একজীবন আয়ুর স্বাদ

: মানুষ এমন আজব কেন বলতে পারো? যাকে ভালোবাসে না, তার সাথেও থেকে যায় পুরো একটা জীবন! কেন থেকে যায়? থাকতে হয়, তাই কি? থাকতেই-বা কেন হয়? না থাকলেই কি নয়?
 
ভাবতে পারো, বৃত্ত, যাকে মনটাই দিলাম না, তাকে পুরো জীবনটা দিতে হচ্ছে, এ কেমনতর অসহায়ত্ব! এদিকে, যে-মানুষটাকে মন খুব করে চায়, তাকেই কিনা আমরা জীবনে হারাই! জীবনের ঘরে যখন মন‌ই ঘর বাঁধে না, তখন‌ও বাঁচার আর কী মানে থাকে!
 
: কেন ভাবছ অমন করে, কল্প? জীবনটা অন্য কারও সাথে কাটালেও তো প্রাণটা নিজের মানুষটার কাছেই থাকে; ওতে কি সুখ নেই? ওই সুখই-বা পায় কে? অমন টানে, নিজের জগতে, একান্ত নিজের করে নিতে ক-জন পারে বলো?
 
: বৃত্ত, আমি প্রাণ চাইনে গো! আমি জীবনের একেকটা ভোরে একজীবন আয়ুর স্বাদ নিতে চাই... আমার মানুষটার সাথে। আর কী বললে তুমি…সুখ? নাহ্… সুখ নয়, আমার কেবলই শান্তি চাই। অসহায়ত্ব ঘুচিয়ে, আমি মানুষটার ভরসা হতে চাই।
: সুখ চাও না? তবে ভরসার কী মানে?
 
: ভরসায় স্বস্তি থাকে গো; ভরসায় ভয়ও অবশ্য থাকে! হি হি হি… ভাবছ, যেচে যেচে কে ভয় নিতে চায়? না গো, না, এ ভয়কে জয় করলে তবেই-না ভালোবাসা...! আচ্ছা, ছাড়ো এসব!
 
: ছাড়ব কেন? জীবন অনেক কঠিন। এসব কথায় চলবে কেন? তুমি যত সহজ ভাবো, তত সহজ ও নয়। ওকে এত সহজে পোষ মানানো যায় না, কল্প! ছেলেমানুষি করছ খুব! বোঝো, ওর কাছে চাইলে যে ও আরও বেঁকে বসে! ভয় হয়, যদি এবার চোখেও হারাই!
 
: হিহিহি... সে-ই তো ভয়? আচ্ছা বাবা, বেশ তো, সেই ‘কঠিন কিছু’টা আমার কাছে থাক। সহজ না হোক, কঠিন করেই নাহয় আমার হয়ে থাক।
: কী চাও তুমি?
 
: আমি যাকে মনে হারাই, কেবল তার অসহায়ত্বটুকুতে একটু ভরসা হয়ে থাকতে চাই। ওর কঠিন জীবন ওর নিজেরই থাক, তবে আমি শুধু সেই কঠিন জীবনে রংতুলির এক সহজ আঁচড় কাটতে চাই। তার কাঠখোট্টা সময়গুলোয় শুকনো পাতার ঝিরিঝিরি শব্দে তাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভেসে যেতে চাই।
 
বুঝলে, মানুষটা জানুক, জীবন এখানে এমনও কাটানো যায়, ঠিক যেমনটা সে সত্যিই কাটাতে চায়! আমি কেবল তার বিশ্বাসে সেই ভরসাটুকু হয়ে বাঁচতে চাই।