জীবনের শেষকথা

কাজল দিয়ে চোখগুলোকে একটু মানুষ করলাম, ব্যাংকে যেতে হবে। রাতের দু-ঘণ্টার অপূর্ণ ঘুমকে নিপুণ অভ্যস্ততায় কাজল দিয়ে ঢেকে দিতে আমার চেয়ে ভালো আর কে-ইবা পারে!




রাশেদকে এখন আর ডাকতে ইচ্ছে করছে না। থাক, ঘুমোক। অফিসে লেইট হোক একদিন। না না, অফিস কামাই করে আমাকে সময় দিক, তা চাইছি না কিন্তু। বরং ও যতক্ষণ অফিসে থাকে, ততক্ষণই তো আমার পৃথিবী সুন্দর। নিঃসঙ্গতার সৌন্দর্য এখন আমার চেনা। একলা একলা আমি ঘর গোছাই, গাছে পানি দিই, বিবেকানন্দ কিংবা শরৎচন্দ্রে ডুবে যাই, আর নইলে উত্তম-সুচিত্রা তো আছেই! একা থাকলেই মঙ্গল।




আমার এখন আর রাশেদকে লাগে না। এতটাই লাগে না যে, মনে হয়, ওর চেহারা টানা সাতদিন না দেখলেই আমি ওকে দুম করে ভুলে যাব। আগের মতন আমার আর ওকে দেখার জন্য দম আটকে যাবে না, অভিমানে আমি আর চোখে নদী বইয়ে দেবো না; রাশেদ যদি ওর পুরোনো প্রেমিকা রেশমির কাছে ফিরে যায়, তাহলেও আমি ভেঙে পড়ব না। বরং ও কোথাও চলে গেলেই বাঁচি। যার কাছে ইচ্ছে, যেখানে ইচ্ছে চলে যাক। আমি চাই, রাশেদ মুক্ত পাখির মতো বাঁচুক।




রাশেদ আমাকে একজীবনে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে, কাজেই ও জিনিস আর লাগবে না আমার। আর দ্বিতীয় যা দিয়েছে, সেটা হচ্ছে টাকা। আমি দু-হাতে খরচ করেও শেষ করতে পারি না। শেষ করতে পারি না বলেই অশান্তি লাগে! মানুষ এত টাকা দিয়ে কী করবে? যার ঘর ভর্তি এত টাকায়, সে কী দিয়ে শান্তি কিনবে? আমি যা খুশি কিনতে পারি---এর চাইতে বড়ো অসহায়ত্ব আর হয় না।




যা-ই হোক, রাশেদকে আমার আর চাই না। শুধু একটুখানি স্পেস চাই, একা থাকতে চাই, নিজের যত্ন করতে চাই, নিজের কাজগুলো নিজেই গুছিয়ে করতে চাই। আমি এখন কেবলই আমাকে চাই।




ভালোবাসা কিংবা বিলাসিতা, এসবই জীবনের শেষকথা নয়। শেষকথাটা আসলে কী, তা খুঁজতে বেরিয়েছি আমি, নিজে শেষ হয়ে যাবার আগেই! মরার আগেই আমি বাঁচার কারণটা খুঁজে বের করব‌ই করব!
Content Protection by DMCA.com