শঙ্করাচার্য তাঁর গীতাভাষ্যে বলেন—“কৌশলম্ নাম সমত্ববুদ্ধিরূপা যোগঃ”—এই কৌশল মানে সেই মানসিক ভারসাম্য বা সমবুদ্ধি, যা কর্মে পূর্ণ মনোযোগ আনে কিন্তু ফলের আকাঙ্ক্ষা বিলীন করে দেয়। Flow-state-এ কর্মী ফলের দিকে নয়, কাজের দিকে সম্পূর্ণ নিমগ্ন। এই নিমগ্নতাই গীতার “যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি সঙ্ঙং ত্যক্ত্বা ধনঞ্জয়” (২.৪৮)-এর বাস্তব প্রয়োগ—ফলত্যাগ করে যোগে স্থিত থেকে কর্তব্যপালন। মনোবিজ্ঞানে এটিকে বলা হয় selfless concentration বা total absorption, আর বেদান্তে একে বলে কর্মে চিত্তপ্রবাহের ঐক্য।
মনোবিজ্ঞানে selfless concentration বা total absorption বলতে বোঝানো হয় এমন এক মানসিক অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি কাজের মধ্যে এতটাই নিমগ্ন হয়ে যায় যে, নিজের “আমি” বা “কর্তা”-সত্তার অনুভূতি সাময়িকভাবে বিলীন হয়ে যায়। এখানে মন পুরোপুরি বর্তমান মুহূর্তে অবস্থান করে—সময়, ফলাফল, বা বাইরের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কোনো সচেতনতা থাকে না। এটি সেই মুহূর্ত, যখন মানুষ “কাজ” আর “কর্মী”-র পার্থক্য ভুলে যায়; শুধু ক্রিয়া অব্যাহত থাকে। মিহালি চিকসেন্টমিহাই (Mihály Csíkszentmihályi) এই অবস্থাকে “Flow” নামে অভিহিত করেছিলেন—যেখানে আত্ম-সীমাবোধ গলে গিয়ে চেতনা এক প্রবাহে পরিণত হয়।
তাই, “selfless concentration” ও “চিত্তপ্রবাহের ঐক্য”—দুইই একই সত্যের ভিন্ন ভাষা। একটিতে বিজ্ঞান বলছে—আত্মবোধ বিলীন হলে কর্মের দক্ষতা চরমে পৌঁছায়; অন্যটিতে বেদান্ত বলছে—অহংবোধ বিলীন হলে কর্ম যোগে পরিণত হয়। দুটোই বোঝায়—যখন “আমি”-বোধ নেই, তখনই কর্মে প্রকৃত যোগ ঘটে।
Mindfulness ও Flow একে অপরের পরিপূরক। Mindfulness হলো ‘দেখা’—অর্থাৎ, চিন্তা ও অভিজ্ঞতাকে নির্লিপ্তভাবে পর্যবেক্ষণ করা। Flow হলো ‘করা’—অর্থাৎ, কর্মে সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া। একটিতে “আমি দর্শক”, অন্যটিতে “আমি কর্মে লীন”, কিন্তু উভয়ের লক্ষ্য এক—অহং ও ফলচিন্তার বিলোপ। গীতা (৬.২৬) বলে—
যতো যতো নিশ্চলতি মনশ্চঞ্চলমস্থিরম্।
ততস্ততো নিয়ম্যৈতদাত্মন্যেব বশং নয়েৎ।।
অর্থাৎ, চঞ্চল ও অস্থির মন যে যে কারণে (বা বিষয়ে) ধাবিত হয়, সেই সেই কারণ বা বিষয় থেকে তাকে নিবৃত্ত (প্রত্যাহার) করে আত্মাতেই বশীভূত করবে। এই শ্লোকটি যোগ অভ্যাসের একটি অত্যন্ত ব্যাবহারিক কৌশল শেখায়, যা মাইন্ডফুলনেস বা মননশীলতার মতোই কার্যকরী—
মনের স্বভাব: শ্রীকৃষ্ণ মনকে স্বভাবতই চঞ্চল ও অস্থির বলে স্বীকার করেছেন (যেমন অর্জুনও পরবর্তীকালে ৬.৩৪ শ্লোকে স্বীকার করেছেন)।
ধ্যানের কৌশল: মনকে জোর করে স্থির করার চেষ্টা না করে, বরং যখনই মন কোনো জাগতিক বিষয়ে চলে যায়, তখনই সচেতনভাবে ধৈর্য ও অভ্যাসের মাধ্যমে তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার (নিয়ম্য—এটি সাধারণত কোনো একটি কাজ সম্পন্ন করার পরে অন্য একটি কাজ শুরু করা বোঝালে ব্যবহৃত হয়। যেমন: মনকে নিয়ন্ত্রণ করে আত্মাতে স্থির করো।) করতে হবে।
লক্ষ্যে স্থির রাখা: বার বার সেই মনকে ফিরিয়ে এনে আত্মাতে বা ইষ্টে (আত্মনি এব) স্থির করার চেষ্টা করতে হবে।
এই পদ্ধতিই যোগীকে ধীরে ধীরে মনের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এনে দেয় এবং তাকে পরম শান্তি ও সুখ লাভের পথে নিয়ে যায়। Mindfulness এই নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন, Flow-state সেই অনুশীলনের ফল—যেখানে মন আর সরে যায় না।
বেদান্ত ও গীতার দৃষ্টিতে এই দুই অবস্থাই মুক্তির ধাপ। রমণ মহর্ষি mindfulness-কে আত্মবিচার (Ātma-vichāra)-এর রূপ দেন—“যখন মন দেখে যে, চিন্তা আসে ও যায়, তখন বোঝে—সে চিন্তা নয়, সে চিন্তার সাক্ষী।” (Talks with Sri Ramana Maharshi, No. 244)। নিসর্গদত্ত মহারাজ বলেন—“Be aware of being aware.” (I Am That)—এই এক বাক্য mindfulness-এর সারতত্ত্ব। শ্রীঅরবিন্দ The Synthesis of Yoga-এ বলেন—“True Yoga is not the escape from work but the transfiguration of work into worship”—অর্থাৎ, কাজের মধ্যে ঈশ্বরস্মৃতি স্থাপন করাই যোগের চরম রূপ, যা flow-state-এর আধ্যাত্মিক সমতুল্য। স্বামী বিবেকানন্দ Karma Yoga-য় বলেন—“The best work is done when the worker forgets himself”—অহংবোধের বিলোপই কর্মের শ্রেষ্ঠ দক্ষতা।
পাশ্চাত্য দর্শনেও এই নীতির প্রতিধ্বনি শোনা যায়। ইমানুয়েল ক্যান্ট তাঁর Groundwork of the Metaphysics of Morals-এ বলেন—নৈতিকতার মানদণ্ড ফল নয়, কর্তব্যচেতনা; উইলিয়াম জেমস চেতনাকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন “attention to experience”-রূপে; মার্টিন হাইডেগার একে বলেন “Gelassenheit”—অর্থাৎ, অভ্যন্তরীণ প্রশান্ত উপস্থিতি। এই সব ধারণাই গীতার “সমত্ববুদ্ধি” ও “যোগঃ কর্মসু কৌশলম্”-এর আধুনিক প্রতিফলন।
Gelassenheit (উচ্চারণ: গে-লাস-সেন-হাইট) জার্মান দর্শনের একটি গভীর ধারণা, যার আক্ষরিক অর্থ “letting-go,” “releasement,” বা “শান্ত স্বীকারের মনোভাব।” শব্দটি প্রথম জনপ্রিয় করেন মার্টিন হাইডেগার (Martin Heidegger), বিশেষ করে তাঁর বক্তৃতা “Gelassenheit” (1959)-এ, যেখানে তিনি প্রযুক্তি-নির্ভর আধুনিক মানুষের অস্থিরতা ও নিয়ন্ত্রণপ্রবণতার বিপরীতে একধরনের “অভ্যন্তরীণ প্রশান্তি ও ছেড়ে দেওয়ার ক্ষমতা”-র কথা বলেন।
হাইডেগার ব্যাখ্যা করেন যে, আধুনিক মানুষ “calculative thinking”-এর (গণনাশীল চিন্তা) মধ্যে আটকে আছে—সব কিছু মাপতে, ধরতে, নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। Gelassenheit হলো “meditative thinking”—একটি গভীর গ্রহণমুখী চেতনা, যেখানে মানুষ জগৎকে জোর করে নয়, শান্তভাবে, “যেমন আছে”, তেমনভাবে দেখতে শেখে। তাঁর ভাষায়, “Gelassenheit toward things and openness to mystery”—অর্থাৎ, বস্তুজগতের প্রতি ছেড়ে দেওয়ার মনোভাব, আর অস্তিত্বের রহস্যের প্রতি উন্মুক্ততা।
এই ভাবটি বেদান্তের সাক্ষিভাব (Sākṣibhāva) ও সমত্ববুদ্ধি (Samattva-buddhi) ধারণার সঙ্গে সরাসরি সাদৃশ্যপূর্ণ। গীতা (২.৪৮)-এ বলা হয়েছে—“সিদ্ধ্যসিদ্ধ্যোঃ সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে”—সাফল্য ও ব্যর্থতায় ‘সমান থাকা’-ই যোগ। এই সমত্বই Gelassenheit-এর মূলসুর—একধরনের অন্তর্গত স্থিরতা, যেখানে মন ফল, সাফল্য, বা নিয়ন্ত্রণের তৃষ্ণা থেকে মুক্ত থাকে।
বেদান্তে এই অবস্থাই আত্মজ্ঞান বা সত্ত্বগুণের পরিপক্ব রূপ। যেমন রমণ মহর্ষি বলেছেন, “Let what comes come, let what goes go; find out what remains.”—এই ‘let it be’ মনোভাবই Gelassenheit-এর আধ্যাত্মিক রূপ। নিসর্গদত্ত মহারাজও বলেছেন, “Wisdom is in non-interference; life unfolds by itself.”
Gelassenheit মানে কোনো উদাসীনতা নয়, বরং সক্রিয় ছেড়ে দেওয়া—এক গভীর অন্তর্গত সমর্পণ। হাইডেগার যেখানে এটিকে বলেন “openness to Being,” গীতা সেখানে বলে “ঈশ্বরপ্রসাদবুদ্ধি”—দুটিরই লক্ষ্য মনকে নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করা এবং চেতনাকে স্বচ্ছ উপস্থিতিতে স্থাপন করা।
"ঈশ্বরপ্রসাদবুদ্ধি" (Īśvara-prasāda-buddhi) এই শব্দটি সরাসরি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার কোনো একটি শ্লোকে নেই, তবে এটি গীতার নিষ্কাম কর্মযোগ ও ভক্তিযোগের মূলনীতির একটি সুগভীর দার্শনিক ব্যাখ্যা। 'ঈশ্বরপ্রসাদবুদ্ধি' বলতে বোঝায়: কর্মের ফলকে ঈশ্বরের প্রসাদ বা করুণা হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা। অর্থাৎ, কর্মের ফল যা-ই হোক না কেন, তা নিজের আকাঙ্ক্ষিত ফল হোক বা না হোক, সেই ফলকে ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা উপহার (প্রসাদ) বা তাঁর ইচ্ছা (সংকল্প) বলে মনে করা।
এই ধারণাটি মূলত নিম্নলিখিত দুটি শ্লোকের সম্মিলিত ফল বা পরিণতি—
ফল সমর্পণ (নবম অধ্যায়): কর্মের ফলকে ঈশ্বরকে উৎসর্গ করার নীতিটি এখানে দেওয়া হয়েছে:
যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ। যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদর্পণম্।। (গীতা, ৯.২৭) অর্থাৎ, তুমি যা কিছু করো, যা-কিছু আহার করো, যা-কিছু হোম বা দান করো, যে তপস্যা করো— তা সমস্তই আমাকে সমর্পণ করো।
শরণাগতি ও পরম শান্তি (অষ্টাদশ অধ্যায়): সব কিছুর ফল ঈশ্বরের হাতে ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ শরণাগত হওয়া এবং তাঁর করুণা লাভ করা: সর্বকর্মাণ্যপি সদা কুর্বাণো মদ্ব্যপাশ্রয়ঃ। মৎপ্রসাদাদবাপ্নোতি শাশ্বতং পদমব্যয়ম্।। (গীতা, ১৮.৫৬) অর্থাৎ, সর্বদা সমস্ত কর্ম করলেও, যিনি আমাতে (ঈশ্বরে) সম্পূর্ণরূপে আশ্রয়ী, তিনি আমার প্রসাদে (মৎপ্রসাদাৎ) সেই অবিনাশী শাশ্বত ধাম (মোক্ষ) লাভ করেন।
'ঈশ্বরপ্রসাদবুদ্ধি' হলো নিষ্কাম কর্মের সেই মানসিক স্থিরতা, যেখানে কর্মী ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে সমস্ত কর্মের দায়িত্ব এবং ফল ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দেন। ফলস্বরূপ তিনি সফলতা বা ব্যর্থতায় বিচলিত হন না, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন—যা-কিছু হয়েছে, তা ঈশ্বরের ইচ্ছায় (প্রসাদে) হয়েছে। এই বুদ্ধিই মানুষকে কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত করে এবং শাশ্বত শান্তি এনে দেয়।
Gelassenheit হলো সেই মনোভাব, যেখানে মানুষ আর জগৎকে “ধরতে” নয়, বরং “দেখতে” শেখে; যেখানে মন নিয়ন্ত্রণ ছাড়ে, আর চেতনা ফিরে পায় তার নিজস্ব শান্ত স্বরূপে। এটি আধুনিক দর্শনের ভাষায় যেমন “releasement,” তেমনি গীতার ভাষায়—“সমত্বং যোগ উচ্যতে” (ভগবদ্গীতা ২.৪৮); অর্থাৎ, সমতাই (সমভাব বা মানসিক ভারসাম্য) যোগ নামে অভিহিত হয়।
Mindfulness মনকে বর্তমান রাখে, Flow কর্মকে সম্পূর্ণ করে; Mindfulness হলো আত্মস্মৃতির প্রশিক্ষণ, Flow হলো আত্মার প্রকাশ। Mindfulness চেতনার স্থিতি, Flow চেতনার গতি। গীতা এই দুইকে একত্র করে বলেছে—“যোগঃ কর্মসু কৌশলম্” (ভগবদ্গীতা, ২.৫০)—অর্থাৎ, কর্মের মধ্যে যোগ, যোগের মধ্যে কর্ম। একদিকে স্থিরতা, অন্যদিকে প্রবাহ; একদিকে দর্শন, অন্যদিকে সম্পূর্ণতা—এই দুটিই মিলিত হলে মানবজীবন হয় যোগময়।
Mindfulness ও Flow-state কোনো পাশ্চাত্য নতুন মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নয়; তারা গীতারই দুই দিক—একদিকে “সাক্ষী-যোগ” বা সচেতন উপস্থিতি, অন্যদিকে “কর্ম-যোগ” বা নিঃস্বার্থ কর্ম। তাদের মিলেই আত্মা শিখে যায়—চিন্তা আসে যায়, কর্ম চলতে থাকে, কিন্তু আমি, সেই চেতনা, সব কিছুর মধ্যে নীরব ও অদ্বিতীয়। গীতার ভাষায়—“স্থিতপ্রজ্ঞস্তদা প্রাহ” (২.৫৫)—যে-ব্যক্তি মনকে সংযত করে, কর্মে সমবৃত্ত থাকে, আর আত্মায় স্থিত হয়, সে-ও mindful এবং সে-ই flow-এর চূড়ান্ত রূপে স্থিত যোগী।
ফলস্বরূপ, নিষ্কাম কর্ম আজ কেবল আধ্যাত্মিক নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কল্যাণেরও পথ। এটি শেখায়—কর্ম করো কর্তব্যবোধে, প্রেমে ও সততায়, কিন্তু ফলের চিন্তায় নয়। কাজের সফলতা বা ব্যর্থতা মনকে বিচলিত করবে না; কারণ কর্মের আনন্দ নিহিত থাকে কর্মের মধ্যেই। এই অবস্থাই স্থিতপ্রজ্ঞার লক্ষণ—“সিদ্ধি-অসিদ্ধি সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ উচ্যতে।” (গীতা, ২.৪৮) অর্থাৎ, "সাফল্য ও ব্যর্থতায় সমভাবাপন্ন হয়ে (থাকো), কারণ সমতাই যোগ বলে কথিত হয়।"
রমণ-নিসর্গদত্ত-বিবেকানন্দ-অরবিন্দ-গান্ধী-রবীন্দ্রনাথ-মা আনন্দময়ী-অ্যালেন ওয়াটস—সবাই ভিন্ন ভাষায় একই সত্য বলেছেন: কর্মের ত্যাগ নয়, কর্তার ত্যাগই মুক্তি; ফলের নয়, প্রেমের জন্য কর্ম করাই ধর্ম। এই উপলব্ধিই নিষ্কাম কর্মের নিও-বেদান্তিক নির্যাস—যেখানে কর্মই যোগ—কর্মেই সেবা, ধ্যান ও আত্মজ্ঞান—সব একাকার হয়ে যায়, এবং মানুষ জগতে থেকেই মুক্ত হয়ে ওঠে।
আধুনিক অদ্বৈত এবং বেদান্তিক গুরুরা সেই দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করেন, যা নিষ্কাম কর্মের ঐতিহ্যবাহী নীতিকে একবিংশ শতাব্দীর মনস্তত্ত্বের কাছে ব্যাবহারিক কৌশল হিসেবে উপস্থাপন করে। এই গুরুরা কর্মকে কেবল চিত্তশুদ্ধির প্রস্তুতি হিসেবে দেখেন না, বরং অহং-এর ক্ষয়সাধনের সরাসরি উপায় হিসেবে দেখেন।
রমণ মহর্ষি আধুনিক ভারতে অদ্বৈত বেদান্তের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রবক্তা। তাঁর শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো আত্ম-বিচার (Self-inquiry) বা নিরন্তর 'আমি কে?' (Who Am I?) প্রশ্নটির মাধ্যমে অহং-এর (Ego) মূল উৎস সন্ধান করা।
কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগের কৌশল: রমণ মহর্ষি মনে করতেন যে, কর্তৃত্বের ধারণাটি অহং থেকেই জন্ম নেয়। আত্ম-বিচারের মাধ্যমে যখন অহং-এর ক্ষয় সাধিত হয়, তখন কর্তা (Doer) ভাব আপনাআপনি বিলুপ্ত হয়। এটিই কর্তৃত্বাভিমান ত্যাগের একটি সহজ কৌশল: অহং-এর উৎস খুঁজে বের করে তা বিলীন করা।