১. স্বপ্ন জগৎ (Dream World—অসৎ/আপেক্ষিক): কর্তা—স্বপ্নকালীন মন (মনস)। স্বরূপ—স্বপ্নে-দেখা সমস্ত দৃশ্য, মানুষ বা ঘটনা—যা মন দ্বারা সৃষ্ট এবং সেই মনের দ্বারাই টিকে থাকে। যখন ঘুম ভাঙে, সেই জগৎ বিলীন হয়ে যায়, যা প্রমাণ করে তার মিথ্যাত্ব (Mithyātva)।
২. জাগ্রত জগৎ (Waking World—ব্যাবহারিক/আপেক্ষিক): কর্তা—জাগ্রত অবস্থায় এই দৃশ্যমান জগৎ ব্রহ্মচেতনা (বা ব্রহ্মের শক্তি মায়া) দ্বারা প্রপঞ্চিত বা বিস্তারিত হয়। স্বরূপ—যেমন স্বপ্নকালীন মনই স্বপ্নের জগৎকে ধরে রাখে, তেমনি ব্রহ্মচেতনা (বা শুদ্ধ চৈতন্য) দ্বারা এই স্থূল জগৎ প্রতিভাত হয় এবং টিকে থাকে।
এই তুলনার মাধ্যমে বেদান্তীরা দুটো বিষয় প্রতিষ্ঠা করতে চান—
চৈতন্যের একত্ব: জাগ্রত অবস্থায় ব্রহ্মচেতনা বা 'দৃক্' (দ্রষ্টা) ছাড়া কোনো সৃষ্টি নেই, ঠিক যেমন মন ছাড়া স্বপ্নের জগৎ নেই।
জগতের আপেক্ষিকতা: জাগ্রত জগৎকে আমরা যতই সত্য বলে মনে করি না কেন, তা স্বপ্ন জগতের মতোই ব্রহ্মের চেয়ে ভিন্ন নয় এবং পরমার্থিক সত্যে এর কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই।
মহাজাগতিক মন (Hiraṇyagarbha) হলো ভারতীয় দর্শন, বিশেষত বেদান্ত এবং পুরাণ-এ বর্ণিত এক গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এর অর্থ হলো "সুবর্ণ ডিম্ব" বা "হিরন্ময় গর্ভ", যা সৃষ্টির প্রথম অভিব্যক্ত চেতনার প্রতীক।
হিরণ্যগর্ভের স্বরূপ (The Nature of Hiraṇyagarbha):
১. প্রথম ব্যক্তিকরণ: হিরণ্যগর্ভ হলেন পরম ব্রহ্মের (নির্গুণ ব্রহ্ম) প্রথম ব্যক্তিরূপ বা প্রকাশিত রূপ। ব্রহ্ম যখন সৃষ্টি করার সংকল্প করেন, তখন তাঁর যে প্রথম চেতনা সক্রিয় হয়, সেটিই হিরণ্যগর্ভ।
২. সমষ্টি বুদ্ধি: হিরণ্যগর্ভ হলো সমগ্র মহাবিশ্বের সমষ্টিগত মন বা বুদ্ধি (Cosmic Mind/Intellect)। তিনি কোনো একক জীবের মন নন, বরং সমস্ত জীবের মন, বুদ্ধি ও অহংকারের সম্মিলিত আধার।
৩. সূক্ষ্ম জগৎ: তিনি সূক্ষ্ম জগতের (Subtle Universe) সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি স্থূল জগৎ সৃষ্টির ঠিক আগের স্তরের চেতনার প্রতিনিধিত্ব করেন।
৪. সৃষ্টির উৎপাদক: পুরাণ মতে, হিরণ্যগর্ভই সেই আদি বীজ, যা থেকে সমস্ত বৈচিত্র্যময় জগৎ এবং ব্রহ্মা (সৃষ্টিকর্তা দেবতা) আবির্ভূত হন।
বেদান্তে হিরণ্যগর্ভকে সাধারণত ঈশ্বর বা সগুণ ব্রহ্মের একটি রূপ হিসেবে দেখা হয়, যখন তিনি সূক্ষ্ম উপাধি (সূক্ষ্ম দেহ ও সমষ্টি বুদ্ধি) দ্বারা সীমিত থাকেন। হিরণ্যগর্ভ হলেন সমষ্টি সূক্ষ্ম শরীরের (Collective Subtle Body) অধিপতি। তাঁকে সূত্রাত্মা (Sūtrātman) বা প্রাণ-ও বলা হয়, কারণ তিনিই সেই মৌলিক শক্তি, যা সমস্ত প্রাণকে সূত্র বা সুতোর মতো ধারণ করে আছেন।
হিরণ্যগর্ভ, যা 'মহৎ' (Cosmic Intellect) নামেও পরিচিত, তা এক বিশাল ও সর্বব্যাপী চেতনা, যা সমগ্র সৃষ্টিকে এক অখণ্ড সূত্রে বেঁধে রেখেছে। এটি শুধুমাত্র একটি ধারণা নয়, বরং মহাজাগতিক প্রাণশক্তির উৎস, যা থেকে সমস্ত ব্যক্ত চেতনা বা ব্যষ্টি মন উদ্ভূত হয়। এই ধারণার মূলে রয়েছে সেই আদিম শক্তি, যা সৃষ্টির পূর্বে অব্যক্ত অবস্থায় বিরাজমান ছিল এবং যা থেকে ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি কণা, প্রতিটি জীব ও প্রতিটি চিন্তা বিকশিত হয়েছে।
প্রাচীন ভারতীয় দর্শন, বিশেষ করে উপনিষদ ও সাংখ্য দর্শনে হিরণ্যগর্ভের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের ত্রিমূর্তির ধারণার পূর্বসূরি। হিরণ্যগর্ভকে প্রায়শই একটি সুবর্ণ ডিম বা গর্ভ হিসাবে কল্পনা করা হয়, যার মধ্যে সমস্ত সৃষ্টির সম্ভাবনা নিহিত। এই গর্ভ থেকেই মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তা বা 'মহৎ' প্রকাশ পায়, যা বিশ্বজগতের ক্রমবিকাশ ও শৃঙ্খলার প্রধান চালিকাশক্তি।
এই মহৎ চেতনা কেবল বাহ্যিক জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করে না, বরং প্রতিটি স্বতন্ত্র জীব সত্তার মধ্যেও এর প্রভাব বিদ্যমান। মানুষের ব্যক্তিগত মন, বুদ্ধি এবং অনুভূতিগুলি হিরণ্যগর্ভের ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি মাত্র। প্রতিটি জীবের আত্মিক বিকাশ এবং মহাজাগতিক চেতনার সাথে সংযোগ স্থাপনের ক্ষমতা এই হিরণ্যগর্ভের মাধ্যমেই সম্ভব হয়। এটিই হলো সেই সেতু, যা ব্যষ্টি মনকে সমষ্টিগত চেতনার সাথে যুক্ত করে।
হিরণ্যগর্ভ কেবল একটি দার্শনিক ধারণা নয়, এটি সমগ্র মহাবিশ্বের প্রাণকেন্দ্র, সৃষ্টির উৎস এবং চেতনার আদিভূমি। এটি বোঝায় যে, সকল জীব ও জগতের মূলে একীভূত একটি মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তা বিদ্যমান, যা সকলের মধ্যে প্রবাহিত এবং যা থেকেই আমাদের স্বতন্ত্র সত্তা ও চেতনা বিকশিত হয়েছে। এই উপলব্ধি আধ্যাত্মিক জাগরণ এবং আত্ম-উপলব্ধির পথ উন্মোচন করে, যা মানুষকে তাদের নিজস্ব সত্তার গভীরতা এবং মহাজাগতিক একতার সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করে।
চক্র (শক্তিকেন্দ্র) ও নাড়ি (প্রাণপথ) হলো মানুষের সূক্ষ্ম শরীরের দুটি প্রধান অংশ, যেগুলো যোগ ও তন্ত্রশাস্ত্রে গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এগুলি দেহের ভেতর কোনো দৃশ্যমান অংশ নয়, বরং একধরনের শক্তি-তন্ত্র, যেখানে জীবনীশক্তি বা প্রাণ প্রবাহিত হয় এবং চেতনা ক্রমে উচ্চতর স্তরে উন্নীত হয়।
চক্র শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো "চাকা" বা "ঘূর্ণি"—অর্থাৎ, এটি শক্তির ঘূর্ণাবর্ত বা প্রাণের ঘূর্ণায়মান কেন্দ্র নির্দেশ করে। এই চক্রগুলি আমাদের ভৌত শরীরের অঙ্গ নয়, বরং সূক্ষ্ম শরীর বা প্রাণময় কোষের (Subtle Body) অংশ। মানবদেহে মেরুদণ্ড বরাবর ষট্চক্রের (বা সপ্তচক্রের) পরিচয় এবং কার্যকারিতা নিয়ে লিখছি:
১. মূলাধার চক্র (Mūlādhāra Chakra): এর অবস্থান মেরুদণ্ডের গোড়ায় বা ভিত্তিদেশে। এটি স্থিতি, নিরাপত্তা, বেঁচে থাকার প্রবৃত্তি (Survival Instinct) এবং জাগতিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত।
২. স্বাধিষ্ঠান চক্র (Svādhiṣṭhāna Chakra): এর অবস্থান: সাধারণত তলপেটে বা জননেন্দ্রিয়ের কাছে। এটি সৃজনশীলতা, যৌনতা, আবেগ এবং আনন্দের সঙ্গে যুক্ত।
৩. মণিপুর চক্র (Maṇipūra Chakra): এর অবস্থান নাভির কাছে বা সৌর স্নায়ুজাল কেন্দ্রে। এটি ইচ্ছাশক্তি (Willpower), ব্যক্তিগত ক্ষমতা (Personal Power), আত্মবিশ্বাস এবং রূপান্তরের (হজম/তেজ) কেন্দ্র।
৪. অনাহত চক্র (Anāhata Chakra): এর অবস্থান হৃদয়-কেন্দ্রে। এটি প্রেম, সহানুভূতি, ক্ষমা, শান্তি এবং সংহতির প্রতীক। এটি নিম্নতর চক্র এবং উচ্চতর চক্রের মধ্যে সংযোগ সাধন করে।
৫. বিশুদ্ধ চক্র (Viśuddha Chakra): এর অবস্থান গলায় বা কণ্ঠনালীর কাছে। এটি যোগাযোগ (Communication), আত্ম-প্রকাশ এবং সত্য প্রকাশের কেন্দ্র।
৬. আজ্ঞাচক্র (Ājñā Chakra): এর অবস্থান ভ্রূর মধ্যস্থানে (তৃতীয় নয়ন)। এটি অন্তর্দৃষ্টি (Intuition), জ্ঞান, মনন এবং চেতনার নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত।
৭. সহস্রার চক্র (Sahasrāra Chakra): এর অবস্থান মস্তিষ্কের মুকুটে বা মাথার শীর্ষদেশে। এটি পরম ঐক্যের, বিশুদ্ধ চেতনার এবং ব্রহ্মের সঙ্গে মিলনের প্রতীক। এটি হলো সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক কেন্দ্র।
চক্রগুলি মূলত মহাজাগতিক শক্তি (প্রাণশক্তি) গ্রহণ করে এবং তা সারাশরীরে বিতরণ করে।
নাড়ি (Nāḍī) মানে হলো সূক্ষ্ম নালী বা শক্তি প্রবাহপথ, যার মধ্য দিয়ে প্রাণ বা জীবনী শক্তি চলাচল করে। এটি ভৌত রক্তনালী বা স্নায়ুর মতো নয়, বরং সূক্ষ্ম বা প্রাণময় শরীরের অংশ। যোগশাস্ত্রে বলা হয়েছে, মানুষের শরীরে প্রায় ৭২,০০০ থেকে আরও বেশি সংখ্যক নাড়ি রয়েছে। এই নাড়িগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মানবদেহে এক বিশাল প্রাণ-তন্ত্র (Pranic System) গঠন করে। এই তন্ত্রের মধ্যে তিনটি নাড়ি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ:
সুষুম্না (Suṣumṇā): মেরুদণ্ডের ঠিক মধ্য দিয়ে যায়। এটি কেন্দ্রীয় নাড়ি, যার মধ্য দিয়ে কুণ্ডলিনী শক্তি জাগ্রত হয়ে ঊর্ধ্বগামী হয়। এটি অখণ্ড চেতনার পথ।
ইড়া (Iḍā): মেরুদণ্ডের বাম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি চন্দ্র শক্তি (শীতল, শান্ত, মানসিক শক্তি) বহন করে।
পিঙ্গলা (Piṅgalā): মেরুদণ্ডের ডান দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি সূর্য শক্তি (উষ্ণ, সক্রিয়, জীবনী শক্তি) বহন করে।
ইড়া ও পিঙ্গলার সমন্বিত ভারসাম্যই (অর্থাৎ, মন ও প্রাণশক্তির ভারসাম্য) সুষুম্না নাড়িকে সক্রিয় করে তোলে। এর ফলে সুপ্ত থাকা কুণ্ডলিনী শক্তি (আধ্যাত্মিক শক্তি) ঊর্ধ্বগামী হয়ে মেরুদণ্ড বরাবর অবস্থিত প্রতিটি চক্রকে জাগ্রত করে এবং সাধককে মোক্ষের দিকে চালিত করে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি হলো মহাজাগতিক অঙ্গসংস্থানবিদ্যার (Cosmic Anatomy) ক্ষুদ্র ব্রহ্মাণ্ডিক (Microcosmic) প্রতিফলন।
নাড়ি ও চক্র একে অপরের পরিপূরক। নাড়িগুলি হলো শক্তির প্রবাহপথ, আর চক্রগুলি সেই শক্তির কেন্দ্রীয় জংশন। যোগের বিভিন্ন অনুশীলন—বিশেষত প্রাণায়াম, মুদ্রা, ধ্যান—এর লক্ষ্য হলো এই নাড়িগুলিকে পরিশুদ্ধ করা, যাতে শক্তি অবাধে প্রবাহিত হতে পারে। যখন সুষুম্না সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ হয় এবং কুণ্ডলিনী শীর্ষ চক্রে (সাহস্রার) পৌঁছে যায়, তখন যোগশাস্ত্রে বলা হয়, সাধক পরম চেতনার সঙ্গে মিলিত হন—অর্থাৎ, আত্মা ও ব্রহ্মের ঐক্য ঘটে। চক্র ও নাড়ি কোনো কাল্পনিক ধারণা নয়; এগুলি মানুষের আত্মিক-শারীরস্থান—যার মধ্য দিয়ে দেহ, মন, ও আত্মা এক প্রাণময় ঐক্যে যুক্ত থাকে।
এই মহাজাগতিক শারীরস্থানকে বোঝার জন্য বেদান্ত “পঞ্চকোষ”-এর কাঠামো প্রয়োগ করে। প্রথম স্তর অন্নময় কোষ, যা দেহের জৈব ভিত্তি—খাদ্য দ্বারা গঠিত, পরিবর্তনশীল। দ্বিতীয় স্তর প্রাণময় কোষ, যা জীবনশক্তির (vital energy) প্রবাহ—শ্বাস, স্পন্দন, সঞ্চালন। তৃতীয় স্তর মনোময় কোষ, যা চিন্তা, অনুভূতি, ইন্দ্রিয় ও অভিজ্ঞতার কেন্দ্র। চতুর্থ স্তর বিজ্ঞানময় কোষ, যেখানে বুদ্ধি, বিচার ও আত্মসচেতনতার সূচনা ঘটে। পঞ্চম স্তর আনন্দময় কোষ, যেখানে সমস্ত গতি স্থগিত, থাকে এক গূঢ় প্রশান্তি—তবু অজ্ঞতা রয়ে যায়। এই পাঁচ কোষ মহাজাগতিক স্তরে প্রতিফলিত হয়—
প্রথমটি ভৌত প্রকৃতি (Annamaya Kosha), যা আমাদের স্থূল শরীর এবং খাদ্য ও পৃথিবীর উপাদানের উপর নির্ভরশীল। এটি আমাদের অস্তিত্বের মৌলিক কাঠামো, যা জন্ম, বৃদ্ধি, পরিবর্তন, অবক্ষয় এবং মৃত্যু—এই চক্রের মধ্যে দিয়ে যায়। এটি পঞ্চভূতের (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম) সমন্বয়ে গঠিত এবং মহাবিশ্বের ভৌত স্তরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।
দ্বিতীয়টি প্রাণ-তত্ত্ব (Pranamaya Kosha), যা জীবনের স্পন্দন এবং শক্তি প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটি ভৌত শরীরের গভীরে অবস্থিত এবং শ্বাস-প্রশ্বাস, রক্ত সঞ্চালন এবং অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়াগুলিকে পরিচালিত করে। প্রাণ আমাদের শরীর ও মনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং মহাজাগতিক প্রাণশক্তির সঙ্গে যুক্ত। এই প্রাণ-তত্ত্ব মহাবিশ্বের বায়ুমণ্ডলীয় বা সূক্ষ্ম শক্তি স্তরে প্রতিফলিত হয়, যা সকল জীবের মধ্যে জীবন ধারণ করে।
তৃতীয়টি মন-তত্ত্ব (Manomaya Kosha), যা আমাদের মানসিক প্রক্রিয়া, চিন্তা, অনুভূতি এবং সংবেদনশীলতাকে ধারণ করে। এটি আমাদের মন, আবেগ এবং ইন্দ্রিয়গুলির কার্যকলাপের কেন্দ্র। মন-তত্ত্ব আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বাহ্যিক বিশ্বের সঙ্গে আমাদের ইন্টারঅ্যাকশনকে প্রভাবিত করে। মহাজাগতিক স্তরে এটি মানসিক জগত বা চিন্তার ক্ষেত্রকে প্রতিফলিত করে, যেখানে ধারণা এবং জ্ঞান উৎপন্ন হয়।
চতুর্থটি মহৎ-বুদ্ধি বা মহৎ (Vigyanamaya Kosha), যা আমাদের প্রজ্ঞা, বিচার এবং গভীর উপলব্ধির স্তর। এটি আমাদের উচ্চতর জ্ঞান, অন্তর্দৃষ্টি এবং বৈষম্যমূলক ক্ষমতাকে প্রতিনিধিত্ব করে। মহৎ-বুদ্ধি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য এবং মহাজাগতিক সত্যকে বুঝতে সাহায্য করে। এটি মহাজাগতিক বুদ্ধিমত্তা বা মহাবিশ্বের মৌলিক জ্ঞান স্তরের সঙ্গে সংযুক্ত, যা সকল সৃষ্টি ও অস্তিত্বের চালিকা শক্তি।
পঞ্চমটি মায়ার আদি বীজ (Anandamaya Kosha), যা আনন্দ, শান্তি এবং পরম সুখের স্তর। এটি আমাদের অস্তিত্বের গভীরতম এবং সূক্ষ্মতম অংশ, যেখানে আমরা আমাদের আত্মিক প্রকৃতি এবং ব্রহ্মের সঙ্গে একত্ব অনুভব করি। এটি সকল অভিজ্ঞতার উৎস এবং সকল কোষের চূড়ান্ত গন্তব্য। মায়ার আদি বীজ মহাজাগতিক স্তরে কারণ শরীর বা আনন্দময় জগতকে প্রতিফলিত করে, যেখানে পরম সুখ এবং ঐশ্বরিক চেতনা বিরাজমান। এই স্তরটি মহাবিশ্বের সৃষ্টির মূল উৎস এবং সকল কিছুর শেষ আশ্রয়।