ঝরা বকুল

আমি এক ঝরা বকুল,
কাল রাতে পড়েছি ঝরে—
হঠাৎ, যখন
আকাশের ওই দূর তারারা
কইছিল কথা
আমার কানে কানে।
শিশির দিয়েছিল বুলিয়ে
কারও মধুর পরশ
আমার কপোলে।
কারও বিস্মৃত স্মৃতিতে মন আমার
গেছে যখন হারিয়ে
অজানায়—
তখন, হঠাৎ
এল এক মাতাল বাতাস
উদ্দাম আলোড়নে, আর
আমি পড়েছিলাম ঝরে।




ওগো ফুলেরা, ওগো
গাছের অঝরা বকুলেরা,
তোমরা জানো কি—
আমিও ছিলাম একদিন
তোমাদের‌ই মতন?
দখিনার সংঘাতে-শিহরনে
আমারও হৃদয়ে উঠত দোলা।
ভ্রমরের গুঞ্জরে
আমিও দিয়েছি সাড়া
বহু বহু দিন।
আমারও জীবন ছিল
হাসিতে একদিন, গানে আর
উচ্ছলতায় ভরপুর; ঠিক
এখন যেমন আছে তোমাদের।




আজ মরে গেছি আমি।
হয়ে গেছি বাতিল তোমাদের
আনন্দের সভা থেকে।




আজ ভোরে, এসেছিল
কারা যেন। নিয়ে গেছে তুলে
তোমাদের ক-জনকে।




হয়তো অতিযত্নে
গাঁথবে মালা—পরিয়ে দেবে
প্রিয়জনের গলায়।
তোমরা হয়তো রবে
কোনো অব্যক্ত প্রেমের
নীরব-গোপন মিলন-ইতিহাস হয়ে;
আর সার্থক হবে তোমাদের জন্ম।
আহা, ধন্য তোমাদের জীবন!




আর আমি
এক পদদলিত-অবহেলিত।
ক্ষণিকের জন্যে ফুটেছিলাম,
ক্ষণিকেই গেছি হারিয়ে;
সকলের নজর এড়িয়ে
আছি পড়ে ঘাসের আড়ালে
আমি এক ঝরা বকুল—
চিরউপেক্ষিত।