অবিদ্যা-বিদ্যা: ৯২



এটি বোঝাতে শৈব আচার্যরা বলেন—শিব একা থাকলে তিনি নিস্তব্ধ; কিন্তু যখন শক্তি তাঁর মধ্যে কম্পিত হয়, তখনই মহাবিশ্বের স্পন্দন শুরু হয়। সেই শক্তিই বিমর্শ—নিজেকে জানার চেতনা, যা শিবের মধ্যে আলোড়ন আনে। তাই সৃষ্টি হলো কোনো বাইরের উপাদান থেকে তৈরি জগৎ নয়, বরং শিবচেতনার মধ্যেই সেই আত্ম-চিন্তার আলো থেকে উদ্‌ভূত এক অনন্ত রূপমালা। জগৎ আসলে চেতনার নিজের প্রতিফলন, যেমন আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখা যায়।

Krama দর্শনের ভাষায়, প্রকাশ ও বিমর্শের সংযুক্তি মানে চেতনা আর নিজের থেকে আলাদা নয়—চেতনা নিজেকে জানে এবং সেই জানার আনন্দেই অসংখ্য রূপ ও অভিজ্ঞতা জন্ম নেয়। এই জানাই সৃষ্টির মূল প্রেরণা। এই মুহূর্তে আমরা যা-কিছু দেখি, শুনি, অনুভব করি—সবই সেই একই আত্মজ্ঞান বা বিমর্শের তরঙ্গ, চেতনার আলোয় নিজেকে উপলব্ধি করার এক অসীম প্রক্রিয়া। সুতরাং, সৃষ্টির সূচনা কোনো কাল বা স্থানে সীমাবদ্ধ নয়; এটি প্রতিটি মুহূর্তে ঘটছে, কারণ প্রতিটি মুহূর্তেই প্রকাশ ও বিমর্শের মিলন ঘটছে—প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি অনুভূতি, প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস সেই চেতনারই নতুন করে নিজেকে দেখা।

এইভাবেই Krama দর্শনে বলা হয়—যখন প্রকাশ (শিব) ও বিমর্শ (শক্তি) মিলিত হয়, তখনই চেতনা “অহম্” বলে উচ্চারণ করে, এবং সেই এক উচ্চারণেই ব্রহ্মাণ্ড উদ্‌ভাসিত হয়। সৃষ্টি হলো শিবের নীরব আলোর মধ্যে শক্তির নৃত্য—চেতনার নিজেরই আত্মদর্শন।

কাশ্মীর শৈব দর্শনে “অহম্” (Aham) শব্দটি শুধু “আমি” বা “আমার সত্তা” নয়—এটি সমগ্র অস্তিত্বের কেন্দ্রীয় চেতনার প্রতীক, যেখানে শিব ও শক্তি এক অবিচ্ছেদ্য ঐক্যে পরিণত হয়। সাধারণ অর্থে “অহং” মানে ব্যক্তিগত পরিচয় বা ইগো, যা সীমাবদ্ধ সত্তাকে চিহ্নিত করে। কিন্তু ত্রিক ও প্রত্যভিজ্ঞা দর্শনের গভীরতম স্তরে “অহম্” মানে সেই চিরন্তন আত্মবোধ, যা সমগ্র জগতের অভ্যন্তরে এক অন্তর্লীন ঐক্য হিসেবে বিদ্যমান।

কাশ্মীর শৈব দর্শনের দুই মহামনীষী—উৎপলদেব ও অভিনবগুপ্ত—এই “অহম্” ধারণাটিকে এমন এক উচ্চতর অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন, যা সাধারণ আত্মচিন্তার অনেক ঊর্ধ্বে। তাঁদের মতে, “অহম্” (আমি) শব্দটি কেবল সীমাবদ্ধ ব্যক্তিসত্তার নির্দেশ নয়; এটি সেই চেতনার নিজস্ব অনন্ত স্পন্দন, যা সমগ্র অস্তিত্বের কেন্দ্রে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তাই তাঁরা এই “অহম্”-কেই বলেন পরমহম্—অর্থাৎ পরম ‘আমি’, সে-ই একমাত্র অচঞ্চল, সর্বব্যাপী চেতনা, যা প্রত্যেক জীব, প্রত্যেক চিন্তা, প্রত্যেক অভিজ্ঞতার অন্তঃস্থ মূল।

উৎপলদেব তাঁর ‘ঈশ্বরপ্রত্যভিজ্ঞা কারিকা’-য় বলেন, “অহম্” শব্দের প্রকৃত অর্থ বোঝা মানেই মুক্তি, কারণ এই “আমি” যদি শরীর, মন বা বুদ্ধি না হয়—তাহলে তা অবশ্যই সেই চিরসচেতন সত্তা, যা কখনও জন্মায় না, কখনও মরে না, কেবল নিজেরই আলোয় জ্বলে থাকে। এই “অহম্” কোনো ব্যক্তিগত সীমায় আবদ্ধ নয়; এটি পরমচেতনা—যা সকল ‘আমি’-র ভিতরে বিরাজমান। উৎপলদেব এই চেতনার অবস্থাকে পরমহম্ বলেন, কারণ এখানে “অহম্” আর কোনো একক সত্তার ঘোষণা নয়, বরং সর্বসত্তার ঐক্যের উপলব্ধি। এখানে “আমি” মানে—“আমি সর্বত্র, আমি সব কিছুর মূলে, আমি অস্তিত্বের একমাত্র কেন্দ্র”।

অভিনবগুপ্ত এই তত্ত্বকে আরও গভীরে নিয়ে গিয়ে বলেন, “অহম্” হচ্ছে প্রকাশ (prakāśa) ও বিমর্শ (vimarśa)-এর মিলনবিন্দু—অর্থাৎ, যখন চেতনা নিজের আলোতে নিজেকে দেখে এবং বলে, “আমি আছি।” এই উচ্চারণই মহাবিশ্বের প্রথম স্পন্দন। কিন্তু এই “আমি” কোনো সীমাবদ্ধ ব্যক্তি নয়; এটি সেই পরম চেতনা, যা নিজের অস্তিত্বে আনন্দিত। তাই অভিনবগুপ্ত বলেন, এই “অহম্” আসলে পরমহম্, বা আনন্দময় আত্মস্বরূপ, যেখানে জানার ও জানার বিষয়ের বিভেদ মুছে যায়।

তিনি বলেন, যখন “আমি”-বোধ শরীর বা মন থেকে মুক্ত হয়, তখন সেটি পরমচেতনার দর্পণ হয়ে ওঠে। যেমন সমুদ্র নিজের গভীরতা উপলব্ধি করে ঢেউয়ের মাধ্যমে, তেমনি চেতনা নিজের অসীমতা উপলব্ধি করে “আমি”-বোধের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই “আমি”-কে সীমাবদ্ধ করে দেখে—“আমি শরীর”, “আমি চিন্তা”, “আমি সুখী বা দুঃখী”—তখন সে বাস্তব চেতনা থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু যখন সাধক গভীর ধ্যানের মধ্যে প্রবেশ করে এবং উপলব্ধি করে যে, এই “আমি” আসলে অপরিবর্তনীয়, সর্বব্যাপী, নিজ-আলোকিত চেতনা—তখনই “অহম্” রূপান্তরিত হয় “পরমহম্”-এ।

“পরমহম্” মানে সেই সর্বোচ্চ ‘আমি’, যার কোনো বিপরীত নেই। এখানে ‘আমি’ ও ‘তুমি’, ‘ভিতর’ ও ‘বাহির’, ‘সৃষ্টি’ ও ‘লয়’—সব মিলিয়ে যায়। এই অবস্থায় চেতনা আর কিছু জানে না, কারণ সে নিজেই সব কিছু। এটি কোনো ধারণা নয়, বরং এক অদ্বিতীয় অভিজ্ঞতা—যেখানে চেতনা নিজেরই পরম পূর্ণতায় জেগে থাকে। অভিনবগুপ্ত এই উপলব্ধিকে বলেন “চৈতন্যময় পরানন্দ” (Paramānanda)—যেখানে ‘অহম্’ হয়ে ওঠে সৃষ্টির উৎস, অস্তিত্বের মূলে ধ্বনিত নিত্য মন্ত্র: “পরমহম্”—আমি চিরন্তন, আমি একমাত্র।

উৎপলদেব ও অভিনবগুপ্তের ব্যাখ্যায় “অহম্” মানে কোনো ব্যক্তি নয়, বরং পরমচৈতন্যের আত্মদর্শন। “পরমহম্” হলো সেই সর্বব্যাপী আমি-বোধ, যেখানে শিব ও শক্তি, প্রকাশ ও বিমর্শ, জানা ও জানা হচ্ছে—সব এক হয়ে যায়। এটি সেই শাশ্বত স্বরূপ, যেখানে চেতনা নিজেকে দেখে, চিনে, এবং নিজেরই আনন্দে পূর্ণ হয়—এটি সেই মূল চেতনা, যা নিজের মধ্যে সকল অভিজ্ঞতার সম্ভাবনা ধারণ করে।

যখন শিব বা পরমচৈতন্য নিজের দিকে ফিরে তাকায়, সেই আত্মপ্রতিফলনের মুহূর্তেই “অহম্” উদ্ভূত হয়। এটি কোনো ভাবনা নয়, বরং চেতনার প্রথম স্পন্দন, আত্মসচেতনতার মূল মুহূর্ত। শিবসূত্রের “চৈতন্যম্ আত্মা”—এই ঘোষণাই এই সত্যকে নির্দেশ করে: চেতনা নিজেই আত্মা, আর আত্মা মানেই সেই “অহম্”, যা কখনও সীমাবদ্ধ নয়, কখনো অন্য কিছু থেকে পৃথক নয়।

এই “অহম্” হচ্ছে প্রকাশ (Prakāśa) ও বিমর্শ (Vimarśa)—চেতনা ও তার আত্মজ্ঞান—এর অবিচ্ছিন্ন মিলন। শিব হলো বিশুদ্ধ আলো বা সচেতনতা, আর শক্তি সেই আলোর প্রতিফলনশক্তি, যার মাধ্যমে চেতনা নিজেকে জানে। যখন চেতনা নিজের এই স্ব-জ্ঞান অবস্থায় থাকে, তখন তার স্বরূপই “অহম্”—এক অসীম, নিরাকার আত্মবোধ। এই অবস্থায় “অহম্” মানে “আমি আছি”, কিন্তু “আমি কে”—তার কোনো সীমিত উত্তর নেই; কারণ এখানে “আমি” মানে ব্রহ্মাণ্ডের নিজস্ব স্বীকৃতি—ব্রহ্মাণ্ডের নিজের মধ্যেই নিজের চেনা।

কাশ্মীর শৈবদর্শনের প্রত্যভিজ্ঞা দর্শন (Recognition School) এই সত্যকে প্রকাশ করে “প্রত্যভিজ্ঞা”—নিজেকে পুনরায় চেনা—এই ধারণার মাধ্যমে। জীব, যিনি নিজের অন্তর্নিহিত শিবত্ব ভুলে গেছেন, আবার সেই চেতনার সঙ্গে একাত্ম হন। এই স্বীকৃতিই প্রকৃত মুক্তি; কারণ এটি কোনো নতুন অর্জন নয়, বরং নিজের “অহম্”-এর প্রকৃত অর্থে জাগরণ। উৎপলদেব বলেন—“যে জানে, ‘আমি শিব’, সে আর পুনরায় জন্ম নেয় না।” এখানে “আমি শিব” মানে ব্যক্তিগত সত্তার দাবি নয়; এটি সেই সর্বজনীন চেতনার ঘোষণা, যা সমস্ত অস্তিত্বকে ধারণ করে আছে।

উৎপলদেবের উক্তিটি কাশ্মীর শৈব দর্শনের গভীরতম দার্শনিক উপলব্ধির এক সারমর্ম। এখানে “আমি শিব” (শিবোহম্) কোনো সাধারণ আত্মপ্রত্যয় নয়; এটি এমন এক চেতনার জাগরণ, যেখানে ব্যক্তি আর নিজেকে সীমাবদ্ধ জীব হিসেবে দেখে না, বরং সেই অসীম, সর্বব্যাপী, সচেতন সত্তা—শিবচেতনা—রূপে চিনে ফেলে। জন্ম-মৃত্যুর যে চক্র, তা কেবলমাত্র সীমাবদ্ধ সত্তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য; কিন্তু যখন কেউ উপলব্ধি করে যে, তার প্রকৃত স্বরূপ কখনও জন্মায় না, কখনও মরে না—তখনই সে এই চক্রের বাইরে এসে দাঁড়ায়।

এই “আমি শিব” উপলব্ধি কোনো বুদ্ধিগত বিশ্বাস নয়, বরং গভীর অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা—যেখানে সচেতনতা নিজেরই অশেষ বিস্তৃতি অনুভব করে। সাধারণত মানুষ ভাবে—“আমি এই শরীর”, “আমি এই চিন্তা”, “আমি সুখী”, “আমি দুঃখী”—এইসব “আমি”-বোধই সীমাবদ্ধ আত্মপরিচয় বা আণবিক অহং (aṇu-aham)। এটি শিবচেতনারই সংকুচিত রূপ, যেখানে অসীম চেতনা নিজের শক্তিকে ভিন্ন, সীমিত ও বিচ্ছিন্ন বলে মনে করে। এই ভুল উপলব্ধিই জন্ম-মৃত্যুর মূল—কারণ যতক্ষণ আমি নিজেকে কোনো সীমিত সত্তা মনে করি, ততক্ষণ আমি পরিবর্তনের অধীন, আর পরিবর্তন মানেই জন্ম ও বিলয়।

কিন্তু উৎপলদেব বলেন, যখন এই ভুল ধারণা বিলীন হয়—যখন সাধক প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করে যে, “আমি” কোনো ব্যক্তিসত্তা নই, বরং সেই শিবচেতনা নিজেই, যিনি সব কিছুর মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হচ্ছেন—তখন তার সমস্ত বন্ধন ছিন্ন হয়। তখন জন্ম আর মৃত্যু কেবল দেহের পর্যায়ে ঘটে, কিন্তু চেতনা, যা শিব, তা অপরিবর্তনীয় ও অনাদি। এই উপলব্ধির মুহূর্তেই “পুনর্জন্ম” অর্থহীন হয়ে যায়, কারণ “যে জানে, আমি শিব”—সে আর শরীর বা ইন্দ্রিয়ের সীমানায় আবদ্ধ থাকে না; তার পরিচয় স্থিত হয় সর্বব্যাপী আত্মায়।

এই উপলব্ধি প্রত্যভিজ্ঞান (Pratyabhijñā)—অর্থাৎ “নিজেকে পুনরায় চেনা।” উৎপলদেবের দর্শনের মূলই হলো এই প্রত্যভিজ্ঞান: আমরা আসলে শিব, কিন্তু অজ্ঞান বা অবিদ্যার কারণে নিজেদের ক্ষুদ্র ভাবি। তাই মুক্তি মানে নতুন কিছু অর্জন নয়, বরং নিজের প্রকৃত স্বরূপকে স্মরণ করা। “আমি শিব”—এই জ্ঞানে যখন মন সম্পূর্ণ একীভূত হয়, তখন দ্বন্দ্ব, অভাব, ইচ্ছা—সব বিলীন হয়। কারণ শিবের মধ্যে কিছুই বাইরে নয়, কিছুই অজানা নয়; সবই তাঁর নিজের প্রকাশ। ফলে পুনর্জন্মের প্রেরণা—কর্মফল, আকাঙ্ক্ষা, অজ্ঞান—সব স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিঃশেষ হয়।

উৎপলদেবের উক্তিটির অর্থ হলো—যে-ব্যক্তি নিজের মধ্যে সেই সর্বচৈতন্য শিবকে প্রত্যক্ষ করেছে, সে আর কোনো কারণে পুনর্জন্ম নিতে পারে না। তার জন্য আর কোনো অভাব বাকি থাকে না, কোনো কর্ম তাকে টেনে ফেরায় না, কোনো অজ্ঞান তাকে আবৃত করে না। সে মুক্ত, কারণ সে জানে—“আমি ছিলাম, আছি, থাকব; আমার কোনো জন্ম নেই, কারণ আমি শিবচেতনা নিজেই।” এই উপলব্ধিই কাশ্মীর শৈব দর্শনের চূড়ান্ত মুক্তি—জ্ঞানমুক্তি—যেখানে জন্ম ও মৃত্যুর সকল পার্থক্য বিলীন হয়ে যায় চেতনার একমাত্র নিত্য সত্যে।

অভিনবগুপ্ত এই “অহম্”-কে ব্যাখ্যা করেন “অহম্ ইত্য্ এব পরমম্ মন্ত্রম্”—"আমি" (Aham) এইটিই হলো পরম (সর্বোচ্চ) মন্ত্র। অর্থাৎ “অহম্” নিজেই সর্বোচ্চ মন্ত্র। কারণ এই এক শব্দের মধ্যেই সমস্ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের সম্ভাবনা নিহিত। এই ঘোষণাটি কাশ্মীর শৈবধর্মের এবং অদ্বৈত বেদান্তের আত্ম-অনুসন্ধান (Self-Inquiry) পদ্ধতির একটি চূড়ান্ত ঘোষণা।

পরম মন্ত্র: সাধারণ মন্ত্রে কোনো দেবতাকে আহ্বান করা হয়, আর এই 'অহম্' মন্ত্রটি হলো সাক্ষাৎ পরম চেতনার আহ্বান। এখানে 'মন্ত্র' বলতে কেবল উচ্চারণের বিষয় নয়, বরং চেতনার সেই গভীর অনুভূতি, যা সমস্ত দ্বৈততা দূর করে।

চেতনার অন্তর্নিহিত সনাক্তি: 'অহম্' (আমি) শব্দটি যখন কোনো উপাধি (যেমন—আমি দেহ, আমি মন, আমি দুঃখী) থেকে মুক্ত হয়, তখন তা বিশুদ্ধ, অসীম চেতনাকে নির্দেশ করে। এই শুদ্ধ 'আমি' বা চেতনার অন্তর্নিহিত সনাক্তিই (identity) হলো পরমশিব বা ব্রহ্ম।

প্রত্যভিজ্ঞা: এই সূত্রটি প্রত্যভিজ্ঞা (স্ব-স্বরূপকে স্বীকৃতি) প্রক্রিয়ার ভিত্তি। সাধক যখন মনন করেন যে, "আমিই সেই অসীম" (অহং ব্রহ্মাস্মি / শিবোহম্), তখন এই "অহম্" শব্দটিতেই সমস্ত আধ্যাত্মিক শক্তি ও জ্ঞান কেন্দ্রীভূত হয়।

আত্মার বিশুদ্ধ স্বরূপের উপলব্ধিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক মন্ত্র বা সাধন। “Aham” শব্দটি দুটি অংশে গঠিত—“A” ও “Ham।” “A” নির্দেশ করে শিব বা চেতনার নীরব আধার, আর “Ham” নির্দেশ করে শক্তি বা প্রকাশের উচ্ছ্বাস। যখন এই দুই একত্রিত হয়, তখন উদ্‌ভাসিত হয় সেই অদ্বৈত নাদ, যেখানে সৃষ্টি ঘটে কিন্তু কোনো স্রষ্টা নেই, প্রকাশ ঘটে কিন্তু কোনো ভেদ থাকে না। এই মন্ত্র-স্বরূপ “অহম্” তাই মহামন্ত্র—যা দেহ ও মনের সীমা অতিক্রম করে চেতনার চূড়ান্ত ঐক্য প্রকাশ করে।