একদিন—
মৃত্যুর স্বাদ নিতে গিয়ে
শ্বাসকে দিলাম উড়িয়ে
খাঁচাছাড়া পাখির মতো।
পরিবার-পরিজন—
তাদের কাছে আমি ধোঁয়ার মতো,
যেন ধুলোমাখা পুরোনো ছবির ফ্রেম।
দেহ—
মনে পড়ল, শুধু বিছানায় ফেলে-রাখা
একটি শূন্য খোলস।
সূর্য, জল, সুখ-দুঃখ—
সব মাটিতে ভাঙা কাঁচের টুকরোর মতো ছড়িয়ে পড়ল।
মাটি আর আকাশ—
নীরবে মিলেমিশে গেল নদীর স্রোতে।
রাতে—
লাশঘাটের নিদ্রায়,
নিজের চিতা জ্বালিয়ে
অবশেষে পড়লাম ছাইয়ের বিছানায়।
পরের দিন থেকে টানা তেরো দিন—
ব্যস্ত হয়ে পড়লাম
নিজেরই মৃত্যুর আচার-অনুষ্ঠানে।
অদৃশ্য এক অতিথি,
সাদা কাপড়ে মোড়া, দাঁড়িয়ে রইল।
ধূপ, প্রদীপ, মন্ত্র—
সব নিভে গেল শুকনো খড়ের মতো।
এবং, আমি নিশ্চিত হলাম—
এখন আর এই মাটির পুতুলকে,
পৃথিবী, আকাশের নক্ষত্রের মতো দীপ্ত করতে পারে না,
কাঁটার মতো বিদ্ধ করতেও পারে না।
তাহলে—
ওহে অহম্!
তুইও কি ছায়ার মতো পেছনে পেছনে চলছিস?
আমি যখন পড়তাম,
তুইও পড়তিস অভিনয় করে।
আমি যখন উঠতাম,
আয়নার প্রতিফলনের মতো,
তুইও উঠতিস একসাথে।
আমার সঙ্গে চিতায়—
তুইও ছাই হয়ে গেলি।
তবু ঘরে ফেরার পথে
ভূতের মতো আবার দরজায় আঁকড়ে ধরলি।
তেরো দিনের ভোজে—
আমি হাতে তুলে নিলাম পিণ্ডের ভাত।
“খা”—বলতেই
তুই শিশুর মতো তোতলাতে লাগলি,
“খা…খা।”
সেটুকুই নয়—
আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললি—
“আমি আছি তোর সঙ্গে জন্মে জন্মে,
তোর সঙ্গে পড়েছি, তোর সঙ্গে উঠেছি।
আমাকে ছাড়া তুই বাঁচবি কীভাবে?”
সেই মুহূর্তে—
আমি এক অন্তরায় বুঝতে পারলাম।
মুক্তির সন্ধানী,
যে-“আমি” খুঁজছে মুক্তি,
সে-ও তো একই মায়ার খোলস।
শূন্যতার নৌকোর ভেতর
আরেকটি খোলস খুঁজে বেড়ানো মাত্র।
যখন হাতটি, যা খুঁজছিল, হারিয়ে গেল তা-ও,
তখন খোঁজার ছায়াটিও লীন হলো।
তখন রইল বাকি—
না সুখ, না দুঃখ,
শব্দহীন, জনহীন—
শুধু এক অন্তহীন নীরবতা।
যেখানে শব্দ যথেষ্ট নয়,
তবু সব প্রশ্নের উত্তর
ভেতরে কেঁপে ওঠে।
জানলাম, নীরবতাই—
মুক্তি।