- সাম্য, দুদিন তোমার ফোন বন্ধ ছিল, একটা মেসেজও যায়নি। কী হয়েছে তোমার? - মধুরিমা, আমি কিছুই লিখতে পারছি না কয়েক দিন ধরে। গত পরশুর আগের দিন ভোরে এক লাইন লিখেছিলাম, তার পরে আর কিছুই লিখতে পারিনি। কোনও শব্দ, কোনও সুরই আমি মেলাতে পারছি না! উফফ্। মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। - এসব কী ধরনের কথা, সাম্য? - এই গান ছাড়া যে আমার কিছুই নেই, আমি যে গান ছাড়া আর কিছুই জানি না, পারিও না। এই এক গান বাদ দিয়ে দিলে আমি কেউ না, আমি একটা সাধারণ রাস্তার ছেলে। আমার গান যদি মানুষকে না ছোঁয়, তবে আমি নিজেও নিজেকে ছুঁয়ে দেখব না আর, পুড়িয়ে শেষ করে ফেলব নিজেকে। - তুমি এমন করছ কেন, সাম্য? সব ঠিক হয়ে যাবে। আচ্ছা, তুমিই বলো, যে পুরুষ জন্ম দিতে পারে, যে পুরুষ শিল্পী, তার মুখে এসব কথা মানায়? একটু সময় নাও। প্রতিদিনই তো লেখা হবে না, সুর হবে না। তুমি চেষ্টা করে যাও, আর একটু সময় নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে। বিকেলে মেসেজ দিয়ো। রাত নয়টা বেজে বারো মিনিটে সাম্যর মেসেজ মধুরিমার ফোনে। - মধুরিমা, জানি না কী যেন একটা শক্তি পাই তোমার কথায়, আমার সৃষ্টির পেছনে তোমার অবদান হয়তো আমার নিজের চেয়েও বেশি। আমি লেখা শেষ করেছি, সুর দেওয়াও হয়েছে। রেকর্ডিংটা হয়ে গেলে সবার আগে তোমাকেই শোনাব। বলো, নতুন বছরে কী গিফট চাও? - দেবে, যা চাইব? - হ্যাঁ, দেবো। - তাহলে বলো, শিল্প আর শিল্পী, দুই-ই আমার? - হ্যাঁ, সবই তোমার। - ভালোবাসি তোমায়। - আমি জানি। - তুমি বাসো না? - গানে গানে উত্তর দেবো। সেদিন বাড়ি ফিরতে রাত হলো। মা একটু আড়চোখে তাকালেন। আমি কিছু বলার আগেই আমার ছোটো ভাই শোয়েব দৌড়ে এল। বলল, আপ্পি, ‘দেখ, আশফাক ভাই এসেছেন।’ আমি ড্রয়িংরুমে ঢুকেই ভাইয়াকে দেখতে পেলাম, আর বেশ অবাক হলাম! আশফাক আমার একমাত্র খালাত ভাই। খুব উচ্ছল আর প্রাণবন্ত একজন মানুষ। শুনেছি, সম্প্রতি সাইকোলজিতে মাস্টার্স শেষ করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েছেন। ওঁর, মানে আমার খালার বাড়ি সাভারে। ভাইয়া কখনওই আমাদের বাসায় আসতেন না। এই ৫-৬ বছরে একবারও আসেননি। খুবই লাজুক স্বভাবের আর স্বল্পভাষী মানুষ, কিছুটা অসামাজিকও। নইলে খালার বাড়ি এত কাছে থাকতেও কেউ ছয় বছর পরে আসে? এসেছেনও নিশ্চয়ই কোনও কাজে। - আরেহ্, কী খবর শিলা? কেমন আছ? - ভালো আছি, ভাইয়া। আপনি? - ভালো আছি। দেখো, আম্মা কীসব পিঠেপুলি বানিয়ে পাঠিয়েছেন বোনের জন্য। বানাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমাদের সাফা (সাফা আমার মায়ের নাম) পিঠে খেতে খুব ভালোবাসে, কিন্তু বানাতে পারে না। ইস্, কাছে থাকলে ওকে রেখে কী আর খেতে পারতাম?’ এই বলেই বাচ্চাদের মতো করে কাঁদতে লাগলেন। আমি অগত্যা আজকে এই পিঠেপুলি নিয়ে আসতে বাধ্য হলাম। মা দেখি হাসছেন এসব শুনে। ‘দেখেছিস আপার কাণ্ড?’ এটা বলার সময় মাকে কেমন যেন খুকি খুকি লাগছিল। - হ্যাঁ, দেখলাম, মা। তাই তো বলি, আশফাক ভাই তো খুব কাজের মানুষ, উনি তো আর কাজ ছাড়া এমনি এমনি বেড়াতে আসেননি। - হা হা হা। তাই, না? খুব কথা শিখেছ দেখছি? - সত্যি কথাই তো বললাম। ওদিকে মা তাড়া দিলেন। বললেন, যা, হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়। সবাই একসাথে খাব। আমি রুমে চলে গেলাম। মধুর কথা আবার মাথায় ঘুরতে লাগল। কী হবে ওর? আর এখানে আমিই-বা কী করব? কী করা উচিত আসলে? সবাই মিলে রাতের খাবার শেষ করতে করতে ন’টা বিশ বেজে গেল। ভাইয়া বললেন, ‘খালাম্মা, আমার রাতে চা, কফি খাবার অভ্যেস আছে। আমি কিন্তু এই কষ্টটা নিজে থেকেই দেবো।’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, ভাইয়া, শুনে অনেক বড়ো আঘাত পেলাম। আমরা তো বাসায় চা, কফি বানিয়ে খাই-ই না!’ ভাইয়া খুব জোরে হেসে উঠলেন। বললেন, ‘আসলেই দেখি কথায় খুব পাকা হয়ে গেছে শিলা। চা-টা কত পাকা হয়, দেখব। হা হা হা…’ খাবার শেষ হবার পর পরই চা বানিয়ে নিয়ে গেস্টরুমে গেলাম। - আরেহ্, এত কীসের ভদ্রতা? ভেতরে এসো, ইঁচড়েপাকা মহিলা! - আহা! বেশ ভালো হয়েছে তো! আমি কাল কফি বানিয়ে খাওয়াব, কেমন? আমি অন্যমনস্কা ছিলাম, শুনতে পাইনি। ভাইয়া জোরে ডাকলেন। - এই শিলা! - জি জি! - কী ভাবছ এত? কী হয়েছে? কোনও সমস্যা? - না ভাইয়া, কিছু না। আমার যদিও বার বার মনে হচ্ছিল, সব বলে দিই কাউকে। এই বোঝা আর বইতে পারছি না। তবুও আশফাক ভাইকে কি আর এসব বলা যায়? উনি এসবের কী বুঝবেন? তা ছাড়া উনি এসেছেন বেড়াতে। এসব বলা কি ঠিক হবে? তবে ওঁকে আর আগের মতন গম্ভীর লাগছে না। খুবই বন্ধুসুলভ মানুষ মনে হচ্ছে। - বলো, বান্ধবীর প্রেম কত দূর গড়াল? - জি ভাইয়া, কী বলছেন? মানে আপনি জানলেন কী করে? - জানি, সব জানি। হা হা হা। আরে, আমি তো আন্দাজে ঢিল মারলাম, আর মিলে গেল। বলে ফেলো, ভয় নেই। আমি কাউকে কিচ্ছু বলব না। - ভাইয়া, আমার বান্ধবী মধুরিমা। ও প্রেম করছে। ও ভয়ংকর কেউ একজন হয়ে যাচ্ছে দিন-কে-দিন। আমিও মনে হয় ওর সাথে সাথে বিপদে পড়ে যাচ্ছি। আপনি কি আমাকে হেল্প করবেন, ভাইয়া? - কীরকম? খুব ব্যক্তিগত কিছু না হলে তুমি আমার সাথে শেয়ার করতে পারো। আমি একে একে সবই বললাম ভাইয়াকে। আশফাক ভাইয়া চুপ করে সব শুনলেন। মাঝে কিছু জায়গায় উনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করলেন। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকার পরে ভাইয়া বললেন, আমি এরকম প্রেমিকাদের শুধু সিনেমা, নাটক কিংবা গল্পেই দেখেছি, এরকম প্রেমিকা সত্যি সত্যিই যে দুনিয়াতে আছে, আমি কল্পনাও করতে পারছি না। শিলা, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, কোথাও খুব ছোট্ট একটা ভুলের উপর ঘটনাটা দাঁড়িয়ে আছে, যেটা আসলে আমাদের কারুর চোখে পড়ছে না। বার বারই মনে হচ্ছে, এটার পরিণামে খারাপ কিছু হবে। - আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না, ভাইয়া। - শিলা, তুমি সত্যিই অনেক কিছু বুঝতে পারো না, চোখ-কান খোলা রাখলে তুমি নিজেই বুঝতে পারতে আসল ঘটনাটা কী। - আসল ঘটনাটা কী, ভাইয়া? - আজকে অনেক রাত হয়েছে। তুমি যাও, শুয়ে পড়ো। কালকে কথা হবে। - জি ভাইয়া। ঠিক আছে, যাচ্ছি। ভোরবেলায় মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙল। আমি ধীরপায়ে নিচে নেমে গেলাম। নিচে গিয়ে অবাক হয়ে দেখি, মধুরিমা বসে আছে, মায়ের সাথে গল্প করছে। - কী রে মধু, তুই এত সকালে? মা বললেন, ‘শিলা, এটা কী ধরনের প্রশ্ন? ও যে-কোনও সময় এই বাসায় আসতে পারে। তুই ওকে রুমে নিয়ে যা, আমি নাশতা রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ আমি মধুকে নিয়ে উপরে উঠে এলাম। রুমের দরজা লক করতেই মধু বলল, ‘শিলা, আমি…আমি বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।’ - মানে? কী বলছিস এসব? - হ্যাঁ, মা আমার মুখ দেখতে চান না। আমাকে গতকাল রাতে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বললেন, আমি সকাল হতে না হতেই বেরিয়ে এসেছি। তোর অসুবিধে হলে বল, আমি অন্য কোথাও যাবার ব্যবস্থা করি। মজার কথা শোন, আমি সাথে করে কাপড়ও নিয়ে আসিনি, এককাপড়ে চলে এসেছি। হি হি হি…। আমি সত্যিই মধুকে বুঝি না, এত বড়ো বড়ো সমস্যার কথা ও যেভাবে বলে, শুনলে মনে হবে যেন কিছুই হয়নি। - আমার সমস্যা কেন হবে রে? কিন্তু তুই কতদিন পালিয়ে বাঁচতে পারবি? - জানি না। শোন, কিছুদিন যাবত ঘুমোতে পারি না ঠিকমতো। ঘুমোতে গেলেই খালি ওকে দেখি। পুরো স্বপ্নজুড়েই ও থাকে, ওকে ঘিরেই সব ঘটে। জেগে থাকলেও ‘ও’, স্বপ্নের মধ্যেও ‘ও’। কেমন লাগে, বল? - তুই ঠিক আছিস তো, মধু? আমার কেন জানি খুব ভয় হয় রে। - কী আশ্চর্য! আমি কি ভূত নাকি যে ভয় পাচ্ছিস? শোন, তোর এখন দুটো কাজ। প্রথমে তুই আমাকে একটা টেবিল খুঁজে দিবি, যার আশপাশটা হবে নিরিবিলি, আর এক মিলিগ্রামের একটা ঘুমের ওষুধ এনে দিবি। আমি কিছুক্ষণ লেখালেখি করব, তার পরে একটা বিশাল ঘুম দেবো। - আমি ঘুমের ওষুধ কোথায় পাবো? তুই কী বলছিস এসব? - আরে, তুই সব ব্যাপারে এত জলদি ভয় পেয়ে যাস কেন রে, শিলা? আমি শিওর, আন্টির ওষুধের বাক্সে খুঁজলেই কোনও-না-কোনও ঘুমের ওষুধ পাওয়া যাবে, বয়স্ক মানুষের কাছে এ ধরনের ওষুধ অবশ্যই থাকে। যা! আর আসার সময় চা নিয়ে আসিস, চা খাব। আমি নাশতা খাব না, আন্টিকে বলিস। যা এখন, দৌড়া। মধু আমাকে একরকম ধাক্কা দিয়েই রুমের বাইরে বের করে দিল। বাইরে থেকেই আমি বললাম, রুমের দুটো টেবিলের যে-কোনও একটা ও ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারে। আমি উপায় না পেয়ে মায়ের রুমে ঢুকলাম, ভয়ে শরীর কাঁপছে, যদি ধরা পড়ে যাই? অবশ্য মা এখন রান্নাঘরে। তবুও আমি ভয় পাচ্ছি খুব। রুমে ঢুকে ওষুধের বাক্স নাড়াচাড়া করলাম, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারলাম না, ওখানে ঘুমের ওষুধ কোনটা! আমি কী করব এখন? আচ্ছা, আশফাক ভাইকে বলা যায় না? সব বলেই দিয়েছি যখন, এটাও বলা যাবে নিশ্চয়ই। আমি ওষুধের বাক্স নিয়ে আশফাক ভাইয়ের রুমে গিয়ে নক করলাম। ভাইয়া দরজা খুললেন। - তুমি এত সকালে? আমি সকাল থেকে ঘটে-যাওয়া সব কিছু ভাইয়াকে এক এক করে বলে দিলাম। - ভাইয়া, আমার এবার সত্যিই ভয় করছে। একে তো মধুরিমার এসব অসংলগ্ন আচরণ, তার মধ্যে ও যে বাসা থেকে পালিয়ে এখানে এসেছে, এটা মা জানতে পারলে আমাকেও বাসা থেকে বের করে দেবেন। - হা হা হা…। - আপনার হাসি পাচ্ছে? - শিলা, এটা ভয় পাবার সময় না, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে এখন। আশফাক ভাইয়া অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে ওষুধের বাক্স থেকে সত্যি সত্যিই ঘুমের ওষুধ খুঁজে পেলেন, আর বললেন, ‘এই নাও, দুটো খাইয়ে দেবে।’ - দুটো কেন? - যা বলেছি, তা-ই করো। আমি ওষুধ দুটো আর চা নিয়ে রুমে গিয়ে দেখলাম, মধু লিখছে। ও দেখি সাথে করে অনেকগুলো ছোটো ছোটো ডায়েরি নিয়ে এসেছে। এক বার এই ডায়েরিতে কিছু লিখছে তো আরেক বার অন্যটায়। আচ্ছা, মধু পাগল হয়ে যায়নি তো? - এই নে, চা আর ওষুধ। মধু প্রথমে চা খেল, এর পরে দুটো ওষুধই খেয়ে ফেলল, একটাও প্রশ্ন করল না। আমিও কিছু না-বলে গোসল করতে চলে গেলাম। গোসল থেকে বেরিয়েই দেখি, মধু ঘুমিয়ে পড়েছে। কী আশ্চর্য! এত জলদি ঘুমিয়ে পড়ল? ওর গায়ে চাদর জড়িয়ে দিতে গিয়ে ওর মায়াবী মুখটা ভালো করে দেখলাম। ঘুমন্ত কোনও এক দেবীর মতন মনে হচ্ছিল ওকে। অথচ এই মেয়েই কিনা... নিচ থেকে মায়ের গলা শুনতে পেলাম। খেতে ডাকছেন। আমি কোনওমতে লুকিয়ে খাবারের রুম ডিঙিয়ে জলদি আশফাক ভাইয়ের রুমে গেলাম। - ভাইয়া, ও ঘুমোচ্ছে! - আচ্ছা, এবার তোমার পালা। এখন সব কাজ তোমার। তুমি গিয়ে ওর সব লেখা, ওর ডায়েরি, অন্যান্য যা-কিছু ও সাথে করে নিয়ে এসেছে, সব কিছুই আমার কাছে নিয়ে এসো। - আমি এসব কেন করতে যাব খামোখা? মধুর আর আমার এই নোংরা অবস্থান থেকে মুক্তির জন্য আমি আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছি। সাহায্য করতে না পারলে আপনি ‘না’ বলে দিন। ওর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করার কোনওই মানে হয় না। - সাহায্য করার জন্যই ব্যক্তিগত ব্যাপারে জানতে হবে, যেটা ওর লেখালেখি খেয়াল করলে হয়তো আমি ধরতে পারব, যদিও আমি অনেক কিছুই আন্দাজ করে ফেলেছি, তবুও আন্দাজে তো আর কাজ হবে না। তবে তুমি যদি বলো, আমি তাহলে এ ব্যাপার থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। - না ভাইয়া, প্লিজ, আপনি হেল্প করেন আমাকে। আমি আর এসব নিতে পারছি না। আমি দেখি রুমে গিয়ে ওসব আনতে পারি কি না। কিন্তু ও যদি জেগে ওঠে? - উঠবে না, শিওর থাকো। ওকে কড়া ডোজের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। - হায় হায়, ভাইয়া। কী বলছেন এসব! ওর যদি কিছু হয়ে যায়? - তুমি এসব চিন্তার ভার আমার উপরে ছেড়ে দাও। ওর কিছু হবে না, ঘুমের ওষুধ খেলে কেউ মারা যায় না, একটু বেশি ঘুমোবে, এই আরকি। যাও, তোমার কাজটা করো। আমি রুমে গিয়ে দেখি, মধু সত্যিই গভীর ঘুমে আছে। আমি আর দেরি না করে ওর সব কাগজপত্র, লেখার খাতা, ডায়েরি, ওর দুইটা মোবাইল ফোন সব নিয়ে আশফাক ভাইয়ের রুমে গেলাম। আমরা একে একে ওর সব লেখা পড়তে লাগলাম। অনেক অনেক লেখা, অনেক অনেক ছন্দ, কবিতা। মধু কি তবে সারাদিন-রাত ধরে এগুলোই করত? একটা ডায়েরিতে এরকম কিছু ছন্দ লেখা--- ‘এই আমি আজকেই বলে দিচ্ছি পাকাপোক্ত, যে আমায় নরম বলে, সেই মানুষটা বুঝি আমার চেয়েও শক্ত? ফুরিয়ে যাচ্ছে দিনের হিসেবে দিন…ঠিকই নিয়মিত, আমি রয়ে গেলাম আগের আমিতেই, খুব গুছিয়ে…অনিয়মিত।’ ‘জলরং আর অভিমান দিয়ে দিনভরই আমি অশ্রু শুধু আঁকি, তুমি কি জানো, তুমি থাকতেও মাঝরাত্তিরে আমি একলা একলা কাঁদি? সব ছাপিয়ে মনের কথা চোখে আসে উঠেও, তাতে লাভই-বা কী? আমাকে কি কেউ পড়তে পেরেছে মোটেও? যদি কখনও কেউ ওটা যায় পেরেই, তাতেও কতটুকুই-বা লাভ? আমারও যে কাক-পক্ষীদের মতন শুধু এক বলতে না-পারারই স্বভাব!’ ‘কী দিয়া রাখিব বলো মনরে বান্ধিয়া, রক্ত ঝরিবে জানিয়াও তোমারই তরে হেঁটেছি,…বলিতে পারো,…সাধিয়া সাধিয়া!’ ‘আমার মন কান্দে, শরীর কান্দে, খালি চক্ষু দুটি কান্দিতে নাহি পারে, তোমরা সারাদুনিয়া খুঁজিলেও খুঁজিয়া পাইবা না, আমি খুঁজিয়া পাইয়াছি যারে।’ অন্য ডায়েরি খুলে দেখি, বাংলা অক্ষরে হিন্দি কিছু লেখাজোখা, খুব সম্ভবত এগুলোকে শায়েরি বলে। ‘হামনে তুমসে ইতনা চ্যাহা অউর বেশুমার মোহাব্বত কি, অ্যাব সির্ফ, উনসে অ্যাহি দুয়া হ্যায় কি তুমহে বো সালামত রাখ্যে।’ ‘চলো কুছ কাহানিয়া হাম জিন্দেগিমে হি ছৌড় য্যাতে হ্যায়ন, তাকি উপড় যাক্যার তুমহারে নাম ক্যা এক কিতাব বানা স্যাকে।’ ‘ম্যারে দিল মে জিতনা দর্দ হ্যায়, কাশ ম্যা বো জুবা প্যার ভি লা প্যাতি! সির্ফ তুমহারে লিয়ে জি রহে হে হম, নেহিতো কব কি দুনিয়া ছৌড় য্যাতি!’ ‘সুকুন ক্যায়া হে, ইয়ে তুম জাননা চাহ্তে হো? হামারে হোঠো পর হোঠ রাখ কে দ্যখো, তুম ক্যইসে স্যারা দুনিয়া ভুল যাতে হো!’ ‘হামারে প্যারো কে ঘুনগ্রু তক তুমহারে নাম জানতা হ্যায়, অউর ফির ভি তুম হামারে প্যায়ার পর উঙ্গলি উঠাতে হো?’ ‘হামারে দিল কে আঙ্গন ম্যা হামনে আজ সাজায়ে থে ম্যহফিল, আফসোস ইস বাত ক্যা, শিরফ তুমহারে লিয়ে সাজায়ে যো ম্যহফিল, উসমে জিনকো না অ্যানা থা বো স্যাব অ্যায়ে, সির্ফ তুম না হো স্যাকে স্যামিল!’ ‘আন্ধেরি রাতো ম্যা ম্যারি দিলসে নিকলি হুই চিখ তুমহে শুনাই নেহি দেতা, ইসসে আছ্যা তো ইয়ে থ্যা কি উপরবালা ঝট স্য মুঝে ওঠা হি লেতা!’ ‘হাওয়াইনে রুপ বদলতে হি তুমনে হামারা হাথ ছৌড় দিয়া? ক্যায়া তুমহারা প্যাতা হ্যা, হমনে পেহেলি মুলাকাত ক্যা দিন ম্যা হি অ্যাপনে অ্যাপকো তুমহারে স্যাথ জোর লিয়া?’ - শিলা, তোমার বান্ধবী তো সত্যিই গান লিখে মনে হচ্ছে। না হলে এত সব লিখল কী করে! এবারে হাতে পেলাম কালো রঙের ওর ব্যক্তিগত ডায়েরিটা, যেটায় হাত দেওয়ায় সেদিন মধু রেগে গিয়েছিল। ওটাও খুলে দেখলাম, একপ্রকার বাধ্য হয়ে আর বিরাট কৌতূহলবশত। ওতেও এরকম নানান কিছু লেখা। সব উলটে পালটে দেখে আমরা শেষের দিকে এসে দেখলাম, মধু লিখেছে, ‘সাম্য, আমি জানি, তুমি বলে আমার আসলে কেউই নেই। কিন্তু আমি যে এটা জানি, সেই ব্যাপারটাই কাউকে জানতে দিই না। ওরা সবাই আমাকে পাগল ভাবে, আমি যে তোমায় ভালোবাসি, এটা কেউ বিশ্বাস করে না। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, তুমি আমায় ভালোবাসো না; বাসবে কী করে, তুমি তো জানোই না যে, মধুরিমা বলে কেউ যে দুনিয়াতে আছে, কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি! কেন তোমার কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়েই সত্যটা সবাইকে জানাতে হবে? কীসের এত কৈফিয়ত আমি দেবো, বলো? আমি আজকাল বুঝি না, পৃথিবী ঘুরছে, না কি সূর্য ঘুরছে, না কি আমিই ঘুরছি! আমি জানি না এসবের শেষ কোথায়, নিজের উপর সব নিয়ন্ত্রণই হারিয়ে ফেলেছি। আচ্ছা, আমি কি শারীরিকভাবেও নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি? তবে তোমার গানগুলো শুনব কী করে? সুরগুলো ছুঁয়ে দেখব কী করে, সাম্য?’ এইটুকু পড়ে আমি বিরাট একটা ধাক্কা খেলাম। তার মানে, এ সবই মধুর কল্পনা! ওর এসব আচরণ, লেখা, কথা সবই কি তাহলে স্রেফ কল্পনার জগতে বিচরণ! ভাইয়া বললেন, ‘এবার তুমি ওর ফোন দুইটা চেক করো।’ আমি জলদি ওর মোবাইল দুটো চেক করা শুরু করলাম। এবার আমি আরও বড়ো ধাক্কা খেলাম! কললিস্ট, মেসেজলিস্ট চেক করে দেখলাম, দুটোই ওর নম্বর! একটা ওর পারসোনাল, অন্য যেটা, সেটার নম্বরই ও প্রথমটিতে ‘সাম্য’ লিখে সেইভ করে রেখেছে। তার মানে হচ্ছে, মধু নিজেই নিজেকে নিজের ফোন থেকে মেসেজ দেয়, ফোন করে, আর রিপ্লাই দেয় ওরই অন্য একটা ফোন থেকে, বাইরে থেকে দেখলে যেটা সাম্যর মেসেজ বলেই মনে হয়। আমার হুট করে ওই দিনের ক্যাফের কথা মনে পড়ে গেল। সেজন্যই মধু অন্য হাতে এই ফোনটা শাড়ির ভাঁজে লুকিয়ে রেখেছিল সেদিন, হাতটা বের অবধি করছিল না! উফফ্, আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। আশফাক ভাই বললেন, ‘কী বুঝলে, শিলা? এবার তোমাকে বোঝাতে পেরেছি আসল ব্যাপারটা?’ - হ্যাঁ, কিন্তু ভাইয়া, আপনি আমার আগেই সব কিছু কী করে বুঝলেন? - আমি তোমার কথা প্রথম দিন শুনেই অনেক কিছু আন্দাজ করে ফেলেছিলাম। আর আমি সাম্য চৌধুরীর ব্যাপারে একটা মাত্র খোঁজ নিয়েই পুরো ব্যাপারটাকে মাথায় ক্লিয়ার করে ফেলেছি। উনি আমাদের ইউনিভারসিটিরই স্টুডেন্ট ছিলেন, তাই খোঁজ নেওয়াটা সহজ হয়েছে। - কী সেটা? - শিলা, সাম্য তো দেশেই থাকেন না, উনি আর ওঁর স্ত্রী, দুজনেই প্রায় দেড় বছর ধরে ইন্ডিয়াতে আছেন। - তাহলে আমাদের ইউনিভারসিটির প্রোগ্রামে যে আমি কিছুদিন আগেই ওঁকে দেখলাম? - হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছ। এই দেড় বছরে মাত্র একদিনের জন্যই উনি দেশে এসেছিলেন, আর তোমাদের ওখানে প্রোগ্রাম করেছেন, কারণ উনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন সাবেক ছাত্র। আমার কেমন জানি শরীর অবশ অবশ লাগছিল সব শুনে। আমি অনেকক্ষণ সোফায় বসে রইলাম। কিছুই আর ভাবতে পারছিলাম না। আমার হঠাৎ মনে এল, তাই বলে মধু আমার সাথে এমন অভিনয় করতে পারল! কীভাবে! আমি যে ওকে অনেক বিশ্বাস করি…মানে, করতাম! কিছুক্ষণ পরে আমি নিজের রুমে ফিরে গেলাম। সন্ধ্যে প্রায় হয়ে এসেছে। মধু এখনও ঘুমোচ্ছে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম, মাসিমা, মানে মধুর মা ছয়বার ফোন করেছিলেন। আমি কলব্যাক করতেই মাসিমা হাউমাউ করে কাঁদলেন, বললেন, ‘মধুরিমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ মধু আমার বাসায়ই আছে শুনে মাসি যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলেন। আমি বললাম, ‘আজকে ও আমাদের এখানেই থাকুক। আমি কাল ওকে পাঠিয়ে দেবো।’ এটা বলে ফোনটা রাখলাম। রাতে মধুকে কয়েক বার ডাকলাম, উঠল না। সেই সকালবেলা থেকে ও এভাবেই ঘুমোচ্ছে। মাঝরাতে ওয়াশরুমে যাবার জন্য উঠেছিল, টলতে টলতে ও যেন মেঝেতে পড়েই যাচ্ছিল। হয়তো ওভারডোজেরই ফল এসব। আমি ওকে ধরতে যাইনি, কেমন যেন অনুভূতিশূন্য লাগছিল নিজেকে। আমি ওর প্রতি কোনও টান অনুভব করছিলাম না। পরদিন সকালে উঠেই মধু ওর জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। ওর শরীর কাঁপছিল, শরীরটা এখনও পুরোপুরি ঠিক হয়নি, বোঝা যাচ্ছে। তবুও আমি ওকে বাধা দিইনি। যাবার সময় একটা কথাও বলিনি ওর সাথে। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর আমি উঠে বসে রইলাম। মা নিচে ডাকলেন, সাড়া দিইনি। দেখি, আশফাক ভাইয়া আমার রুমে নাশতা নিয়ে এসেছেন। - কেমন আছ, শিলা? - ভালো। - এত ভেঙে পড়লে চলবে, বলো? আমি আর কোনও কথা বললাম না। সারা দিনের পরে রাতে মধুর মেসেজ এল, ‘আমি সরি, হুট করে তোর বাসায় গিয়ে বিব্রত করেছি তোকে।’ আমি কোনও রিপ্লাই করিনি। এর পরে ও কয়েক বার ফোন করেছে, আমি ধরিনি। আমার মনে হয়েছে, মধুর সাথে আমার আর যোগাযোগ রাখাই ঠিক না। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল, দিনের যা নিয়ম আরকি। আমিও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসছিলাম, ক্লাসে যাচ্ছিলাম নিয়মিত। শুধু মধুর সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ওর ফোনও ধরতাম না, মেসেজও পড়ে দেখতাম না। এদিকে আশফাক ভাইয়া প্রতিদিনই চলে যেতে চান, আমরা জোর করে করে তাঁকে রেখে দিই। এভাবে প্রায় আট দিন পেরিয়ে গেল। হঠাৎ করেই সেদিন বিকেলে চা খেতে খেতে মা মধুর কথা জিজ্ঞেস করলেন, আমি কৌশলে এড়িয়ে গেলাম। রুমে যাবার পর থেকেই সেদিন মধুর কথা খুব মনে পড়ছিল। আমাদের ছোটোবেলা, কলেজলাইফ সব কিছুই মনে পড়ছিল। ওর জন্য খুব মায়া হচ্ছিল, কেন, জানি না। আমি খুব দ্রুত ওর নাম্বারে একটা ফোন করে ফেললাম। ফোনটা বন্ধ পেলাম। পরের দিন সকালেও ফোন করে বন্ধ পেলাম। এর পরে মাসিমাকে ফোন করলাম, ফোন ধরলো কাব্য। শুনলাম, ও কাঁদছে। - শিলাদিদি, এই তোমার ফোন করার সময় হলো? তুমি একবারও এলে না? - কাব্য, কাঁদছিস কেন রে, কী হয়েছে? - মধুদিদি আর নেই গো। গত পরশু রাতে সুইসাইড করেছে। এর পরেই ফোনটা কেটে গেল। আমি কি ঠিক শুনলাম কথাটা? কাব্য এটা কী বলল! আমি দৌড়ে গেলাম আশফাক ভাইয়ার রুমে। ভাইয়াকে নিয়েই আমি মধুদের বাড়িতে রওনা হলাম তখুনিই। গিয়ে দেখলাম, মধুর বাবা আর দিব্য দাদা চুপচাপ সিঁড়ির একপাশে বসে আছেন, আর ঠাকুরঘর থেকে মাসিমার কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ভেতরে ঢুকতেই দেখি, কিছু লোকজন বসা, কিন্তু কেউ কোনও কথা বলছেন না। তার মানে কি মধু সত্যি সত্যিই…!? আমাকে দেখে কাব্য দৌড়ে এল কাঁদতে কাঁদতে। হাতে করে কয়েকটা কাগজ নিয়ে এল। দেখলাম, ওগুলো মধুর লেখা সুইসাইড-নোট। পড়লাম। মধুরিমার সুইসাইড-নোট - ১: মা, আমি নিজে ডুবে গিয়ে তোমাদের পুরো জাতটাকেই উপরে তুলে দিয়ে গেলাম। আমি আসি, তোমরা নাহয় ভালোবাসাগুলোকে মেরে ফেলে আজীবন ধর্ম আর জাতটাই বাঁচিয়ে গেলে! ভালো থেকো তোমরা সবাই। মধুরিমার সুইসাইড-নোট - ২: সাম্য, ভালোবাসি তোমায়। আমি তো কোনও কাদম্বরী দেবী নই যে আমার সুইসাইড-নোটের কথা সবাই জানবে! ইস্, এই পুরো পৃথিবীতে শুধুমাত্র তোমাকেই যদি আমার অস্তিত্ব আর মৃত্যুর খবরটা জানাতে পারতাম! কোনও একদিন আমাদের নিশ্চয়ই দেখা হবে, সাম্য! মধুরিমার সুইসাইড-নোট - ৩: শিলা, আমি চলে যাচ্ছি। আমাকে আমি মেরেই ফেললাম রে। তুই আমাকে ভুল বুঝিস না। পারলে ক্ষমা করে দিস। অন্য কোনও জন্মে… তুই নাহয় হোস বৃষ্টি! তোর জলে নিয়ে যাস ভাসিয়ে ঈশ্বরের অহেতুক সব সৃষ্টি! আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! কোনওভাবেই কাঁদতে পারছিলাম না, বুকটা অবিশ্বাস্য রকমের ভারী লাগছিল। গেইটের কাছে এসে আশফাক ভাইয়াকে বললাম, এটা কী হয়ে গেল, ভাইয়া? - শিলা, ভালোবাসা আর শিল্পের কোনও সীমানা হয় না। আমার শুধু একটাই আফসোস রয়ে গেল যে, মধুরিমা মরে গিয়ে ওর প্রেমিকাসত্তাটা সবাইকে দেখিয়ে দিয়ে গেল, কিন্তু ওর শিল্পীসত্তাটার খবর একটা কাকপক্ষীকেও জানিয়ে দিয়ে গেল না! - ভাইয়া, একটা কথা জিজ্ঞেস করি আপনাকে? - হ্যাঁ, করো। - আপনি কি সত্যিই মধুরিমাকে আগে থেকে চিনতেন না? - শিলা, চলো, ভেতরে যাই। ওদের পাশে এই মুহূর্তে তোমার থাকা উচিত। হঠাৎ ‘শিলা, তুমি ভেতরে যাও, আমি একটা সিগারেট খেয়ে আসছি। মাথাটা প্রচণ্ড ধরে আছে!’ বলেই আশফাক ভাইয়া দ্রুত মধুদের বাড়ির গেইটের বাইরে চলে গেলেন। পুনশ্চ। পাঠকদের জন্য এই গল্পের শায়েরিগুলির ভাব-তরজমা করে দিলাম: (১) হামনে তুমসে ইতনা চ্যাহা অউর বেশুমার মোহাব্বত কি, অ্যাব সির্ফ, উনসে অ্যাহি দুয়া হ্যায় কি তুমহে বো সালামত রাখ্যে। (Humne tumse itna chaha aur beshumar mohabbat ki, Ab sirf unse yehi dua hain ki tumhe woh salamat rakhe.) তরজমা: আমি তোমায় চেয়েছি এতই, আর ভালোবেসেছি এত যে গভীর, শুধু তুমি ভালো থাকো, ঈশ্বরের কাছে এটুকুই এখন প্রার্থনাতে চাই যে নিবিড়! (২) চলো কুছ কাহানিয়া হাম জিন্দেগিমে হি ছৌড় য্যাতে হ্যায়ন, তাকি উপড় যাক্যার তুমহারে নাম ক্যা এক কিতাব বানা স্যাকে। (Chalo kuch kahaniya hum zindegi mein hi chhod jate hein, Taki upar jakar tumhare nam ka ek kitab bana sake.) তরজমা: এসো, এপারে দুজন মিলে কিছু গল্পের আখর সাজিয়ে যাই, যেন ওপারে গিয়ে তোমার নামে গোটা একটা বই লেখারই সুযোগ পাই! (৩) ম্যারে দিল মে জিতনা দর্দ হ্যায়, কাশ ম্যা বো জুবা প্যার ভি লা প্যাতি! সির্ফ তুমহারে লিয়ে জি রহে হে হম, নেহিতো কব কি দুনিয়া ছৌড় য্যাতি! (Mere dil mein jitna dard hein, Kash mein wo juba par vi la pati! Sirf tumhare liye ji rahe hein hum, Nehito kab ki duniya chhod jati.) তরজমা: আমার এ হৃদয়ে আছে দুঃখ যত যেই, আহা, যদি কোনওভাবে তা এই অধরেও আনতে পারতাম! তোমার জন্যেই তো বেঁচে-থাকা এই, নইলে সেই কবেই তো ওপারে পাড়ি জমাতাম! (৪) সুকুন ক্যায়া হে, ইয়ে তুম জাননা চাহ্তে হো? হামারে হোঠো পর হোঠ রাখ কে দ্যখো, তুম ক্যইসে স্যারা দুনিয়া ভুল যাতে হো! (Sukoon kiya hein, ye tum janna chahte ho? Hamare hontho pe honth rakh ke dekho, Tum kaise sara duniya bhul jate ho!) তরজমা: শান্তি কী জিনিস, তা কি তুমি জানতে চাও? আমার ঠোঁটের উপর ঠোঁটটা রেখেই দেখো, তুমি কেমন করে পুরো দুনিয়াটাই ভুলে যাও! (৫) হামারে প্যারো কে ঘুনগ্রু তক তুমহারে নাম জানতা হ্যায়, অউর ফির ভি তুম হামারে প্যায়ার পর উঙ্গলি উঠাতে হো!? (Hamare pairo ke ghungroo tak tumhara naam janta hai, Aur phir bhi tum hamare pyar par ungli uthate ho!?) তরজমা: আমার পায়ের ঘুঙুরেরা পর্যন্ত তোমার নামটা ঠিকই জানে, তার পরেও তুমি আঙুল উঠিয়েই যাচ্ছ আমার ভালোবাসার পানে!? (৬) হামারে দিল কে আঙ্গন ম্যা হামনে আজ সাজায়ে থে ম্যহফিল, আফসোস ইস বাত ক্যা, শিরফ তুমহারে লিয়ে সাজায়ে যো ম্যহফিল, উসমে জিনকো না অ্যানা থা বো স্যাব অ্যায়ে, সির্ফ তুম না হো স্যাকে স্যামিল! (Hamare dil ke aangan mein humne aj sajaye thei mehfil, Afsos is bat ka,sirf tumhare liye sajaya jo mehfil, Jinko na ana tha wo sab aye, Sirf tum na ho sake shamil!) তরজমা: আমি যে জলসা সাজালাম আমার মনের উঠোনে, আফসোস, যা ছিল শুধু তোমারই জন্য, বড়ো যতনে, সেখানে, সবাই এল, অনাহূত হয়েও, শুধু এলে না তুমিই, বেলা বয়েও! (৭) আন্ধেরি রাতো ম্যা ম্যারি দিলসে নিকলি হুই চিখ তুমহে শুনাই নেহি দেতা, ইসসে আছ্যা তো ইয়ে থ্যা কি উপরবালা ঝট স্য মুঝে ওঠা হি লেতা! (Andheri raaton mein mere dil se nikli hui cheekh tumhe sunai nehi deta, Isshe accha to ye tha ki uparwala jhat se mujhe utha hi leta!) তরজমা: আঁধার রাতে, আমার হৃদয়নিংড়ানো চিৎকারটা, তোমার কানে পারে না যেতেই, যদি ঈশ্বর আমায় উঠিয়ে নিতেন হঠাৎ করে, তারচে’ বরং ভালো হতো এতেই! (৮) হাওয়াইনে রুপ বদলতে হি তুমনে হামারা হাথ ছৌড় দিয়া? ক্যায়া তুমহারা প্যাতা হ্যা, হমনে পেহেলি মুলাকাত ক্যা দিন ম্যা হি অ্যাপনে অ্যাপকো তুমহারে স্যাথ জোর লিয়া? (Hawayein rup badalte hi tumne humara hath chhod diya? Kiya tumhe pata hein, humne peheli mulaqat ke din mein hi apne apko tumhare sath jor liya?) তরজমা: হাওয়াটা পালটে যেতে না যেতেই তুমি তোমার হাতটা রাখলে অন্য কারুর হাতে? তুমি কি জানো, আমি প্রথমদেখা হবার দিনেই নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলাম তোমার সাথে?