কেবল এটুকই…?




অনেকসময় কিছু লেখা পড়ে বা লেকচার শুনে অবাক লাগে—যেখানে বলা হয়…আলোকপ্রাপ্তি নাকি “শুধু যা আছে, তাকে মেনে নেওয়া”—এই পর্যন্তই। এমন কথায় হারিয়ে যায় সেই অগ্নিঝরা অন্তর্দীপ, সেই বর্ণনাতীত শান্তি, সেই উচ্ছ্বাসময় আনন্দ—যা প্রকৃত জাগরণের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।

তাহলে কি তারা ভুলে লেখে বা বলে ওসব? না কি একধরনের মিথ্যে ‘অদ্বৈত-ফ্যাশন’-এ বিশ্বাস করে নিয়েছে—যেখানে শিশুর মতো দৌড়ে চলা, লাফানো, আনন্দে উদ্‌বেলিত হওয়া—এসব ত্যাগ করে কৃত্রিম বুদ্ধিবাদী চূড়ায় আরোহণ করাই আলোকপ্রাপ্তির সর্বোচ্চ ধাপ বলে মনে করা হয়?

বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। প্রায় সকল প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তিই কৃতজ্ঞতার জায়গা থেকে ভক্তির পথকে গ্রহণ করেন। কারণ জাগরণ নিয়ে আসে এইসব—অন্তরের আতশবাজি, ভাষাতীত শান্তি, অবর্ণনীয় আনন্দ, আর সব কিছুর প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা।

হ্যাঁ, শেষমেশ বিষয়টি এসে দাঁড়ায়—“যা আছে, তাকে মেনে নেওয়া”-তে। কিন্তু মেনে নেবার আগে তো আবিষ্কার করতে হয়—“যা আছে” তা আসলে আমাদের ধারণার চেয়েও অসীম। যদি শুরুতেই বলা হয়—“এর বেশি কিছু নয়”—তাহলে যারা ইতিমধ্যেই নিরাশ, কষ্টে ভুগছে, শান্তির খোঁজে মরিয়া, তারা তো আরও নিরাশ-স্তব্ধ হয়ে যাবে, তাদের হৃদয় স্থবির হয়ে যাবে।

হয়তো এটি কেবলই দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য। কিন্তু প্রকৃত অভিজ্ঞতার দিক থেকে—জাগরণের পর যে-উচ্ছ্বাস আসে, যে জীবন্ত স্রোত বহমান হয়, তা নিছক “এর বেশি কিছু নয়”-তে নামিয়ে আনা যায় না। হ্যাঁ, বোঝা জরুরি—জাগরণ অত ছোটো কিছু নয়। ‘যা আছে’ বলতে—অনেক কিছুই আছে, যা ভাবনার অতীত, যাকে অর্জন বা গ্রহণ করতে হবে।

সেই জাগরণ জীবনের ভেতর সজীব জলধারা হয়ে প্রবাহিত হয়, প্রতিটি মুহূর্তকে সতেজ করে। সেই আনন্দকে প্রকাশ করার মতো যথেষ্ট শব্দ কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় না।

তাই যারা বার বার চেতনার পথে ফিরে আসে, তারা হয়তো সেই একই উচ্ছ্বাস ভাগ করে নেয়—দৌড়ে যাওয়া, ঘুরে যাওয়া, আনন্দে ভেসে ওঠা, আর ভালোবাসার ভাষায় একে অপরকে ভিজিয়ে দেওয়া। শুধু শিক্ষার জন্য নয়, নিছক আনন্দের জন্যও।