ভালোবাসা কি বুড়ো হয়? বয়স বাড়ে? শীতে হাড় কাঁপে?
এই যে ইদানীং যা-কিছু বলি, মনে হয় যেন বুড়ো-কথা…তার সবই!
শুরুর সেই আধোআধো বোল…খুব মিষ্টি…কোথায় যেন হারিয়েই গেল!
ভালোবাসা বুঝি বুড়ো হয়ে যায় এমনি করেই?
দিন ফুরোয় যত, যত রাত্রি ঘনায়, ততই বাঁধে শক্ত করে?
ভালোবাসা থাকলে পরে সম্পর্কে খুব আস্থা থাকে?
প্রবল ঝড়েও যেমনি মাঝি ছেঁড়াপালেই লাগায় হাওয়া,
ভালোবাসা কি তেমনি করেই পারে টেনে নেয়?
সম্পর্ক কি টিকে থাকেই নানান রকম আস্থা চেখে?
আমার ভালোবাসাটুক এত চট্জলদি বুড়ো হলো কেন?
হয় নাকি এত দুম্ করে সব এমন কিছু?
এই তো সে দিন…আজও মনে আছে সব…তোমাকে যে দিন প্রথম দেখি!
টুকটুক করে গুটিগুটি পায়ে নিঃশেষে কত মুহূর্ত গেছে তোমার সাথে,
তোমাকে ভেবেই একলা কত গল্প করেছি, তার হিসেব কে-ইবা রাখে!
মনে হয় যেন এই কিছুক্ষণ মাত্রই হলো!
মানুষের সত্তা থাকে কয়টা, বলো? মন তো দেখি অনেকই থাকে!
একমন বলে, এগোস না আর, এগোলে আরও পেছোবি কী করে?
আরেক মন বলে তখুনিই, বেঁচে আছিস আর দিন যতটা,
সামনে এগোস দিন মিলিয়ে ঠিক ততটা!
আজকাল ভালোবাসা নিয়েও দেখি পড়ে টানাটানি!
আমি যে আর পারি না এত খুব মেপে হিসেবে পা ফেলতে!
আর কতটা?
অপেক্ষাটা?
একটুকরো ভালোবাসার?
পাওয়ার আগেই পেছন থেকে জাপটে ধরে ভয়, যেন গেড়েই বসে মনে!
ভালোবাসা আমায় হ্যাঁচকা টানে সাগরপারে এনে বলল…ঝিনুক কুড়োও!…বলে ফেলেই গেল…
তুমিই বলো, পুরো একটা জীবন দিলেও তোমার ভালোবাসাটা কুড়োনো যাবে?
গোটা একটা জীবনও কুড়োই যদি, তোমার জন্য ভালোবাসা যা, ফুরোবে নাকি?
মাঝেমাঝে খুব মনে হয়…একা ছিলাম, বেশ তো ছিলাম!
আমার যে কেউ ছিল না ভালোবাসার, বাঁচতে কাউকে সত্যিই লাগে---
এ সব তো টের পাইনি কখনও ভুলেও!
শিশুর মতন একাএকাই হেসেছি, খেলেছি, লুটিয়েছি ধুলোয় মনের সুখে কত-কতদিন!
সেই আমারই আজকাল আর মন বসে না কাজে কি মনে!
জানি না আজ কেমন করে সময় আমার নেই হয়ে যায়!
করবটা কী, থাকে না মনে। করেছি যে কী, ভুলে যাই তাও!
মনে ভেতর কী এক পাখি আসা-যাওয়া করে সারাদিনভর…
হঠাৎ ভাবি, এই পাখিটার নাম দিয়ে দিই!
দিয়েই দিলাম---সোনাপাখি!
নামটা এমন কেন যে দিলাম, সে নাহয় মনেই রাখি! সে থাকুক এমন…
এর চাইতে ভালো একটা যদি নাম পেয়ে যাই, সে দেখা যাবে’খন!
মাঝেমাঝে মন প্রশ্ন করে, এ নাম বাদে মানুষটাকে কী নামে ডাকি?
মনের পুরো জগৎ ঘুরে এমন একটাও নাম পাই না,
যে নাম ধরে ডাকলে তোমায় প্রাণটা জুড়ায়…
ভালোবাসা কত অসহায় হলে হয় এমনই?
তুচ্ছ এক নাম নিয়েও কত কী যে ভাবি!
আজকাল যে মন বসে না একটু কোথাও, তারও একটা কারণ আছে…
আমি আসলে ফেঁসেই গেছি, আটকে গেছি অতল পাঁকে,
পালাবার কোনও পথ নেই যে!
আরও আছে হাজারো কারণ! তার একটি…
আমার যত ছেলেমানুষি, ওদের আমি বাঁচিয়ে রাখি…
ওরা দলে ভারী নয়, তবে গতরে ভারী!
সে আমায় শেকল পরিয়ে মুক্তি দিয়েছে,
সে-শেকলের বাইরে যাব, আমার তেমন ক্ষমতাই নেই!
আমি তবে দিব্যি আছি…শেকল পরেই দারুণ আছি।
যে তালাটা বেঁধেছে শেকল, তার চাবির খোঁজটা শুধুই তোমার কাছে!
আজকাল আর মনের বোঝা বইতে পারি না!
তাই মনপথিকের যেখানে গেলে ঠিকানা জোটে,
সে ছুটে যায় সেখানটাতেই…মনটা ভীষণ বাঁধনহারা!
তুমি কোত্থেকে যে একপেয়ালা জীবন দিলে এনে,
সে জীবনের ছোঁয়ায় হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছি…বড় বেঁচে যাচ্ছি!
অথচ জীবন আমার আগেও ছিল, সে এক আঁধাররঙের জীবন ছিল!
হঠাৎ পেলাম নতুন জীবন, রঙিন ভীষণ…যেন বদলে গেল রক্তেরই রং,
মনের নাটাই, সুতোর বুনট। রক্ত আমার কালচে ছিল, এখন হলো লালচে আগুন!
এত রঙিন জীবন দেখিনি আগে, বাঁচিনি এতে,
তাই সে জীবনের চালক হব…আমার অত স্পর্ধা কই?
সবে তো পেলাম, কিছুদিন আরও যাক না এমন এলোমেলোই!
হোক না কিছু অগোছালোই?
এ যেন এক অন্য কিছু…ইদানীং যা হচ্ছে ভীষণ!
আমার সেই মাপাকথার দিন বুঝি ফুরোলো তবে!
আগের সেই কথাভিতু মেয়েটি কোথায় হারিয়ে গেছে হঠাৎ করেই!
যে মেয়েটি বকতে গেলে কথাগুলি সব আটকে যেত ঘাড়ের কাছে,
উল্টো ওরাই ছায়া হয়ে শাসাত তাকে, লিখতে গেলে ওত পাতত চাউনি কথার…ফুঁড়ত কেবল হৃদয়কোটর,
সেই মেয়েটিই এত কথা লিখে ফেলে! কেমন করে? এ কোনও জাদু নাকি?
আর সে কী ভাষা, ঝরনা কথার, কালিই শুধু সাক্ষী যে তার!
অনুভূতিকে ছুড়ে মারে খাতার পিঠে, ছিঁড়ে ফেলে কথার পাড়ে!
কে বলবে দেখে…মেয়ের কথাভীতির এই নমুনা!
এত তোতাপাখির ভাষাকথা কোথায় ছিল এতটা কাল?
ভাবছে মেয়ে, কী যে বেঢপ যত অনুভূতি সব!
এ সব আসে কোথা থেকে? কেমন করে?
বাতাসে কি-বা আলোতে কখনও দেখিনি এদের…
পথের ধারে ধুলোর মাঝেও পড়েনি চোখে কখনও এরা,
ভয়ংকর সে আগুনশিখার দিনগুলিতে ছিল না এসব একটা দিনও!
মাটির গন্ধ…এ জীবনে শুঁকেছি সে তো বহু-বহুবার!
খালি পায়ে হাঁটতে গেলেও হতো না এমন কোনওদিনই,
গাছেগাছে নতুন পাতার শোভাযাত্রা…তা দেখেও যাইনি কখনও হারিয়ে এমন!
বর্ষানদী যেমনি করে দুকূল ছাপায় ঢেউয়ের তোড়ে,
তেমনি কখনও ভয়ের স্রোতে যাইনি ভেসে বন্যাবেগে…হায়, এখন যাচ্ছি যেমন!
আসে তো সবই…ভালো মন্দ মিলিয়েই আসে ওরা আজকাল,
এই তো দেখি বৃষ্টি ঝরেও ঝরে না যেন,
বলা নেই, কওয়াও নেই, একটা ফালি রোদের আঁচে ভেসে যায় যে ভেতর-বাহির…
আমি শুধুই ভাবি, এরা আসছেটা কেন? কোথা থেকে…কেমন করে?
মাত্র একপেয়ালা রঙিন জীবন…আনে ঝড় এতটাই…মাতাল এমন!
বলব কী আর, সত্যি বড্ড ফেঁসেই গেছি!
এখন একটা রণক্ষেত্রের অভাব শুধু!
থাকলে ওটা, কথায়-কথায় লড়াই হতো…কথার লড়াই!
পাজির হাড্ডি ভাষা যত, ছায়া হয়ে ঘাড়ের ওপর বসে থাকে ঠায়,
যে-ই না ছুঁতে হাতটা বাড়াই…অমনিই হাপিশ হাওয়ার বেগে!
দৌড়ে আমি যে বড্ড কাঁচাই…ছোঁবটা ওদের কেমন করে?
আজকাল লাগে ক্লান্ত ভারি, দৌড়ে দেখি…শরীর কাঁপে,
চোখে নামে যেন রাজ্যের ঘুম…কী করব, বলো! অভ্যেস যে নেই!
তাড়াহুড়োও নেই তো কোনও, খুব আস্তেধীরেই দৌড়ে যাব…
ভাষাগুলি কি পালিয়ে যাবে? যাক না গেলে! যাবেই-বা কই?
পৃথিবী ছেড়ে ওপারে গিয়ে থামবে নাকি? থামলে থামুক! কী এসে যায়!
আচ্ছা, সূর্যের কি প্রেম হয়েছে পৃথিবীর সাথে?
যদি তা না হয়েছে, আলোর সাথে হরেক রকম রঙিন কণা ছোড়ে কেন সে?
সূর্যটাই জানে কী করে ওসব রঙ না ছুড়লে পরে পৃথিবীটা মরেই যাবে?
ভালো না বেসে এতটা জানা…হয় কি আদৌ?
ভাবছি আবার, এই যে এত কথা হয়, কথা ওড়ে, কথা ঘোরে…
এই কথার ঝাঁপি খুললে পরে মিষ্টি-গরম পিঠে হবে কথা দিয়ে?
শীতকালের মতোই একটা কথাকাল হয় যদি, কেমন হবে?
তখন কথার পিঠে তৈরি করে খেয়েই নিতাম গপ্-গপাগপ্,
তা হলে আর ভাষা যত, ওরা সব পালাত কোথায়!
এত না-ঘুরিয়ে না-পেঁচিয়ে বলে ফেলো তো,
কী চাই তোমার? কেন এসেছ? থাকছই-বা কেন?
এত ব্যথা আর নিই কীভাবে? কখনও তো আগে নিইনি এমন!
আমি যে বুঝতে পারি, ভালো করেই ধরতে পারি,
তোমার তৃষা, তোমার নেশা, তোমার অভাব…আমায় শেষ করবে এমনি করেই!
তুমি চোখের ছকে বৃষ্টিকথা রঙের তুলির ছটায় আঁক,
আমার কথার মেঘের ভাঁজে স্বপ্ন ঢেকে আড়ালে রাখ।
প্রায় মনে হয়, এমনি করে বাঁচার চেয়ে মরাই ভালো!
দেখো, কীভাবে বেঁচে আছি দিব্যি তাও…
একপাশটা সাদা তার, অন্য পাশে মিশছে কালো!
নিজেকে বোঝাই---
শাস্তি…সে তো সবারই হয় যে পাওয়া,
দুঃস্বপ্নের হাতটা ধরে, সুসময়ের বার্তা খোঁজা…হায় রে জীবন!
শাস্তি এলে শান্তি আসে আপনা থেকেই…
তেমন আশায় দিন ফুরোনো…বাঁচার মানে এ-ই তো জানি!