জগদ্ধাত্রী: ৭



অদ্বৈত বেদান্তে “সংহতি” বা ঐক্যের ধারণা মূলত আত্মা ও মন-এর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বোঝানো হয়। মানুষ সাধারণত নিজের অভ্যন্তরে বিভক্ত—মন একদিকে ছুটছে, ইন্দ্রিয় অন্যদিকে, বুদ্ধি আরেক পথে, আর আত্মা যেন নীরব সাক্ষীর মতো দূরে বসে আছে। এই বিভাজন থেকেই জন্ম নেয় অস্থিরতা, ভয়, দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষ। কিন্তু যখন মন নিজের উৎস—আত্মার দিকে ফিরে আসে, তখনই ঘটে প্রকৃত সংহতি, যা মুক্তির ভিত্তি।

এই তত্ত্বটি ছান্দোগ্য উপনিষদের (৭.২৩.১) বিখ্যাত উক্তিতে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে—“যো বৈ ভূমা, তত্‌ সুখম্‌। ন অল্পে সুখম্‌ অস্তি।” অর্থাৎ, “যা ভূমান বা অখণ্ড, অসীম ও পূর্ণ, তা-ই সত্যিকারের আনন্দ; যা সীমাবদ্ধ ও খণ্ডিত, তাতে আনন্দ নেই।” এখানে ‘ভূমান’ মানে সেই একীভূত চেতনা—ব্রহ্ম, যা সমস্ত বহুত্ব ও বিচ্ছিন্নতার ঊর্ধ্বে। উপনিষদ বোঝাচ্ছে, সুখ বা শান্তি কোনো বাহ্য বস্তু বা বিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা থেকে আসে না; তা আসে ঐক্যবদ্ধ চেতনার উপলব্ধি থেকে, যেখানে মন, প্রাণ, বুদ্ধি ও আত্মা এক হয়।

যখন ব্যক্তি নিজের অন্তর্গত বিভ্রান্ত মনকে আত্মজ্ঞান দ্বারা স্থিত করে, তখন আর মন ও আত্মা আলাদা থাকে না। মন তখন আত্মার প্রতিফলনমাত্র হয়ে ওঠে—যেমন স্বচ্ছ জলে সূর্যের প্রতিফলন দেখা যায়, কিন্তু জল আলো নয়, কেবল তার বাহন। এই অবস্থায় ব্যক্তি আর “আমি ভাবি”, “আমি করি”, “আমি চাই”—এই সীমাবদ্ধ মনোভাবের মধ্যে থাকে না; বরং উপলব্ধি করে—“আমি সেই চৈতন্য, যার মধ্যে চিন্তা ও কর্মের সব ঢেউ ওঠে।”

এই অবস্থাকেই যোগদর্শনে বলা হয়েছে—“চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ” (যোগসূত্র ১.২)। অর্থাৎ, যখন মনের তরঙ্গ বা বিকার থেমে যায়, মন তখন নিজের প্রকৃত রূপ—আত্মচেতনা—প্রকাশ করে। মন আর বাইরের বস্তুর দিকে ধাবিত না হয়ে নিজের কেন্দ্রে স্থির হয়। এই অবস্থাই আত্মিক সংহতির যোগিক রূপ—যেখানে বিচ্ছিন্ন মন, বিক্ষিপ্ত চিন্তা ও দিকচ্যুত ইচ্ছা সব মিলেমিশে একীভূত হয়।

তন্ত্রশাস্ত্র এই সংহত অবস্থাকে অন্যভাবে প্রকাশ করে—একে সেখানে বলা হয় “চক্রসংহতি”। মানুষের শরীর ও চেতনার মধ্যে নানা স্তরে যে শক্তিকেন্দ্র বা চক্র রয়েছে (মূলাধার থেকে সহস্রার পর্যন্ত), সেগুলি যখন এক সুষম ছন্দে সক্রিয় হয়, তখন প্রাণশক্তি, মন ও আত্মা একত্রে কাজ করতে শুরু করে। এই শক্তির পূর্ণ জাগরণই হলো কুণ্ডলিনী সাধনা—যেখানে শক্তি (শক্তিতত্ত্ব) ও চেতনা (শিবতত্ত্ব) মিলিত হয়।

এই অবস্থাকেই বলা হয় “সহজ-স্থিতি”—অর্থাৎ এক প্রাকৃতিক, স্বতঃস্ফূর্ত স্থিরতা। এখানে কোনো জোর বা দমন নেই; বরং সবকিছু নিজের জায়গায় সুষমভাবে স্থিত। বাহ্যিক কর্ম ও অন্তর্গত চেতনা, জাগতিক দায়িত্ব ও আত্মিক শান্তি—সব একত্রে এক ছন্দে মিশে যায়।

আত্মিক সংহতি মানে হলো—নিজের ভেতরে বিভাজন ঘুচিয়ে সেই অখণ্ড ভূমান চেতনার সঙ্গে মিলিত হওয়া। এটি একসাথে বেদান্তের ব্রহ্মোপলব্ধি, যোগের স্থির চিত্ত ও তন্ত্রের শক্তি-চেতনা সংযোগ—তিনটিরই মিলনবিন্দু।

মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আত্মিক সংহতি বা psychic integration-এর ধারণাকে সর্বপ্রথম সুসংবদ্ধভাবে ব্যাখ্যা করেন বিশিষ্ট বিশ্লেষণাত্মক মনোবিজ্ঞানী কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং (Carl Jung)। ইয়ুংয়ের মতে, মানুষের মন একটি বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামো—এর মধ্যে আছে সচেতন মন (conscious mind), অবচেতন (personal unconscious) এবং আরও গভীর স্তরে সমষ্টিগত অবচেতন (collective unconscious)। এই তিন স্তর পরস্পরের সঙ্গে ক্রমাগত পারস্পরিক ক্রিয়ায় লিপ্ত, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ নিজের মনের এই বিভিন্ন অংশের সঙ্গে পরিচিত নয়।

যখন কোনো ব্যক্তি নিজের মনের অচেনা বা অস্বীকৃত দিকগুলিকে বুঝতে ও গ্রহণ করতে শুরু করে—তখনই শুরু হয় Individuation, অর্থাৎ আত্মিক সংহতির প্রক্রিয়া। ইয়ুং বলেছেন, Individuation মানে হলো নিজের মধ্যে থাকা বিরোধী দিকগুলির (যেমন, আলো-ছায়া, পুরুষ-নারী, যুক্তি-আবেগ, ইচ্ছা-নিয়ন্ত্রণ) সমন্বয় ঘটানো। এই প্রক্রিয়ায় মানুষ তার সীমিত “Ego”-কেন্দ্রিক সত্তাকে অতিক্রম করে বৃহত্তর “Self”-এর সঙ্গে যুক্ত হয়—যা একধরনের মনোবৈজ্ঞানিক মুক্তি বা পূর্ণতার অনুভূতি।

এই সংহতির পথে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা রাখে তিনটি উপাদান—

১. Shadow (ছায়া)—এটি আমাদের সেই অন্ধকার দিক, যা আমরা সচেতনভাবে স্বীকার করতে চাই না—যেমন ঈর্ষা, লোভ, ক্রোধ, লজ্জা বা হীনমন্যতা। আমরা এগুলোকে অস্বীকার করি, ফলে সেগুলি অবচেতনে চাপা পড়ে থাকে এবং অজান্তেই আচরণকে প্রভাবিত করে। Individuation-এর প্রথম ধাপ হলো এই ছায়া-দিককে চেনা ও গ্রহণ করা—যাতে অচেতন শক্তি সচেতনতার আলোয় আসে।

২. Anima/Animus (বিপরীত লিঙ্গীয় দিক)—প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকে তার বিপরীত লিঙ্গের গুণাবলি: পুরুষের মধ্যে নারীর কোমলতা, অনুভূতি ও সহানুভূতি; নারীর মধ্যে পুরুষের দৃঢ়তা, যুক্তি ও স্বনির্ভরতা। এই দিককে গ্রহণ করা মানে নিজের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য অর্জন করা।

৩. Ego ও Self-এর সংযোগ—Ego আমাদের সচেতন পরিচয়ের কেন্দ্র; কিন্তু Self হলো তার থেকেও গভীর, এক সামগ্রিক সত্তা—যা সব অভিজ্ঞতা, প্রবণতা ও সম্ভাবনার সমন্বয়। Individuation মানে Ego ধীরে ধীরে Self-এর সঙ্গে সুর মেলানো, নিজের প্রকৃত কেন্দ্রকে চিনে নেওয়া।

ইয়ুংয়ের মতে, এই সংহতি হলো মানসিক বিকাশের চূড়ান্ত লক্ষ্য। মানুষ তখনই “সমগ্র মানুষ” (whole person) হয়ে ওঠে, যখন সে নিজের সব দিক—সুন্দর ও কুৎসিত, পুরুষ ও নারী, সচেতন ও অবচেতন—সবকিছুকে মেনে নিয়ে সেগুলিকে এক সত্তায় একীভূত করে। এই অবস্থায় মানসিক দ্বন্দ্ব মিটে যায়, এবং জীবনে এক গভীর অর্থবোধ ও স্থিতি আসে।

আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সেই অবস্থার সমান, যাকে বেদান্তে বলা হয় “আত্মোপলব্ধি” বা “স্থিতপ্রজ্ঞা”—যেখানে ব্যক্তি নিজের মধ্যে বিভাজনহীন শান্তি অনুভব করে। ইয়ুং এই অবস্থাকে বলেন আত্মবোধ বা “Self-realization”—একই চেতনার মনোবৈজ্ঞানিক প্রকাশ। তাই বলা যায়, আত্মিক সংহতি বা individuation হলো আধুনিক বিজ্ঞানে প্রকাশিত প্রাচীন আত্মজ্ঞান-প্রক্রিয়ারই এক মনস্তাত্ত্বিক রূপ।

জগদ্ধাত্রীর প্রতীকী রূপ এই আত্মিক সংহতিরই দেবীস্বরূপ। তাঁর সিংহ প্রাণশক্তির প্রতীক, হাতি অহংকার ও অবদমিত প্রবৃত্তির প্রতীক, আর তিনিই সেই চেতনা, যিনি এই দুই শক্তিকে ভারসাম্যে আনেন। তাঁর স্থিত ও প্রশান্ত মুখ সেই সংহত মনের প্রতীক, যেখানে গতি আছে, কিন্তু বিশৃঙ্খলা নেই; শক্তি আছে, কিন্তু অহংকার নেই।

আত্মিক সংহতি হচ্ছে—মন, বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়, আবেগ ও আত্মার মধ্যে এক সামঞ্জস্যপূর্ণ ঐক্য। এটি এমন এক অবস্থান, যেখানে মানুষ আর ভেতরে বিভক্ত নয়; সে নিজের সব শক্তি, দোষ, গুণ ও সম্ভাবনাকে একত্রে মেনে নিয়ে এক অখণ্ড চেতনার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়। বেদান্ত যাকে বলে “আত্মনিষ্ঠা” বা “স্থিতপ্রজ্ঞতা”, আধুনিক মনোবিজ্ঞান একে বলে “psychic integration”—আর শাক্ত দর্শন একেই রূপ দিয়েছে জগদ্ধাত্রী নামে—যিনি সকল বিভক্ত শক্তিকে ধারণ করে এক পরম ঐক্যে স্থাপন করেন।

খ. নিউরোথিওলজি এবং তান্ত্রিক অনুশীলনের জ্ঞানীয় প্রভাব: জগদ্ধাত্রীর উপাসনা মূলত তান্ত্রিক সাধনার অন্তর্গত—এক এমন আধ্যাত্মিক পদ্ধতি, যা মানুষের চেতনা, মন ও শরীরের জৈব-মানসিক প্রক্রিয়াকে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে গঠিত। তন্ত্র কেবল কোনো মন্ত্রপাঠ বা আচার-অনুষ্ঠানের শৃঙ্খলা নয়; এটি আসলে এক নিয়ন্ত্রিত জ্ঞান-শিক্ষা ব্যবস্থা (cognitive discipline), যেখানে সাধক ধীরে ধীরে নিজের মানসিক ও শারীরিক কাঠামোকে পরিশুদ্ধ করে চেতনার গভীর স্তরে পৌঁছায়।

তান্ত্রিক দর্শনে বলা হয়—চেতনার বিকাশ চারটি প্রধান স্তরের মধ্য দিয়ে ঘটে: মন (thought), দেহ (body), শ্বাস (prāṇa) এবং বাক্‌ (speech)। এই চারটি স্তরকে এক সুষম ছন্দে আনার মধ্য দিয়েই ঘটে “চেতনার পুনর্গঠন”—অর্থাৎ মনোসংযম ও আত্মবোধের সমন্বয়। যখন মন প্রশমিত হয়, দেহ শিথিল হয়, শ্বাস সমবায়ী হয়, আর বাক্‌ মন্ত্ররূপে সুরেলাভাবে অনুরণিত হয়—তখন চেতনা নিজেই নিজের কেন্দ্রে ফিরে আসে। এ অবস্থাকেই বলা হয় স্থিতি বা inner equilibrium—যা জগদ্ধাত্রীর তত্ত্বের মূল।

এই ধারণাই আধুনিক কালের নিউরোথিওলজি (Neurotheology) ও Cognitive Science of Religion (CSR)-এর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এই নতুন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রগুলির উদ্দেশ্য হলো, ধর্মীয় বা ধ্যানমূলক অনুশীলনের জৈব-স্নায়ুবৈজ্ঞানিক ভিত্তি অন্বেষণ করা—অর্থাৎ, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে কীভাবে আধ্যাত্মিক সাধনা প্রভাব ফেলে।

উদাহরণস্বরূপ, আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে—ধ্যান, প্রার্থনা বা মন্ত্রোচ্চারণের ফলে মস্তিষ্কের prefrontal cortex, insula এবং anterior cingulate cortex অঞ্চলে সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়, যা আত্ম-নিয়ন্ত্রণ, সহানুভূতি, মনোযোগ এবং আবেগিক ভারসাম্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এটি প্রমাণ করে যে, প্রাচীন তান্ত্রিক সাধনার শ্বাস-মন-চেতনা নিয়ন্ত্রণ আসলে একধরনের neural reorganization, যা মনকে অস্থিরতা থেকে স্থিতিতে, বিভাজন থেকে সংহতিতে নিয়ে যায়।

জগদ্ধাত্রীর তত্ত্ব ও তন্ত্রের এই যোগ একদিক থেকে আধ্যাত্মিক, অন্যদিকে বৈজ্ঞানিক—তিনি যেন সেই সেতু, যিনি চেতনার মেটাফিজিক্যাল ধারণাকে মস্তিষ্কের জৈব-সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করেন। তাঁর উপাসনা কেবল বিশ্বাসের ক্রিয়া নয়, বরং এক গভীর চেতনাগত প্রক্রিয়া—যা মনকে পুনর্গঠন করে, বোধকে প্রসারিত করে, এবং মানুষকে নিজস্ব ব্রহ্মচেতনার উপলব্ধির দিকে নিয়ে যায়।

জগদ্ধাত্রীর গায়ত্রী মন্ত্র—“ওঁ মহাদেব্যৈ বিদ্মহে, সিংহবাহিন্যৈ ধীমহি, তন্নো দেবী প্রচোদয়াত্‌।।”—এই প্রক্রিয়ার এক চমৎকার উদাহরণ। এই মন্ত্রটি কেবল ভক্তির প্রকাশ নয়; এটি এমন এক ধ্বনি-সাধনা, যা মন, শ্বাস, বাক্‌ ও চেতনার মধ্যে এক সূক্ষ্ম সামঞ্জস্য তৈরি করে।

যখন কেউ এই মন্ত্রটি ছন্দবদ্ধভাবে জপ করে, তখন তার মস্তিষ্কে একসাথে সক্রিয় হয় শ্রবণ কর্টেক্স (যেখানে ধ্বনি গ্রহণ হয়) এবং মোটর কর্টেক্স (যা বাক্‌ ও উচ্চারণ নিয়ন্ত্রণ করে)। এই দুইয়ের সমন্বয়ে চিন্তা, বাক্‌ ও শ্বাসের মধ্যে এক সুনিপুণ ছন্দ তৈরি হয়। আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানে একে বলা হয় entrainment বা “সিঙ্ক্রোনাইজেশন”—যেখানে শরীরের বিভিন্ন স্নায়ুপ্রক্রিয়া একই তালের মধ্যে কাজ করতে শুরু করে।

পুনরাবৃত্তিমূলক মন্ত্রোচ্চারণের ফলে ব্রোকা অঞ্চল (বাক্‌কেন্দ্র বা speech center) এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (মনোসংযম ও মনোযোগের কেন্দ্র) সক্রিয় হয়, ফলে মন ধীরে ধীরে স্থির ও মনোযোগী হয়ে ওঠে। এটি একইসাথে আবেগকে প্রশমিত করে এবং চিন্তাকে স্পষ্ট করে।

তান্ত্রিক দৃষ্টিতে, এই ছন্দময় ধ্বনি বা কম্পনই “শব্দব্রহ্ম”—অর্থাৎ এমন এক প্রাকৃতিক কম্পনশক্তি, যা চেতনা ও শক্তিকে একত্রে কাজ করতে শেখায়। এর ফলে শরীর, মন ও আত্মা এক সুষম ভারসাম্যে স্থিত হয়—যা জগদ্ধাত্রীর “ধৃতি” বা স্থিতির মূল অভিজ্ঞতা।

ধ্যান, মন্ত্রজপ বা তান্ত্রিক সাধনা কেবল আধ্যাত্মিক বা মানসিক অভ্যাস নয়; এটি মানুষের মস্তিষ্কে বাস্তব, জৈবিক পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। অর্থাৎ, নিয়মিত সাধনার ফলে মস্তিষ্কের গঠন ও কাজের ধরন এমনভাবে বদলে যায়, যা মানুষকে আরও শান্ত, সংযত ও সচেতন করে তোলে।

প্রথমে আসে প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স (Prefrontal Cortex)-এর কথা। এটি মস্তিষ্কের সামনের অংশ, যা আমাদের চিন্তা, আত্মনিয়ন্ত্রণ, মনোসংযোগ ও নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দায়ী। আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞানে এটি “executive center” নামে পরিচিত, কারণ এটি ঠিক করে দেয়—কোনো উদ্দীপনা বা অনুভূতির প্রতিক্রিয়ায় আমরা কীভাবে কাজ করব। দীর্ঘদিন ধ্যান বা মন্ত্রজপ করলে এই অঞ্চলের ধূসর পদার্থ (gray matter) ঘন হয়—মানে এই অংশের নিউরন ও স্নায়ু-সংযোগগুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর ফল হলো—মন আর সহজে বিঘ্নিত হয় না; উদ্বেগ, রাগ, বা অস্থিরতার বদলে আসে মনোযোগ, স্থিরতা ও আত্মসংযম। তান্ত্রিক ভাষায়, এটিই জগদ্ধাত্রীর “ধৃতি”—অর্থাৎ মনকে ধরে রাখার, স্থিত রাখার ক্ষমতা।