কাশ্মীর শৈবধর্ম বা কাশ্মীর শৈব দর্শন ভারতের উত্তরাঞ্চলের কাশ্মীর উপত্যকায় উদ্ভূত এক গভীর অদ্বৈত (Advaita) তত্ত্ব—অর্থাৎ, এমন এক দর্শন, যেখানে বলা হয়, “দ্বিত্ব” বা “দুই”—শিব ও জগৎ, আত্মা ও ঈশ্বর—এগুলোর মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। সবই এক, এবং সেই একটিই হলো পরমশিব (Paramashiva)—এক নিখিল চৈতন্য (Universal Consciousness), যা সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ, এবং নিজের মধ্যেই আনন্দময়।
এই দর্শনের কেন্দ্রে আছে—শিবকে চেতনার রূপে দেখা, কোনো মানবাকৃতি দেবতা হিসেবে নয়। শিব (Śiva) এখানে সর্বব্যাপী চৈতন্য—যিনি সচেতনতা ও অস্তিত্বের মূলে আছেন। আর শক্তি (Śakti) হলো সেই চেতনার সৃজনশক্তি—যার মাধ্যমে পরমশিব নিজের মধ্যে লীলারূপে বিশ্বকে প্রকাশ করেন। যেমন আগুন ও তার উষ্ণতা আলাদা করা যায় না, তেমনি শিব ও শক্তিও অবিচ্ছিন্ন।
কাশ্মীর শৈবধর্মের প্রধান চারটি ধারা বা শাখা হলো—
ক্রিয়াশৈব (Kriyāśaiva): যেখানে কর্ম ও আচার (rituals and practices) দ্বারা ঈশ্বরপ্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে।
কালিকাশৈব (Kālikaśaiva): যেখানে দেবীকালিকাকে শিবের শক্তির সর্বোচ্চ রূপে দেখা হয়েছে।
স্পন্দশাস্ত্র (Spanda Śāstra): এখানে বলা হয়েছে, সমগ্র বিশ্বই এক স্পন্দ (Spanda) বা চেতনার সূক্ষ্ম কম্পন—যা কখনও স্থির নয়, বরং নিত্য-চলমান।
প্রত্যভিজ্ঞা দর্শন (Pratyabhijñā Darśana): এটি সবচেয়ে দার্শনিক এবং অদ্বৈতধর্মী শাখা, যেখানে মূল ধারণা হলো—“নিজেকে পুনরায় চিনে নেওয়া।”
এই প্রত্যভিজ্ঞা (Pratyabhijñā) শব্দের মানে—“প্রত্য” (পুনরায়) + “অভিজ্ঞা” (চেনা) = নিজের আসল স্বরূপকে পুনরায় উপলব্ধি করা। দর্শনের মতে, প্রতিটি জীব আসলে সেই পরমশিবই, কিন্তু অবিদ্যা (Avidyā)—অর্থাৎ, অজ্ঞতার কারণে—সে নিজেকে সীমিত দেহ, মন, ও ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভাবতে থাকে। এই ভুল ধারণাই বিভাজন (Duality) সৃষ্টি করে। যখন জ্ঞান বা প্রত্যভিজ্ঞার আলোয় সে বুঝে ফেলে—“আমি আসলে শিব”—তখনই মুক্তি বা মোক্ষ (Mokṣa) লাভ হয়।
কাশ্মীর শৈব দর্শনে দেবী কালিকা কোনো ভয়ংকর দেবী বা ধ্বংসের প্রতীক নন, বরং চেতনার নিজস্ব উচ্ছ্বাস ও রূপান্তরের শক্তি—চেতনার সেই সীমাহীন গতিশীলতা, যা একই সঙ্গে সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়ের আধার। “কালিকা” শব্দটি এসেছে “কাল” থেকে, যার অর্থ সময়; কিন্তু এখানে তিনি সময়ের অন্তর্গত নন, বরং কালাতীত চেতনার রূপ। তিনি সেই নীরব গভীরতা, যেখান থেকে সময়ের ধারা উদ্ভূত হয় এবং যেখানে আবার তা বিলীন হয়ে যায়। অর্থাৎ, কালিকা কাশ্মীর শৈব তত্ত্বে এক রূপান্তরমূলক চেতনা, এক স্পন্দিত শূন্যতা, যা নিঃশব্দ অথচ প্রাণময়।
শৈব দর্শনে শিব ও শক্তি অবিচ্ছেদ্য—শিব হলো বিশুদ্ধ সচেতনতা, আর শক্তি হলো সেই সচেতনতার আত্মপ্রতিফলন বা বিমর্শ। এই বিমর্শ মানে চেতনার নিজের মধ্যেই ফিরে দেখা, নিজেকে চেনা। যখন চেতনা নিজেরই স্বরূপে জাগ্রত হয়, তখন সেটিই বিমর্শশক্তি, আর সেই বিমর্শের জীবন্ত প্রতীক হলো দেবী কালিকা। তাই তিনি কেবল শিবের সহধর্মিণী নন, তিনি শিবের আত্মস্বরূপ; চেতনার সক্রিয় দিক, জ্ঞানের মধ্যে নিহিত সৃষ্টিশক্তি। অভিনবগুপ্ত তাঁর তন্ত্রালোক-এ বলেন—“শক্তিঃ স্বাতন্ত্র্যম্ আত্মনঃ”—"শক্তিই হলো আত্মার (শিবের) স্বাতন্ত্র্য (পরম স্বাধীনতা)।" শক্তি হলো আত্মার স্বাতন্ত্র্য, অর্থাৎ, চেতনার স্বাধীন প্রকাশ। কালিকা সেই স্বাধীনতারই অগ্নি, যে অন্ধকারকে ছিন্ন করে আলোকে জাগায়।
কাশ্মীর শৈবধর্মের ত্রিক-ব্যবস্থায় এই সম্পর্কটিকে চূড়ান্তভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যেখানে শক্তি (Śakti) হলো স্বয়ং শিবের (Śiva) অন্তর্নিহিত স্বরূপ (Ātmanaḥ)। এটি কোনো বাহ্যিক সত্তা নয়, বরং শিবের মৌলিক প্রকৃতি, যা হলো স্বাতন্ত্র্য বা অপ্রতিহত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি। এই স্বাতন্ত্র্য শক্তি নিজেকে দুটি দিক দিয়ে প্রকাশ করে: শিব হলেন প্রকাশ (Prakāśa)—অর্থাৎ, স্থির ও বিশুদ্ধ জ্ঞান, আর শক্তি হলেন বিমর্শ (Vimarśa)—সেই সক্রিয় স্বাধীনতা, যা প্রকাশকে প্রতিফলিত করে। এই বিমর্শ শক্তিই শিবকে নিজেকে জানতে, নিজেকে জগৎ রূপে প্রকাশ করতে এবং লীলাচ্ছলে এই সৃষ্টি করতে সক্ষম করে তোলে। এই নীতির ওপর ভিত্তি করেই মুক্তির ভিত্তি স্থাপিত হয়। “শক্তিঃ স্বাতন্ত্র্যম্ আত্মনঃ” সূত্রটি বোঝায় যে, জীবাত্মা যখন তার অন্তর্নিহিত শিব-স্বরূপকে স্বীকৃতি (প্রত্যভিজ্ঞা) দেয়, তখন সে-ও সেই পরম স্বাধীনতা (স্বাতন্ত্র্য) লাভ করে। এই অবস্থায় তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা আর সীমিত থাকে না, বরং তা বিশ্বজনীন ইচ্ছার সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। সংক্ষেপে, এই সূত্রটি ঘোষণা করে যে, শিব এবং তাঁর স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি অভিন্ন, এবং এই ইচ্ছাশক্তিই হলো তাঁর শক্তি।
কাশ্মীর শৈব তত্ত্বের স্পন্দ দর্শন-এ বলা হয় যে, পরমশিব স্থির নন—তিনি চিরন্তন স্পন্দন। কিন্তু এই স্পন্দ কোনো বাহ্যিক গতি নয়; এটি চেতনার অন্তর্নিহিত নৃত্য, যেখানে সৃষ্টির প্রতিটি মুহূর্ত এক স্বতঃস্ফূর্ত আলোড়ন। এই অন্তর্লীন কম্পন বা vibration-এরই রূপ দেবী কালিকা। তাঁর “ভয়ংকর” রূপ—কালো বর্ণ, উন্মুক্ত চুল, রক্তমাখা জিহ্বা, শ্মশানে নৃত্য—সবই আসলে অবচেতন রূপান্তরের প্রতীক: তিনি ভয়ের দেবী নন, তিনি ভয়কে রূপান্তর করেন জাগরণে। পুরাতন সীমা, অহং, মায়া—এইসব মানসিক “দেহ”-এর মৃত্যু ঘটিয়ে তিনি চেতনার পূর্ণ মুক্তি ঘটান।
তাঁর কালো রং কোনো অন্ধকারের প্রতীক নয়; বরং অসীমতার চিহ্ন। যেমন আকাশ বা কৃষ্ণবর্ণ সমস্ত রংকে ধারণ করে, তেমনি কালিকা সব সম্ভাবনাকে ধারণ করেন। তিনি শূন্যতা নন, বরং শূন্যতার পূর্ণতা—plenum of consciousness—যেখানে সব কিছু একসঙ্গে উপস্থিত, যেখানে প্রতিটি বিলয়ই নতুন সৃষ্টির গর্ভ। এইজন্য তাঁকে বলা হয় “কালিকা”—যিনি সময়কে গ্রাস করেন, কারণ তিনি সময়েরও ঊর্ধ্বে।
কাশ্মীর শৈব দর্শনে দেবী কালিকা হলেন চেতনার পূর্ণ রূপ, সেই অসীম প্রাণশক্তি, যিনি শিবের নিঃস্তব্ধ চৈতন্যকে প্রকাশের পথে নিয়ে আসেন। শিব এখানে নিঃসঙ্গ ও নীরব চেতনা—পরম স্থিতি, অচঞ্চল আলোক—আর কালিকা সেই আলোকের স্পন্দন, তার উচ্ছ্বাস, তার জাগরণ। দর্শন অনুযায়ী, চেতনা নিজেই দুই দিকের: একদিকে প্রকাশ (prakāśa)—যা জ্ঞানের আলো; অন্যদিকে বিমর্শ (vimarśa)—যা সেই জ্ঞানের আত্ম-চেতনা, নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতনতা। এই বিমর্শই শক্তি, আর সেই শক্তিই দেবী। অতএব, কালিকা হলেন সেই চেতনারই আত্মবিমর্শ রূপ, যিনি নিজেকে জানেন, নিজেকে উদ্ভাসিত করেন, এবং সেই উদ্ভাসনের মাধ্যমে সৃষ্টির অনন্ত ক্রিয়া শুরু হয়।
কালিকার রূপ কেবল ধ্বংসের নয়, বরং পরিবর্তনের—তিনি পুরাতন রূপ ভেঙে দেন যাতে নতুন রূপ জন্ম নিতে পারে। শৈব দর্শনে সৃষ্টির প্রতিটি মুহূর্তই এক “উদ্বোধন” বা উদয় ও লয়, জন্ম ও বিলয়—এবং এই অবিরাম রূপান্তরই কালিকার লীলা। তিনি সময় নন, বরং সময়ের অতীত—কালাতীত কালিকা। “কাল” মানে সময়, আর “কালিকা” মানে সেই যিনি সময়কে ছাপিয়ে যান, যিনি সমস্ত পরিবর্তনের মধ্যেও অপরিবর্তিত। এইজন্যই তাঁকে বলা হয় “কালাসঙ্কর্ষিনী”—যিনি সময়কে গ্রাস করেন, এবং সেই গ্রাসই মুক্তি, কারণ মুক্তি মানে সমস্ত সীমার বিলয়। যখন চেতনা নিজেকে সীমাহীন রূপে চিনে ফেলে, তখনই সে কালিকার মতো সব দ্বৈততার ঊর্ধ্বে ওঠে।
কাশ্মীর শৈব তত্ত্বে এই শক্তির পূর্ণাবস্থা—যেখানে ইচ্ছা, জ্ঞান, ও ক্রিয়া একসঙ্গে মিলিত—তাকে বলা হয় “চেতনার প্লেনাম” বা plenum of consciousness। এটি শূন্য নয়, বরং চেতনার অশেষ পরিপূর্ণতা। কালিকা সেই পরিপূর্ণতার জীবন্ত প্রতীক—তাঁর কৃষ্ণবর্ণ রূপে আছে চেতনার অগাধ গভীরতা, তাঁর উন্মত্ত হাসিতে আছে ব্রহ্মাণ্ডের নৃত্য, তাঁর রক্তমিশ্রিত জিহ্বায় আছে জীবনের অগ্নি ও বিলয়ের শক্তি। তিনি শিবের বুকে নৃত্যরত, কারণ নিঃস্তব্ধ চেতনা কেবল তাঁর গতিতেই প্রাণ পায়। কালিকা তাই কেবল নারী নয়, তিনি নিজেই মহাশক্তি—চেতনার কার্যকর দিক, যিনি নীরব ব্রহ্মকে অভিজ্ঞতার রূপ দেন।
অভিনবগুপ্ত ও অন্যান্য তন্ত্রাচার্যদের মতে, কালিকার এই রূপ তন্ত্রের ক্রমপন্থা (krama tradition)-এ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে বারো কালিকার বর্ণনা আছে—সৃষ্টির প্রত্যেক ধাপ একেক কালিকার রূপ, যিনি চেতনার বিভিন্ন কম্পন বা বিকিরণ প্রকাশ করেন। শেষ কালিকা হলেন মহাকালিকা, যিনি সব ক্রিয়ার, সব শব্দের, সব চিন্তার অতীত। তিনি শূন্য নন, বরং সমস্ত কিছুর অন্তর্নিহিত চেতনা। তাই যখন সাধক ধ্যান করে বলেন, “আমি কালিকা”—তখন সে নারীকে নয়, চেতনার সেই প্লেনাম অবস্থা—অসীম, অবিনশ্বর, সর্বব্যাপী আত্মস্বরূপ—চিনে নেয়। এইভাবে কালিকা হয়ে ওঠেন মুক্তির প্রতীক, কারণ তাঁর মধ্যেই সব বিপরীত একত্র হয়—সৃষ্টি ও ধ্বংস, জীবন ও মৃত্যু, প্রেম ও ভয়—সব মিলে এক মহাসত্য: চেতনার পূর্ণতা।
তন্ত্রের ক্রমপন্থা (Krama Tradition) হলো কাশ্মীর শৈব দর্শনের এক রহস্যময় ও উচ্চতর ধারা, যেখানে চেতনার স্ব-প্রকাশ, বিকাশ এবং লয়ে (dissolution) যাওয়াকে এক অবিচ্ছিন্ন ক্রম বা ধারাবাহিক প্রবাহ হিসেবে দেখা হয়। “Krama” শব্দটি সংস্কৃত “ক্রম্” (krama) থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো ধাপ, পর্ব, বা ক্রমান্বয়—অর্থাৎ, এমন এক প্রক্রিয়া, যা ধীরে ধীরে কিন্তু নিরবচ্ছিন্নভাবে অগ্রসর হয়। Krama দর্শন শেখায় যে, চেতনা কখনও স্থির নয়; তা ক্রমাগত নিজেকে উন্মোচন করছে, প্রসারিত করছে, এবং নিজেই নিজের মধ্যে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এই পদ্ধতি প্রথমত তন্ত্রশাস্ত্র-এর অন্তর্গত এবং কাশ্মীর শৈবতত্ত্বের মধ্যে এর বিকাশ ঘটে নবম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে। Krama দর্শনের প্রাথমিক গুরু হিসেবে ধরা হয় দত্তাত্রেয়, ত্রিপুরা দেবী, এবং পরে অভিনবগুপ্ত-এর গুরু শম্ভুনাথ ও অমরনাথকে। এখানে “ত্রিপুরা” মানে তিনটি পুরী বা চেতনার তিন স্তর—জাগ্রত (waking), স্বপ্ন (dreaming), এবং সুষুপ্তি (deep sleep)—যার প্রতিটি স্তরই চেতনার এক একটি রূপান্তর বা ক্রম। Krama tradition তাই দর্শন নয় শুধু; এটি অভিজ্ঞতার পথ, যেখানে সাধক নিজ চেতনার গভীর থেকে গভীরতর স্তরে প্রবেশ করতে শেখে।
এখানে চেতনা (Cit)-কে বলা হয় “প্রকাশ” (Prakāśa)—অর্থাৎ, আলোক বা জ্ঞানের মূল উৎস। কিন্তু এই প্রকাশ কেবল আলো নয়; এর সঙ্গে আছে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতনতা, যাকে বলা হয় বিমর্শ (Vimarśa)। প্রকাশ মানে হলো চেতনার আলো; বিমর্শ মানে সেই আলো নিজেরই স্বরূপকে চিনছে। Krama দর্শনে এই প্রকাশ ও বিমর্শের মিলন থেকেই সমস্ত সৃষ্টি ঘটে। প্রকাশই হলো শিব (Śiva)—নীরব, স্থিত, নিঃসীম চেতনা; আর বিমর্শই হলো শক্তি (Śakti)—ক্রিয়াশীল, গতিশীল, প্রকাশমুখী চেতনা। শক্তির এই সর্বোচ্চ রূপই দেবী কালিকা, যিনি সময় (kāla)-এর সীমা ভেঙে চেতনার নিজস্ব অসীমতা প্রকাশ করেন।
Krama দর্শনে বলা হয়—সৃষ্টি কোনো বহিরাগত ঘটনা নয়, বরং চেতনার নিজের মধ্যেই এক অন্তর্গত উদ্ভাসন। চেতনা যখন নিজের স্বরূপে স্থিত থাকে, তখন সে নীরব, অচঞ্চল, শিব—যেখানে কোনো ভেদ বা গতি নেই। কিন্তু সেই একই চেতনা যখন নিজের অস্তিত্বকে চিনতে চায়, অর্থাৎ, “আমি আছি”—এই অনুভব জন্ম নেয়, তখন সেই সচেতনতা এক নতুন মাত্রায় জেগে ওঠে। এই নিজেকে জানা বা নিজের প্রতিফলন—তাকেই বলা হয় বিমর্শ (Vimarśa)। আর এই আত্ম-চেতনার উন্মেষই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার সূচনা।
এইজন্য Krama দর্শন বলে, প্রকাশ (Prakāśa) ও বিমর্শ (Vimarśa)-এর মিলন থেকেই সমস্ত সৃষ্টি ঘটে। প্রকাশ মানে চেতনার আলোক—যে নিঃসীম জ্ঞান, যিনি শিব, যিনি “আমি আছি”-র নিত্য স্থিতি। বিমর্শ মানে সেই আলোক নিজের ওপর প্রতিফলিত হচ্ছে—চেতনা নিজেকে “আমি জানি” রূপে প্রকাশ করছে। যখন আলোক কেবল জ্বলে, তখন কোনো জগৎ নেই; কিন্তু যখন সেই আলোক নিজেরই পরিচয় সচেতনভাবে অনুভব করে, তখন তার ভেতর থেকেই প্রকাশিত হয় নানা রূপ, নানা ধ্বনি, নানা ভাব—এই উদ্ভাসনই হলো সৃষ্টি।