তৃতীয়ত, মায়া (Māyā)—এটি প্রবঞ্চনা, অর্থাৎ নিজের দুর্বলতা বা অভিপ্রায় লুকিয়ে অন্যের চোখে এক ভিন্ন চেহারা দেখানো। এটি আত্মাকে বিভক্ত করে, কারণ ভেতর ও বাহির এক থাকে না। মায়া জেগে উঠলে সাধক সত্যের দিকে ঝোঁকে—নিজেকে সৎভাবে দেখতে শেখে, কারণ মায়ার ভেতর যতই বাহারি আবরণ থাক, তা আত্মার দীপ্তিকে ঢেকে ফেলে।
চতুর্থত, লোভ (Lobha)—সবচেয়ে নীরব কিন্তু গভীর বন্ধন। এটি কেবল অর্থ বা সম্পদের জন্য নয়; সম্মান, প্রশংসা, প্রভাব—সব কিছুর আকাঙ্ক্ষাই লোভের রূপ। লোভ জাগলে সাধক স্মরণ করেন অপরিগ্রহ—আসক্তিহীনতার স্বাদ। যত ছেড়ে দেওয়া যায়, তত হালকা হওয়া যায়; যত কম চাওয়া যায়, তত মুক্ত থাকা যায়।
এই চারটি কষায় একে অপরের সঙ্গে গাঁথা—একটির উপস্থিতি অন্যটিকে উস্কে দেয়। তাই জৈন সাধক কষায়কে বলে থাকেন “আত্মার শত্রু।” গুপ্তি (অন্তর্নিয়ন্ত্রণ) ও সমিতি (সতর্ক আচরণ) এই চার বিকারকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে। ক্রোধ যখন আসে, মনগুপ্তি তাকে শ্বাসে ফিরিয়ে দেয়; মান উঠলে বাক্গুপ্তি মানুষকে নরম শব্দে বিনয় শেখায়; মায়া ধরলে কায়গুপ্তি শরীরকে স্থির রাখে, যেন প্রতারণার কোনো বাহ্য রূপ না পায়; লোভ জাগলে এষণা ও অপরিগ্রহের সমিতি মানুষকে সংযম শেখায়।
এইভাবে গুপ্তি ও সমিতির প্রতিটি অনুশীলন এক এক করে কষায়ের ঘনত্ব কমায়। জৈন শাস্ত্রে বলা হয়, যখন কষায় পাতলা হয়, তখন আত্মা হালকা হয়ে ওঠে—তার দীপ্তি ম্লান নয়, জাগ্রত। এখানেই দেখা যায়, সম্যগ্দর্শন ও সম্যগ্জ্ঞান—যা আলো জ্বালায়—তারা কেবল তত্ত্ব নয়; সম্যগ্চারিত্র সেই আলোকে জীবনের প্রতিটি কর্মে নামিয়ে আনে। ফলত, “ভেতরের মানুষ” বদলায়—ক্রোধে আর দহন নেই, মানে আর দম্ভ নেই, মায়ায় আর দ্বন্দ্ব নেই, লোভে আর আঁকড়ে ধরা নেই। আত্মা ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হয়ে ওঠে, যেন ঝরে পড়া ধুলোয় ধোয়া আয়না—যেখানে নিজের দীপ্তি নিজেই প্রতিফলিত হয়।
বাস্তব উদাহরণ চোখে আনলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। ধরা যাক, দুপুরে হাঁটছেন; সামনে ভেজা মাটি, ছড়িয়ে আছে পিঁপড়ে। ইর্য্যা-সমিতি বলবে—থামুন; ঝাড়ু বা ছোটো ব্রাশ থাকলে আলতো করে সরিয়ে নিন, নইলে পথ ঘুরে যান। জলের তেষ্টা—এষণা-সমিতি শেখায়—পানি ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে খান। কারও সঙ্গে বিরোধ—ভাষা-সমিতি স্মরণ করায়—কথা কমান, কণ্ঠ নরম করুন, তথ্যের চেয়ে সত্য-সহানুভূতির জায়গা বড়ো রাখুন। বইটা টেবিলে রাখতে গিয়ে ধপাস করে ফেলবেন—আদান-নিক্ষেপণ-সমিতি বলে—নরম হাতে রাখুন; ধাক্কায় যাদের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে—সেই ক্ষুদ্রজীবদের কথা ভাবুন। রাস্তায় থুথু ফেলবেন—উৎসর্গ-সমিতি থামিয়ে দেয়—যেখানে জীবক্ষতি কম, সেখানেই বর্জ্য ফেলুন, ভেবে ফেলুন। এই সামান্য দৃশ্যগুলোই অহিংসার দৈনন্দিন মুখ।
গুপ্তি-সমিতির এই অনুশাসন আসলে কোনো বাহ্যিক চাপ নয়; এটি অন্তরের রুচি-বদল—একধরনের সূক্ষ্ম মানসিক বিবর্তন। আগে যেখানে তাড়াহুড়ো, কর্কশতা, অহংকার বা অধিকারবোধে আমরা তৃপ্তি খুঁজতাম, এখন সেখানে আনন্দ আসে ধীরে চলায়, নম্র কথায় এবং নিজের প্রাপ্য অন্যকে ফিরিয়ে দিতে পারায়। এই বদলই জৈন আচরণের সত্যিকারের ফল। গুপ্তি-সমিতির লক্ষ্য বাহ্যিক আচরণে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা নয়, বরং চেতনার কেন্দ্রকে পালটে দেওয়া—যাতে সংযম কষ্ট নয়, বরং স্বাভাবিক আনন্দ হয়ে ওঠে।
“নিজের প্রাপ্য অন্যকে ফিরিয়ে দেওয়া” মানে হলো, জীবনের যা-কিছু আমরা পাই—ধন, জ্ঞান, সাফল্য, সুযোগ, সম্মান বা অভিজ্ঞতা—সেগুলোকে নিজের সম্পত্তি মনে না করে, আবার সমাজ, প্রকৃতি ও অন্য জীবের কল্যাণে ফিরিয়ে দেওয়া। জৈন দর্শনের ভাষায়, এটি অপরিগ্রহ বা আসক্তিহীনতার জীবন্ত প্রকাশ। আমরা যা-কিছু পাই, তা স্থায়ী নয়; কিছু সময়ের জন্য আমাদের হাতে এসেছে, যেন আমরা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করে আবার প্রবাহে ফেরত দিতে পারি।
যেমন একজন শিক্ষক নিজের অর্জিত জ্ঞান ছাত্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেন, কোনো প্রতিদানের আশা ছাড়া; বা একজন গৃহস্থ তার আয়ের একটি অংশ অন্যের প্রয়োজনে ব্যয় করেন; অথবা কেউ নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেন সমাজের উন্নতির কাজে—এই সবই “নিজের প্রাপ্য অন্যকে ফিরিয়ে দেওয়া”-র উদাহরণ। এর মূলে আছে এই উপলব্ধি যে, কিছুই আমার নয়—সবই জীবনের ধারার অংশ, আমি কেবল তার এক ক্ষণিক ধারক।
যখন এই উপলব্ধি দৃঢ় হয়, তখন দান বা ত্যাগ আলাদা কোনো কর্তব্য মনে হয় না; বরং তা হয়ে ওঠে আনন্দের বিষয়। কারণ দানের মুহূর্তেই আত্মা বোঝে—“আমি দিচ্ছি” বলার মতো কিছুই নেই, আমি কেবল প্রবাহে অংশ নিচ্ছি। তখন অহং, অধিকারবোধ, লোভ, বা প্রতিদানের আশা ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়।
জীবনের প্রতিটি প্রাপ্তিকে নিঃস্বার্থতার মাধ্যমে পুনর্প্রবাহিত করা—যেখানে দেওয়াই আনন্দ, আর মুক্তিই তৃপ্তি—এই মানসিক রূপান্তরই সম্যগ্চারিত্রের পরিপূর্ণ রূপ—যেখানে আচরণ আর ধর্ম আলাদা নয়, জীবনই হয়ে ওঠে দানের এক নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ।
এই রুচি-বদলকে টেকসই রাখে চারটি নিয়মিত সাধনা: সমায়িক, স্বাধ্যায়, প্রতিক্রমণ ও তপ।
‘সমায়িক’ মানে সমানচিত্তে থাকা বা “সমতা-ধ্যান”—এটি দৈনন্দিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনকে স্থির করে শান্তির অনুশীলন। এখানে সাধক চেষ্টা করেন প্রশংসা-নিন্দা, লাভ-ক্ষতি, সুখ-দুঃখ—সব অবস্থায় সমানভাবে থাকতে। এই সমত্ব (equanimity) আত্মাকে স্থির রাখে, যেন ক্রোধ বা হিংসা সহজে ঢুকতে না পারে।
‘স্বাধ্যায়’ মানে শাস্ত্রপাঠ ও আত্মমনন। এটি শুধু গ্রন্থ পড়া নয়; প্রতিটি বাক্যের অর্থ নিজের জীবনে খুঁজে দেখা। জৈন সন্ন্যাসীরা আগম ও সূত্র পাঠের মাধ্যমে নিজের মনকে জাগিয়ে তোলেন, যেন জ্ঞান কেবল ধারণা নয়, এক বোধে পরিণত হয়।
‘প্রতিক্রমণ’ হলো আত্ম-সমালোচনার প্রক্রিয়া—দিনের শেষে নিজের চিন্তা-কর্ম পরীক্ষা করে দেখা, কোথাও হিংসা, মিথ্যা, লোভ বা আসক্তি ঢুকে পড়েছিল কি না। ভুল হলে তা স্বীকার করে ভবিষ্যতের জন্য নতুন সংকল্প নেওয়া। এই প্রতিদিনের আত্ম-স্বীকারই মনকে হালকা করে, অহংকে ভাঙে।
‘তপ’ মানে তপস্যা বা সংযমের অনুশীলন—যার মধ্যে আছে উপবাস, ইন্দ্রিয়নিগ্রহ, সহনশীলতা, নম্রতা ও শৌচ (অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি)। তপ শরীরকে শৃঙ্খলিত করে, মনকে স্থিতিশীল করে, আর আত্মাকে লোভ-মোহ থেকে মুক্ত রাখে।
এই চার সাধনা একত্রে আত্মাকে বারবার “ধুয়ে” দেয়, যেন কষায় (ক্রোধ, মান, মায়া, লোভ) আবার জমতে না পারে। তখন সম্যগ্দর্শন (সঠিক দৃষ্টি) চোখে আলো আনে—মানুষ বুঝতে শেখে, বাস্তবতা বহু-দৃষ্টিকোণ সম্পন্ন; সম্যগ্জ্ঞান (সঠিক জ্ঞান) সেই আলোকে ভিত দেয়—আত্মবোধ গভীর হয়; আর গুপ্তি-সমিতি সেই আলোকে দৈনন্দিন কাজে ছড়িয়ে দেয়—হাঁটাচলা, বলাবলি, বসা-ধরা, আহার-বর্জন—সব কিছুর মধ্যে।
ফলে আচরণ ও চেতনার ব্যবধান কমে আসে। ধীরে ধীরে আত্মা নিজের ওপর জমে-থাকা কষায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেলে। ক্রোধের উত্তাপে যেখানে আগে আত্মা দগ্ধ হত, এখন সেখানে প্রশান্তি; লোভের জালে যেখানে জড়িয়ে পড়ত, এখন সেখানে হালকা মুক্তি। সম্যগ্চারিত্র এই নীরব পরিবর্তনের নাম—এটি প্রকাশ্যে নাটকীয় নয়, বরং প্রতিদিনের ছোটো ছোটো অনুশীলনের ভেতর দিয়ে আত্মাকে ধীরে ধীরে শুদ্ধ করে।
যখন এই শুদ্ধতা সীমা ছুঁয়ে যায়, তখন আচরণ আর আলাদা কোনো চেষ্টা নয়—সংযমই স্বভাব হয়ে ওঠে। সেই অবস্থায় মানুষ বাহ্য দুনিয়ার নিয়মে নয়, অন্তরের দীপ্তি অনুসারে চলে; তার চেতনা নিজেই পথ দেখায়। এটাই জৈন সম্যগ্চারিত্রের পরিণতি—যেখানে আত্মা ক্রমশ অজ্ঞানতার আবরণ সরিয়ে নিজের স্বাভাবিক জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়, নীরবে, দৃঢ়ভাবে, সম্পূর্ণভাবে।
অহিংসা এখানে কেবল “আঘাত কোরো না” নয়; এটি অনুভবের একটি শৈলী। আমার তাড়না, আমার সুবিধা, আমার রাগ—এগুলো যখন অন্যের কণ্ঠরোধ করে, সেটিও হিংসা। তাই সম্যগ্চারিত্র অহিংসাকে প্রসারিত করে মন ও বাক্যে—চিন্তায় করুণা, ভাষায় কোমল সত্য, ব্যবহারে সংযম।
সত্যও এখানে কেবল তথ্য-সামঞ্জস্য নয়; সত্য মানে—যে-কথা কাউকে ছিন্ন না করে বাস্তবকে প্রকাশ করে।
অস্তেয় বা চুরি না করা শুধু অ-অনুমোদিত বস্তুগ্রহণ নয়; সময়, কৃতিত্ব, মনোযোগ—অন্যের অধিকার কেড়ে নেওয়াও চুরিরই রূপ, সম্যগ্চারিত্র তাই কৃতিত্বে উদারতা ও প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়ার নৈতিকতা শেখায়।
‘ব্রহ্মচর্য’ শব্দটি সাধারণভাবে অনেক সময় কেবল “যৌনসংযম” থেকে বিরতি হিসেবে বোঝানো হয়, কিন্তু জৈন দর্শনে এর মানে অনেক গভীর ও সূক্ষ্ম। এখানে ব্রহ্মচর্য মানে এমন এক চেতনার শৃঙ্খলা, যেখানে ইন্দ্রিয়ের উত্তেজনার ওপর মননের স্থিরতা, ভোগের আস্বাদের ওপর জ্ঞানের বোধ, আর অস্থায়ী আকর্ষণের ওপর দায়িত্বপূর্ণ প্রেমের জয় ঘটে।
“ব্রহ্মচর্য” শব্দটি গঠিত হয়েছে “ব্রহ্ম” ও “চর্য”—এই দুই অংশে। “ব্রহ্ম” মানে চূড়ান্ত পবিত্রতা, আত্মার স্বচ্ছ স্বরূপ; “চর্য” মানে চলা বা আচরণ। অর্থাৎ, ব্রহ্মচর্য মানে “ব্রহ্মতুল্য চেতনা নিয়ে চলা”—জীবনের প্রতিটি কাজ, চিন্তা ও অনুভূতিকে সেই অন্তর্দীপ্ত চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যে রাখা।
দৈহিক দিক থেকে, এটি ইন্দ্রিয় ও কামনাকে সংযত রাখা, যাতে তারা আত্মার উপর আধিপত্য বিস্তার না করতে পারে। কিন্তু এর আসল উদ্দেশ্য দমন নয়, বরং রূপান্তর—যেখানে কামনা আত্মিক শক্তিতে পরিণত হয়। যেমন জল বাষ্পে পরিণত হয়ে আকাশে মিশে যায়, তেমনি যৌনশক্তিও যখন সংযমে রূপান্তরিত হয়, তখন তা চেতনার দীপ্তিতে মিশে যায়। এই সংযম মনকে স্থির করে, দেহকে হালকা করে, এবং বোধকে স্বচ্ছ করে তোলে।
জৈন শাস্ত্রে বলা হয়েছে—ইন্দ্রিয়সুখ আসলে ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু তার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ চেতনার শান্তি হারায়। ব্রহ্মচর্য সেই শান্তিকে পুনরুদ্ধারের সাধনা। এটি শেখায়, উত্তেজনার উপর স্থিতির জয়—অর্থাৎ যে-মুহূর্তে মন তীব্র আকাঙ্ক্ষায় কাঁপে, সেই মুহূর্তেই নিজেকে ধরে রেখে স্থির হওয়া। এটি কেবল দমন নয়; এটি সচেতন প্রত্যাহার—আত্মা যেন নিজের দীপ্তি হারিয়ে ইন্দ্রিয়ের দাস না হয়।
তেমনি আস্বাদের উপর বোধের জয় মানে, আনন্দকে ভোগ নয়, উপলব্ধির স্তরে নিয়ে যাওয়া। যখন মানুষ বুঝতে শেখে যে, সুখ বাইরের কোনো বস্তুতে নেই, বরং নিজের অন্তরের প্রশান্তিতে, তখন কামনা স্বাভাবিকভাবে ক্ষীণ হয়। তখন ভোগের আকর্ষণও ধীরে ধীরে তৃপ্তির গভীরে গলে যায়।
আর ব্যাবহারিক প্রেমের উপর দায়িত্বের জয় মানে—সম্পর্কে কেবল আবেগ নয়, সচেতনতা ও শ্রদ্ধার বোধ। ব্রহ্মচর্য প্রেমকে নিষিদ্ধ করে না; বরং তা পরিশুদ্ধ করে। এখানে প্রেম আর দখল নয়, করুণা; সম্পর্ক আর মালিকানা নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
এইভাবে ব্রহ্মচর্য দৈহিক সংযমের সীমা ছাড়িয়ে চেতনার রূপান্তরে পৌঁছে যায়। এটি দেহের উপর মন, আর মনের উপর আত্মার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে। এই অবস্থায় শক্তি আর নিঃশেষ হয় না—তা রূপান্তরিত হয় প্রজ্ঞায়, করুণায়, এবং গভীর শান্তিতে। তখন মানুষ বুঝতে পারে, ব্রহ্মচর্য মানে কিছু বর্জন নয়; এটি আসলে নিজের চেতনার সঙ্গে পুনর্মিলন, যেখানে কামনাও নিভে যায় না—শুধু তার রূপ পালটে যায়, জ্বালাময় আকাঙ্ক্ষা পরিণত হয় নিঃশব্দ দীপ্তিতে।
অপরিগ্রহ জৈন দর্শনের অন্যতম গভীর নীতি—যার অর্থ শুধু সম্পদ ত্যাগ নয়, বরং আসক্তিহীনতার সাধনা। “পরিগ্রহ” শব্দের মানে হলো আঁকড়ে ধরা, অধিকার করা বা নিজের বলে ধরে রাখা; আর “অপরিগ্রহ” মানে সেই আঁকড়ে ধরা মনোভাব থেকে মুক্তি।
অর্থাৎ, অপরিগ্রহ কেবল বাহ্যিক সম্পদ বা বস্তু কমিয়ে দেওয়া নয়; এটি মনের ভিতরে জমে থাকা আকাঙ্ক্ষার স্রোতকে বশে আনার প্রক্রিয়া। মানুষ যতই বেশি কিছু পেতে চায়—সম্পদ, সম্পর্ক, মর্যাদা, প্রশংসা—ততই তার মন ভারী হয়। এই আকাঙ্ক্ষাগুলোই আত্মাকে বেঁধে রাখে। তাই অপরিগ্রহ শেখায়—যত কম আঁকড়ে ধরি, তত সহজে দিই; আর যত সহজে দিই, ততই ভেতরে হালকা হই।