আমি খুব সম্ভবত ঘোর-জোছনাভরা কোনো এক বৃহস্পতিবারের মধ্যরাতে মারা যাব। ছাদের রেলিং ধরে আধখাওয়া রংচায়ের কাপের ধোঁয়ায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া ছড়ানো স্বপ্নগুলো আমাকে দেখে মুচকি হাসবে সেদিন। হ্যাঁ, খুব সম্ভবত অনেক অনেক বই পড়ে শেষ করতে না পারার আক্ষেপে আমার প্রিয় লাইব্রেরিটিকে পেছনে ফেলে রেখে মরে যাব; নতুবা একটা কালো রঙের পিয়ানো চোখের সামনে রাখতে না পারার আফসোসে, একটা সবুজ রঙের কার্পেটে মোড়া ব্যালকনিতে কিছুটা সময় কাটাতে না পারার আক্ষেপে অথবা খোলা সবুজ মাঠে শুয়ে হাঁ হয়ে আকাশ দেখতে না পারার অভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে ঠায় মরে যাব আমি। খুব সম্ভবত আমার মৃত্যুর শোকে আমার বাড়ির সামনের শিমুল গাছটা থেকে কয়েকটা সবুজ পাতা গাঢ় ধূসর হয়ে নীরবে ঝরে যাবে, এগারোটা গোলাপকলি ফুটতে গিয়েও না ফুটে মরে যাবে। আমার খাটের নিচে যে তেলাপোকাটা ঘরসংসার বেঁধেছে, সে বোধ হয় তিনদিন কিছুই খাবে না। যে বেড়ালটি আমার পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়, সে বাড়ির চারপাশে আমাকে খুঁজবে ম্যাঁও ম্যাঁও শব্দ করে। পথের ধারে মাঝে মাঝে বিস্কুট খাওয়াই যে কুকুরটিকে, আমার চলার পথ ধরে সে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আমার মৃত্যুর পর আমি ওদের অপেক্ষার মুহূর্তগুলিতে বেঁচে থাকব। মৃত্যুর পর আমার নাম হয়ে যাবে লাশ, কিন্তু ওদের কাছে আমি সবসময় প্রিয় বন্ধুই থেকে যাব, কারণ ওরা মৃত্যু বোঝে না। আমার মৃত্যুর খবরে শুধু মানুষেরই কিছু আসবে যাবে না। কেবল মানুষই মৃত্যুকে ভুলতে ও উপেক্ষা করতে জানে। যাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে আমি প্রতিনিয়তই নিজেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি, আমি মরে গেলে আমাকে ভুলে যেতে ওদের বেশি সময় লাগবে না। হ্যাঁ, খুব সম্ভবত বোশেখ মাসের কোনো এক বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে, অথবা খুব ভোরে আমার খুব স্বাভাবিক একটা মৃত্যু হবে। স্বাভাবিক, কেননা আমি চলে গেলে মানুষ আমাকে আর কখনও খুঁজবে না। মানুষ যেখানে মানুষই খোঁজে না, সেখানে লাশ খুঁজতে যাবে কোন যুক্তিতে?