ধরো, যেদিন তোমার ষাট পেরুলো, আমিও তখন পঞ্চাশোর্ধ্ব; সেদিন কাটবে কি আর কখনও পুরো একটা দিন হেসে-খেলে কফির পেয়ালা হাতে একসাথে? আমাদেরও কি আসবে দিন...এমন কোনও দিন, যেদিন দু-জন বসে আজকের এই মুহূর্তগুলোর করব স্মৃতিচারণ?
বলার মতো জমল তো অনেক কিছুই এই এতদিনে; আমাদেরও কি মিলবে সুযোগ বন্ধুতার স্মৃতিতে ডুব দেবার, ঠিক যেমনি দেয় আর কেউ কেউ? আসবে কি আর সেই সময়, আজ যা-কিছু বলতে পারিনি, তার সবই সেদিন বলে হালকা হবার?
আচ্ছা, এই যে আমি আমাদের কথা বলছি, আমাদের দু-জনের কথা বলছি, এই আমাদের মাঝে শুধু কি একা আমিই? কোথায় আছে নিয়ম কেবল বিবাহিতরাই দম্পতি হয়? কেবল বিবাহিতরাই বুড়োবয়সে স্মৃতিচারণের রাখে অধিকার, কে বলেছে ওসব? এ পৃথিবীর সব কিছুতেই বড্ড বেশি নিয়মের বাড়াবাড়ি! কেন, বন্ধুতার কি কোনও দাম্পত্য থাকতে নেই?
আচ্ছা, আমি কি তোমার বন্ধু? না কি প্রেমিক? খেলার সাথী? না যদি হই, শুধুই কি তবে প্রয়োজন? না কি প্রিয়জনই? না কি কেউই নই আমি তোমার? আমি কি তোমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো অসত্যটি? আমাদের সম্পর্কটা কী, বলো তো? এ কি কোনও সম্পর্ক আদৌ? না কি শুধুই মুহূর্ত? নামহীন, গন্তব্যহীন মুহূর্তই এক? না কি নিছকই মায়া কিংবা অভ্যস্ততা?
বলেছিলাম, আমার সমস্ত না-থাকা জুড়ে শুধুই তুমি। এই না থাকার কি কোনও সীমানা থাকে… দিগন্তের উপরে ঠিক যেভাবে আকাশ ছিটিয়ে রাখে দেহটাকে?
তোমার ভাবনা এলেই আমার কী যেন হয়, ঠিক বলে উঠতে পারি না, ভাষাগুলো এমন অথর্ব হয়ে পড়ে থাকে নিশ্চুপ, শুধু চুপ…শুধু চুপ… তখন আমার চারপাশের বাতাসে কথাগুলো কেমন ভেসে বেড়ায়... আমি ওসব ধরতে শিখিনি কখনও, শুধু চুপ থেকে গভীর আগ্রহে বাধ্য ছেলের মতো কান পেতে থেকেছি।
এই নীরবতা আমাকে মেরে ফেলবে, এই অব্যক্ত কথারা আমাকে ভস্ম করে দেবে! এই শূন্যতা কী বলতে চায়? ওরা কী চায় আমার কাছে? ভাষা? মুহূর্ত? না কি শুধুই ভস্ম?
আমি মাঝে মাঝে একাই তোমার হাতটি ধরে বহুদূরে হাঁটতে চলে যাই, তখন তোমার সাথে আমার অনেক কথা হয়; সেই কথাগুলোর কোনও কারণ কিংবা কোনও গন্তব্য থাকে না; আমি তখন তোমার সান্নিধ্যে থাকি, এটাই আমার কাছে মুখ্য, এই মুহূর্তগুলোতে আমি কখনও একা হই না, এই মুহূর্তগুলো আমার একান্ত নিকট-আত্মীয়, ঠিক এই মুহূর্তগুলোর জন্যই আমি বেঁচে থেকে এত সুখী!
কখনও কখনও, কাঙ্ক্ষিত কারও উপস্থিতিতেও মানুষ এতটা সুখ অনুভব করে না। আমি তোমাকে পেয়ে গেলে এর বেশি আর কী-ইবা পেতাম? আমি তো তোমাকে পেয়েই গেছি, তবু এত শূন্যতা কীসের আমার?