এই দৃষ্টিতে “অহম্” কোনো মনস্তাত্ত্বিক ইগো নয়; বরং ইগোর মূল উৎস, যা নিজেই শুদ্ধ স্বরূপে নিঃসংশয়। যখন অবিদ্যার আচ্ছাদনে এই চেতনা নিজের অসীমতাকে ভুলে যায়, তখনই সে “অহং কার” বা ব্যক্তিগত “আমি”-তে পরিণত হয়। কিন্তু যখন বিদ্যা উদিত হয়, তখন সেই “অহম্” আবার নিজের প্রকৃত রূপে ফিরে আসে—চেতনা নিজেকে চেনার মধ্যেই নিজস্ব স্বাধীনতায় জেগে ওঠে। এই অবস্থাতেই সাধক বলে ওঠে “শিবোহম্”—“আমি শিব”—এবং জানে যে, এই “আমি” কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় নয়, বরং সেই অনন্ত চেতনার নিজস্ব সাক্ষ্য।
কাশ্মীর শৈব দর্শনে “অহম্” হল চেতনার কেন্দ্র, মহাবিশ্বের অন্তর্লীন হৃদয়, যেখান থেকে সমস্ত নাম, রূপ ও ভাব উদ্ভূত হয়। এটি হলো সেই অবিচ্ছিন্ন স্বীকৃতি-সত্তা, যা সর্বদা উপস্থিত—যেমন চেতনার নীরব পটভূমি, যেখানে সমস্ত অভিজ্ঞতা ঘটে, কিন্তু কিছুই তাকে স্পর্শ করে না। এই “অহম্” না কেবল ব্যক্তিগত আত্মবোধ, না কেবল মহাজাগতিক চেতনা—বরং তাদের অবিচ্ছেদ্য ঐক্য, সেই নিত্য সেতুবন্ধ, যা বলে—“যথা পিণ্ডে, তথা ব্রহ্মাণ্ডে”—যেমন ব্যক্তিতে, তেমনি বিশ্বে—একই আত্মবোধের স্পন্দন।
এই উপলব্ধি যখন পরিণত হয় প্রত্যক্ষ জ্ঞানে, তখন সমস্ত দ্বৈততা বিলীন হয়ে যায়। দেখা যায়, “অহম্” আর কোনো উচ্চারণ নয়, বরং নিজেই চেতনার স্পন্দিত নিস্তব্ধতা—যেখানে “আমি” এবং “ঈশ্বর”, “জগৎ” ও “চেতনা”—সব মিলিয়ে এক অবিভক্ত দীপ্তিতে পরিণত। সেই নীরব দীপ্তিরই নাম পরমহম্—অসীম “আমি”, যে সর্বত্র, সবসময়, নিজের মধ্যে স্থিত, নিজের দ্বারা প্রকাশিত, এবং নিজের জন্যই আলোকিত।
চেতনার নিজেরই আত্মদর্শন—এই বাক্যটি Krama দর্শনের হৃদয়কেন্দ্র। এখানে “আত্মদর্শন” মানে কোনো বাহ্য দর্শন নয়; এটি এমন এক অন্তর্দৃষ্টি, যেখানে চেতনা নিজেকে প্রত্যক্ষ করে। যেমন একটি আলো নিজের দীপ্তিকে আলাদা করে দেখার জন্য অন্য কোনো আলো চায় না, সে নিজেরই আলোতে নিজের অস্তিত্ব উপলব্ধি করে—তেমনি চেতনা নিজেই নিজের আলোক। সেই চেতনা যখন নিজের উপস্থিতি অনুভব করে, তখনই সৃষ্টির সূচনা ঘটে।
কাশ্মীর শৈব তত্ত্বে এই অবস্থাকে বলা হয় “প্রকাশ-বিমর্শ ঐক্য”—অর্থাৎ, জ্ঞানের আলো (প্রকাশ) ও সেই আলোকে জানার চেতনা (বিমর্শ) একে অপরের থেকে আলাদা নয়, বরং একই চেতনার দুই গতি। একদিকে আছে নীরবতা, অন্যদিকে সেই নীরবতার অন্তর থেকে জেগে ওঠা সচেতন কম্পন। এই কম্পনই প্রথম ‘আমি’ ভাবের জন্ম দেয়, কিন্তু এটি কোনো সীমাবদ্ধ অহংকার নয়; এটি স্ব-চেতনার প্রথম স্পন্দন—“আমি আছি”—এই মৌলিক জাগরণ। এই জাগরণ থেকেই সব পরবর্তী প্রকাশ—ধারণা, চিন্তা, শব্দ, রূপ—ক্রমে উদ্ভাসিত হয়।
এই আত্মদর্শনের কারণেই বলা হয়, সৃষ্টি চেতনার নিজেরই ক্রীড়াভূমি। জগৎ শিবের বাইরে কিছু নয়, বরং সেই শিবচেতনার অসংখ্য প্রতিবিম্ব। ঠিক যেমন সমুদ্র নিজের ঢেউ সৃষ্টি করে, ঢেউগুলো আলাদা মনে হলেও তারা জলেরই রূপ—তেমনি চেতনা নিজের অভ্যন্তরীণ শক্তিকে বিকিরণ করে, আর সেই বিকিরণ থেকেই সৃষ্টি, জীবন ও অভিজ্ঞতা জন্ম নেয়। কিন্তু এই সবই চেতনার নিজেরই দৃষ্টি—সে নিজেকে অসংখ্য রূপে দেখে এবং সেই দেখাই লীলা।
অভিনবগুপ্ত এই আত্মদর্শনকে “চৈতন্যময় বিস্ময়” (Camatkāra) বলেছেন—যেখানে চেতনা নিজেরই উপস্থিতিতে মুগ্ধ। এই মুগ্ধতা কোনো বাহ্যিক ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়; এটি আত্মার নিজস্ব স্বাদ, নিজের অস্তিত্বে নিজেরই পরমানন্দ। চেতনা যখন নিজেরই পরিপূর্ণতাকে অনুভব করে, তখন সে সময়, স্থান, ও বস্তুর সীমা ছাড়িয়ে যায়। তখন জগৎ, প্রাণ, মৃত্যু—সবই হয়ে যায় এক অন্তহীন দর্শন—আত্মা আত্মাকেই দেখছে, আর সেই দর্শনই পরম আনন্দ।
এই “চৈতন্যময় বিস্ময়” বা Camatkāra শব্দটি কাশ্মীর শৈব দর্শনের অন্যতম সূক্ষ্ম ও মনোমুগ্ধকর ধারণা। এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ—আত্মচেতনার মধ্যেই এক বিস্মিত আনন্দ, এক গভীর মুগ্ধতা, যেখানে চেতনা নিজেরই উপস্থিতিতে মুগ্ধ-বিস্মিত হয়ে ওঠে। এটি কোনো বাহ্যিক বস্তু বা ঘটনায় বিস্ময় নয়; বরং এমন এক অন্তর-আনন্দ, যেখানে চেতনা প্রথমবার নিজেরই অসীমতা অনুভব করে এবং নিজের মধ্যেই নিমগ্ন হয়।
এই “বিস্ময়” কোনো মানসিক প্রতিক্রিয়া নয়। যখন আমরা কোনো সুন্দর দৃশ্য দেখি বা কোনো নতুন কিছু জানি, তখন মনে একপ্রকার বিস্ময় জাগে—কিন্তু Camatkāra সেই রকম নয়। এটি কোনো তুলনা, প্রতিক্রিয়া, বা মূল্যায়নের ফল নয়; বরং চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত অবস্থান, যেখানে দেখা, জানা ও অনুভব করা—সব এক হয়ে যায়। চেতনা নিজেকে উপলব্ধি করে, কিন্তু সেই উপলব্ধিতে কোনো দ্বৈততা নেই—না কোনো দর্শক, না কোনো দৃশ্য। কেবল চেতনা নিজের অস্তিত্বে উল্লসিত।
অভিনবগুপ্ত বলেন, এই Camatkāra-ই আসল আনন্দ (ānanda)। আনন্দ কোনো বস্তুর মধ্যে নেই; তা নিহিত থাকে চেতনার স্বরূপেই। যখন চেতনা নিজেরই আলোতে দীপ্ত হয়, তখন সে নিজেকে অনুভব করে এক অন্তহীন আশ্চর্য রূপে—যেন চেতনা নিজেই নিজের প্রেমে পড়েছে। এই প্রেম কোনো ব্যক্তিগত অনুভূতি নয়; এটি অস্তিত্বের গভীরতম কম্পন, যা প্রতিটি মুহূর্তে বলছে—“আমি আছি”—এবং সেই থাকা নিজেই এক পরমানন্দ।
এই অবস্থায় জগৎকে আর বাহিরের কিছু মনে হয় না। প্রতিটি রূপ, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অনুভব—সবই সেই এক চেতনার খেলা, এক একটি তরঙ্গ মাত্র। এই উপলব্ধির মুহূর্তে সাধক বুঝতে পারেন, সব অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি অপরিবর্তনীয় সত্তা আছে—যিনি সব জানছেন, সব অনুভব করছেন, অথচ নিজে অচঞ্চল। সেই সত্তাই শিব, সেই চেতনার মধ্যেই বিস্ময়।
Camatkāra তাই একপ্রকার অদ্বৈত অভিজ্ঞতা, যেখানে জ্ঞান ও অনুভব একাকার। এটি কোনো স্থির তত্ত্ব নয়; এটি চেতনার নৃত্য—যেখানে দেখা ও দেখন, জানা ও জানন, প্রেম ও প্রেমিক, সব মিলিয়ে যায় এক অনন্ত আনন্দে। অভিনবগুপ্ত বলেন, যখন এই চৈতন্যময় বিস্ময় স্থায়ী হয়, তখনই জগৎ আর মোহের কারণ থাকে না; কারণ তখন প্রতিটি রূপের মধ্যেই দেখা যায় সেই এক চেতনা—যা নিজের উপস্থিতিতেই পরিতৃপ্ত।
“চৈতন্যময় বিস্ময়” মানে হলো—চেতনা নিজের মধ্যেই মুগ্ধ, নিজের অস্তিত্বের সৌন্দর্যে আপ্লুত। এটি সেই মুহূর্ত, যেখানে শিব নিজেরই দীপ্তিতে জেগে ওঠেন, আর শক্তি সেই দীপ্তির আনন্দে নৃত্য করে। এই নৃত্যই Camatkāra—অস্তিত্বের অন্তর্লীন পরমানন্দ, যেখানে চেতনা নিজেই নিজের দর্শক, নিজের প্রেমিক, নিজের ঈশ্বর।
“চেতনার নিজেরই আত্মদর্শন” মানে এই—চেতনা কোনো কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়, সে নিজেই নিজের বিষয় ও বস্তু, দর্শক ও দৃশ্য। যখন সে নিজের আলোককে নিজের মধ্যেই প্রত্যক্ষ করে, তখনই সে বুঝে ফেলে—সব রূপ, সব ভাব, সব গতি আসলে তারই অন্তঃপ্রকাশ। এই উপলব্ধি-ক্ষণের মধ্যেই লীন হয় সব দ্বন্দ্ব, সব প্রশ্ন, সব অনুসন্ধান। কেবল থেকে যায় এক অদ্বিতীয় স্ব-চেতনা—নীরব অথচ সচল, একান্ত অথচ সর্বব্যাপী—যেখানে দেখা ও দেখন, জানার ইচ্ছা ও জানা, সব এক হয়ে যায়।
এই অবস্থাই Krama দর্শনে মুক্তি—মুক্তি কোনো গন্তব্য নয়, এটি চেতনার নিজেরই আত্মদর্শনে অবগাহন। প্রতিটি মুহূর্তেই সে নিজেকে দেখে, নিজেকে চিনে, আর সেই চেনার মধ্যেই চিরকাল নিজের মহিমায় উদ্ভাসিত থাকে।
অভিনবগুপ্ত তাঁর মহাগ্রন্থ ‘তন্ত্রলোক’ (Tantrāloka)-এ যে ‘ক্রমপথ (Krama-mārga)’-এর কথা বলেছেন, তা আসলে কাশ্মীর শৈব দর্শনের মধ্যে এক অনন্য সংযোগসূত্র—যেখানে দর্শন, যোগ, ও তন্ত্র সাধনা একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। তিনি Krama-কে সংজ্ঞায়িত করেছেন এমন এক অদ্বৈত-চেতনা-ভিত্তিক যোগপথ হিসেবে, যেখানে মুক্তি কোনো পরবর্তী অবস্থান নয়, বরং চেতনার মধ্যেই এক ক্রমাগত আত্মউন্মোচনের প্রক্রিয়া। তাঁর ভাষায়—“অদ্বয়জ্ঞানানাম্ প্রয়োগযোগঃ ক্রমঃ”—অদ্বৈত জ্ঞানের প্রয়োগ ও যোগই হলো ক্রম (ধারাবাহিকতা)। অর্থাৎ, Krama হলো সেই যোগপথ, যা অদ্বৈত জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ, জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতাকে চেতনার বিকাশ হিসেবে গ্রহণ করার এক সচেতন অনুশীলন। (তন্ত্রালোক ৪.২৩৫ ও ৪.২৩৬) এই সূত্রটি কাশ্মীর শৈববাদের ক্রম দর্শনের কেন্দ্রীয় পদ্ধতি ও লক্ষ্যকে সংজ্ঞায়িত করে—
অদ্বৈত জ্ঞান (Advaya-jñānānām): এটি হলো একত্ব বা শিব ও শক্তির অভিন্নতার জ্ঞান। এটি দ্বৈততা (Duality) বা ভেদজ্ঞান থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
প্রয়োগযোগ (Prayoga-yogaḥ): এটি হলো সেই অনুশীলন (Practice) বা যোগিক প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে সেই অদ্বৈত জ্ঞানকে জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতা ও চেতনার স্তরে প্রয়োগ করা হয়। এটি কেবল তত্ত্ব নয়, বরং ব্যাবহারিক প্রয়োগ।
ক্রম (Kramaḥ): ক্রম মানে হলো ধারাবাহিকতা, ক্রমিক বিকাশ বা উত্তরণ (Sequence/Progression)। ক্রম দর্শন বিশ্বাস করে যে, মোক্ষ বা অদ্বৈত জ্ঞান আকস্মিকভাবে লাভ হয় না, বরং চেতনার ১২টি ধাপ (দ্বাদশ কালী) বা স্তরের মধ্য দিয়ে ক্রমশঃ উন্মোচিত হয়।
চূড়ান্ত অদ্বৈত সত্যকে উপলব্ধি করার জন্য সাধককে ধাপে ধাপে (ক্রমে) সেই জ্ঞানকে তার দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে হয়। এই ধারাবাহিক প্রয়োগের মাধ্যমে চেতনার স্তরগুলির উত্তরণ ঘটানোই হলো ক্রম দর্শনের পথ।
কাশ্মীর শৈব দর্শনের ক্রমপন্থায় (Krama Tradition) দ্বাদশ কালী বা চেতনার বারোটি ধাপ বলতে বোঝানো হয়েছে—চেতনার নিজের মধ্যেই ধীরে ধীরে প্রকাশ, বিস্তার, বিকিরণ, আত্মস্মরণ ও পুনর্লয়ের এক ক্রমান্বয় প্রক্রিয়া। চেতনা কোনো স্থির, নিস্পন্দ সত্তা নয়; সে এক জীবন্ত, স্পন্দমান, আত্মবিস্তারী শক্তি। সেই স্পন্দনের চক্র—এক অনন্ত নৃত্য, যেখানে চেতনা নিজেরই অস্তিত্বকে পর্যায়ক্রমে অনুভব করে, প্রকাশ করে, বিস্তৃত করে, চিনে ফেলে, এবং শেষে নিজের মধ্যেই ফিরে যায়। এই প্রক্রিয়া কোনো সাময়িক বা বাহ্যিক পরিবর্তন নয়; এটি চেতনার অন্তর্গত গতির দর্শন—যে-গতিতে অনন্ত একক বাস্তবতা (Śiva) নিজেকে অসংখ্য অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত করে আবার নিজেই নিজের মধ্যে লীন হয়ে যায়।
‘প্রকাশ’ (revelation) মানে চেতনার প্রথম জাগরণ—নীরব, নির্বিকার শিব যখন নিজের উপস্থিতি অনুভব করে, তখনই প্রথম আত্মবোধের উদয় ঘটে—“আমি আছি।” এটি হলো চেতনার নিজের স্বরূপে জেগে ওঠা, আত্মদীপনের মুহূর্ত। এই পর্যায়ে এখনো কোনো ‘অন্যতা’ নেই; কেবল স্বয়ং আলোক, স্বয়ং জ্ঞান।
এরপর আসে ‘বিস্তার’ (expansion)—চেতনা নিজের সেই একক অনুভবকে ছড়িয়ে দেয়, যেন নিজের আনন্দে বহুগুণিত হতে চায়। এটি সেই মুহূর্ত, যখন এক থেকে বহু জন্ম নেয়—যেমন একটি বীজ থেকে অসংখ্য ডালপালা বের হয়, কিন্তু প্রতিটি ডালই বীজেরই প্রকাশ। চেতনা এখানে নিজের আনন্দে নিজেকে সম্প্রসারিত করে, “অহম্” থেকে “ইদম্”—“আমি” থেকে “এই”—এই গতি শুরু হয়।
‘বিকিরণ’ (emanation) অর্থাৎ চেতনার বাহ্য উদ্ঘাটন। এখন সে নিজের ভেতর থেকে বাইরে আলো ছড়ায়—রূপ, শব্দ, চিন্তা, ইন্দ্রিয়, অভিজ্ঞতা—সবই তারই প্রকাশ। এই স্তরে চেতনা নিজের শক্তিগুলো (ইচ্ছা, জ্ঞান, ক্রিয়া) সক্রিয় করে, এবং নিজেরই ভিতর থেকে এক বৈচিত্র্যময় জগৎ রচনা করে। কিন্তু এই বিকিরণ মানে বিচ্ছিন্নতা নয়; প্রতিটি বিকিরণই তারই দীপ্তির তরঙ্গ।
এরপর ঘটে ‘আত্মস্মরণ’ (self-recognition)—চেতনা তার এই অসংখ্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে আবার নিজেকে চিনে ফেলে। সে উপলব্ধি করে, “এই সমস্ত রূপ, নাম, শব্দ, অভিজ্ঞতা—সবই আমারই প্রতিফলন।” এই আত্মস্মরণই প্রত্যভিজ্ঞান (pratyabhijñā)—নিজেকে পুনরায় চেনা। চেতনা তখন বুঝে যায়, সে কখনোই বহির্মুখ নয়, কখনোই বিভক্ত নয়; সবই তারই লীলা, তারই প্রতিফলন।
সবশেষে আসে ‘পুনর্লয়’ (reabsorption)—যেখানে চেতনা সমস্ত প্রকাশ, বিকিরণ, ও অভিজ্ঞতাকে নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে ফিরে আসে তার আদ্য অবস্থায়। এখন কোনো ভেদ নেই, কোনো গতি নেই, কোনো অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই—চেতনা নিজের মধ্যেই সম্পূর্ণ, নিজেই নিজের আনন্দে পূর্ণ। এটি শিবচেতনার পরমাবস্থা, যেখানে সৃষ্টি ও বিলয় উভয়ই তার অন্তর্গত স্পন্দন মাত্র।