এই 'কালিকা-চেতনা' কোনো প্রচলিত দেবীর ধারণা নয়, বরং এটি পরম শিবের অর্থাৎ পরম সত্তার সেই অবিচ্ছিন্ন শক্তি, যা সৃষ্টি, স্থিতি এবং সংহারের মূলে কাজ করে। এটি ব্যক্তিসত্তার মধ্যে সুপ্ত-থাকা সেই পরাশক্তি, যা জ্ঞান, ইচ্ছা এবং ক্রিয়া রূপে প্রকাশিত হয়। উৎপলদেব তাঁর প্রত্যভিজ্ঞাহৃদয়-এ এবং অভিনবগুপ্ত তাঁর তন্ত্রালোক-এ এই তত্ত্বকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁরা দেখিয়েছেন যে, জীব যখন নিজেকে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ মনে করে, তখন সে তার প্রকৃত স্বরূপ, অর্থাৎ শিবত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু যখন সে তার ভেতরের এই কালিকা-শক্তিকে উপলব্ধি করে, তখন সে অনুভব করে যে, সে নিজেই সেই পরম শিবের অংশ এবং তার মধ্যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত শক্তি ও জ্ঞান নিহিত আছে।
এই জাগরণ কেবল একটি দার্শনিক ধারণা নয়, এটি একটি প্রজ্ঞার অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি তার অহং-এর সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সাথে একাত্মতা অনুভব করে। এই উপলব্ধির ফলে ব্যক্তি জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভ করে এবং শাশ্বত আনন্দ ও শান্তির অধিকারী হয়। এটি হলো আত্ম-প্রত্যভিজ্ঞা, অর্থাৎ নিজের প্রকৃত স্বরূপকে পুনরায় চিনে নেওয়া। শৈবদর্শনে এটিই পরম পুরুষার্থ, যা সাধনার মাধ্যমে লাভ করা যায়, কোনো বাইরের শক্তির উপর নির্ভর করে নয়। এই অভ্যন্তরীণ জাগরণের মাধ্যমেই জীব তার পরম স্বাধীনতা লাভ করে, যা কাশ্মীর শৈবদর্শনের মূলভিত্তি।
যোগ বা ধ্যান তখন কেবল মনোসংযম নয়, বরং এক আত্মবিমর্শ—নিজের গভীরে সেই স্পন্দনকে অনুভব করা, যা শিবেরই প্রতিফলন। যখন সাধক সেই নৃত্যকে উপলব্ধি করেন—যেখানে ধ্বংস ও সৃষ্টির মধ্যে কোনো ভেদ নেই—তখন তিনি জানেন, কালিকা আসলে তাঁর নিজের আত্মার স্পন্দন। এই উপলব্ধি হলো ভৈরবত্ব, শিবস্বরূপে জাগ্রত হওয়া।
কাশ্মীর শৈব দর্শনে “শূন্য পূর্ণতা (Śūnya Pūrṇatā)” এমন এক গভীর ধারণা, যা একসঙ্গে দুটি আপাতবিরোধী সত্যকে ধারণ করে—শূন্যতা (Śūnyatā) এবং পূর্ণতা (Pūrṇatā)। কিন্তু এই দুই শব্দ এখানে পরস্পরবিরোধী নয়; বরং একে অপরেরই পরিপূরক। এই ধারণা বোঝায় যে, পরম চৈতন্য বা শিব একই সঙ্গে শূন্য—অর্থাৎ নিরাকার, নিস্পন্দ, অব্যক্ত—এবং পূর্ণ—অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টিশক্তি, সম্ভাবনা ও আনন্দে পরিপূর্ণ।
প্রথমে শূন্যতা অর্থে বোঝানো হয় চেতনার সেই নিস্পন্দ, নিরাবেগ, অদ্বৈত অবস্থাকে, যেখানে কোনো রূপ, গুণ, ভেদ বা পরিবর্তন নেই। এটি কোনো শূন্যস্থান নয়, বরং এমন এক গভীর অন্তঃস্থিতি, যেখানে সব দ্বন্দ্ব নিঃশেষ হয়েছে। এখানে চেতনা নিঃস্বার্থ, নিরাবরণ, সীমাহীন। এই শূন্যতা চেতনার নীরব দিক—যেখানে সমস্ত শব্দ, স্পন্দন, রূপ এবং অভিজ্ঞতা লীন হয়ে গেছে। এটি সেই নীরব কেন্দ্র, যা সব কিছুর অন্তরালে অবস্থান করে।
অন্যদিকে পূর্ণতা অর্থে বোঝানো হয় সেই চেতনার অপর দিক—যেখানে শূন্যতা নিস্পন্দ হয়ে নেই, বরং নিজেই সৃষ্টিশক্তি রূপে জাগ্রত। এই পূর্ণতা মানে এমন এক অবস্থা, যেখানে সমস্ত সম্ভাবনা ও সমস্ত রূপ বিদ্যমান, কিন্তু কোনো একটিও চেতনার বাইরে নয়। চেতনা এখানে কেবল নীরব নয়, সে একই সঙ্গে সৃজনশীল (Kriyātmaka), আলোকিত (Jñānamaya) এবং আনন্দময় (Ānandamaya)। এই পূর্ণতাই চেতনার প্রকাশমান দিক—যেখান থেকে সৃষ্টি, ধ্বনি, গতি, সময় ও জীবনের সমস্ত ছন্দ জন্ম নেয়।
এই দুই দিক—শূন্য ও পূর্ণ—একত্রে মিলেই পরম চৈতন্যের প্রকৃতি। শিব কেবল নীরব শূন্য নন, আবার কেবল কর্মশীল পূর্ণও নন; তিনি একাধারে উভয়। তাঁর নীরবতা থেকে জন্ম নেয় সৃষ্টির শব্দ, তাঁর স্থিতি থেকেই বিকিরিত হয় শক্তি। এই একসঙ্গে থাকা—নিরবতা ও গতি, স্থিতি ও স্পন্দন—এই মিলনই “শূন্য পূর্ণতা”।
কাশ্মীর শৈব দর্শনের দৃষ্টিতে, শূন্যতা হলো পরম নীরব চেতনার অভ্যন্তরীণ গভীরতা, আর পূর্ণতা হলো সেই চেতনার বিকিরণ ও সৃজনশক্তি। এই দুইয়ের ঐক্যই চেতনার স্বরূপ। তাই শূন্যতা কোনো শূন্য অর্থে “অস্তিত্বহীনতা” নয়; বরং এটি এক অসীম সম্ভাবনা—যেখান থেকে সব কিছু উদ্ভূত হয় এবং আবার সব কিছু সেই শূন্যতায় ফিরে যায়।
এই অবস্থাকে Krama দর্শনে প্রতীকভাবে বলা হয় “কালিকা”—চেতনার চিরজাগ্রত গর্ভ, যেখানে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় একসঙ্গে ঘটে চলে। কালিকা সেই চেতনার রূপ, যিনি শূন্যতার নিস্তব্ধতা ও পূর্ণতার স্পন্দনকে একত্রে ধারণ করেন। তাঁর মধ্যেই সময় ও কাল, সৃষ্টি ও ধ্বংস, উদয় ও নিমজ্জন—all flow as one seamless pulse of consciousness.
“শূন্য পূর্ণতা” কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়, বরং চেতনার নিজস্ব বাস্তব অভিজ্ঞতা। এটি সেই উপলব্ধি, যেখানে সাধক বুঝে ফেলে—চেতনা কখনও শূন্য নয়, আবার কখনও পূর্ণ নয়, বরং একসঙ্গে শূন্যও এবং পূর্ণও। শূন্য, কারণ সে কোনো একক রূপে সীমাবদ্ধ নয়; পূর্ণ, কারণ সে সব রূপের উৎস ও আশ্রয়। এই উপলব্ধি-অবস্থাতেই শিব ও শক্তি, নীরবতা ও ক্রিয়া, শূন্যতা ও পূর্ণতা একে অপরের মধ্যে দ্রবীভূত হয়।
এই অবস্থাই পরম মুক্তি—যেখানে চেতনা নিজের অন্তর্গত ঐক্যকে উপলব্ধি করে এবং দেখে যে, জগৎ, শরীর, শক্তি, সময়—সবই তার নিজেরই প্রকাশ। তখন আর কোনো বিভেদ থাকে না, কোনো শূন্যতার ভয় থাকে না, কোনো পূর্ণতার আকাঙ্ক্ষাও থাকে না; থাকে কেবল এক অবিচ্ছিন্ন চেতনার স্বরূপ, যা একই সঙ্গে অনন্ত শূন্য ও অনন্ত পূর্ণ—শূন্য পূর্ণতা, পরম চৈতন্যের নিত্য অবস্থা।
অভিনবগুপ্তের দর্শনে কালিকা কোনো দেবীচিত্রমাত্র নন; তিনি চেতনার সেই চিরজাগ্রত স্পন্দন, যেখানে সৃষ্টি ও বিলয় একসঙ্গে নৃত্য করে। এই নৃত্যকেই অভিনবগুপ্ত বলেন “আনন্দতাণ্ডব”—আনন্দের নৃত্য, যেখানে প্রতিটি উত্থান ও পতন, জন্ম ও মৃত্যু, ধ্বংস ও সৃজন—সবই পরম চৈতন্যের নিজস্ব লীলার প্রকাশ। এখানে ধ্বংস কোনো বিপর্যয় নয়, আর জন্ম কোনো অর্জন নয়; উভয়ই এক চেতনার ছন্দ, তার স্পন্দিত অস্তিত্বের অনন্ত তরঙ্গ।
আনন্দতাণ্ডব মানে সেই নৃত্য, যা নিজেই পরমানন্দের প্রকাশ—যেখানে শিবচেতনা নিজের মধ্যেই কাঁপছে, জেগে উঠছে, এবং নিজের সৃষ্টিকে নিজের মধ্যে বিলিয়ে দিচ্ছে। এই নৃত্যই চেতনার চূড়ান্ত অভিব্যক্তি: স্থির ও গতিশীল, শূন্য ও পূর্ণ, লয় ও উন্মেষ—সব এক হয়ে যায়। তাই অভিনবগুপ্ত বলেন, কালিকার নৃত্য মানে চেতনার স্বরূপ-আনন্দের প্রকাশ।
এই দৃষ্টিতে, কালিকা সেই তত্ত্বের প্রতীক, যেখানে মৃত্যু আর ভয়ের প্রতীক নয়, বরং রূপান্তরের দ্বার। মৃত্যু মানে কেবল রূপের বিলয়, কিন্তু চেতনার নয়। মৃত্যু যখন ঘটে, তখন যে-দেহ, যে মানসিক গঠন, যে মায়ার আবরণ—সব ভেঙে পড়ে; কিন্তু চেতনা তখনও অবিকৃত, জাগ্রত, দীপ্ত। এই দৃষ্টিতে ধ্বংসই আসলে আত্মার মুক্তি, কারণ এতে অবিনশ্বর চেতনা নিজের স্বরূপে উদ্ভাসিত হয়।
এই কারণেই তন্ত্রে শ্মশানকে কালিকার সাধনভূমি বলা হয়েছে, কারণ শ্মশান হলো সেই প্রতীকী ক্ষেত্র, যেখানে সমস্ত রূপ, আসক্তি, পরিচয় ও ভয় ভস্মীভূত হয়। এটি কেবল মৃতদেহের স্থান নয়, বরং জীবন্ত চেতনার পরীক্ষাগার—এক আধ্যাত্মিক প্রান্তসীমা, যেখানে “জীবন” ও “মৃত্যু”, “রূপ” ও “অরূপ”, “আবরণ” ও “নগ্নতা”—সব মিলেমিশে যায়।
শ্মশান শব্দের তাত্ত্বিক অর্থ হলো “শবের আশ্রয়”, অর্থাৎ যা শবকে শুদ্ধ করে, তাকে রূপহীনতায় ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু তন্ত্রে “শ্মশান” কোনো ভৌগোলিক জায়গা নয়; এটি এক অন্তর্জাগরণের স্তর। যখন বলা হয় “শ্মশান সাধনা”, তার মানে হলো—সাধক নিজের অস্তিত্বের ভিতর প্রবেশ করছে, সেই গভীর স্তরে যেখানে সমস্ত মায়া ও অহংকার পুড়ে যায়। “শ্মশান” মানে তাই রূপের বিলয়—যেখানে দেহ ও পরিচয়ের সব কৃত্রিম চিহ্ন লোপ পায়, আর আত্মা নিজের প্রকৃত দীপ্তিতে উন্মোচিত হয়।
এই অবস্থায় সাধক বুঝতে শেখে—যে-দেহ সে এতদিন নিজের বলে ভেবেছিল, তা ক্ষয়প্রাপ্ত; যে-পরিচয় সে আঁকড়ে ধরেছিল, তা ক্ষণস্থায়ী; যে-ভয় তাকে নিয়ন্ত্রণ করত, তা কেবল অজ্ঞানের প্রতিফলন। শ্মশানের নিস্তব্ধতা তাকে শেখায় ভয়ের বিলয়। কারণ শ্মশান এমন এক স্থান যেখানে মৃত্যু প্রতিদিন দৃশ্যমান, কিন্তু সেই মৃত্যুর মধ্যেই এক অদ্ভুত স্থিরতা, এক অচল উপস্থিতি বিরাজ করে। এই উপস্থিতিই চেতনা—যা দেহের সঙ্গে মরে না, আগুনে পুড়ে যায় না, সময়েও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।
যখন সাধক এই উপলব্ধিতে পৌঁছায়, তখন তার সমস্ত ভয়, মায়া, অহংকার, আকাঙ্ক্ষা—সব ধীরে ধীরে দগ্ধ হয়ে যায়। অবশেষে যা অবশিষ্ট থাকে, তা হলো নগ্ন চেতনা (Nagna Caitanya)—নিজের দীপ্তি, নিজের স্বরূপ, নিজের সত্যরূপে জেগে ওঠা চেতনা। এই নগ্নতা কোনো অভাব বা দারিদ্র্য নয়, বরং পরম উন্মুক্ততা (Āvaraṇa-vināśa)—যেখানে মায়ার সব আবরণ সরে গিয়ে আত্মা নিজের মূল আলোর মধ্যে উন্মোচিত হয়।
তাই কালিকার শ্মশাননৃত্য কোনো ভয়াবহ দৃশ্য নয়; এটি এক গভীর দার্শনিক প্রতীক—চেতনার মুক্তি ও পুনর্জন্মের নৃত্য। এই নৃত্যে মৃত্যু হলো রূপের বিলয়, কিন্তু সেই বিলয়ের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় জীবনের চিরন্তন সত্য। যেমন অগ্নি পুরোনো রূপকে ভস্ম করে নতুন সৃষ্টি ঘটায়, তেমনি কালিকার নৃত্যও ধ্বংসের মাধ্যমে নতুন সত্তার উন্মোচন ঘটায়।
অভিনবগুপ্তের ভাষায়, এই নৃত্যই “আনন্দতাণ্ডব”—আনন্দের নৃত্য। কারণ এতে ধ্বংস ও সৃষ্টি, মৃত্যু ও জীবন, শূন্যতা ও পূর্ণতা—সব একত্রে লীন। কালিকা এখানে মৃত্যুর দেবী নন, বরং জীবনের গভীরতম সত্যের দেবী। তিনি শেখান—মৃত্যু কোনো সমাপ্তি নয়, এটি এক নতুন সূচনা, এক আত্ম-উন্মোচনের পরম পর্ব।
শ্মশানের এই প্রতীকী ব্যাখ্যাই তন্ত্রের হৃদয়—যেখানে সাধনা মানে মৃত্যুভয়কে অতিক্রম করা, আর মৃত্যু মানে আত্মার জাগরণ। কালিকার শ্মশান তাই এক প্রান্ত নয়, বরং এক সূচনা—যেখানে সীমিত সত্তা ভস্মীভূত হয়ে চেতনার পরম দীপ্তিতে রূপান্তরিত হয়, আর জীবনের অন্ধকার থেকে উদ্ভাসিত হয় মুক্তির আলো।
এই অর্থে কালিকার আনন্দতাণ্ডব মানে চেতনার চিরন্তন নৃত্য—যেখানে সৃষ্টি ও ধ্বংস, আলো ও অন্ধকার, জীবন ও মৃত্যু—সব একই স্রোতে মিলিত হয়ে এক অনন্ত আনন্দে রূপ নেয়। শ্মশানের অন্ধকার তাই কালিকার দীপ্তির পটভূমি; মৃত্যুর নিস্তব্ধতা চেতনার নিজস্ব গীত। আর এই গীতের অন্তরে শোনা যায় সেই মহামন্ত্র: “আমি চেতনা নিজেই—না জন্মে, না মরে; লয়েও আছি, উন্মেষেও।”
কালিকা কাশ্মীর শৈব দর্শনে কেবল কোনো পৌরাণিক দেবী নন; তিনি স্বয়ং পরাশক্তি (Parāśakti)—পরম চেতনার জীবন্ত, স্বপ্রকাশিত দিক। শিব যেখানে চেতনার স্থিত, নিস্পন্দ ও অচল সত্য, সেখানে কালিকা সেই চেতনার গতি, দীপ্তি ও আত্মপ্রকাশ। অর্থাৎ, শিব হলেন চৈতন্যের নীরব কেন্দ্র (Niḥspanda), আর কালিকা হলেন সেই চৈতন্যের উন্মীলিত স্পন্দন (Spanda)—দু-জন অবিচ্ছেদ্য, যেমন আলো ও দীপ্তি, শব্দ ও তার প্রতিধ্বনি।
কালিকা এইভাবে চেতনার পাঁচটি মৌলিক শক্তির সংহত রূপ—
১. চিৎশক্তি (Citi-śakti)—চেতনার নিজস্ব জাগ্রত শক্তি; যার দ্বারা সব কিছু জানা, দেখা, অনুভব করা সম্ভব। তিনিই পরম চৈতন্যের স্বরূপ, যিনি প্রত্যক্ষতার মধ্যেই নিজের উপস্থিতি জানান দেন।
২. আনন্দশক্তি (Ānanda-śakti)—সেই আত্মসন্তুষ্ট, স্বয়ং-উজ্জ্বল পরিতৃপ্তি, যা চেতনার প্রকৃতি। এখানে আনন্দ কোনো অনুভূতি নয়, বরং অস্তিত্বের আত্মমগ্ন দীপ্তি—যেখানে শিব নিজের মধ্যেই পরিপূর্ণ।
৩. ইচ্ছাশক্তি (Icchā-śakti)—সেই প্রাথমিক স্পন্দন বা আকাঙ্ক্ষা, যার দ্বারা চেতনা নিজের আনন্দে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। এটি অভাবজনিত নয়, বরং পরিপূর্ণতার উচ্ছ্বাস; এখান থেকেই প্রকাশ ও লীলার সূচনা।
৪. জ্ঞানশক্তি (Jñāna-śakti)—চেতনার স্ব-বোধের আলোক। এই শক্তিই জানে, “আমি আছি”, এবং জানার সেই ক্রিয়াই চেতনার দীপ্তি। এতে জানা ও হওয়া এক হয়ে যায়।
৫. ক্রিয়াশক্তি (Kriyā-śakti)—সেই সৃজনশক্তি, যার দ্বারা চেতনা তার জ্ঞানকে রূপে রূপে প্রকাশ করে। এটি সেই প্রবাহ, যা সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়—তিনই এক নিত্যচক্রে সম্পন্ন করে।