ভাবুন, একদিন ঘুম থেকে জেগে উঠলেন এমন এক স্বপ্ন থেকে, যা এতটাই বাস্তব মনে হচ্ছিল যে, জেগে বুঝে অবাক হয়ে গেলেন—সবই আসলে স্বপ্ন ছিল। তারপর আরও বিস্ময়করভাবে টের পেলেন—এখনও স্বপ্নের মধ্যেই আছেন, শুধু এবার জেগে থেকে সেই স্বপ্নকে দেখছেন।
এরপর হঠাৎ এক প্রবল উপলব্ধি আপনাকে গ্রাস করল—জীবন আসলে এক স্বপ্ন ছাড়া কিছু নয়। যা-কিছু এতদিন "বাস্তব" ভেবে জানা ছিল, তা এখন এক মহাস্বপ্নের মতো প্রতিভাত হলো। জীবনের সমস্ত দুঃখ, অপরাধবোধ, লজ্জা, হতাশা, রাগ, আনন্দ, প্রত্যাশা—সব কিছু একনিমিষে মিলিয়ে গেল হালকা মেঘের মতো, যার কোনো প্রকৃত গুরুত্ব নেই। হয়তো কিছুটা বিনোদনমূলক, কিন্তু কখনোই বাস্তব নয়।
যে-সত্তাকে একসময় "আমি" বলা হতো, এখন বোঝা যাচ্ছে, সে আসলে এক দ্বিতীয় সত্তা—একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, যে কেবল এই পৃথিবীযাত্রায় একটি সীমিত দেহ-যান ব্যবহার করছে। সেই দেহ-যানের যত্ন নেওয়া যায়, কিন্তু জাগ্রত সত্তা তার ঘটমান জীবনের সঙ্গে আর বাঁধা পড়ে থাকে না। প্রজ্ঞাবান, কিন্তু অনাসক্ত। নিরাসক্ত, অথচ গভীর শান্তিতে পূর্ণ।
এই দ্বিগুণ-জাগ্রত দর্শক জানে যে, তার এক মৌলিক বাস্তবতা আছে, যা জীবনের ঘটনাপ্রবাহ ও পরিস্থিতি থেকে আলাদা। সেখানে পৌঁছে যায় এক অটল অবস্থা—যেখানে ভয় ও সন্দেহ নেই, নেই মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির চিন্তা, নেই অপরাধবোধ বা পাপচেতনা। সবই উধাও।
এর পরিবর্তে সেখানে বিরাজ করে আনন্দ, পরমানন্দ, ভাষাতীত স্বাধীনতা। আর এই আনন্দ, পরমানন্দ ও স্বাধীনতার প্রাকৃতিক ফল হলো—অসীম দয়া, সহমর্মিতা, আর মানবদেহের ইন্দ্রিয়জগতকে উপভোগ করার এক আনন্দময় উচ্ছ্বাস। তখন বোঝা যায়—সত্তা আসলে এক আনন্দক্ষেত্র। সত্তা হারিয়ে গেছে প্রেমে।
প্রেমে হারিয়ে গেছে এই জগতে বিদ্যমান প্রতিটি কিছুর সঙ্গে। বোঝা যায়, প্রত্যেক প্রাণ—কিংবা জেগে উঠেছে, কিংবা জেগে উঠতে চলেছে। সবার হৃদয় এক হৃদয়, আর সেই প্রেম নিঃশর্ত।
“ঈশ্বরের রূপই হলো প্রেম।” — রামণ মহর্ষি
“তুমি সত্যকে জানবে, আর সত্য তোমাকে মুক্ত করবে।” — যিশু