কখনো কখনো হঠাৎ মনে প্রশ্ন জাগে—কেন এত লেখা হয়, এত বলা হয়, বার বার এত আলোচনা করা হয় জাগরণ নিয়ে? কেন প্রতিটি গল্প, প্রতিটি উপমা, প্রতিটি অভিজ্ঞতা সেই একটিমাত্র সত্যের চারপাশে ঘোরে?
কারও দৃষ্টিতে মনে হতে পারে—এ কেবল আধ্যাত্মিক কৃতিত্ব নিয়ে গর্ব করার প্রবণতা। এমন অভিযোগও ওঠে—“এত বলা আসলে নিজের অর্জন প্রচার ছাড়া কিছু নয়।”
কিন্তু মূল উৎসটা অন্য জায়গায়। এ হলো এক প্রতিজ্ঞা—যাকে বৌদ্ধ পরিভাষায় বলা হয় বোধিসত্ত্ব প্রতিজ্ঞা। গভীরতম অন্ধকার সময়ে, যখন হতাশা চরমে পৌঁছেছিল, তখন এক নীরব প্রার্থনা বেরিয়ে এসেছিল—“যদি কখনো সেই শান্তি অনুভব করতে পারি, যেটির কথা জাগ্রত আচার্যরা বলেন, তবে জীবনের বাকি সময় কাটাব এই সত্য অন্যদের জানাতে—বিশেষ করে যারা হতাশার পথে হাঁটছে।”
তার সঙ্গে যোগ হয়েছিল আরেকটি সরল প্রার্থনা—“আমাকে যেন কষ্টের স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়ো না, যাতে অন্য ভুক্তভোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকতে পারি।”
সম্ভবত এ কারণেই জীবনে মাঝেমধ্যেই আবেগের দেয়ালে ধাক্কা খেতে হয়। কিন্তু আশীর্বাদ এই যে, সেই গভীর জাগরণ বা করুণা-অনুগ্রহ একবার যে বয়ে এসেছে, তা আর নড়েনি। অটল, অবিনাশী, এক প্রবাহমান স্রোতের মতো চেতনার তলদেশে থেকে গেছে।
তবুও একটি প্রশ্ন মাঝে মাঝে তাড়া করে—“এত কিছু কেন পেলাম?” অতীতের ভুল, অন্যদের দেওয়া কষ্ট, অগণিত ত্রুটির পরও—কীভাবে সম্ভব হলো এমন এক নতুন শুরু? কীভাবে এল হঠাৎ বজ্রপাতের মতো স্বচ্ছতা, অজানা ক্ষমাশীলতার অনুভূতি, আর এক অদ্বিতীয় ভালোবাসার আবরণ?
কীভাবে জীবনের কণ্টকিত পথে হঠাৎ এল শান্তির এই উপহার—অপরিসীম মুক্তি, আনন্দ, অন্তঃশান্তি? কীভাবে সম্ভব হলো—এ যেন ঈশ্বরের সঙ্গে এক নৈশভোজ, অটল ঐশ্বরিক দিকনির্দেশ, আবার নতুনভাবে শুরু করার সুযোগ, আর জীবনের প্রতিটি ক্ষুদ্র জিনিসে ভালোবাসা—মানুষ, প্রকৃতি, মাটি, ফুল, বৃষ্টি—সব কিছুর প্রতি?
আরও রয়েছে বাহ্যিক আশীর্বাদ—এক ভালোবাসাময় পরিবার, দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক, আশ্রয়, স্বাচ্ছন্দ্য, বন্ধুত্বের অফুরন্ত ভাণ্ডার, এক সমৃদ্ধ, উজ্জ্বল জীবন।
প্রশ্ন তাই বার বার ফিরে আসে—“এত কিছু কেন? কেন এত?”
উত্তর পাওয়া যায় খুব সহজ এক সত্যে—ঈশ্বর মঙ্গলময়। ঈশ্বরই প্রেম। প্রেমই শান্তি। আর জীবন আসলে সুন্দর। ঈশ্বর আমাদেরকে ভালোবাসেন।