আলোয় আলোয় আঁধার

 
সাগ্নিক, আজ সমস্ত লজ্জা ভেঙে দিলাম। তোমায় আদর দিলাম!
আজকেই প্রথম, এমনটি কিন্তু নয়।
এর আগে বহুবার দিয়েছি। তোমার শব্দে দিয়েছি। তোমার কণ্ঠে দিয়েছি।


তুমি কি জানো, আমি চোরের মতো লুকিয়ে কত কতবার তোমার ঘরে গিয়েছি!
তোমার ঘুমন্ত শরীরে আদরের স্পর্শ এঁকেছি কত শতবার!
যদি জানতে সেইসব দিনের কথা, তুমিই ভীষণ লজ্জায় পড়ে যেতে, সাগ্নিক!
মনে হতো, এ মেয়েটা এত পাগলি! আমায় এমন করলটা কী করে!


সাগ্নিক, একবার তোমাদের বাড়িতে কী বেশে গেলাম, জানো? ঝি বেশে গো!
বিশাল এক ঘোমটা টানা। তুমি তখন ঘুমিয়ে রইতে তোমার ঘরে।
তোমার কলম ছুঁয়ে দেখতাম, তোমার কাগজ, বইপত্র…তোমার পোশাকের ঘ্রাণ নিতাম।
সূর্যের আলো মুখে এসে পড়ছে কি না দেখে পর্দা ঠিক করে দিতাম।


তারপর…তাকিয়ে তাকিয়ে তোমার ঘুম দেখতাম। ঘুমিয়ে থাকলে তোমায় বড়ো মায়া লাগে!
এর মাঝে তোমার মা ডেকে বসতেন।
হ্যাঁ রে সায়ন্তী, ও ঘরে এত সময় লাগে কেন তোর গোছাতে!
আমি চুপ থাকি। কিছু বলি না। সব কথার উত্তর হয় না।


আমি তোমার সামনে গেলে ঘোমটা টানি, কোনও কথা বলি না।
পাছে তুমি আমায় চিনে ফেলো আর তাড়িয়ে দাও!
আমি তোমার জন্য রান্না করি, যদিও মা বলেন, তিনিই করবেন।
আমি মাকে বুঝিয়ে তোমার জন্য রাঁধি। তুমি তৃপ্তি নিয়ে খাও। বড়ো ভালো লাগে।


সাগ্নিক, তুমি কখনও জানতেই পারো না,
তোমাকে একটু দেখার জন্য কীভাবে যে ঘুরঘুর করি।
তারপর রাত নামে। তুমি তোমার ঘরে, আমি উঁকি মারতে আর পারি না।
দেখা যায়, হেসে হেসে তুমি কার সাথে যেন কথা বলছ,
আর ঠিক তখন আমি চলে যাই আমার ঘরে।


সাগ্নিক, তোমার শেষ লেখাটা পড়ে আমি কতটা অস্থির হয়েছি, জানো!
তোমাকে ফোন করিনি। আমি ব্যস্ত ছিলাম, তা নয়।


আমি তোমাকে বিব্রত করতে চাইনি, সাগ্নিক।
আমার তোমাকে শুনতে ইচ্ছে করছিল। একটা অজুহাত নিয়ে তো ফোন করতে হয়।
দুই-একবার ডায়াল করেও কেটে দিয়েছি।
তারপর আবার দিয়েছি, কেটেছি। এটা আমি প্রায়ই করি।
তোমাকে নক করে বলেছি, আমি একা আছি। আমার মনে হচ্ছিল, তুমি যদি ফোন দাও!


আমি এ-ও জানি, এইসব মানতে আমার ইচ্ছে করে না।
সাগ্নিক, তুমি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেয়ো না। আমার খোঁজ নাও, তা-ও বলব না।
আমি তোমার সাথে কথা বলতে গিয়ে এলোমেলো কথা বলি।
বুঝি না, কী বলা ঠিক, কী বলা ঠিক নয়।


কেন মানতে ইচ্ছে করে না, আমি জানি না, জানতে আমার ইচ্ছে করেও না।
আসলে, জেনে কোনও কাজ নেই।
তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তখন আমি তোমাকে ফোনে আটকে রেখেছি, তাই না?
তুমি বোঝোনি, আমি তোমাকে মনে মনে বুকে জড়িয়ে রাখছিলাম।
তাই বারবার বলেছি, এখন ছাড়ব না। আসলে ফোন নয়, তোমাকে।


আমি তোমাকে বেশ কষ্ট দিচ্ছি, এটা বুঝেছি।
আমি তোমাকে বিরক্ত করতে সত্যিই চাই না।
তবে তুমি যেমন চাও, আমি ভালো থাকি, তেমন করে
আমিও চাই, তুমিও ভালো থাকো। তাই তোমাকে জোর করি
কিছু নিয়ম মেনে চলতে। তোমাকে খোঁচা দিই। আর দেবো না। তোমাকে স্বাধীনতা দিলাম।


তোমাকে স্বস্তিটুকু দিতে চাই, কষ্ট কিংবা আঘাত নয়।
তোমার শেষ লেখাটা পড়ে কান্না পাচ্ছিল, সাগ্নিক।
আমি ইচ্ছেমতো ওয়ালে লিখেছি। যা খুশি।
আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল। তাই বলেছি, বুকে চেপে রাখো!


আমি তোমার কাছে থাকলে বুকের সাথে বুক মিলিয়ে কাঁধে মাথা রাখতাম।
তোমার কষ্ট হলেও ছাড়তে দিতাম না।
আমার তোমাকে অনেক আদর দিতে ইচ্ছে করছিল, তাই তখন একটা আদর দিলাম।
এখন আরও অনেকগুলো।
সবচেয়ে বেশি আদর পেয়েছে তোমার ডান হাতের আঙুলগুলো। ওদের আমি ভালোবাসি!
আজ রাতের জন্য ওই হাতটা বুকের উপর রেখো?
আমি ওই হাতের উপর হাত রেখে হাত ধরেই ঘুমিয়ে যাব।


তোমার উষ্ণ আলিঙ্গন আমাকে শান্ত করে দেয়।
অনেক কথা লিখতে গিয়েও লিখতে পারছি না।
আমি তোমার ভেঙে-যাওয়া সহ্য করতে পারি না, আমার কষ্ট হয়, সাগ্নিক!


মাথার চুলগুলো সামনে বেশি বড় হয়ে গেছে, কেটে নিয়ো পরে।
আমি তোমাকে কোনও নিয়মে আসতে বলছি না,
শুধু বলছি, অমন শক্ত হয়ে বসে থেকো না, সাগ্নিক!
আমাকে মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধোরো, আমারও কষ্ট হয়।
তুমি ভালো থাকলে, দেখো, অবলীলায়, আমিও নিজেকে সাজিয়ে নেবো আনন্দের সুরে।


সাগ্নিক, এমনিতে কিন্তু আমি ভালো থাকার চেষ্টা করি,
তবুও প্রিয় মানুষের কষ্ট আমার বুকেও ভিড় করে, কাঁদায়।
সকল দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে তোমার চোখে এঁকে দিলাম আদরের টিপ।
দেখে নিয়ো, আমি আর জ্বালাতন করব না।
তুমি অমন করে মরার কথা, মনখারাপের কথা লিখো না, প্রিয়!