ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে নিয়ে

আমার মা ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের দীক্ষিত। তাঁর অনুপ্রেরণায় তরুণবয়সে ঠাকুরের কথা-প্রসঙ্গে, আলোচনা-প্রসঙ্গে, নানাপ্রসঙ্গে, অনুশ্রুতি, দীপরক্ষী, সত্যানুসরণ (ব‌ইটি শ্রীশ্রীঠাকুর মাত্র ২২ বছর বয়সে একরাতে লেখেন) ইত্যাদি ব‌ই পড়ে দর্শন ও মনস্তত্ত্ব বিষয়ক বিভিন্ন ভাবনারসদ পেয়েছিলাম। সেই থেকে শুরু।

আমার প্রিয় সাহিত্যিক, আমার জন্মদিন-মিতা শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘কাছের ঠাকুর’ ও কিছু সাক্ষাৎকার পড়ে বুঝেছিলাম, কীভাবে একজন মানুষ আত্মিক মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন গুরুর পদস্পর্শে। আমার নিজের বেলাতেও এটা ঘটেছে। আমার চার পর্বের লেখা ‘Conversations with My Idol’ ও ‘গুরুর পায়ের কাছে বসে’-তে আমি এ নিয়ে লিখেছি। আগ্রহীরা আমার ওয়েবসাইটে লেখাদুটো পাবেন। একজন সদ্‌গুরু সত্যিই মৃতের দেহে প্রাণসঞ্চার করতে পারেন। মানুষ হবার বিদ্যা গুরুমুখী বিদ্যা।

গুরুর সংস্পর্শে মানুষ ক্রমেই সোনার মানুষ হয়ে ওঠে কি না, তা নিয়ে বিভিন্ন মত ও বিরুদ্ধমত রয়েছে; তবে ওসব বেকার লোকেদের কাজ বলেই আমার কাছে মনে হয়। আমি কীসে বাঁচব ও বাড়ব, তা ঠিক করে দেবার আপনি কেউ নন। এমন ফালতু লেভেলের মাস্টারি ও মাস্তানি দেখলে হাসি পায়। অথচ এই সহজ বিষয়টিও কিছু মানুষ বুঝতে চান না। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কেন তাঁর সমস্ত সাহিত্যপ্রতিভার উৎস হিসেবে তাঁর গুরু ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কৃপার কথা সারাজীবন বলে গেছেন, তা নিয়ে অপ্রীতিকর আলাপে মেতে উঠতে আমি অনেক বিদগ্ধজনকেও দেখেছি এবং প্রতিবারই ওঁদের এমন মানসিক দৈন্য দেখে ঘেন্নায় মুখে থুতু জমেছে, করুণা অনুভব করেছি। জাজমেন্টাল লোকজনকে ভীষণভাবে ঘৃণা করি বলে পরবর্তীতে ওঁদের সবসময় এড়িয়ে চলেছি সচেতনভাবেই। সবাই কী আর করতে পারে? মাত্র দু-একজন করে, বেশিরভাগই তো শুধু বলে। যে-গুরু করান, তাঁর জন্য তো প্রাণটাও অবলীলায় দিয়ে দেওয়া যায়।

আমি বলছি না, ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সব লেখাই আমার ভালো লেগেছে কিংবা তাঁর সব কথার সাথে আমি একমত। (তাঁর অনেক অনুসারীই বেশ গায়ে-পড়া প্রকৃতির, বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতাসম্পন্ন এবং নিম্ন-মানসিকতার, এ-ও আমি জানি।) তবে আমি যত্ন করে রত্ন কুড়িয়ে নিতে জানি। তাই আমার যা দরকার, তা আমি ঠিকই হৃদয়ে ধারণ করে ফেলি। আমি রত্ন-কুড়োনো মানুষ, ধুলো নিয়ে কথা বলার মতন অত সময় আমার হয় না। ওসব জ্ঞানী সমালোচকদের কাজ, ওঁদের ছায়াও আমি কখনও মাড়াই না। যতটুকু লাগে, ততটুকুই স্টোর করি, বাকিটা ডিলিট করে দিই। ফালতু গবেষণা করার অত সময় আমার কোথায়? রত্নের মহাসমুদ্র যে অনেক!

হেমায়েতপুরে অবস্থিত সৎসঙ্গ আশ্রমে গিয়েছিলাম কিছু ব‌ইয়ের খোঁজে। পেয়ে গেলাম বেশ কিছু, ওঁরাও কিছু দিলেন উপহার হিসেবে। বড়ো আন্তরিক আশ্রমবাসীরা। আশ্রমে থাকার সময়টাতে একধরনের পরমশান্তি টের পাওয়া যায়। ট্রাই করে দেখতে পারেন, সত্যিই ওখানে শান্তি আছে। হাতে সময় বেশি না থাকলে ঠাকুরের লেখা ছোট্ট ব‌ই 'সত্যানুসরণ' পড়ে দেখুন, ভালো লাগবে। আর হাতে সময় থাকলে দর্শন ও মনস্তত্ত্ব নিয়ে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের যা যা সৃষ্টি আছে, ধীরে ধীরে পড়তে থাকুন, জ্ঞানের উন্মেষ ঘটবেই।