অদ্বৈতের দৃষ্টিতে, প্রমা-বিরোধের প্রক্রিয়াই জ্ঞানের বিবর্তনের মৌলিক পদ্ধতি। নিম্নতর স্তরের সত্য (স্বপ্ন, জাগরণ, কর্ম, নামরূপ) ক্রমে উচ্চতর সত্যে বাধিত হয়—যা চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্রহ্ম-জ্ঞান। সেই পর্যায়ে জ্ঞান আর দ্বৈত নয়—জ্ঞাতা, জ্ঞান ও জ্ঞেয় ত্রয়ী বিলীন হয়। তখন জ্ঞান নিজেই সত্তা হয়ে ওঠে, এবং প্রমা-বিরোধের আর কোনো প্রয়োজন থাকে না।
অদ্বৈত বেদান্তের জ্ঞানতত্ত্বে প্রমা-বিরোধ (Pramā-Virodha) বা বাধ-ব্যবহার (Bādha-Vyavahāra) এমন এক সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া, যেখানে জ্ঞান ধীরে ধীরে নিজের নিম্নতর স্তরকে অতিক্রম করে উচ্চতর উপলব্ধিতে রূপান্তরিত হয়। এখানে জ্ঞানের বিকাশ কোনো একবারে ঘটিত ঘটনা নয়, বরং এক অন্তর্নিহিত দ্বান্দ্বিক উন্মোচন (dialectical unfolding)—যেখানে প্রতিটি সত্য, প্রতিটি অভিজ্ঞতা, তার সীমাকে প্রকাশ করে নিজেকে অতিক্রমের আহ্বান জানায়।
"Dialectical Unfolding" বা দ্বান্দ্বিক উন্মোচন হলো একটি দার্শনিক প্রক্রিয়া, যা দ্বারা বোঝায়—একটি ধারণা, ঐতিহাসিক ঘটনা, বা সামাজিক অবস্থা কীভাবে তার অভ্যন্তরীণ বিরোধ বা দ্বন্দ্বের (Dialectic) মাধ্যমে সময়ের সাথে সাথে গতিশীলভাবে বিকশিত হয়ে ওঠে। একে দ্বান্দ্বিক বিকাশ বা দ্বান্দ্বিক বিবর্তনও বলা হয়। এই প্রক্রিয়াটি মূলত জার্মান দার্শনিক জিডব্লিউএফ হেগেলের চিন্তাধারা থেকে এসেছে এবং এটি তিনটি প্রধান ধাপে কাজ করে, যা গতিশীল পরিবর্তনের জন্ম দেয়:
১. থিসিস (Thesis / বাদ): এটি হলো একটি প্রাথমিক অবস্থা, ধারণা, বা শক্তি। এটি সেই ভিত্তি, যা থেকে প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২. অ্যান্টিথিসিস (Antithesis / প্রতিবাদ): এটি হলো থিসিসের বিপরীত বা বিরোধী শক্তি। এটি থিসিসের অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা বা অসম্পূর্ণতাকে প্রকাশ করে এবং তাকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
৩. সিন্থেসিস (Synthesis / সংশ্লেষ): বাদ এবং প্রতিবাদের মধ্যেকার এই সংঘাত বা দ্বন্দ্বের (Dialectical Relation) ফলে একটি নতুন, উন্নত, এবং উচ্চতর অবস্থা তৈরি হয়, যা সংশ্লেষ নামে পরিচিত। এই সংশ্লেষটি উভয় পক্ষের সত্যের অংশকে ধারণ করে, কিন্তু উভয়ের চেয়ে এগিয়ে থাকে। এই সংশ্লেষ (Synthesis) নিজেই আবার পরবর্তী ধাপে 'বাদ' (Thesis) হিসেবে কাজ করে এবং এই দ্বান্দ্বিক উন্মোচন প্রক্রিয়াটি অবিরাম চলতে থাকে, যা ধারাবাহিক বিবর্তন বা অগ্রগতিকে ব্যাখ্যা করে।
মন ও আত্মার মধ্যেকার সম্পর্কটি ভারতীয় দর্শন, বিশেষত বেদান্ত ও যোগ দর্শনে, একটি গভীর দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক (Dialectical Relation) হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সম্পর্কটি হলো বন্ধন (Mind) এবং মুক্তি (Ātman)-এর মধ্যেকার নিরন্তর সংঘাত।
১. বাদ: মনের বন্ধন সৃষ্টিকারী স্বরূপ মন হলো প্রকৃতির (জড়) অংশ এবং এটি অনিত্য, চঞ্চল, কামনা ও বাসনাযুক্ত। মন যখন এই কামনা-বাসনার দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন তা আত্মাকে (পুরুষ) জাগতিক বন্ধনে (সুখ-দুঃখ) আবদ্ধ করে। এই অবস্থায় মন আত্মার শত্রু হিসেবে কাজ করে।
২. প্রতিবাদ: নিয়ন্ত্রণ ও শুদ্ধি (সংঘাত)—মন বন্ধন সৃষ্টি করলেও এটিই আত্মার মুক্তির একমাত্র যন্ত্র বা মাধ্যম। এই ধাপটি হলো মনের চঞ্চলতার বিরুদ্ধে বিবেক (বুদ্ধি) এবং সংযমের মাধ্যমে নিরন্তর প্রচেষ্টা। মানুষ যখন তার মনের অসৎ প্রবৃত্তিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে শুদ্ধ করার চেষ্টা করে, তখন মন বন্ধুতে পরিণত হয়। গীতার উপদেশ—"উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ" (গীতা ৬.৫) অর্থাৎ, "(ব্যক্তির উচিত) মন দ্বারা নিজেকে (বন্ধন থেকে) উদ্ধার করা, (তার মন তার) নিজেকে যেন অধঃপতিত না করে।"—মন যদি সংযত হয়, তবে সে বন্ধু; আর যদি অসংযত হয়, তবে সে শত্রু।—এই প্রতিবাদকেই নির্দেশ করে।
৩. সংশ্লেষ: মনো-নাশ ও মুক্তি—দ্বান্দ্বিকতার চূড়ান্ত সংশ্লেষ হলো যখন মনকে সম্পূর্ণরূপে বশীভূত করে শুদ্ধ অন্তঃকরণে পরিণত করা হয়। এই অবস্থায় মনের অহংকার, আসক্তি ও চঞ্চলতা লীন হয়ে যায়, যা 'মনো-নাশ' বা মনের লয় নামে পরিচিত।
এর ফলস্বরূপ, মন তার ভ্রমজনিত 'উপাধি' (মিথ্যা পরিচয়) ত্যাগ করে এবং আত্মার স্বরূপে স্থিত হয়। এই স্থির ও শুদ্ধ মন তখন আত্মার 'অজাত, অচল, নির্ভ্রান্ত চেতনা' স্বরূপকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে, যার চূড়ান্ত ফল হলো মুক্তি। মুক্তি না এলে সংশ্লেষকে বাদ ধরে "Dialectical Unfolding"-এর প্রক্রিয়াটি আবার শুরু করতে হবে। মন ও আত্মার এই সম্পর্কটি হলো একটি আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া—যেখানে মন শুরু করে আত্মার শত্রু হিসেবে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বন্ধুর ভূমিকা পালন করে এবং শেষপর্যন্ত নিজের লয়ের মাধ্যমে আত্মাকে তার প্রকৃত স্বরূপে মুক্ত করে।
স্বপ্ন জাগরণের দ্বারা বাধিত হয়; জাগরণ ব্রহ্মজ্ঞান দ্বারা বাধিত হয়; কিন্তু এই বাধ বা নাশ কোনো পরম ধ্বংস নয়—এটি এক উন্মোচন। যেমন মরীচিকা বিলীন হয় না, কেবল জানা যায় যে, তা মরীচিকা—অর্থাৎ, তার মিথ্যাত্ব প্রকাশিত হয়। অদ্বৈত বেদান্ত এই ক্রমবিকাশকেই জ্ঞানের স্ব-উত্তরণ (Self-Transcendence of Knowledge) বলে, যেখানে মিথ্যা সত্যে রূপান্তরিত হয় না, বরং সত্যের আলোয় নিজের সীমা প্রকাশ করে বিলীন হয়।
এই প্রক্রিয়া আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনে হেগেলীয় Aufhebung (উচ্চারণ: আউফহেবুং) বা Sublation-এর সঙ্গে গভীরভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ। হেগেলের Dialectical Logic-এ Aufhebung এমন এক দ্বৈত প্রক্রিয়া—যেখানে নিম্নতর স্তরের ধারণা একদিকে অস্বীকৃত (negated) হয়, আবার অন্যদিকে সংরক্ষিত (preserved) থেকেও উচ্চতর স্তরে উত্তীর্ণ (transcended) হয়। কোনো ধারণা বা অবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় না; বরং তার মৌল সত্য উচ্চতর সত্যে আত্মীকৃত হয়ে যায়। হেগেলের ভাষায়, “The finite is overcome but not lost.” এই দ্বন্দ্বমূলক গতি—thesis থেকে antithesis, তা থেকে synthesis—প্রতিটি ধাপে নিম্নতর সত্যকে অতিক্রম করে, তবু তার অন্তর্নিহিত শক্তিকে ধারণ করে রাখে।
ঠিক তেমনি অদ্বৈত বেদান্তেও, প্রমা-বিরোধের মাধ্যমে প্রতিটি নিম্নতর জ্ঞান উচ্চতর জ্ঞানে বাধিত হয়—স্বপ্ন-জ্ঞান জাগরণে, জাগরণ ব্রহ্ম-জ্ঞানে—কিন্তু এদের প্রতিটি স্তরই ব্রহ্মের আলোয় প্রতীয়মান, তাই আপাতভাবে মিথ্যা হলেও অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে তা অর্থবহ ও কার্যকর। এইভাবে অদ্বৈত বেদান্তের জ্ঞানতত্ত্ব আসলে একধরনের সত্তাতাত্ত্বিক (ontological) Aufhebung, যেখানে ভ্রম, জাগরণ ও ব্রহ্মজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্ক ধ্বংস ও সংরক্ষণের দ্বৈত প্রক্রিয়ায় গঠিত।
মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এই প্রক্রিয়াটি সুইস মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কার্ল গুস্তাভ ইয়ুঙের অচেতন বা নিজ্ঞান মনের সংহতকরণ (বা সমন্বয়-সাধন) বা “Integration of the Unconscious”-এর সঙ্গে তুলনীয়।
সংহতকরণের অর্থ—এই প্রক্রিয়ার অর্থ হলো, সচেতন মন (Conscious Mind) দ্বারা নিজ্ঞান মনের উপাদানসমূহকে (Unconscious Material) স্বীকৃতি, গ্রহণ এবং সচেতন ব্যক্তিত্বের (Ego) সঙ্গে একীভূত করা। নিজ্ঞান মনে যা-কিছু থাকে, তার মধ্যে প্রধান হলো—
১. আর্কিটাইপ (Archetypes): আর্কিটাইপ হলো মানবজাতির যৌথ নিজ্ঞান (Collective Unconscious) থেকে আসা মৌলিক, সর্বজনীন এবং জন্মগত মানসিক প্যাটার্ন বা প্রতীক।
ক. ছায়া (The Shadow):
স্বরূপ: ব্যক্তিত্বের সেই অন্ধকার দিক, যা আমরা অস্বীকার করি বা অপছন্দ করি।
উদাহরণ: রাগ, ঈর্ষা, বা দুর্বলতা—যা আমরা অন্যের মধ্যে দেখলে বেশি সমালোচনা করি, কারণ নিজ্ঞান মনে আমাদের নিজেদের মধ্যেই তা বিদ্যমান।
খ. ব্যক্তিসত্তা (The Persona):
স্বরূপ: মুখোশ বা সামাজিক ভূমিকা। সমাজে নিজেকে উপস্থাপনের জন্য তৈরি করা কৃত্রিম রূপ।
উদাহরণ: কোনো ব্যক্তি অফিসে নিজেকে "খুবই আত্মবিশ্বাসী" বা "সদা হাস্যময়" হিসেবে দেখাচ্ছেন, যদিও তাঁর ভেতরের অনুভূতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে।
গ. মাতা (The Great Mother):
স্বরূপ: পুষ্টি, সৃষ্টি, জন্ম, এবং একই সাথে ধ্বংসের প্রতীক।
উদাহরণ: দেবী দুর্গা, কালী বা প্রকৃতি মাতা—একইসঙ্গে জীবনদাতা এবং জীবন সংহারকারী রূপে প্রকাশ।
২. দমিয়ে রাখা স্মৃতি (Repressed Memories): এটি হলো আঘাতজনিত বা কষ্টকর স্মৃতি, যা মানসিক প্রতিরক্ষার কারণে সচেতন মন থেকে জোর করে অচেতন মনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
ক. শৈশবের মানসিক আঘাত: কোনো নিকটাত্মীয়ের দ্বারা ভয় দেখানো বা অপমানিত হওয়ার ঘটনা। এর ফলস্বরূপ ব্যক্তিটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও সেই বিশেষ আত্মীয়ের আশেপাশে গেলে অকারণে উদ্বেগ বা শারীরিক অস্বস্তি বোধ করে, যদিও কারণটি তার সচেতন মনে থাকে না।
খ. গুরুত্বপূর্ণ ব্যর্থতা: কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া। এর ফলস্বরূপ ব্যক্তিটি সেই ব্যর্থতার সমস্ত তথ্য মন থেকে মুছে ফেলে বা বার বার ভুলে যায়, এবং ভবিষ্যতের সকল প্রতিযোগিতার প্রতি অস্বাভাবিক ভয় তৈরি হয়।
গ. দুর্ঘটনা বা ট্রমা: কোনো ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো প্রিয়জনকে মারা যেতে দেখা। এর ফলস্বরূপ ব্যক্তিটির দুর্ঘটনার বিবরণ বা স্থান সম্পূর্ণ মনে করতে না পারা (Amnesia), কিন্তু ঘুমের মধ্যে বার বার দুঃস্বপ্ন দেখা বা গাড়ি চালাতে গিয়ে তীব্র আতঙ্ক অনুভব করা।
দমিয়ে রাখা স্মৃতি সরাসরি প্রকাশিত না হলেও, এটি মানুষের অযৌক্তিক ভয় ও মানসিক সমস্যার কারণ হয়।
সংহতকরণের প্রক্রিয়া ও লক্ষ্য: ইয়ুঙের মতে, মানুষ যখন নিজ্ঞান মনের এই উপাদানগুলোকে উপেক্ষা করে, তখন ব্যক্তিত্ব খণ্ডিত থাকে, যা মানসিক সংঘাত ও স্নায়ুরোগ (Neurosis) সৃষ্টি করে।
লক্ষ্য: সংহতকরণের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো স্ব-স্বীকৃতি (Self-acceptance) এবং স্বয়ম্ভবতা (Individuation) অর্জন করা। স্বয়ম্ভবতা হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যক্তি তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের (সচেতন ও নিজ্ঞান) বিকাশ ঘটিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ সত্তা হয়ে ওঠে।
পদ্ধতি: এই সংহতকরণ সাধারণত স্বপ্ন-বিশ্লেষণ, সক্রিয় কল্পনা (Active Imagination) এবং প্রতীক ও মিথ (Symbolism and Myth)-এর মাধ্যমে নিজ্ঞান মনের ভাষা বোঝার মাধ্যমে ঘটে।
নিজ্ঞান মনের সংহতকরণ হলো: "নিজ্ঞানকে জানার এবং তাকে সচেতন ব্যক্তিত্বের অংশ হিসেবে গ্রহণ করার প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি মানসিক পূর্ণতা লাভ করে।"
Jung বলেন, মানুষের আত্মবিকাশের প্রক্রিয়া (individuation) মূলত এক অভ্যন্তরীণ ঐক্যযাত্রা—যেখানে অবচেতন ও সচেতন, আলো ও অন্ধকার, ইগো ও সেলফ—এই দ্বন্দ্বগুলিকে সংঘর্ষের মাধ্যমে সমন্বিত করতে হয়। অবচেতনকে দমন করা নয়, বরং তার সঙ্গে মৈত্রী স্থাপনই আত্ম-উদ্ধারের পথ। অদ্বৈত বেদান্তেও অবিদ্যা-বিলোপের প্রক্রিয়া অনুরূপ—অবিদ্যাকে ধ্বংস করা নয়, বরং জ্ঞানের আলোয় তার প্রকৃতি উপলব্ধি করা, যাতে জানা যায় যে, অবিদ্যা কেবল প্রতিফলনের ছায়া।
অতএব, হেগেলের Aufhebung, Jung-এর integration, এবং অদ্বৈতের প্রমা-বিরোধ—এই তিনটি তত্ত্ব একই মূল দার্শনিক গতিকে প্রতিফলিত করে: সত্য কোনো স্থির অবস্থা নয়, এটি এক গতি—এক ক্রমবর্ধমান আত্ম-উন্মোচন। নিম্নতর স্তরের সত্য উচ্চতর স্তরে বিলীন হলেও হারিয়ে যায় না; এটি রূপান্তরিত হয়, অন্তর্ভুক্ত হয়, এবং শেষপর্যন্ত মিশে যায় এক চিরন্তন চেতনার ঐক্যে।
এই ঐক্যই অদ্বৈতের চূড়ান্ত উপলব্ধি—যেখানে সমস্ত বিরোধ, সব অভিজ্ঞতা, সব জ্ঞান এক অখণ্ড সত্তায় মিলে যায়। সেখানে আর কোনো দ্বন্দ্ব, কোনো বাধ বা কোনো বিভাজন অবশিষ্ট থাকে না; থাকে কেবল চিরসাক্ষী চেতনা (Sākṣī-Caitanya)—যার মধ্যে সব Aufhebung সম্পূর্ণ হয়, আর সব প্রমা-বিরোধ বিলীন হয়ে যায় এক চিরন্তন সমন্বয়ের নীরব পরিণতিতে।
‘বাধ-ব্যবহার’ ধারণাটি কেবল মেটাফিজিক্যাল (যা প্রাকৃতিক বা ভৌত জগতের ঊর্ধ্বে) নয়, এটি জ্ঞানের এক গতিশীল এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জ্ঞান কোনো স্থির সত্তা নয়, বরং এটি নিরন্তর পরিশুদ্ধি এবং রূপান্তরের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। এই প্রক্রিয়াটি নিজের ভেতরের সীমাকে অতিক্রম করে, যেখানে প্রতিটি স্তর পূর্ববর্তী স্তরকে ধারণ করে এবং তাকে ছাড়িয়ে যায়। এটি একটি উর্ধ্বমুখী যাত্রা, যা স্বপ্ন থেকে শুরু হয়ে জাগরণের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মজ্ঞানে উপনীত হয়—এই ধারাবাহিক উন্মোচনই মানব অস্তিত্বের চূড়ান্ত মুক্তির পথ।