আমি ঊর্মি, আজ আপনাদের সবাইকে সাক্ষী রেখে একটা সত্য কথা বলব। আমি ভালোবেসেছি, এখনও বাসি। এবং, এটা একটা ভুল। ভালোবাসা এমন একটা ভুল, যে ভুলে বাঁচতে বাঁচতেই গোটা একটা জীবন কেটে যায়। এই জীবনের সবচাইতে প্রিয় ভুলটাই হচ্ছে ভালোবাসা! আকাশ, বিরাট একটা ভুল করেছি আমি তোমাকে ভালোবেসে। তোমার কান্না আমায় দ্বিগুণ কাঁদায়, আর তোমার হাসি দেখলেও আমার পিত্তি জ্বলে যায়। কেননা আমি জানি, ও সবই লোকভুলানো হাসি। তুমি কি জানো, তুমি হাসতে ভুলে গেছ? তোমার ঠোঁটই হাসে কেবল, চোখ আর হাসে না। অনেক দিন ধরেই! কেন এমন ছটফট করি, জানো? অবশ্য, তার কারণটা আমি নিজেও তো জানি না। কাউকে ভালোবেসে দেখো, তুমিও এমন ছটফট করবে। ভালোবাসলে ছটফট করাই নিয়ম বোধহয়। আমি এখন কফি খাচ্ছি, ব্ল্যাককফি। আচ্ছা, এটা তো তোমারও খুব প্রিয় ছিল। তুমি অবশ্য তিন চামচ চিনি দিয়ে ব্ল্যাককফি খেতে! হা হা হা…। ‘ওরে…এই না ভুবন ছাড়তে হবে…দুইদিন আগে পরে।’ এই গানটা বাজছে টিভিতে। আরে, এটাও তো তোমার পছন্দের গান! আচ্ছা, যদি কিছুদিন পরে সব ফেলে চলেই যেতে হবে, তবে কেন এত কাঁদালে আমাকে? কেনই-বা এত ইগো, এত এত অজুহাতে আমায় এমন দূরে ঠেলে-দেওয়া? সে-ই তো এক জায়গাতেই যাব সবাই। তোমাকে এসব প্রশ্ন করলে অবশ্য তুমি বরাবরের মতো নিরুত্তরই থাকবে। তোমার কি উত্তর নেই? না কি আমার বেলায় উত্তর খুঁজতে তোমার ভালো লাগে না? আচ্ছা, তোমার যে ভিসা-পাওয়া নিয়ে ঝামেলা ছিল কিছু, সেগুলো মিটেছে? তুমি কি এখন দেশের বাইরে? জানো, আমার তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। আমি ছাদে এসেছি। চিৎকার করে বলছি, ‘আকাশ, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে! আকাশ…!!!’ আমার দুচোখ ভর্তি আকাশছোঁয়া বৃষ্টি! যাক, মন তো শান্ত হলো একটু! আচ্ছা, তোমার স্কলারশিপটার কী হলো? শুধু শুধুই! আর পিএইচডি’ও দেশে থেকেও করা যায়। কেন যে বিদেশেই যেতে হবে! আমার জন্য লিপস্টিক নিয়ে এসো কিন্তু ওই দেশ থেকে! হি হি হি…। বিদেশি মেয়েদের সাথে প্রেম করতে যেয়ো না যেন আবার! ওরা কিন্তু তোমার মতন অত ভালো মানুষ না, একদম ঠকিয়ে দেবে! মনে রেখো, বিদেশি কুকুর আর বিদেশি মেয়ে---ওদের সাথে বেশি মিশতে নেই। বিদেশি কুকুর আর বিদেশি মেয়ের মনটাও হয় বিদেশি। তুমি সেই মনের ভাষা বুঝবে কী করে? আমার প্রায়ই মনে হয়, তুমি দেশেই আছ। আহা! ওটা ভেবেও কী যে শান্তি লাগে। কোথায় আছ তুমি? সাভারে? আমি ভার্সিটির ক্যাম্পাসে আসি? তুমিও কষ্ট করে আসবে? বটতলায়? আজকে দুজন মিলে হাঁসের মাংস খাই? আসবে না তো? জানি আমি! এই বৃষ্টিতে আমার ছাদটায় দাঁড়িয়ে থাকতে কী যে দারুণ লাগছে। তোমাকে একটা সেলফি তুলে পাঠাই? অবশ্য তুমি তো ফেইসবুকেই নেই। কোথায় পাঠাব? তোমার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টের আইডিটা বলো না গো? তোমার নতুন নম্বরটাও জানি না। কোথাও পাচ্ছি না তোমাকে! নাহয় রুমে চলে যাই। আর ভালো লাগছে না। তুমি যে আমাকে ‘সোফিস ওয়ার্ল্ড’ পড়তে বলেছিলে, ওটা পড়েছি। দারুণ একটা বই। আচ্ছা, তুমি কী করছ? খেয়েছ সকালে? আগে এটা জিজ্ঞেস করলেই তুমি বলতে, ‘ঊর্মি, এগুলি কেমন প্রশ্ন?’ তখন আমি আরও বেশি বেশি জিজ্ঞেস করতাম। কী দিয়ে খেলে, কোন আইটেম কেমন হয়েছে! খেপে গেলে তোমাকে দেখতে দারুণ লাগে! আমার ফরসা মানুষটা খেপে গিয়ে কেমন গোলাপি রঙের হয়ে যায়! আচ্ছা, এমন করেই কথা বলো এখনও? আমার সাথে বলবে না আর, তাই না? আমি কী ভুল করেছি? আমি কি কাঁদব আরও? তুমি কি ফিরবে? না কি আর ফিরবেই না? আমি এখন পাস্তা রান্না করব। তুমি কি একটু টেস্ট করতে চাও? জানো, ‘ও যে মানে না মানা…’ এই গানটা আমি গিটারে তুলেছি। কী যে কষ্ট করেছি তুলতে গিয়ে! তুমি শুনতে চেয়েছিলে। মনে আছে? আকাশ, আমি সত্যিই ভুল করেছি তোমাকে ভালোবেসে। ভালো তো বেসেই ফেলেছি! এখান থেকে ফিরতে পারছি না তো! এখন কী করব? জীবন থেকে চলেই গিয়েছ যখন, তখন স্মৃতিতে কেন থেকে যাচ্ছ এতটা প্রকট হয়ে? চোখ মেললেও তুমি, আবার চোখ বন্ধ করলেও তুমি। মনে হয় যেন চোখের পাতার সাথে ঠায় লেপটে আছ! আমার দম বন্ধ বন্ধ লাগছে। বারান্দায় যাচ্ছি। আমার অনেক কিছু মনে পড়ছে। কেমন যেন লাগছে, বলে ঠিক বোঝাতে পারব না। আবারও কে যেন টিভির ভলিয়্যুমটা বাড়িয়ে দিয়েছে। আশ্চর্য, ওই গানের ওই লাইনটাই আবারও বাজছে…‘ওরে…এই না ভুবন ছাড়তে হবে…দুইদিন আগে পরে।’ আমার কষ্ট লাগছে। তোমার জন্য? না কি এন্ড্রু কিশোরের জন্য? না কি নিজের জন্যই? না কি আকাশে মেঘ জমলে এমনিতেই এমন হয়?