৮. সম্যক সমাধি (Right Concentration): একাকী এবং শান্ত পরিবেশে মনকে একাগ্র করা, যার মাধ্যমে গভীর ধ্যানে প্রবেশ করা যায় এবং নির্বাণ লাভের উপযোগী মানসিক অবস্থা তৈরি হয়।
অষ্টাঙ্গিক মার্গের এই আটটি ধাপ অনুশীলন করার মাধ্যমে ব্যক্তি তার আসক্তিগুলোকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে পারে এবং একটি মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে।
ভারতীয় দর্শনের অন্যান্য ধারার সাথে তুলনা করলে, বৌদ্ধ ধর্মের এই আসক্তি ত্যাগের ধারণাটি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার নিষ্কাম কর্মের ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নিষ্কাম কর্মে ফল ভোগের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করে কর্তব্য পালনের কথা বলা হয়েছে, যা আসক্তি ত্যাগেরই একটি রূপ। উভয় দর্শনেই দেখা যায়, আসক্তিই দুঃখের কারণ এবং এর পরিত্যাগই শান্তি ও মুক্তির একমাত্র পথ। বৌদ্ধ ধর্মে এই মুক্তিকে নির্বাণ বলা হয়েছে, যেখানে সমস্ত মানসিক ক্লেশ ও বন্ধন থেকে চিরমুক্তি লাভ করা যায়।
মীমাংসা ও ন্যায় দর্শনেও আসক্তি-বর্জনের প্রেরণা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। মীমাংসা দর্শনের লক্ষ্য যদিও মূলত বেদবিহিত কর্ম সম্পাদন, তবু তার গভীরে নিহিত আছে এক নৈতিক সংযমবোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা। মীমাংসার মতে, ধর্ম মানে কোনো বিশ্বাস বা উপাসনা নয়, বরং বেদবিহিত কর্তব্যকর্ম পালন। যজ্ঞ, দান, উপাসনা—এই কর্মগুলো মানুষকে কল্যাণ বা স্বর্গে নিয়ে যায়, কিন্তু মীমাংসকগণ জোর দিয়ে বলেন—এই কর্মের মূল উদ্দেশ্য ফললাভ নয়; কর্মটি করতে হবে কর্তব্যবোধ থেকে, নিছক ঈশ্বরনির্ভর দায়িত্ববোধে। কারণ, ফল ঈশ্বরনির্ধারিত; মানুষ কেবল কর্ম করার অধিকারী, ফলের নয়। তাই ফল-লালসা বা ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে কর্ম করলে তা আত্মাকে শুদ্ধ করে না, বরং বেঁধে রাখে। কিন্তু যখন কর্ম কেবল কর্তব্য হিসেবে সম্পন্ন হয়, তখন সেই কর্ম আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, অহংকার হ্রাস করে এবং মুক্তির পথে নিয়ে যায়। এই দৃষ্টিভঙ্গি গীতার নীতির (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, ২.৪৭) সঙ্গে একেবারে মিলে যায়—“কর্মণ্যেবাধিকারস্তে, মা ফলেষু কদাচন”—অর্থাৎ, কর্ম করো, কিন্তু ফলের আকাঙ্ক্ষা রেখো না। মীমাংসা দর্শন এইভাবেই ফলবর্জনকে আত্মশুদ্ধির পূর্বশর্ত হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
অন্যদিকে, ন্যায় দর্শন মুক্তির উপায় হিসেবে জ্ঞানকে সর্বাগ্রে স্থান দেয়, কিন্তু এই জ্ঞানের উদ্দেশ্যও আসক্তি-বর্জন। ন্যায় মতে কামনা, মমতা, ক্রোধ ও মোহ—এই চারটি মানসিক বিকারই আত্মাকে দুঃখের বন্ধনে বেঁধে রাখে। এই বিকারের মূল কারণ হলো অজ্ঞান বা অবিদ্যা—আত্মার প্রকৃত স্বরূপ সম্পর্কে অচেতনা। আত্মা প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানময় ও শান্ত, কিন্তু কামনা ও মোহ তাকে সংসারে টেনে রাখে। তাই ন্যায় বলে, যখন মানুষ যুক্তিবোধ, সংযম ও সত্যজ্ঞান দ্বারা নিজের চিত্তকে শুদ্ধ করে, তখন কামনা ও আসক্তি স্বয়ং বিলীন হয়ে যায়, আর তখনই ঘটে মুক্তি, যা তারা “অপবর্গ” নামে অভিহিত করেছে। ‘অপবর্গ’ মানে দুঃখ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত অবস্থা, যেখানে আত্মা আর কোনো আসক্তি বা অজ্ঞান দ্বারা আবৃত থাকে না।
ন্যায় দর্শন মনে করে, জ্ঞানবিহীন কর্ম দুঃখের কারণ হতে পারে, কিন্তু জ্ঞাননির্ভর কর্ম আত্মাকে মুক্তির উপযোগী করে। জ্ঞান ও কর্তব্যবোধের আলোয় পরিচালিত কর্মই আত্মার পরিশুদ্ধির উপায়, আর আসক্তি বা কামনাপ্রসূত কর্ম আত্মাকে বদ্ধ রাখে। তাই ন্যায়ে যেমন জ্ঞানকে মুক্তির মুখ্য মাধ্যম বলা হয়েছে, তেমনি মীমাংসায় কর্তব্যনিষ্ঠ কর্মকেই সেই মুক্তির প্রস্তুতি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মীমাংসা ও ন্যায়—উভয় দর্শনেই মুক্তির সারতত্ত্ব এক—ফললোভ, কামনা ও আসক্তি ত্যাগ করে কর্তব্যনিষ্ঠ, জ্ঞানময় জীবনযাপন। একদিকে মীমাংসা ফলবর্জিত কর্তব্যকর্মকে ধর্মরূপে স্থাপন করেছে, অন্যদিকে ন্যায় কামনা-মোহবর্জিত জ্ঞানকে মুক্তির উপায় হিসেবে দেখিয়েছে। উভয়েই শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আসক্তিই দুঃখের মূল, আর আসক্তিবর্জনই মুক্তির পথ। এইভাবে মীমাংসা ও ন্যায় দর্শন, গীতার নিষ্কাম কর্মযোগের মতোই, ভারতীয় চিন্তাধারার নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ভিত্তি হিসেবে আসক্তিবর্জনের চিরন্তন সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এই সমস্ত দর্শন একসূত্রে বলে—ফলের আকাঙ্ক্ষা ও ভোগলালসাই জীবকে বেঁধে রাখে। ফলের চিন্তা যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ অহংকার ও দুঃখ অবশ্যম্ভাবী। আর যখন মানুষ কর্মফল থেকে মন সরিয়ে কর্তব্যে স্থির হয়, তখন তার চিত্ত নির্মল ও শান্ত হয়; সেখানেই জ্ঞানের উদ্ভব ও মুক্তির দ্বার উন্মোচিত হয়।
তাই, নিষ্কাম কর্ম ও আসক্তিবর্জনের ধারণা ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার এক সর্বজনীন মনস্তাত্ত্বিক সত্য। পতঞ্জলির যোগে এটি আত্মসংযমের পথ, বুদ্ধের ধর্মে এটি তৃষ্ণা-নিবৃত্তির মুক্তি, মীমাংসায় এটি কর্তব্যবোধ, আর ন্যায়ে এটি জ্ঞানশুদ্ধির অনুশাসন। সব দর্শনই একবাক্যে ঘোষণা করে—আসক্তিই দুঃখের মূল, আর আসক্তিবর্জনই মোক্ষ বা নির্বাণের একমাত্র পথ।
নিষ্কাম কর্ম বা ফলাসক্তিবর্জিত কর্ম—গীতার অন্যতম গভীর দার্শনিক আদর্শ। এর মর্ম হলো, কর্ম করো কর্তব্যবোধে, কিন্তু ফলের আকাঙ্ক্ষা রেখো না। তবে আধুনিক যুগের বাস্তবতায় এই আদর্শ মানা অত্যন্ত কঠিন, কারণ সমকালীন সভ্যতা মূলত ফলাফলনির্ভর। কর্মক্ষেত্রে পারফরম্যান্স, সমাজে মর্যাদা, এমনকি ব্যক্তির আত্মসম্মানও আজ তার প্রাপ্ত ফলের ওপর নির্ভরশীল। এই ফলকেন্দ্রিক সংস্কৃতি মানুষের মনে স্থায়ী উদ্বেগ, তুলনামূলক হীনতা, ভয় ও হতাশার জন্ম দেয়—যা আসলে সেই কামনা-চক্রেরই আধুনিক রূপ, যাকে গীতা (২.৬২, ২.৬৩) “দুঃখের মূল” বলে চিহ্নিত করেছে।
(শ্লোক ২/৬২): বিষয়বস্তুর (যেমন ফল বা প্রাপ্তির) চিন্তা করতে থাকলে তাতে আসক্তি জন্মে। আসক্তি থেকে জন্ম নেয় কামনা (ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা), আর কামনা পূরণ না হলে জন্ম নেয় ক্রোধ।
(শ্লোক ২/৬৩): ক্রোধ থেকে জন্ম নেয় ঘোর বা মোহ, মোহ থেকে স্মৃতিবিভ্রম (কর্তব্য ভুলে যাওয়া), স্মৃতিবিভ্রমের ফলে বুদ্ধিনাশ (বিবেক-বুদ্ধি হারানো), আর বুদ্ধিনাশ হলে মানুষ সম্পূর্ণভাবে বিনাশপ্রাপ্ত হয়।
গীতায় কৃষ্ণ বলেন, সকাম কর্ম বিষয়ের প্রতি আসক্তি জন্ম দেয়, আসক্তি থেকে কামনা, কামনা থেকে ক্রোধ, ক্রোধ থেকে মোহ, মোহ থেকে স্মৃতিভ্রম, স্মৃতিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ, আর বুদ্ধিনাশেই মানবধ্বংস ঘটে। এই ক্রমেই বোঝা যায়—ফলাকাঙ্ক্ষা বা কামনা শুধু মানসিক অস্থিরতা নয়, আত্মার অবনতি ঘটায়। মানুষ যখন ফলকেন্দ্রিক চেতনায় আবদ্ধ থাকে, তখন কর্মে তার মন স্থির থাকে না; ফল না পেলে সে হতাশ হয়, ফল পেলে অহং বৃদ্ধি পায়। এই দুই অবস্থাই দুঃখের কারণ। নিষ্কাম কর্ম এই দ্বন্দ্ব থেকে মুক্তি দেয়, কারণ তার উদ্দেশ্য বহিরাগত ফল নয়, অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি।
তবে এই নীতিকে বাস্তবে প্রয়োগের পথে দুটি প্রধান মনস্তাত্ত্বিক বাধা দেখা দেয়। প্রথমত, কামনা, যা মানুষের স্বাভাবিক প্রেরণা। মানুষ ফলের প্রত্যাশায় কাজ করে—এই সহজাত তৃষ্ণা বা প্রাপ্তির বাসনা ছাড়া কাজ করার প্রেরণা সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব দুর্লভ। দ্বিতীয়ত, কর্তৃত্বাভিমান, অর্থাৎ, “আমি কর্তা”—এই অহংবোধ। মানুষ স্বভাবতই মনে করে যে, সে নিজেই কর্মের স্রষ্টা এবং ফলের অধিকারী। এই কর্তৃত্ববোধ ত্যাগ না করলে নিষ্কাম কর্মের চেতনা প্রতিষ্ঠা পায় না। গীতা শেখায়—মানুষ কর্মের কর্তা নয়, কেবল যন্ত্রমাত্র; কর্তা আসলে ঈশ্বর বা বিশ্বচেতনা। কিন্তু এই উপলব্ধিতে পৌঁছানো মানসিকভাবে অত্যন্ত কঠিন, কারণ অহংই মানুষের সবচেয়ে গভীর বদ্ধমূল প্রবৃত্তি।
ফলকেন্দ্রিক কর্মের প্রেরণা বহিরাগত—এটি বাহ্যিক ফল-নির্ভর বা result-driven motivation। এই প্রেরণা অস্থির, কারণ ফল না পেলে কর্মের উৎসাহ নষ্ট হয়। এর বিপরীতে নিষ্কাম কর্মের প্রেরণা অভ্যন্তরীণ বা কর্তব্যচালিত (duty-driven motivation)। এই প্রেরণা স্থায়ী, কারণ এটি বাহ্যিক সাফল্যের ওপর নির্ভর করে না। যে নিষ্কাম কর্মী ফল নয়, কর্তব্যকে মুখ্য করে, তার মন স্থির, বুদ্ধি শুদ্ধ, এবং কর্মে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। সে জানে—ফল ঈশ্বরনির্ধারিত; তার কাজ কেবল কর্মে নিবিষ্ট থাকা।
এখানেই দেখা দেয় তৃতীয় এক প্রলোভন—কর্মত্যাগ (akarma)। যখন ফলের আকাঙ্ক্ষা থাকে না, তখন অনেকেই মনে করে, কাজ করার আর প্রয়োজন নেই। এটি নিষ্কাম কর্মের একটি ভুল ব্যাখ্যা। গীতা স্পষ্টভাবে বলে—কর্মহীনতা নিন্দনীয়। কর্ম ত্যাগ করাও এক ধরনের আসক্তি, কারণ তাতে কর্মের প্রতি বিরাগ বা উদাসীনতা থাকে। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উপদেশ দেন—কর্ম করো, কিন্তু আসক্তি বা বিমুখতা—দুইয়েরই পারস্পরিক বন্ধন থেকে মুক্ত থেকো। সত্য নিষ্কাম কর্ম মানে কাজ থেকে পলায়ন নয়, বরং কর্মের মধ্যেই আত্মনিবেদন। (গীতা ২.৪৭, ৩.৮, ৩.৪, ১৮.৭)
গীতা ২.৪৭: তোমার কেবল কর্মেই অধিকার, কর্মের ফলে কখনও নয়। তুমি যেন কর্মফলের হেতু না হও এবংতোমার যেন কর্মহীনতার প্রতি আসক্তি না হয়।
গীতা ৩.৮: তুমি তোমার নির্ধারিত কর্তব্য কর্ম করো, কারণ কর্মহীনতার চেয়ে কর্ম করা শ্রেষ্ঠ। কর্ম না করলে তোমারশরীর ধারণও সম্ভব হবে না।
গীতা ৩.৮: কর্মের আরম্ভ না করে (শুধু কর্ম ত্যাগ করে) কোনো ব্যক্তি নৈষ্কর্ম্য (কর্মের বন্ধন থেকে মুক্তি) লাভ করতে পারে না। কেবলমাত্র সন্ন্যাস গ্রহণ করলেই (অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে কর্ম ত্যাগ করলেই) সিদ্ধি (মোক্ষ বা পরমজ্ঞান) লাভ হয় না।
গীতা ১৮.৭: কর্তব্য কর্মের সন্ন্যাস (ত্যাগ) যুক্তিযুক্ত নয় মোহবশত সেই কর্তব্য কর্মের পরিত্যাগকে তামসিক ত্যাগ বলা হয়। (অর্থাৎ, দুঃখজনক বা কষ্টকর মনে করে কর্ম ত্যাগ করা আসক্তি বা বিমুখতার ফল, যা নিন্দনীয়।)।
নিষ্কাম কর্মের এই দৃষ্টিভঙ্গি কেবল গীতার ধর্মতত্ত্বে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এক সর্বজনীন নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সত্য, যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় দর্শনের গভীরে প্রবাহিত।
পাশ্চাত্য নীতিতত্ত্বে এর প্রতিধ্বনি সবচেয়ে স্পষ্টভাবে শোনা যায় ইমানুয়েল ক্যান্টের নৈতিক দর্শনে। ক্যান্ট বলেন, কোনো কর্মের নৈতিকতা তার ফল বা পরিণামের ওপর নয়, বরং তার অন্তর্নিহিত কর্তব্যবোধ (duty) ও সদিচ্ছা (good will)-এর ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, মানুষকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন তার কর্মের সূত্র (maxim) সর্বজনীন আইন হতে পারে। এই ধারণা গীতার “ফলত্যাগসিদ্ধ নিষ্কাম কর্ম”-এর সঙ্গে গভীরভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ, যেখানে কর্মের মূল্য ফল নয়, উদ্দেশ্য ও মনোভাবের মধ্যে নিহিত।
কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোঽস্ত্বকর্মণি।। (গীতা, ২.৪৭)
অর্থাৎ—
১. তোমার কর্মেই কেবল অধিকার আছে, কর্মের ফলে কখনও নয়।
২. তুমি যেন কর্মফলের হেতু না হও, অর্থাৎ ফলের আকাঙ্ক্ষায় কর্ম না করো।
৩. তোমার যেন কর্ম না করার প্রতিও আসক্তি না হয়, অর্থাৎ নিষ্ক্রিয়তা বা কর্মহীনতাও যেন তোমার লক্ষ্য না হয়।
"ফলত্যাগসিদ্ধ নিষ্কাম কর্ম" (Action without desire for result, leading to perfection) হলো সেই কর্ম, যা নিম্নলিখিত তিনটি প্রধান নীতি অনুসরণ করে—
কর্ম করো, তবে ফলের মালিকানা ছেড়ো (অনাসক্তি): যে-কোনো কর্তব্যকর্ম (নিয়ত কর্ম) আন্তরিকভাবে করতে হবে, কিন্তু সেই কাজের ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা বা প্রত্যাশা ত্যাগ করতে হবে। ফল ভালো বা মন্দ যা-ই হোক না কেন, তা শান্ত চিত্তে গ্রহণ করাই হলো অনাসক্তি।
অহংকার ত্যাগ (কর্তৃত্বাভিমান শূন্যতা): এখানে কর্মী মনে করে যে, সে কেবল কর্তব্যের খাতিরে কাজ করছে; ফলস্বরূপ, "আমি করেছি" বা "আমি এর ফল ভোগ করব", এই ধরনের অহংবোধ ত্যাগ করতে হয়। নিজেকে কর্মের যন্ত্র বা মাধ্যম মনে করা হয়, কর্তা নয়।
বন্ধন থেকে মুক্তি (নৈষ্কর্ম্য সিদ্ধি): কর্মের ফল কামনা করলে সেই ফলপ্রাপ্তির জন্য সুখ বা প্রাপ্ত না হওয়ার জন্য দুঃখ ও উদ্বেগ আসে। এভাবে মানুষ কর্মের বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে। ফলত্যাগ করে কর্ম করলে, কর্মের বাসনাজনিত বন্ধন ছিন্ন হয়। এই কর্মই আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং মোক্ষের দিকে নিয়ে যায়, যা গীতাতে "নৈষ্কর্ম্য সিদ্ধি" নামে পরিচিত।
এটি কর্মকে আত্মশুদ্ধির একটি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করার প্রক্রিয়া, যেখানে কাজ করার প্রচেষ্টাটিই আসল ধর্ম, ফল লাভ নয়।