অপূরণীয় শূন্যতা

প্রতিটি মানুষের জীবনে এমন কিছু শূন্যতা থাকে, যা কখনোই অন্য শব্দ দিয়ে পূরণ করা যায় না। প্রতিটি মানুষের জীবনেই এমন একটা মানুষ থাকে, যার স্থান কখনোই অন্য কাউকে দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যায় না। কিছু শূন্যস্থান শূন্যই থেকে যায় আমৃত্যু।

কিছু নদী ফুরিয়ে গেলেও তার দাগ রেখে যায়, কিছু জখম শুকিয়ে গেলেও তার চিহ্ন রেখে যায়, কিছু মানুষ জীবন থেকে চলে গেলেও তার আবেশ রেখে যায়। একেবারেই চলে যায় না যা-কিছু, তার উপস্থিতির তীব্রতা সহ্য করা সহজ নয়।

জীবনের গলিপথে কত কেউ আসবে যাবে, কত কেউ একটু জিরিয়ে আবার চলেও যাবে, কেউ কেউ থেকেও যাবে। এই আসা-যাওয়ার মাঝেও পুরোনো কেউ একজনের অদৃশ্য ছায়া যেন সবসময়ই পিছু নিয়ে থাকবে। তাকে দেখা যাবে না, ছোঁয়াও যাবে, কিন্তু তাকে ছাড়া থাকাও যাবে না। সে কোথাও নেই, তবুও সে যেন সব কিছুতেই আছে। অদৃশ্য অস্তিত্ব মানুষকে সারাক্ষণই তাড়িয়ে বেড়ায়!

কিছু স্মৃতি লোহার মতন, সহজে পোড়ে না; কিছু মায়া ছায়ার মতন, সহজে ছাড়ে না। যে যত ভোলে না, সে তত হাসে না।

আমরা গান কবিতা কত-কী করি, ইতিহাস-ঐতিহ্য কত-কী গড়ি, কত গল্প-উপন্যাস-কাব্য-মহাকাব্য আওড়ে চলি, অথচ মগজের এককোণে গুটিসুটি মেরে বসে থেকে প্রতিমুহূর্তেই মগজ-খাওয়া গোপন এই মানুষটির কথা আমরা কখনোই কাউকে বলি না। তাকে অনুভব করা যায়, তবু তাকে কিছুতেই সামনে নিয়ে আসা যায় না।

কিছু স্মৃতির মানুষ ছায়াময় প্রকাণ্ড বটগাছের মতন বুকের ভেতর শক্ত করে শেকড় গজিয়ে যুগের পর যুগ থেকে যায়। এদের কোনোভাবেই উপড়ে ফেলা যায় না।

যাকে পাওয়া যায় না, সে-ই সবচাইতে শক্ত করে মনের মধ্যে গেঁথে যায়। পুরো পৃথিবী পেয়ে যাবার পরও মনটা কীরকম যেন পড়ে থাকে অন্য কোথাও। জীবনের সমস্ত অর্জনই মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে ওই একটি অপ্রাপ্তির পায়ের কাছে এসে।