পুকুরপাড়ে বাসন মাজতে গিয়ে অলকা দেখতে পেল অরুণের নতুন বউটিকে। সবাই মিলে পালতোলা নৌকোয় চড়ে বউ আনতে গিয়েছিল। বউটার হাত-পা-ভর্তি আলতা, মাথায় মোটা করে সিঁদুর, দু-হাতভর্তি টুকটুকে লাল চুড়ি। এত লাল যে, অলকা চোখ ফেরাতেই পারছে না। আচ্ছা, নতুন বউ মানেই লাল কেন? অন্য কোনো রং হতে পারে না কেন? হুট করে হাতের বাসনে চোখ যেতেই এসব এলোমেলো চিন্তা ঝেড়ে ফেলে আবার কাজে মন দিল অলকা। অলকা। যতীন্দ্র সাহার সাথে বছর নয়েক আগে বিয়ে-হওয়া অলকা সাহার বিয়ের সময় বয়স ছিল সতেরো। আর যতীন্দ্রের বয়স ছিল চল্লিশেরও উপরে। অথচ অরুণের বউটিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বয়স কম করে হলেও ছাব্বিশ-সাতাশ, এর বেশিও হতে পারে, তবে কম কিছুতেই নয়। আর অরুণ? ওর বয়স একত্রিশ। “এমন ধাড়ী মেয়ে কেন বিয়ে করতে গেলি রে, অরুণ? নিজের সমান বয়সের মেয়ে নিয়ে ঘর করা যায় নাকি!” এই প্রশ্ন সেদিন হেসে হেসে অলকার শাশুড়ি করে বসলেন অরুণকে। অলকা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল, যেন তাকেই কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেছে! অরুণ অলকার দিকে একপলক তাকিয়ে ঝটপট বলল, “মাসিমা, তোমরা তো একেকজন নিজের বাবার বয়েসিদের সাথে ঘর করলেই, আমরা নাহয় ঘর না করে ঘর-ঘর খেলি, সেই ছেলেবেলার মতন! হা হা হা…” চমকে উঠল অলকা! অরুণ ওর মনের কথাটা এত অকপটে বলে ফেলতে পারল! ওই একটা কথাই যে কত কত অলকার জীবনে শক্ত করে বুকে-চেপে-রাখা পরমসত্যি…ঠিক সেই কথাটাই অরুণ একটুও না থেমে একটানে বলে ফেলল!