- শীতল দিনের অলস শুভেচ্ছা! - রাত জেগেছ বেশি? - বেশি হয়ে গেল? আমার তো প্রায়ই এমন হয়। - তোমার জন্য ভালো কিছু নয়। - হুম, ঠিকই বলেছেন। আপনি আর্লি-রাইজার? - বলতে পারো, আমি সময়ের অভ্রান্ত পথিক। আমার সময়গুলো সব ভবঘুরে রয়ে গেল। তুমি প্রজন্ম-মানুষ, জানি না, আমার নিবাস তোমার সময়ে কতটা গড়তে পারব! - অলিখিত নিবাস গড়তে হয় না, শুধু ধরে রাখতে হয়। - ধরে রাখতে কেউ পারে না জানো, মানুষগুলো ভাবে, পেয়ে গেছি যখন, এ হারাবার নয়! - ভাবনার এই বিশেষ মাত্রার কারণ, অর্জন নয় তারা মূলত বন্দিত্বে বিশ্বাসী। অথচ, ঘর বাঁধতে পারার চেয়ে ধরে রাখতে পারাতেই আজন্ম প্রেমের সার্থকতা। - তীক্ষ্ণ মানুষ, সব থেকেই সারাংশ তুলে নিতে পারো!
- ‘আত্মজ’ শব্দটার ব্যাখ্যা আজ জটিল মনে হলো। - অবশেষে মায়া! হায়… - মানুষগুলো মূলত ভাববাদী। কেউ মায়ায় মাটি সাজায়, কেউ মাটির বুকে বিচ্ছিন্ন বদ্বীপ আঁকে! - তোমাকে নিয়ে তোমার কাছে আমার প্রকাশের একটা গণ্ডি পড়ে গেছে। - সেটা বুঝি দূরের বেহালা সুর? - বৃক্ষরা অনেকটা মানুষের মতো, আবার অনেক উপরে! - ‘বিহঙ্গ’ বলে আমার বৃক্ষ আছে, সুর আছে, কেবল ছন্দপতনে বাধ সাধতে পারি না। - একজনম অপেক্ষা, তবুও ভালোবাসি বলবে না জানি… ভালো না বেসে কোথায় যাবে তুমি! তোমার পরিধিবৃত্তে আমি এবং আমি, হাত বাড়ালেই তো তুমি। তবু গৃহদ্বার খুলে দাও না! নীল, এ কেমন তুমি?
- আমার একটাই গৃহ, সেই গৃহের চাবিটা যেন কোথায় রেখেছি… তুমি খুঁজেছ? - চাবিটা তো তুমিই জলে ফেলে দিলে। খুঁজে পেলাম আর কই বলো! এবার তবে জলের শহরে যাব! যদি হেরে যাই, তবে নির্বাসিত হব। আঁধারের কালো গৃহে, একা হয়ে যাব, নিঃস্ব হয়ে যাব, যাচ্ছেতাই হয়ে যাব। - জলের শরীর কিন্তু অতল হয়।
- আমি সেই অতলে একাই হাঁটব, তারপর একদিন… সূর্যের শহরে তোমাকে বলব, এই নাও চাবি! তুমি ফিরে যাবে অথবা ফিরবে না! তোমার চোখের শিশির দিয়ে একটা সাগর বানাব… তারপর! তারপর পরবাসী মনটা আমার…! আর যা বললে না, তার অনুবাদ আমি রেখে দেবো। - কথা দিয়ে ভালোবাসা হয় না জানি, ভালোবাসতে মায়া লাগে! অনেক মায়া!! কামিনী, কাঞ্চন কে কোথায় আছ! একটু মায়া বড়ো প্রয়োজন। একদিন ফেরাতে পারবে না, দেখো, একদিন তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে দেবো, যা খুশি বলো, আমি তখন নেশার আপন হব।
- বলি, একটু ভালো কিছু বলতে পারো না? এই যেমন ধরো, আজকে মশার শালিকা বেড়াতে এসেছে। অথবা, পাশের গাছের শালিক-বউ’টা বাদামি হাতির সঙ্গে পালিয়ে গেছে। - তুমি লুকোতে চাও, তাই না নীল?! কোথায় আর লুকোবে বলো, বস্তুত যেখানে লুকোবে, ঠায় সেখানেই যে দাঁড়িয়ে আছ! নীল, জানো, তুমি একটা ভীষণ গম্ভীর মানুষ, একদমই নীরস! এসো, তোমাকে চাঁদের বিলে ডুবিয়ে আনি। একজনম পরে দেখা হলেও বলে দিতে পারব, তুমি সেই মেঘবালিকা। আর অবশেষ থাকব আমি…মাটির তৃষ্ণা হয়ে। অনেক শূন্য যোগ করে দেখো, উত্তর তুমি নিজেই! আমি যে তোমার কৃষ্ণচূড়ার কাছে বাঁধা পড়ে আছি, নীল! - কৃষ্ণচূড়া আমার একান্ত প্রেম, তোমায় তার থেকে একটুখানি দিলাম, আর তুমি বাঁধা পড়ে গেলে, মেহু! জীবনের একটা গল্প জানো—খুব স্বল্প! একটা মেয়ে আকাশ থেকে এল, আবার আকাশের অভিমুখে ফিরে গেল। হৃদয়ের বিষাদময় অনুভূতিগুলো একটা কান্নার শব্দে বাজে নির্জনে, কেউ হয়তো বোঝে, হয়তো বোঝে না।
- আসলে তা-ই, কেউ কেউ তবু কৃষ্ণবীণায় কৃষ্ণচূড়া ভাঙে। আমিও ভেঙে যাব, তুমিও ভাঙবে… শীতল স্রোত বয়ে যাবে মাঝপথে, শুধু কেউ কারও চেনা হব না, খালের পাড়ে একটা নীলচাঁদ— দিনান্তে বিরহস্নাত। কেউ কেউ আবার ভুলে যেতে চায়, কেউ নীল অপেক্ষায় মাটি ছুঁয়ে থাকে। বহুদিন তোমায় দেখি না, নীল! এত দূরে এত দূরে আর কত দূর? নাকি বলব, একটুখানি দেখতে দিতেও ঈর্ষায় পোড়ো! বেশিদিন বাঁচব না, এবার কিছুটা অভিমান কমাও, হঠাৎ দুঃসংবাদ ভালো নয়, বড্ড কষ্ট দেয়। তার চেয়ে এসো, হাত ধরে হাঁটি, শিশিরে ভিজি; জোছনার গল্পগুলো থাক না লুকোনো!
- তুমি কি তবে ফিরে যাচ্ছ? - ফিরে যাওয়াটা খুব কষ্টের, তবু মানুষ ফিরে যায়। জানি, এক নীল বিকেলে দেখা হবে, তখন তুমি নিস্তব্ধ জলের গভীরে নিথর শ্যাওলা আর আমি এক নীল মানুষের লাশ। - হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত তুমিহীন এক নীল গল্পে, এক কালো গোলাপ আমি… মৃত্যুর কলমিলতা যেমন দোলে… শীতল সন্ধ্যায়, নিঃসঙ্গ বাতাসে। হঠাৎ উড়ে এসে একদিন বসব তোমার জানলার পাঁচিল ঘেঁষে, খুব আদরে জানতে ইচ্ছে হবে, আমার সোনামানুষ কতটা ভালো আছে… জানি, তোমার গোপনগৃহেও নীলবসন্ত বাস করে, আমি আজনম এক মূর্খ পথিক—ও-পাড়ায় নিষিদ্ধ যার নাম। - তুমি আর তুমি ভালো থাকবে—হয়তো তাজমহলের মতো নয়, আরও সুন্দর।
- যদি কোনোদিন হঠাৎ পথে দেখা হয়ে যায়, মুখোমুখি আমি নিঃশব্দে তাকিয়ে কি বলব…চলো, একচুমুক প্রেম হয়ে যাক!