জাগতে চাওয়ার আর্তি

আমি ঘুম দেখে ভয় পাই, কিন্তু ঘুমই তো দেখি আমার স্বভাব! যাকে জেগে থাকা বলি, তাতেই-বা কতটুকু জেগে থাকি? যাকে জীবন বলি, যা-কিছু জেনেছি, অনুভব করেছি, ভোগ করেছি, তার অধিকাংশটাই ঘুমে থাকে; কেবল দুই/চার'টা জিনিস প্রকাশিত হয়ে জাগ্রত জীবন গঠন করে। সেই অধিকাংশটা তোমাতেই পড়ে থাকে, তোমার চিরজাগ্রত অবস্থায় থাকে। তুমিই আমার জাগরণ। 




তুমি আমাকে এমনি করে গড়েছ যে, এই নিদ্রা-জাগরণ নিয়েই আমার জীবন। আমি জেগেই থাকি আর ঘুমিয়েই থাকি, আমি তোমাতেই থাকি, তোমার কোলে থাকি, তোমার ভালোবাসার ভেতরে থাকি। তোমার ভেতরে যখন থাকি, তখন আর আমার মরণের ভয় নেই। আমি কিন্তু এই থাকাটা বুঝি না, বুঝলেও ভুলে যাই, তাই ভয় পাই।




তুমি যখন অমর, আর তোমার সঙ্গে আমি সন্তানরূপে এক, তখন আমার মরণের কোনও মানেই নেই। আর তোমার এই ভালোবাসা যখন আছে, তখন জাগরণ আর জাগ্রত লীলা সম্বন্ধেও ভয় নেই। আমাকে ভালো করে দেখা দাও, প্রাণরূপে দেখা দাও, জগতপ্রেমিকরূপে দেখা দাও, চোখ ভরে দেখি, প্রাণভরে দেখি, দেখে ওই রূপে ডুবি, মজি, তাহলে আর আমার কোনও ভয় থাকবে না।




আমি পরলোকে তোমাতেই চিরজাগ্রত থাকতে চাই, কিন্তু এখানেই যে আমার তোমাতে জেগে থাকা ভালো করে হলো না। আমার জাগরণের অধিকাংশ সময়ই আমি তোমায় ভুলে থাকি, আর যখন তোমাকে মনে করি, তখনও ভালোবাসার সাথে মনে করি না। তোমাকে দূরে থেকে দেখি, দেখেও কাছে যেতে চাই না, আমি তোমার প্রেমে জেগে থাকতে চাই না। এই জাগরণটা কেমন, তা আমাকে দেখাও। একটা সমস্ত দিন যদি তোমাকে দেখতে দেখতে যায়, তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে যায়, তবে আমি তোমার নিত্য প্রেমধামের আভাস কতকটা নিশ্চয়ই পাবো।




আমাকে এখন সাধনের সময় দিয়েছ, কিন্তু ক‌ই, এখনও তো দাসত্ব গেল না, তোমায় ভুলে কেবল অন্ধভাবে গাধার খাটুনি তো গেল না, তোমার সন্তানের জন্যে নির্দিষ্ট স্বাধীন প্রেম আর মিষ্টতা তো পেলাম না। এ সবই তো সহজ, হাতের কাছে বলে মনে হয়, তবুও পাই না কেন? আজ থেকেই তা হোক; তোমার কাছে বার বার আসি, তোমার প্রেমে ডুব দিই, তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে, তোমায় দেখতে দেখতে দিনগুলি যাক।