অবিদ্যা-বিদ্যা: ৭৬


এই “অপ্রচেষ্টা”-র ফলে যে-কর্ম ঘটে, তাকে ওয়াটস বলেছেন “স্বতঃস্ফূর্ত কর্ম” (Spontaneous Action)। এটি এমন এক অবস্থা, যেখানে কর্ম কোনো হিসাব, কৌশল বা ভয় থেকে নয়, বরং চেতনার স্বাভাবিক প্রবাহ থেকে জন্ম নেয়। জেন বৌদ্ধধর্মে এই অবস্থাকে বলা হয় “মুশিন” (Mushin)—অর্থাৎ “No-Mind”। এটি এমন এক চেতনা, যেখানে মন আর দ্বন্দ্ব করে না; কর্ম ঘটে যায় অবলীলায়, স্বচ্ছন্দে, নিঃস্বার্থভাবে। তিনি বলেন, “When you stop trying to force life, it happens by itself.”

“মুশিন” (Mushin)—জেন বৌদ্ধধর্ম ও জাপানি দর্শনের একটি কেন্দ্রীয় ধারণা, যার অর্থ আক্ষরিকভাবে “মনহীনতা” বা “No-Mind।” তবে “মনহীনতা” এখানে কোনো নিস্তেজতা বা শূন্যচিন্তা নয়; বরং এমন এক অবস্থাকে বোঝায়, যেখানে মন সম্পূর্ণ মুক্ত—আকাঙ্ক্ষা, ভয়, বিচার, স্মৃতি বা পরিকল্পনার কোনো ছাপ সেখানে নেই। মুশিন হলো চিন্তাহীন কিন্তু সম্পূর্ণ সচেতন চেতনা—একটি স্থিত, তীক্ষ্ণ ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি।

জেন আচার্য তাকুয়ান সো-হো (Takuan Sōhō) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ “The Unfettered Mind”-এ লিখেছিলেন—“When the mind stops at some point, it is said to have become attached. If it does not stop anywhere, it is called the unmoving mind, or mushin.” অর্থাৎ, যখন মন কোনো ভাব, স্মৃতি বা বস্তুর উপর থেমে যায়, তখনই সে আবদ্ধ হয়। কিন্তু যখন মন কোথাও থামে না, কিছু আঁকড়ে ধরে না—তখনই সেটি “মুশিন”।

মুশিন হলো এমন এক মানসিক অবস্থা, যেখানে চিন্তা ও ক্রিয়া এক হয়ে যায়। কর্ম তখন আর ‘চিন্তার পরে’ ঘটে না—বরং এক সঙ্গে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে। এটি “flow state” বা “selfless concentration”-এর মতো, যেখানে কর্তা, ক্রিয়া ও ফলের বিভাজন মুছে যায়। একজন সামুরাই বা ধ্যানী যখন মুশিন অবস্থায় থাকে, তখন তার সমস্ত প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক, নির্ভুল ও অনায়াস—কারণ সেখানে “আমি ভাবছি”, “আমি করছি” এই ভাবটি অনুপস্থিত।

এই অবস্থার সঙ্গে গীতার “যোগঃ কর্মসু কৌশলম্” (২.৫০)-এর গভীর মিল রয়েছে। গীতা বলে—যে-ব্যক্তি কর্মে ফলাসক্ত নয়, সে-ই প্রকৃত যোগী; কারণ তার কর্মে আছে সমত্ববুদ্ধি ও নৈপুণ্য। মুশিনও সেই চেতনার প্রতিরূপ—যেখানে কর্ম আর ফলের মধ্যে কোনো মানসিক বাধা থাকে না, কর্ম হয়ে ওঠে ধ্যানের স্বরূপ।

অদ্বৈত বেদান্তের ভাবার্থে যদি বলি, মুশিন হলো সাক্ষীভাবের সক্রিয় রূপ—যেখানে আত্মা দেখছে, কিন্তু লিপ্ত নয়; মন কাজ করছে, কিন্তু ‘আমি কর্তা’ বোধ করছে না। এটি এমন এক চেতনা, যা সম্পূর্ণ মুক্ত, স্বতঃস্ফূর্ত, এবং ফলহীন। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ২.২০, ২.৪৭, ২.৪৮, ২.৫০, ৩.২৭, ৩.৯, ৩.১৯, ৫.৮-৯, ৬.২৬, ১৩.২৩, কঠোপনিষদ ২.২.১৩, বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪.৪.২২, শঙ্করাচার্যের গীতাভাষ্য (২.৫০))

“মুশিন” মানে মনহীনতা নয়, বরং মননাতীত স্বচ্ছ চেতনা—যেখানে মন স্থির, সচেতন, ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবনের সঙ্গে এক হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গীতার ভাষায়, এটি সেই অবস্থা যেখানে মানুষ সিদ্ধি-অসিদ্ধিতে সমবুদ্ধ, আর কর্ম তার মধ্য দিয়েই “অঘটিতভাবে” ঘটে যায়—যেন ঈশ্বর নিজেই সেই কর্ম সম্পন্ন করছেন। (সমত্ব বুদ্ধি (২.৪৮) এবং কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগ (৩.২৭))

ওয়াটস আরও বলেন যে, এই অবস্থায় মানুষের কর্মকাণ্ড এক প্রকার “controlled accident”—অর্থাৎ, এটি নিয়ন্ত্রিত বলেও মনে হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি নিয়ন্ত্রণবিহীন স্বতঃস্ফূর্ততা। যেমন গীতায় বলা হয়েছে—“প্রকৃত্যে ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ।” (৩.২৭) —“সব কর্মই প্রকৃতির গুণ দ্বারা সম্পন্ন হয়, কিন্তু মোহগ্রস্ত মানুষ ভাবে—আমি কর্তা।” ওয়াটসের মতে, এই ‘আমি কর্তা’ বোধই সকল যন্ত্রণার উৎস, আর এর অবসানই প্রকৃত জ্ঞান।

তাঁর দর্শনে তাই “স্বতঃস্ফূর্ততা” (spontaneity) এবং “সমর্পণ” (surrender)—এই দুই শব্দ একে অপরের পরিপূরক। যখন মানুষ নিজেকে আলাদা সত্তা হিসেবে দেখা বন্ধ করে, তখনই সে প্রকৃত অর্থে মুক্ত হয়। এটি হলো অদ্বৈতের “অহং-বিলোপ” (ego-dissolution)-এর আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক অনুবাদ।

অ্যালেন ওয়াটসের দর্শনকে বলা যায় আধুনিক বিশ্বের জন্য প্রাচ্য অদ্বৈতবাদের এক জীবন্ত অনুবাদ। তিনি শেখান—“মুক্তি কোনো কঠোর অনুশীলনের ফল নয়, বরং প্রচেষ্টাহীন স্বাভাবিক অস্তিত্ব।” তাঁর মতে, জেন, তাও ও বেদান্ত একই কথা বলে—“যা ঘটছে, তা-ই ঈশ্বরের কর্ম; তুমি তারই স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ।” এই উপলব্ধির মধ্যেই কর্তৃত্বাভিমান বিলীন হয়, মন শান্ত হয়, এবং কর্ম হয়ে ওঠে নিষ্কাম—কোনো লাভ-ক্ষতির হিসাব নয়, কেবল মহাজগতের সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাঁচা।

“Controlled accident” (নিয়ন্ত্রিত দুর্ঘটনা)—এই ধারণাটি অ্যালেন ওয়াটস (Alan Watts) ও জেন বৌদ্ধ চিন্তায় ব্যবহৃত এক দার্শনিক রূপক, যা ব্যাখ্যা করে স্বতঃস্ফূর্ততার (spontaneity) প্রকৃত অর্থ। এটি আপাতবিরোধী একটি ধারণা—“নিয়ন্ত্রণ” এবং “দুর্ঘটনা” (অর্থাৎ, অনিয়ন্ত্রিত কিছু)—এই দুই বিপরীত শব্দকে একত্র করে বোঝানো হয়েছে জীবনের সেই অবস্থা, যেখানে ক্রিয়া ঘটে নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কিন্তু বিশৃঙ্খলাও নয়।

অ্যালেন ওয়াটস বলেন, প্রকৃত যোগ বা জেন অবস্থা তখনই আসে, যখন মানুষ কর্ম বা জীবনের উপর অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বন্ধ করে দেয়। যতক্ষণ আমরা, “সব কিছু নিখুঁতভাবে নিয়ন্ত্রণ করব”, এই ইচ্ছা রাখি, ততক্ষণ মন চঞ্চল, দ্বিধাগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন থাকে। কিন্তু যখন আমরা ফল নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্ত হই, তখন জীবনের ক্রিয়া নিজের স্বাভাবিক ছন্দে চলতে শুরু করে। তখন যা-কিছু ঘটে, তা একদিকে অনিয়ন্ত্রিত—কারণ আমরা কর্তা নই—কিন্তু অন্যদিকে এক গভীর সুষমা ও প্রজ্ঞা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত—কারণ মহাজাগতিক বুদ্ধিই তা সম্পন্ন করছে। এই অবস্থাকেই ওয়াটস বলেন “controlled accident”।

তিনি উদাহরণ দিয়েছেন—একজন অভিজ্ঞ সুরকার বা মার্শাল আর্টের সাধক যখন সম্পূর্ণ মনোসংযোগে থাকেন, তখন তিনি আর সচেতনভাবে কিছু নিয়ন্ত্রণ করেন না। তাঁর আঙুল বা শরীর নিজে নিজেই কাজ করে—কিন্তু নিখুঁতভাবে। এই ক্রিয়া দেখতে একপ্রকার ‘দুর্ঘটনা’-র মতো—কারণ কোনো সচেতন পরিকল্পনা নেই; কিন্তু আসলে তা ‘নিয়ন্ত্রিত’—কারণ অন্তর্গত সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ তাকে স্বতঃস্ফূর্ত নৈপুণ্যে রূপ দিয়েছে।

বেদান্তীয় ভাষায়, এটি সেই অবস্থা যখন কর্ম “অহংবোধ” থেকে মুক্ত হয়। গীতার (৩.২৭) ভাষায় বলা যায়—প্রকৃতিই সব কর্ম সম্পাদন করে, কিন্তু মোহগ্রস্ত ব্যক্তি ভাবে—‘আমি কর্তা’। যখন “আমি কর্তা” বোধ বিলীন হয়, তখন কর্ম স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে; কিন্তু সেই কর্ম বিশৃঙ্খল নয়—বরং গভীর এক সুষমায় সম্পন্ন হয়। এটি-ই “controlled accident”—যেখানে নিয়ন্ত্রণহীনতা-ই সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ।

এই ধারণাটি তাওবাদের উ-ওয়েই (Wu Wei) নীতির সঙ্গেও সম্পূর্ণ এক। উ-ওয়েই মানে “non-doing” নয়, বরং “effortless action”—যেখানে কর্ম নিজেই ঘটে, কোনো চাপ বা ইচ্ছা ছাড়াই।

“Controlled accident” মানে হলো এমন এক ধ্যানময় স্বতঃস্ফূর্ততা, যেখানে মানুষ নিয়ন্ত্রণের ভ্রম ত্যাগ করে এবং কর্মকে মহাজগতের স্বাভাবিক প্রবাহের অংশ হিসেবে উপলব্ধি করে। এটি সেই অবস্থাই, যেখানে জেন বলে “কর্ম ধ্যান হয়ে যায়”, আর গীতা বলে “যোগঃ কর্মসু কৌশলম্” (গীতা ২.৫০)—কর্মেই যোগ, যোগেই কর্মের স্বাভাবিক দক্ষতা।

স্বামী বিবেকানন্দ আধুনিক যুগে কর্মযোগকে এক অসাম্প্রদায়িক, সর্বজনীন ও ব্যাবহারিক সাধনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর মতে, কর্ম কেবল ভক্তি বা জ্ঞানের সহায় নয়, বরং নিজেই এক মুক্তির পথ—যদি তা ফলের আসক্তি ও অহংকার থেকে মুক্ত হয়।

তিনি বলেন, “Unselfishness is more paying, only people have not the patience to practice it.” কর্মের উদ্দেশ্য হবে নিঃস্বার্থ সেবা, আত্মত্যাগ ও কর্তব্যনিষ্ঠা—যেখানে কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ, খ্যাতি বা পুরস্কারের প্রত্যাশা থাকবে না।

বিবেকানন্দের মতে, আসক্তি তখনই জন্মায়, যখন কর্মের বিনিময়ে কিছু ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। তাই তিনি শিক্ষা দেন—সব কাজকে যেন “মুক্ত উপহার” (Free Gift) হিসেবে করা যায়। এই ‘অর্পণ’-ভাবনাই অনাসক্তি গড়ে তোলে। যেমন গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—“তস্মাদসক্তঃ সততং কার্যং কর্ম সমাচর।” (গীতা, ৩.১৯) অর্থাৎ, “আসক্তিহীনভাবে কর্তব্য পালন করো।”

এই ধারণারই আধুনিক অনুবাদ করেছেন বিবেকানন্দ—“Give your best, and never think of the result. Work as you would play.” অর্থাৎ, কাজ করো, যেমন খেলো—আনন্দে, কিন্তু জয়ের চিন্তা ছাড়া।

তিনি কর্মযোগকে এমন এক মানসিক অনুশীলন হিসেবে দেখেছেন, যা অহংবোধ (ego) বিলোপ করে। যতক্ষণ কেউ ভাবে—“আমি কর্তা, আমি উপকার করছি”—ততক্ষণ সে কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু যখন সে বুঝে—“আমি কেবল ঈশ্বরের যন্ত্র,” তখন কর্ম হয়ে ওঠে যোগ, আর কর্মী মুক্ত হয়। গীতার ভাষায়—“প্রকৃত্যে ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ।” (গীতা, ৩.২৭) অর্থাৎ, সকল প্রকার কর্ম সর্বতোভাবে প্রকৃতির গুণসমূহের দ্বারা (সত্ত্ব, রজ ও তম গুণের দ্বারা) অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু অহঙ্কারে মোহাচ্ছন্ন অজ্ঞান ব্যক্তি মনে করে, "আমিই কর্তা"।

বিবেকানন্দের মতে, এই উপলব্ধিই স্বাধীনতার সূচনা। কর্মের ফল বা স্বীকৃতির চিন্তা যেন মনের ওপর কোনো প্রভাব না ফেলে—এটাই অনাসক্তির কৌশল। তিনি বলেন—“The moment you do not care for the fruits of your work, you become free.”

কর্মযোগের গভীর তাৎপর্য বুঝতে হলে মন বা মনস্‌ (Manas)-এর ভূমিকা উপলব্ধি করা অপরিহার্য। স্বামী বিবেকানন্দ যেমন বলেছিলেন, মুক্তি কোনো পরলোকগত অবস্থা নয়—এটি মানবজীবনের মধ্যেই সম্ভব, যদি মন নিজের আসক্তি ও অজ্ঞতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়। গীতার ভাষায়, “উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েত্‌”—অর্থাৎ, আত্মাকেই আত্মার দ্বারা উন্নীত করতে হবে (গীতা, ৬.৫)। এই “আত্মা” শব্দে বোঝানো হয়েছে মন-চেতনার সেই স্তর, যা নিজেই মুক্তির উপায় ও বাধা উভয়।

মন হলো অন্তঃকরণের (Antaḥkaraṇa) কেন্দ্রীয় উপাদান—যার চারটি অংশ: মনস্‌ (চিন্তা ও সংশয়), বুদ্ধি (নির্ণয়), অহংকার (আমি-ভাব) এবং চিত্ত (স্মৃতি ও সংস্কার)। এই অন্তঃকরণই আত্মার প্রতিবিম্ব প্রকাশ করে—যেমন স্থির জলে সূর্যের প্রতিচ্ছবি জ্বলে ওঠে; কিন্তু জল যদি তরঙ্গায়িত হয়, তবে প্রতিচ্ছবিও বিকৃত হয়। তেমনি মন যদি বাসনা, রাগ, দ্বেষ, অহংকার ও মমতা দ্বারা অশান্ত থাকে, তবে আত্মার দীপ্তি সেখানে বিকৃত হয়ে প্রতিফলিত হয়। এই অশান্ত মনই কর্মে আসক্তি সৃষ্টি করে—“আমি করছি”, “আমি ফল পাবো” এই ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দেয়।

বেদান্ত বলে, মন-শুদ্ধিই মুক্তির প্রথম সোপান। এই চিত্ত-শুদ্ধি আসে সাধন-চতুষ্টয় অনুশীলনে—যেমন:

১. বিবেক (Viveka): নিত্য ও অনিত্য বস্তু বিচারের জ্ঞান।

২. বৈরাগ্য (Vairāgya): ইন্দ্রিয়সুখ ও ফলের প্রতি অনাসক্তি।

৩. ষট্‌সম্পত্তি (Ṣaṭ-sampatti): শম, দম, উপরতি, তিতিক্ষা, শ্রদ্ধা, সমাধান—এই ছয় গুণ।

৪. মুমুক্ষুত্ব (Mumukṣutva): মুক্তির প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

যখন এই সাধনাগুলির দ্বারা মন পরিশুদ্ধ হয়, তখন তা আত্মার নিখাদ প্রতিফলন ঘটায়। তখন কর্ম আর বাহ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে হয় না; কর্ম হয়ে ওঠে অন্তরপ্রকাশের পথ—যেখানে কর্তা, কর্ম ও ফল একাত্ম হয়ে যায়। এই অবস্থায় কর্মই ধ্যান, ধ্যানই কর্ম।

মন যখন সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ হয়, তখন চিন্তার গতি নিজে থেকেই স্তব্ধ হয়—এটাই মনো-নাশ (Mano-Nāśa) (গীতা, ৬.২০, ৬.২২, ৬.২৫-২৬)। এটি কোনো জড় অবস্থা নয়, বরং চিন্তাহীন কিন্তু জাগ্রত সচেতনতা—যেখানে “চিন্তা” ও “চেতনা” একে অপরকে ছাড়িয়ে যায়। এই মুহূর্তে জ্ঞান আর বাইরের থেকে আসে না; তা আত্মার মধ্যেই নিজপ্রভায় জ্বলে ওঠে। তখন বোঝা যায়—আত্মা কখনও জ্ঞানলাভ করে না, কারণ সে নিজেই জ্ঞানের উৎস।