তেতো বচন


এক। বলা হয়, আমরা যখন কোনও অন্যায় করি, তখন আর কেউ না দেখলেও সৃষ্টিকর্তা নাকি দেখেন। আপনাকে একটা রোমাঞ্চকর তথ্য দিই। সৃষ্টিকর্তার সাথে সাথে একজন-না-একজন মানুষও সেই কাজটা ঘটতে দেখেন বা অনুমান করেন, যে মানুষটিকে আপনি কিংবা আপনারা, যে কিংবা যাঁরা সবাই মিলে অন্যায়টা করছেন, তাঁরা দেখতে পান না।


যদি কোনও মানুষ নিজচোখে না-ও দেখে থাকেন, অন্তত একজন মানুষের কান পর্যন্ত ওই অপকর্মের কথা যাবেই যাবে। তার পরেও আমরা অন্যায় করে কেন বেঁচে যাই, তা জানেন? ওই মহান ব্যক্তিটির মহানুভবতার জন্য। সেজন্য, কাউকে কোনও অপরাধ করতে দেখলে ‘আইজকা পাইসি তোরে!’ কিংবা ‘হুহ্‌, এই কথাটা মনে রেখো, আমি কিন্তু সাক্ষী!’ কিংবা ‘এটা গোপন করার বদলে আমি কী পাবো?’ এ ধরনের কথাবার্তা বলা বন্ধ করে দিন।


আমরা কী করি? কারুর ছোট্ট একটা ভুলের কথা জানতে পারলে সারাক্ষণই তাকে সেটা মনে করিয়ে দিই যে, ‘এটা না করলে আমি কিন্তু ওটার কথা সবাইকে জানিয়ে দেবো!’ এক্ষেত্রে আমি মনে করি, সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, কারুর হাঁড়ির ভেতরের খবর নিয়ে নাড়াচাড়া না করা, ওতে নিজেরই লাভ। কীরকম? কাউকে নিয়ে যত বেশি নাড়াচাড়া করবেন, হোক সে প্রিয় কিংবা কাছের মানুষ, ততই তার প্রতি আপনার ভালোলাগা কমতে থাকবে এবং এ কারণে নিজের মধ্যে তীব্র অস্বস্তি কাজ করবে। মোদ্দা কথা, কোনও মানুষেরই সব কিছু কখনও জানতে নেই।


আর কারও করা অন্যায় যদি চোখে পড়েই যায়, কিংবা সেই অন্যায়টা যদি আপনার সাথেই করা হয়, তবে অনেক কষ্ট হবে, এটা জানি; তবুও তাকে ক্ষমা করে দিন। ওতেই আপনি দিনশেষে শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন। এবার এসব ক্ষেত্রে আমি কী করি, সেটা বলি।


কারও গোপন-করা অন্যায়ের কথা, মাঝেমধ্যে যেটা আমার নিজের জন্যও ক্ষতিকারক, জানতে পারলে খুব কষ্ট হলেও তাকে মাফ করে দিই। কারণটা কী, জানেন? ভালো করে খুঁজলে দেখা যাবে, আমার নিজেরই পাপের ভাণ্ডার আরও বড়ো। আমি ক্ষমা করে দিই নিজে ক্ষমা পেতে। কারুর ছোটোখাটো ভুল যদি আমি ক্ষমা করতে না-ই পারি, তবে আমি আমার সমুদ্রসম পাপের জন্য কোন মুখে ক্ষমা প্রত্যাশা করব?


দুই। কোনও মানুষের আসল চেহারা বোঝার জন্য, বিশেষ করে, প্রেমিক/প্রেমিকাকে কিংবা যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তাকে যাচাই করার জন্য, রাগিয়ে দিন, প্রয়োজনে একটুআধটু মিথ্যে বলে হলেও রাগিয়ে দিন। রেগে গেলে মানুষ যে চেহারা ধারণ করে, আর যে কথাগুলি বলে ফেলে, সেটাই তার আসল চেহারা, আর সেই কথাগুলিই তার সত্যিকারের মনের কথা।


তিন। একটি অপ্রিয় সত্য বলি। পেশাদার যৌনকর্মী নারীদের তুলনায় আমাদের দেশের ভদ্রতলার নারীদের মধ্যে হিপক্রিসি অনেক বেশি থাকে। সে কারণেই, বুদ্ধিবৃত্তিক বিচারে শানিত পুরুষরা সাধারণত প্রথম শ্রেণির নারীদের বেশি পছন্দ করেন। অন্য দিকে, বহুগামী ক্লাসি পুরুষদের তুলনায়, (ক্লাসি মানে, যাঁরা বহুগামিতায় ক্লাস মেইনটেইন করেন।) যাঁরা ওসব পেশাদার নারীদের কাছে যান, তাঁদের মধ্যে হিপক্রিসি অনেক কম থাকে। সে কারণেই, বুদ্ধিবৃত্তিক বিচারে শানিত নারীরা সাধারণত প্রথম শ্রেণির পুরুষদের বেশি পছন্দ করেন। সহজ করে বলি। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, ‘হিপক্রিসি’ ব্যাপারটা পুরুষদের তুলনায় নারীদের কাছেই বেশি আদর পায়। হিপক্রিসি বা ভণ্ডামিকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যান অনেক পুরুষই, এবং এর জন্য নারীরাই দায়ী, কেননা একজন পুরুষকে, তাঁর প্রকৃত চেহারাটি মেনে নিয়ে বেশিরভাগ নারীই গ্রহণ করতে পারেন না। পুরুষরাও তাই নারীদের মনের মতো করে চলেন, সময়মতো সেই নারীকেই আবার ছুড়ে ফেলে দেন। নারীরা---মুখে চান সততা, মনে চান শঠতা।


চার। যে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা কখনওই মুখে ‘ভালোবাসি’ বলে না, সে সত্যিই বিরক্তিকর! আবার, যে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা তিনবেলায় চব্বিশ বার ভালোবাসি ভালোবাসি করে, সে সর্বোচ্চ লেভেলের বিরক্তিকর। তবে যা-ই বলুন না কেন, প্রায় সব মেয়েই ভালোবাসার চাইতে ‘ভালোবাসি’ শব্দটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়। মেয়েদের মন পেতে চাইলে ভালোবাসার চাইতে চব্বিশ ঘণ্টায় আটচল্লিশ বার ‘ভালোবাসি’ বলাটা জরুরি। ছেলেরা শুতে চাইলে বলে, 'ও গো, ভালোবাসি!' মেয়েরা ভালোবাসি শুনলে বলে, 'আচ্ছা, তবে শুই!' একটা ছেলের কাছে, মেয়েরা ভালোবাসা যতটা চায়, তার চাইতে অনেক অনেক অনেক বেশি চায় সময়। এ কারণেই, মেয়েদের চোখে, বেকার ছেলেরা সবসময়ই প্রেমিক হিসেবে ভালো। যার কোনও কাজ নাই, তার প্রেমিকার কোনও অভাব নাই। এমন বোকামোটা মেয়েদের মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য।


পাঁচ। প্রবাদে শুনেছি, পুরনো চাল নাকি ভাতে বাড়ে! আমার কাছ থেকে শুনে রাখুন, মদ হাতে পেলে পুরনো মাতাল, যে আজ সময়ের দাবিতে ভদ্রলোক হয়েছে, তার জিভ থেকেও কিন্তু লালা ঝরে! এখানে, ‘মদ’ শব্দটির জায়গায় আরও অনেক কিছুই বসানো যাবে, এবং সেইসব শব্দ বসিয়ে দিলেও বাক্যটি পুরোপুরিই সঠিকটা বজায় রাখবে। বিশ্বাস না হলে বসিয়েই দেখুন না, অবাক হয়ে যাবেন!