অরূপের আরতি: ২




ছয়।

কর্মের প্রকৃতি ও আত্মকর্মের গুরুত্ব

কর্ম দুই প্রকার—আত্মকর্ম ও অনাত্মকর্ম। আত্মকর্ম ও তার সঙ্গে যুক্ত চিন্তা, এবং পরমাত্মকর্ম ও তার সঙ্গে যুক্ত চিন্তা—এ দুটির বাইরে বাকি সবই অনাত্মকর্ম।

আত্মকর্ম

যে কর্ম ও চিন্তা সরাসরি আত্মার উপলব্ধি, আত্মশক্তির বিকাশ এবং পরমাত্মার সঙ্গে একাত্মতার দিকে পরিচালিত করে, তা-ই আত্মকর্ম। এর লক্ষ্য অন্তরের পূর্ণতা, শক্তি ও আত্মবিশ্বাস অর্জন, যা মানুষকে শোক-মোহের অতীত করে ও সৎভাবে সংসার পরিচালনায় সক্ষম করে।

অনাত্মকর্ম

যে-কর্ম আত্মার উপলব্ধি বা পরমাত্মার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং দেহ, ইন্দ্রিয়, মন বা বাহ্যিক চাহিদা পূরণের জন্য পরিচালিত—সবই অনাত্মকর্ম। এটি ইন্দ্রিয়সুখ ও বাহ্যিক সাফল্যকেন্দ্রিক, যা মানুষের শক্তি ক্ষয় করে এবং তাকে অন্তর্দৃষ্টিতে দুর্বল করে।

অনেকে মনে করেন, সংসারে প্রবেশ করলে সবার সেবা করাই সংসারীর প্রধান কর্তব্য বা ধর্ম। এটি একটি ভুল ধারণা। সংসারজীবনে প্রবেশের আগে প্রথমেই ভাবতে হবে—সংসারের সুখ, দুঃখ, শোক, তাপ, অভাব ও অভিযোগকে নির্বিচারে ভগবানের দান হিসেবে গ্রহণ করার সামর্থ্য নিজের আছে কি না।

এই সামর্থ্য অর্জনের জন্যই আত্মকর্ম অপরিহার্য। আত্মকর্মের মাধ্যমে পূর্ণশক্তি ও আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় হলে মানুষ নিষ্কাম, শোক-মোহের অতীত হয়ে কেবল সংসারই নয়—সমগ্র বিশ্ব-সংসারও পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।

প্রত্যেক ক্ষেত্রেই নিজের প্রস্তুতি আগে জরুরি। কিন্তু যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া সংসারে প্রবেশ করার কারণে দেখা যায়—প্রায় সকলের জীবনেই শান্তি ও আত্মবিশ্বাসের অভাব। সংসারের প্রয়োজনের চাপে সবাই বিপর্যস্ত, এবং নিজের অক্ষমতার কারণে সংসার বা কর্মকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মনে হয়।

সনাতন কর্মও আত্মকর্মের একটি অঙ্গ, কারণ সনাতন বোধ থাকলেই মানুষ আত্মবোধের সন্ধান করে। অনাত্মে আত্মবোধই মানুষকে তার প্রকৃত আত্মস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত করে। দেহ, ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি ইত্যাদি অনাত্ম বস্তুগুলোকে আত্মরূপে অনুভব না করলে আত্মার সন্ধান পাওয়া সম্ভব নয়।

সনাতন কর্মের লক্ষ্য মূলত ইন্দ্রিয়সুখ, আর আত্মকর্মের লক্ষ্য আত্মার উপলব্ধি। সনাতন কর্ম যত বাড়ে, মানুষ তত দুর্বল হয়; আর আত্মকর্ম যত বাড়ে, মানুষ তত সবল হয়।

আত্মকর্মে সবল হয়ে যখন মানুষ লোকসেবায় নিযুক্ত হয়, তখন তার কর্ম কোনোদিনই বৃথা যায় না।

সাত।

প্রাচীন প্রবাদ আছে— “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।” এই কথার প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করতে হলে এর গভীরতম স্তরে পৌঁছতে হবে।

কোনো কথা, কাজ বা বস্তুর প্রকৃত জ্ঞান কেবল স্মরণ ও মননের দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে না; তেমনই ‘বিশ্বাস’ শব্দটি উচ্চারণ করলেই তার প্রকৃত তাৎপর্য প্রকাশ পায় না। বিশ্বাস তখনই পূর্ণার্থে বিশ্বাসে পরিণত হয়, যখন শ্রবণ, মনন ও কর্ম—এই তিনের দ্বারা তা সুচারুরূপে সম্পাদিত হয়।

বিশ্বাসের মূলভিত্তি হল ‘বিগত শ্বাস’। ‘বিগত শ্বাস’ বলতে বোঝাতে হবে—যেখানে শ্বাস ও প্রশ্বাস উভয়ের স্বাভাবিক প্রবাহ অপগত বা রুদ্ধ হয়েছে, সেই অন্তঃস্থ শান্ত ভূমি। কেননা, শ্বাস ও প্রশ্বাস উভয়ই চঞ্চলতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।

শ্বাসের মাধ্যমে মানুষ বহির্জগতের ভাব, রূপ, আকার ইত্যাদি চিত্তে গ্রহণ করে; এর সঙ্গে প্রাণ ও মন যুক্ত হয়ে মানবকে চঞ্চল করে তোলে।

প্রশ্বাসের মাধ্যমে অভ্যন্তরের ভাবধারা বাইরে প্রকাশ পায়; তাতেও প্রাণ ও মন যুক্ত হয়ে মানুষকে চঞ্চল করে তোলে।

যেখানে চঞ্চলতা, সেখানে স্থায়ী বিশ্বাসের অবকাশ নেই।

যখন শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রবাহ থেমে যায় এবং মানুষ শ্বাসের অতীত ভূমিতে স্থিত হয়—প্রাণ ও মন তখন স্থির হয়। সেই স্থির ভাবধারায় মানুষ শান্তি, সুখ ও আনন্দের চিরস্থায়ী উৎস খুঁজে পায়।

এই অবস্থার বাইরে থেকে বিশ্বাস বিষয়ে যত ব্যাখাই দেওয়া হোক না কেন, তা বিশ্বাসের প্রকৃত স্বাভাবিক অর্থ বহন করে না।

সাধক বা যোগী এই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই স্থায়ী, পূর্ণ সুখ-শান্তি-আনন্দ লাভ করেন। অপরদিকে, সাধারণ মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাসের অবলম্বনে কেবল ক্ষণস্থায়ী সুখ-শান্তি-আনন্দ অনুভব করে থাকে।

আট।

পরমাত্মা ও সদ্‌গুরুর সঙ্গে সাধক ও যোগীর সম্পর্ক

যোগপথে অগ্রসর হবার পূর্বেই সাধকের জন্য অপরিহার্য—সে তার ইষ্ট ও নিজের মধ্যে কী সম্পর্ক বিদ্যমান, তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা। নচেৎ পরমাত্মা বা ইষ্টের সঙ্গে প্রকৃত যুক্ততা সম্ভব নয়, এবং নিজের অভাব পূরণও হবে না।

এতদিন মানুষ ভগবানের নিকট চেয়েছে—দেবত্ব, ঈশ্বরত্ব, ব্রহ্মত্ব, জ্ঞান, ভক্তি, প্রেম ইত্যাদি। তবু মানবের অভাব পূরণ হয়নি, চাহিদারও শেষ হয়নি—বরং তার চাহিদা অনন্ত। কিন্তু ভগবানের জন্য ভগবানকেই, ইষ্টের জন্য ইষ্টকেই মানুষ কি কখনো চেয়েছে? এমনকি নিজের স্বাভাবিক ও পূর্ণ মনুষ্যত্বও সে চায়নি।

মানুষ যা-কিছু কামনা করেছে, যতটুকু প্রকাশ পেয়েছে, তা অনেক সময় অজ্ঞানেই করেছে। কারণ, সে নিজেই জানে না তার আসল চাহিদা কী। যদি সে নিজের আত্যন্তিক চাহিদা সম্পর্কে সঠিক বোধ রাখত, তবে কখনও অস্বাভাবিক বা অমানবিক আকাঙ্ক্ষা করত না। কিন্তু অপূর্ণ জ্ঞান ও অপূর্ণ কর্মের দ্বারা চাওয়া হওয়ায়, প্রাপ্তিও হয়েছে খণ্ডিত ও অপূর্ণ। যদি পূর্ণ প্রাপ্তি ঘটত, তবে আজ আর চাওয়ার কিছু অবশিষ্ট থাকত না। উপরন্তু, এই অপূর্ণ চাহিদাই তার খণ্ড অহংকে আরও প্রবল করেছে।

যখন কেউ ভাবে—সে নিজে কিছু করছে বা ভাবছে—তখন সে কর্তা হয়ে বসে, আর ‘কর্তা’ সাজার অর্থই হলো অহংকারকে প্রকট করা। ফলে সাধক বা যোগী ভগবানের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার পরিবর্তে ভগবান বা ইষ্টের সঙ্গে নিজের ব্যবধানই তৈরি করে চলে।

স্বভাবসিদ্ধ সম্পর্কের বোধ

মানুষ যদি নিজের সৃষ্টি ও অস্তিত্ব সম্পর্কে সামান্যও সচেতন হত, তবে সে কখনও ভগবানের নিকট দেবত্ব, ঈশ্বরত্ব, পরমাত্মতত্ত্ব, ব্রহ্মত্ব বা জ্ঞান, ভক্তি, প্রেম, শক্তি, ঐশ্বর্য, নির্বাণ ইত্যাদি চাইত না। সে চাইত কেবল ‘মা’—অর্থাৎ সেই স্বভাবকেই, যিনি তার সমস্ত অস্তিত্বে বিরাজমান, যিনি তার সত্তার সত্তা, প্রাণের প্রাণ—যাঁর স্বরূপ হতে তার এই রূপ গঠিত।

শিশুকে কি তার অভাব ও প্রয়োজন মাকে বিশদভাবে বলতে হয় বা প্রার্থনা করতে হয়? শিশুর ‘মা’ ডাকার মধ্যেই মা বুঝে নেন তাঁর সন্তানের প্রয়োজন, এবং নিজেই তা পূরণ করে দেন। এমনকি সন্তানও নিজের চাহিদা জানে না—মা-ই তা জানেন। শিশুর সঙ্গে মায়ের যে সম্পর্ক, মানুষের সঙ্গে সেই চিন্ময়ী-মায়ের সম্পর্কও ঠিক তেমনই।

অতএব সর্বাগ্রে প্রয়োজন—এই সঠিক সম্পর্ক নির্ণয় ও স্বাভাবিক সম্পর্ক সম্পর্কে বোধ। নচেৎ শুরুতেই ভুল হবে, আর সে ভুল আর সংশোধন হবে না।

উপসংহার

স্মরণ রাখা উচিত—সদ্‌গুরু প্রদর্শিত পথে কর্তব্য পালন করাই মানুষের সমস্ত কিছু প্রাপ্তির মূল।

নয়।

সাধন, যোগ ও প্রকৃত লক্ষ্য

সাধন-কর্মের প্রকৃত লক্ষ্য হলো কৈবল্য লাভ। সাধন ও যোগ—দুই পথেই চূড়ান্ত উদ্দেশ্য একই। সাধকসমাজে যত মত ও পথই প্রচলিত থাকুক না কেন, শেষ লক্ষ্য এই একটিই। তাই সাধনার উদ্দেশ্য কী, তা প্রথমেই স্পষ্টভাবে জেনে তবেই সাধন-পথে প্রতিষ্ঠিত হওয়া উচিত।

সাধন অর্থে শোধন

সাধন মানে শোধন। বাহ্য জগত থেকে অন্তর্জগতে প্রবেশ করানোই সাধনার প্রকৃত উদ্দেশ্য, আর শোধন-কর্ম শুরু হয় অন্তর থেকেই। সাধকের কাজ হলো—সব অশুদ্ধ সত্তাকে নিজ থেকে পৃথক করা। সাধকের ইষ্টদেবতা হলেন কুণ্ডলিনী শক্তি, যিনি সাধকের ভাব অনুযায়ী নানা নাম ও রূপে তাঁর সামনে প্রকাশিত হন। সাধনায় সিদ্ধিলাভ হলে সাধক অনুহীন, বিকল্পহীন, মাতৃকা-সংস্পর্শহীন, দেহহীন ও মনহীন অবস্থায় স্থিত হন। শক্তির পূর্ণ শুদ্ধি ঘটলে বিদেহ কৈবল্য লাভ হয়।

সাধনা ও যোগের সম্পর্ক

আসলে সাধনা যেখানে শেষ, সেখান থেকেই যোগের সূচনা। যোগের ধাপসমূহ—তপস্যা, ধ্যান, ধারণা ও সমাধি—সবই সাধনার পরিপক্ব অবস্থা। অনেকেই একে ‘যোগাঙ্গ’ বলে থাকেন, তবে এগুলি খণ্ড যোগ; অখণ্ড যোগ নয়। গুরু যেখানে অখণ্ড মণ্ডলাকার রূপে বিদ্যমান, সেখানে খণ্ড যোগের দ্বারা গুরুর পূর্ণ সান্নিধ্য লাভ সম্ভব নয়।

সাধনার স্বাভাবিক লক্ষ্য

সাধনার স্বাভাবিক উদ্দেশ্য হলো—মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে শোধনের মাধ্যমে এক বোধ ও এক ভাবাপন্ন করে তোলা। যোগীর লক্ষ্য হলো যোগক্রিয়ার মাধ্যমে স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ দেহের পূর্ণ রূপান্তর ঘটিয়ে তাকে স্বভাব-সত্তায় প্রতিষ্ঠিত করা। যোগী চান—নিজ কর্মের দ্বারা নিজের দেহের রূপান্তর স্বীয় বোধের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে, এবং তা সমষ্টিসহ পূর্ণতায় পৌঁছাতে—কাউকেই বাদ দিয়ে নয়।

যোগীর কাছে আত্ম-অনাত্ম বিচার নেই; তিনি সব কিছুকেই আত্মারূপে অনুভব করেন। তাঁর কাছে দুই বোধ নেই, তাই কোনো বিচারও নেই। কেবল স্বভাব-যোগীই এই অবস্থায় থাকেন; অন্য সকলের মধ্যে আত্ম-অনাত্ম বিচার বিদ্যমান।

গুরু-শক্তির প্রাধান্য

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—যোগক্রিয়ায় গুরু-শক্তির প্রাধান্য সর্বদা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়।

উপসংহার

যোগী বা সাধকের জন্য অপরিহার্য—যোগক্রিয়ার প্রকৃত লক্ষ্য সম্যকভাবে না জেনে কখনোই যোগপথে প্রবেশ করা উচিত নয়।

দশ।

দেহত্রয়, গুণত্রয় ও যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য

স্থূল, সূক্ষ্ম ও কারণ—এই দেহত্রয় এবং সত্ত্ব, রজঃ ও তম—এই গুণত্রয় মিলিয়ে গঠিত মানবদেহ। যতদিন এই দেহত্রয় ও গুণত্রয়ের মধ্যে মৌলিক ভেদ বিদ্যমান থাকবে, এবং সেই ভেদ দূর করে অভেদ প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন যোগের চূড়ান্ত লক্ষ্য পূর্ণ হবে না। যখন এই মৌলিক ভেদ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হবে, তখনই এগুলি স্বভাব-সত্তায় পরিণত হবে। আর এই অবস্থাই মানুষের পরম পুরুষার্থ এবং যোগের চরম লক্ষ্য।

যোগের প্রকৃত অর্থ

অনেকেই মনে করেন—জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মাকে যুক্ত করাই যোগ। এটি একেবারেই ভুল ধারণা। কেননা জীবাত্মা ও পরমাত্মা সর্বদা যুক্ত; এক মুহূর্তের জন্যও যদি এ সংযোগ ছিন্ন হয়, তবে জীবাত্মার অস্তিত্বই লোপ পাবে।

জীবাত্মা পরমাত্মার সঙ্গে সর্বদা যুক্ত বলেই সে পরমাত্মাকে অনুসন্ধান করে এবং নিজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী, তা জানতে চায়। যতদিন পর্যন্ত জীবাত্মা এই পরিচয় পূর্ণভাবে লাভ না করে, ততদিন তার অন্বেষণ থামে না।

সাধন ও যোগের পার্থক্য

মন ও বোধকে প্রাণে পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করার পদ্ধতির নাম সাধন। আর প্রাণ ও বোধকে মহা-মহা-মহাপ্রাণে স্বতন্ত্র বোধ-সহ প্রতিষ্ঠিত করার প্রক্রিয়ার নাম যোগ।

যেখানে সাধন ও যোগ অধিকারীভেদে দেওয়া বা গ্রহণের বিষয় হয়, সেখানে মূলত প্রয়োজন গুরু-সান্নিধ্যের।

গুরু-নির্ভর পথনির্দেশ

সাধন ও যোগপন্থার সমস্ত নিয়ম, প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি বইয়ে লিপিবদ্ধ করা সমীচীন নয়। কারণ, সদ্‌গুরু যাঁকে যেমনভাবে উপযুক্ত মনে করবেন, সেই অনুসারে তাঁকে যোগ বা সাধন প্রদান করবেন। কোন সাধক বা যোগীর জন্য কী প্রয়োজন—এ বিষয়ে সদ্‌গুরু ব্যতীত অন্য কেউ অবগত নন।