অভিসারের লোভে

তোমায় নিয়ে কী করলাম? যেদিন তোমায় পেয়েছিলাম হৃদয়ের কুঞ্জবনে, সেদিন বুকফাটা বেদনাই ছিল আমার অদৃষ্টের দান। বিধাতা আমার জীবনটাকে কেবল বিড়ম্বনার সুতোতেই গেঁথেছিলেন।

জীবনের সচেতন ক্ষেত্রের প্রতি যখন নতুন দৃষ্টিপাত করলাম, তখন কী দেখলাম? চারিদিকে শুধু ধু-ধু মরুভূমি! দিনের পর দিন যখন তোমায় নিয়ে কাটাচ্ছিলাম, তখন হঠাৎ হঠাৎ খেই হারিয়ে কি বসিনি? তোমায় আনন্দ দেবার আশায় সেই মরুতেও কি মরূদ্যানের খোঁজ করিনি? কী ফল হলো? ওগো, কী ফল হলো তাতে?

আমার সবচেয়ে প্রিয় যে আমি, সেই আমি'টা তো তোমাকেই ভালোবাসে! তাই তো সেই আমি তার প্রিয় তুমি'কে ডেকে এনেছে। আমার আমি তোমাকে আরও অসহায় করেছে। সত্যের এই সন্ধান আমার আপনহারাকে আরও দিশেহারা করেছে!

দয়িতের বেশে নিষ্ঠুর সে যে…তবু তো এক তারই প্রতীক্ষা! তোমায় যে আমি দান করেছি নিজেকে সর্বহারা করে—এক নিঃসঙ্গের সঙ্গলাভের মোহে! এ যে বড়ো কঠোর সত্য! কিন্তু জানো? তবু আমি সুখী, নিজের পুরোটা তোমার একান্তে বিকিয়ে দিয়ে আমার আজ খুব আনন্দ!

মানুষের নির্মমতম সৃষ্টি—এই সমাজ!

যে আগুনে হাত দেয়, সে পুড়ে মরে; যে সমুদ্রে ঝাঁপ দেয়, সে ডুবে মরে।—খাঁটি সোনা হতে কে পারে? রত্নের সন্ধান ক-জনের ভাগ্যে জোটে?
দুর্ভাগ্যের রত্নমালা ছেঁড়া সুতোয় গাঁথা হয়।—জগতের এ-ই যে নিয়ম!
মূর্খ আমি…তবু কেন বাতায়নে? আজ মেঘলা দিনের বাদলহাওয়া আরও কাঙাল করেছে বুঝি? অসহায়ত্বের সীমাহীন বোঝা আজ আরও ভারী হয়েছে—কিন্তু কার প্রতীক্ষায়?

"সে যে দানবের মতো তোমার সবটা অপহরণ করেছে…রিক্ত করেছে তোমায় সকল সম্পদ থেকে; তার বদলে জুড়ে দিয়েছে আরও অনেকখানি বেদনার বোঝা তোমার অন্তহীন বেদনার সাথে! এই তো তোমার প্রাপ্তি! তবুও তুমি তাকেই চাইছ?"

প্রকৃতির এ কেমনতর রীতি? এ এত দুর্বার…এত যে অমোঘ! মনের ওসব কথা প্রকৃতির এই পাগলা ঘোড়া আমায় মানতে দেবে কেন?

দিন যায়, রাত আসে। এদিকে অন্তহীন আশা তোমায় বাঁচিয়ে রাখে ওই অভিসারের লোভে!

তাই তো বলছি, মানুষ সব বুঝেও দুঃখকেই ভালোবাসে! সে চায় দুঃখ…কেবলই দুঃখ! সে রীতিমতো আদর করে বরণ করে নিয়ে আসে দুঃখকে! এ কেমন ভালোবাসা, যার দান দুঃখ, আর সমাপ্তি কান্না! তাতে কারুর‌ই কিছু এসে যায় না।

পর্বতের গায়ে ধাক্কা খেয়ে মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরে—এই স্বাভাবিক গতিই মেঘের পরিণতি। আর মানুষের জীবন ঘাত-প্রতিঘাতে দূরে ভেসে যায়, এটাই চরম সত্য। মাঝখানে ভালোবাসা জীবনকে নিয়ে চলে আরও দূরে…চিরতরে দৃষ্টিসীমানার বাইরে!