে নিষেধ করতো। জিজ্ঞেস করলে বলতো, “আমি তো পাস করে বের হয়ে যাচ্ছি ছয় মাসের মধ্যে। এরপর তোমাকে বিয়ে করলে যত খুশি ছবি দিয়ো।” মেয়েরা বিয়ের কথা শুনলেই একেবারে গলেটলে খুশিমনে বোকা হয়ে যায়। আশাও আর ওকে কিছু বলতো না। আসল ঘটনা ছিল এই যে, ফেসবুকে ছবি দেখলে নাহার যদি বুঝে ফেলে যে ওদের ব্রেকআপ হয়নি, তাহলে তো সমস্যা। পল্লব সংগঠনের রিহার্সেলের নাম করে বিভিন্ন মেয়েকে সময় দিত, কিন্তু আশাকে সময় দিত না। জিজ্ঞেস করলে নানানভাবে মিথ্যে কথা বানিয়ে-বানিয়ে বলতো। অন্যদের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে আশা আবারও পল্লবকে চার্জ করতে শুরু করতো।
“আপনি এমন করেন কেন আমার সাথে? আমি তো কিছুই চাই না আপনার কাছ থেকে, শুধুই পাশে থাকতে চাই। অন্য মেয়েদের জন্য আপনার সময় আছে, কিন্তু আমার জন্যই নেই, তাই না? আজকে ওই মেয়েটার সাথে দেখা করে যে সময়টা দিয়েছেন ওকে, তার অর্ধেক সময়ও আমাকে দিলে আমি আপনাকে আমার হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে দিতাম। আপনি কখনওই আমাকে বোঝার চেষ্টা করেননি, আর বুঝবেনও না।”
“দেখ, তোমার সাথে কথা বলতে আমি ফ্রি ফিল করি না। আমাকে তো ভাল থাকতে হবে, তাই না? আমি যতক্ষণ তোমার সাথে থাকি না, ততক্ষণই ভাল থাকি। এটা নিয়ে আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস কোরো না। আর আমাকে ফোনে ওভাবে বিরক্ত না করলে খুব খুশি হবো।”
সেদিনের পর থেকে আশা পল্লবকে আর ফোন করেনি। পল্লবের খুব কাছের বন্ধু দীপক যাকে আশা দাদার মতোই শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস করতো, তাকে সব কিছু বলার পর সে আশাকে বলল, “বোন, তোর কথা ঠিক। আমিও কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় পল্লবকে দেখেছি কয়েকটা মেয়ের সাথে। সবাই যে আমাদের সংগঠনের, তা কিন্তু না। পল্লবের সাথে আমিও এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছি। ও বারবারই বলে, ও নাকি আর তোর সাথে এনজয় করে না। আরও কিছু কথা বলে যেগুলি আমি তোকে বলতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে, তোদের এই ৮ বছরের সম্পর্কে কোথাও কোনও ভুল ছিল যেটা তোরা দুজনের কেউই কখনও ওভাবে করে খেয়াল করিসনি। তোর কথা তুললেই পল্লব অ্যাভয়েড করে। আমি যতদূর জানি, দুইজন মেয়ের সাথে ওর খুব অন্তরঙ্গতাও হয়েছে। আমি তোকে আর ভেঙে বলতে পারবো না। তুই তোর মতো করে বুঝে নিস।”
মেয়েদের মন। সবই বোঝে, কিন্তু কিছুই মানে না। এত কিছুর পরও আশা প্রতীক্ষা করতে লাগল। ওর প্রেম যদি সত্য হয়, তবে পল্লব ওর কাছে আবার ফিরে আসবেই। প্রতিটি মুহূর্ত গুনে-গুনে ওর অনন্তকালের প্রতীক্ষা শুরু হল। আহা ৮টি বছর যে মানুষটার সাথে কাটিয়েছে, সে এখন আশার চোখে চোখ পড়লে অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নেয়, কখনও ক্যাম্পাসে সামনে এসে পড়লেও ঘুরে এমনভাবে অন্যদিকে চলে যায় যেন ৮ বছরের ইন্টিমেসি দূরে থাক, ৮ মিনিটের আলাপও ওদের মধ্যে কখনওই হয়নি। অসম্ভব কষ্টের মধ্য দিয়ে আশার দিনরাত্রি কাটতে লাগল। বাসায়ও কাউকে কিছু বলতে পারছিল না। কেউ জানত না, ওর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বনটা ওর জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। মা জানত, সব ঠিক আছে। আর আশা রাতের পর রাত ঘুমাতে পারত না। ফোনের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে রুমের ভেতরেই অনেকসময় অজ্ঞান হয়ে যেত। জ্ঞান ফিরলেই আবারও ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবত, “যদি উনি ফোন করতেন একবার! মনের ভুলে হলেও!” ফোন আসে না, রাত আসে, কষ্টরা আসে।
আশা প্রায়ই ভাবতে থাকে, “আমি তো নিজে উনার কাছে যাইনি। উনিই আমাকে বারবার কাছে টেনে নিয়েছেন। তবে কেন এভাবে ভুলেযাওয়া? আমাকে উনি ভালোবেসেছেন, কারণ আমি নাকি উনার শান্তির একমাত্র আশ্রয়। আর সেই মানুষটাই যখন বলতে শুরু করেন, উনি আর আমার সাথে ফ্রি ফিল করেন না, আমি বোরিং, আমার মধ্যে এনজয় করার কিছুই নেই, দুনিয়ার সব মেয়েই আমার চাইতে ভাল, তবে আমি কী নিয়ে বাঁচব? আমি যদি এই মানসিক কষ্টে মারাও যাই, তবুও উনি আমাকে দেখতে আসবেন না। আমি বিরক্তিকর, আর একজন বিরক্তিকর মানুষের লাশ তো আরও বিরক্তিকর!
“দ্বিতীয়বার সম্পর্কের প্রথম ৩ বছর উনি ভালোই কেয়ারিং ছিলেন। এরপর আমি যখনই উনাকে পাগলের মতন ভালোবেসে ফেললাম, তখন থেকেই উনি সরে যেতে শুরু করলেন। উনি কেয়ার করতেন কি করতেন না, সেটাও কোনওদিন ভাববার প্রয়োজন মনে করিনি। আমি নিজেই সবসময়ই উনার কেয়ার নিয়েছি। আমার ঈশ্বর জানেন, আমি উনাকে অন্য ১০টা ছেলের মতো ভাবতাম না। তবে কেন এমন হল? আমার কী দোষ? সব ছেলেই কি এরকম? সবাই বলতো, উনি এরকমই; ভাল, কিন্তু কারোর সাথে সম্পর্কে থাকার মতন না। আমি কারও কথা কানে নিতাম না। কারণ, আমি তো জানি, উনি একটা সময়ে আমার জন্য কী করেছেন। উনিই আমাকে গড়ে দিয়েছেন। আজকের আমি’র পুরোটাই তো উনার অবদান। আমি যে দেবতার মতো মানুষটাকে চিনি, সেই উনি এই উনি হতে পারেন না। কিছুতেই না!
“আমি তো সবসময়ই উনার প্রেমিকার চেয়ে বরং বন্ধু হয়েই থাকতে চেয়েছি। রিকশায় চড়লে হাফ-হাফ শেয়ার করেছি, রেস্টুরেন্টে খেতে বসলেও ওরকম, এমনকি এক ঠোঙা বাদাম কিনলেও ১০ টাকার মধ্যে ৫ টাকা আমি দিয়েছি। উনার পকেটে কখনও টাকা না থাকলে কিন্তু বাইরে খেতে যেতে ইচ্ছে করলে আমি নিজেই পুরো টাকা দিয়ে বলেছি, টিউশনির বেতন পেলে হাফ ফেরত দিয়ে দিতে হবে কিন্তু! কেন করেছি? শুধু ভালোবাসতাম বলেই তো! উনি সেটা কখনওই কি বুঝতে পারেননি? ছেলেরা আসলে কী বোঝে?”
আরও হাজার-হাজার কথা আশার মনে আসত। পল্লবের সাথে সে মেন্টালি কতটা ইনভল্ভড ছিল, সে কথা একমাত্র আশাই জানে। ওর ফ্যামিলির লোকজন, ফ্রেন্ডরা সবাই ওকে বোকা ডাকে। কিন্তু এই ভালোবাসা যদি বোকামিই হয়, তবে তার দায় কেন আশাকে একা-একা বহন করতে হচ্ছে? পল্লবকে আশা ভালোবেসেই ছিল পল্লবের ভালোবাসা দেখে। তবে কেন……….. এসবের উত্তর আশা কোথাও পায় না।
পল্লব বদলে যেতে শুরু করার আগ পর্যন্ত খুব সুন্দর ৮ বছরের সম্পর্ক ছিল ওদের। ব্রেকআপের পর দেড় বছর কেটে গেছে। এখনো কেউ পল্লবের দোষগুলি নিয়ে কথা তুললে আশার কিছুই বলতে ইচ্ছে করে না। সে ব্রেকআপের কথা, পল্লবের কথা কাউকেই তেমন একটা বলেও না। কারণ সে ভাবে, ওকে উনি অনেক কষ্ট দিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবেই ওর জীবনের অনেক অর্জন আর সুখের কারণও তো উনিই। ভালোবাসার সাথে সম্মানটা কাজ করতো বলে কখনওই সে ভাবনায় আর সম্বোধনে ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে আসতে পারেনি। এই ৮ বছরের সম্মানটুকু কীভাবে মুহূর্তেই নষ্ট করে ফেলা যায়? পল্লবের দূরে সরে যাওয়ার অপরাধও আশা ক্ষমা করে দিতে পারে, কিন্তু পল্লবের কাছে ভালোবাসার আশ্রয় খোঁজার বোকামিটাকে আশা কিছুতেই ক্ষমা করতে পারে না।