অবিদ্যা-বিদ্যা: ৬২


বৈদান্তিক পরম্পরা এবং অন্যান্য শাস্ত্রে নিষ্কাম কর্ম:


উপনিষদের প্রেক্ষাপট—ঈশোপনিষদ এবং নিষ্কাম কর্মের ভিত্তি: নিষ্কাম কর্মের আদর্শ বৈদিক ঐতিহ্যের মূলধারার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। গীতার বহু পূর্বেই উপনিষদে এই ধারণার ভিত্তি দেখা যায়। ঈশোপনিষদ (Isha Upanishad) কর্ম ও ত্যাগের মধ্যে সমন্বয়ের পথ নির্দেশ করেছে। এই উপনিষদের দ্বিতীয় মন্ত্র নিষ্কাম কর্মকে সমর্থন করে এবং বলে যে, নিঃস্বার্থ কর্মের দ্বারা মানুষ কখনও বন্ধন বা দোষে কলঙ্কিত হয় না। এই প্রকার সাধনার জীবনযাপনের মাধ্যমে মানুষ কর্মের দ্বারা কলঙ্কিত বা শৃঙ্খলিত হয় না।


ঈশোপনিষদ মধ্যপন্থার (Middle Path) উপর জোর দেয়। এটি চরমপন্থা—যেমন কেবল জ্ঞান বা কেবল অজ্ঞানের উপাসনা—থেকে বিরত থাকতে বলে। অর্থাৎ, কেবল কর্মে আসক্তি বা কেবল কর্মত্যাগে আসক্তি, কোনোটাই মুক্তির পথ নয়। নিষ্কাম কর্ম এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি ও মুক্তির দিকে নিয়ে যায়। এই ধারণাটি কর্মকে বন্ধনের পথ হিসেবে না দেখে, বরং মুক্তির পথ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।


ঈশোপনিষদের প্রথম দুই মন্ত্রই গীতার সমগ্র দর্শনের বীজরূপ—যা পরবর্তীকালে “অধ্যাত্মচেতসা”, “চেতসা সন্ন্যাস্য” বা “ময়ি সর্বাণি কর্মাণি সন্ন্যাস্য”-র মতো গীতার সূত্রে পরিণত হয়েছে। এই দুই মন্ত্র একত্রে ঘোষণা করে—জগৎ ঈশ্বরে আচ্ছাদিত, ত্যাগেই ভোগ এবং কর্মেই মুক্তি।


প্রথম মন্ত্রের তত্ত্ব:

ঈশা বাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ।

তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম্।।

অর্থাৎ, পরিবর্তনশীল এই জগতে সবকিছুরই ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। তথাপি সব কিছু পরমেশ্বরের দ্বারা আবৃত। ত্যাগ অনুশীলন কর এবং সর্বভূতের চৈতন্যস্বরূপ আত্মায় দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত হও। অপরের ধনে লোভ কোরো না।


অন্বয়: জগত্যাম্ (জগতে); যৎ কিঞ্চ (যা কিছু); জগৎ (পরিবর্তনশীল, বিনাশশীল); ইদং সর্বম্ (এই সবকিছু); ঈশা বাস্যম্ (ঈশ্বর কর্তৃক আচ্ছাদিত); তেন (সেই হেতু); ত্যক্তেন (ত্যাগের দ্বারা); ভুঞ্জীথা (পালন কর [অর্থাৎ ঈশ্বর সর্বত্র এবং সর্বভূতে আছেন এই চেতনাকে বলিষ্ঠ কর]); কস্য স্বিৎ (কারও); ধনম্ (ধনে); মা গৃধঃ (লোভ করো না)।


“ঈশা বাস্যম্ ইদং সর্বম্ যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ”-এর ভাবার্থ: এই জগতের মধ্যে যা-কিছু গতিশীল বস্তু (জগৎ) আছে, এই সমস্তই (ইদং সর্বম্) ঈশ্বর দ্বারা আবৃত (ঈশা বাস্যম্)। এই অংশটি ব্রহ্মের সর্বব্যাপকত্ব ঘোষণা করে। সব কিছুই ঈশ্বর কর্তৃক পরিব্যাপ্ত, অর্থাৎ ঈশ্বরই সব কিছুর অন্তরাত্মা এবং আধার।


“তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা”-এর ভাবার্থ: সেই ত্যাগের দ্বারা (তেন ত্যক্তেন) তুমি ভোগ করো (ভুঞ্জীথা)। যেহেতু সব কিছুর অধিপতি ঈশ্বর, তাই কোনো কিছুর প্রতি মমতা বা আসক্তি রেখো না। তুমি ঈশ্বরের প্রদত্ত অংশটুকু অনাসক্তভাবে গ্রহণ বা ভোগ করো।


“মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্”-এর ভাবার্থ: কারও ধনে (কস্যস্বিদ্ ধনম্) লোভ কোরো না (মা গৃধঃ)। এই অংশটি লোভ ও আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে সরাসরি নির্দেশ দেয়, কারণ জগতের কোনো কিছুই ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সব কিছুরই একমাত্র অধিপতি হলেন ঈশ্বর।


এই মন্ত্রটি জ্ঞান ও কর্মের একটি মৌলিক সমন্বয়। জ্ঞান: প্রথমে ঈশ্বরের সর্বব্যাপকত্ব (জ্ঞান) উপলব্ধি করতে হবে। কর্ম: এরপর সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে অনাসক্ত জীবনযাপন (কর্ম) করতে হবে। অনাসক্তি ও ত্যাগই হলো এই পৃথিবীতে ধর্মসম্মতভাবে বেঁচে থাকার এবং বন্ধনমুক্ত থাকার একমাত্র পথ।


এখানে বলা হচ্ছে—এই চলমান জগৎ ঈশ্বরে পরিপূর্ণ; কিছুই তাঁর বাইরে নয়। “তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা” মানে—ত্যাগের মাধ্যমে ভোগ করো; অধিকারবোধ ত্যাগ করেই উপভোগ করো। “মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ধনম্”—অন্যের সম্পদের, বা ফলের, বা কর্তার অহংকারের লোভ করো না। এই মন্ত্রই গীতার “অধ্যাত্মচেতসা”-র মূল ভাব। যখন চেতনা আত্মায় স্থিত হয়, তখন প্রতিটি কাজ ঈশ্বরস্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। ফল-আসক্তি তখন বিলীন।


শঙ্করাচার্য বলেন—“যিনি জগতকে ঈশ্বররূপে দেখেন, তাঁর ত্যাগই প্রকৃত ভোগ।” এটাই পরে গীতায় হয়েছে—“নিরাশীর নির্মমো ভূত্বা” (ভগবদ্গীতা, ৩.৩০)—আসক্তি ও অহং ত্যাগই প্রকৃত উপভোগ। বিবেকানন্দ বলেন—“Work and worship are not two; they are one when done in the spirit of renunciation.” অর্থাৎ, কর্মই উপাসনা, যদি তা নিঃস্বার্থ হয়।


রমণ মহর্ষি বলেন—“Īśa Vāsyam means the Self is all. When seen thus, there is no doer, no enjoyer, no bondage.” আত্মস্মরণেই তখন ভোগ ও ত্যাগের ভেদ মুছে যায়। চিন্ময়ানন্দজি বলেন—“The Isa Upanishad transforms all work into yajna—an offering to the Divine.” কর্ম তখন যজ্ঞ, কারণ কর্তা ঈশ্বর, ফল ঈশ্বরের জন্য নিবেদিত।


শ্রীঅরবিন্দ বলেন—“The Isa Upanishad is the seed of the Gita. From its vision of all-pervading Godhood arises the Gita’s yoga of works.” অর্থাৎ, ‘ঈশা বাস্যমিদং সর্বম্’-এর সর্বব্যাপক দৃষ্টি থেকেই গীতার ‘ময়ি সর্বাণি কর্মাণি সন্ন্যাস্য’ নীতি উদ্ভূত।


এই জগৎ এবং জগতের সব কিছু সর্বদা পরিবর্তিত—একটানা গতি, জন্ম, বিনাশ, সৃষ্টি ও লয়—এই চক্রেই তা প্রবাহিত। কিন্তু যিনি এই পরিবর্তনের পেছনে অবিচলভাবে বিরাজমান, তিনি অপরিবর্তনীয়, স্থির, চিরসত্য। তিনিই পরমেশ্বর—সকল বস্তুর আশ্রয়, ভিত্তি ও অন্তঃস্থিত আত্মা। যেমন চলমান ছবির পর্দা নিজে অচঞ্চল, তেমনি এই জগৎ পরমেশ্বরের উপর আরোপিত এক চলমান প্রতিচ্ছবি।


অন্ধকারে যেমন দড়িকে সাপ বলে ভুল করা হয়, তেমনি অজ্ঞানবশে আমরা জগৎকে স্বতন্ত্র সত্য বলে মনে করি। আলো অর্থাৎ জ্ঞান উদিত হলে যেমন সাপের ভ্রম লুপ্ত হয়ে দড়ির স্বরূপ প্রকাশ পায়, তেমনি ব্রহ্মজ্ঞান লাভে এই জগৎ ব্রহ্মে লীন হয়ে যায়। তখন জানা যায়—আমি ও ব্রহ্ম এক, অবিভাজ্য, অভেদ। এই জ্ঞানই জীবনের লক্ষ্য ও মুক্তির উপায়।


এই উপলব্ধির পর জগতের মলিনতা বা আসক্তি আর স্পর্শ করতে পারে না। যেমন চন্দনকাঠ দীর্ঘদিন জলে ডুবে থাকলে সাময়িক গন্ধ হারায়, কিন্তু ঘষলেই সুগন্ধ ফিরে আসে—তেমনি আত্মার পবিত্রতা আসক্তির ধূলায় ঢেকে যায়, কিন্তু চিন্তা ও সাধনার ঘষণে সেই বিশুদ্ধতা পুনরায় জেগে ওঠে।


ব্রহ্মজ্ঞান লাভের একমাত্র পথ ত্যাগের অনুশীলন। এই ত্যাগ জগৎ-পরিত্যাগ নয়, বরং অনিত্য বস্তুর প্রতি আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ। সবসময় স্মরণ রাখতে হবে—এই জগৎ ও এর প্রলোভন সত্য নয়, কারণ তা ক্ষণস্থায়ী; ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, কারণ তিনি অবিনশ্বর।


যে জানে, সোনা, সম্পদ বা ইন্দ্রিয়সুখ নশ্বর, সে তাতে আসক্ত হয় না। অপরের ধনে লোভ করে না, নিজের ধনেও মমতা রাখে না। তার মন আকৃষ্ট থাকে ব্রহ্মে, চিরসত্তায়। ব্রহ্মই একমাত্র কাম্য বস্তু—এই বোধেই মন স্থির করতে হবে।


নিরন্তর ব্রহ্মচিন্তায় নিমগ্ন থাকতে হবে—“ব্রহ্মই একমাত্র সত্য, এবং আমিই সেই ব্রহ্ম।” এই আত্মজ্ঞানে স্থিত থাকলে সমস্ত আসক্তি, মোহ ও ভয় বিলুপ্ত হয়। তখন ভোগ ও ত্যাগ, সুখ ও দুঃখ, লাভ ও ক্ষতি—সব একই ব্রহ্মস্বরূপে পরিণত হয়। এই স্থিতিই উপনিষদে উল্লিখিত পরম শান্তি, এবং এই জ্ঞানেই মানুষের জীবন পায় তার চূড়ান্ত পূর্ণতা।


দ্বিতীয় মন্ত্রের তত্ত্ব:

কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ।

এবং ত্বয়ি নান্যথেতোঽস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে।।

অর্থাৎ, শাস্ত্রবিহিত কর্ম করার ফলে কোন ব্যক্তি শত বৎসর বাঁচতে ইচ্ছুক হতে পারেন। এভাবে যিনি কাজ করেন তিনি তাঁর কর্মফলে লিপ্ত হন না। এছাড়া আর অন্য কোন পথ নেই।


অন্বয়: কর্মাণি (শাস্ত্রীয় কর্মসমূহ); কুর্বন্ এব (করেই); ইহ (এখানে, এই জগতে); শতং সমাঃ (শত বৎসর); জিজীবিষেৎ (যদি বাঁচার ইচ্ছা হয়); এবম্ (এইভাবে); ত্বয়ি নরে (ওহে মানুষ তোমাতে); কর্ম ন লিপ্যতে (কর্মের ফল লিপ্ত হবে না); অন্যথা ন অস্তি (আর কোন পথ নেই)।


“কুর্বন্নেব ইহ কর্মাণি জিজীবিষেৎ শতং সমাঃ”-এর এই জগতে (ইহ) কর্ম করতে করতেই (কুর্বন্ এব কর্মাণি) মানুষের শত বছর বেঁচে থাকার ইচ্ছা (শতম্ সমাঃ জিজীবিষেৎ) করা উচিত। এটি ঘোষণা করে যে, একজন মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে, ততদিন তার কর্ম করা অনিবার্য। অর্থাৎ, কর্মত্যাগ বা নিষ্ক্রিয়তা সম্ভব নয়।


“এবং ত্বয়ি নান্যথা ইতঃ অস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে”-এর ভাবার্থ: তোমার (অর্থাৎ, সেই ব্যক্তির) জন্য এর থেকে ভিন্ন (ন অন্যথা ইতঃ) অন্য কোনো পথ নেই (ন অস্তি), এবং এই পথেই মানুষ কর্মে লিপ্ত হয় না (ন কর্ম লিপ্যতে নরে)। এই অংশে মোক্ষলাভের একমাত্র উপায় নির্দেশ করা হয়েছে। কর্ম বন্ধন সৃষ্টি করবে না, যদি তা অনাসক্তভাবে (অর্থাৎ, ঈশ্বর বা আত্মাকে নিবেদন করে) করা হয়। কর্ম করেও বন্ধনে লিপ্ত না হওয়া—এর থেকে আর কোনো শ্রেষ্ঠ পথ নেই।


এই মন্ত্রটি কর্মযোগের ভিত্তি স্থাপন করে। কর্ম অনিবার্য। কর্ম করা হলো মানুষের ধর্ম। জীবনকে সার্থক করতে হলে কর্ম থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। অনাসক্তির পদ্ধতি সম্পর্কে এভাবে বলা হয়েছে—কর্মকে বন্ধনমুক্ত করতে হলে তাকে নিষ্কামভাবে করতে হবে। কর্মের ফল বা কর্তৃত্বে আসক্ত না হয়ে কর্ম করলে সেই কর্ম আর বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে না (কুর্বন্নপি ন লিপ্যতে)। এই মন্ত্রটি জ্ঞানলাভের পূর্ব পর্যন্ত জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয় করে, কর্মকে চিত্তশুদ্ধি এবং বন্ধনহীন জীবনধারণের উপায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে।


এখানে উপনিষদ বলছে—জ্ঞানসহিত কর্ম করো। জ্ঞানহীন কর্ম বন্ধন সৃষ্টি করে, কিন্তু আত্মচেতনায় স্থিত কর্ম মুক্তির পথ। “ন কর্ম লিপ্যতে নরে”—যিনি আত্মস্মৃতিতে কর্ম করেন, তাঁকে কর্ম লেপন করে না। এটাই গীতার ভাষায়—“ময়ি সর্বাণি কর্মাণি সন্ন্যাস্য অধ্যাত্মচেতসা।” (ভগবদ্গীতা, ৩.৩০)


দার্শনিক সেতুবন্ধ—উপনিষদ থেকে গীতা: ঈশোপনিষদের “ত্যাগে ভোগ” নীতি গীতার নিষ্কাম কর্মযোগে পরিণত হয়। উপনিষদ বলে—ত্যাগে ভোগ, ভোগে ঈশ্বরস্মৃতি; গীতা বলে—সন্ন্যাস্য অধ্যাত্মচেতসা—আত্মসংলগ্ন ত্যাগই যোগ।


শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতিক সংক্ষিপ্তার্থ: “যিনি জগৎকে ব্রহ্মরূপে জানেন, তাঁর কর্ম আর কর্ম থাকে না—তা জ্ঞানময় ত্যাগে রূপান্তরিত হয়।”


স্বামী বিবেকানন্দের সামাজিক ব্যাখ্যা: “This Upanishadic vision is the foundation of Karma-Yoga: to work incessantly, renouncing the fruit, in the name of the Lord.”


রমণ মহর্ষির আত্মিক ব্যাখ্যা: “When the ego dies, all actions become the movement of the Self—it is no longer bondage.”


অরবিন্দের সমন্বিত দৃষ্টি: “The Isa Upanishad unites renunciation and enjoyment; the Gita expands it into a universal yoga—renunciation in the midst of action.”


ঈশোপনিষদ শেখায়—“ভোগ ত্যাগে, ত্যাগ কর্মে, কর্ম মুক্তিতে।” গীতা তা বিকশিত করে বলে—“সন্ন্যাস্য অধ্যাত্মচেতসা, চেতসা ময়ি সন্ন্যাস্য।” অর্থাৎ, সমর্পণ করে (সন্ন্যাস্য) অধ্যাত্ম জ্ঞানে স্থিত মন দ্বারা (অধ্যাত্মচেতসা); মন দ্বারা (চেতসা) আমাতে (ঈশ্বরে/ময়ি) সমর্পণ করে (সন্ন্যাস্য); ফলে, বন্ধনমুক্ত হওয়ার জন্য সমস্ত কর্মের ফলসচেতন মন (অধ্যাত্মচেতসা) দ্বারা ঈশ্বরকে (ময়ি) উৎসর্গ করতে হবে—যা ভগবদ্গীতার ৩.৩০ শ্লোকের একটি মূল ভাবকে প্রকাশ করে।


উভয়ের লক্ষ্য এক—আত্মচেতনায় প্রতিষ্ঠিত কর্ম, যেখানে কর্তা-ভ্রান্তি নেই, ফল-আসক্তি নেই, কেবল ব্রহ্মস্মৃতি প্রবাহিত। সেই কর্মই তখন মুক্তির রূপান্তর—শাশ্বত পদমব্যয়ম্, চির শান্তির পরম অবস্থান।


আগের মন্ত্রে ত্যাগের মহিমা নির্দেশ করা হয়েছে—বলা হয়েছে, জাগতিক সুখের পিছনে ছোটা অর্থহীন, কারণ সেই সুখ ক্ষণস্থায়ী, পরিবর্তনশীল ও অবসানশীল। যে-সুখ অনিত্য, তার পেছনে আকাঙ্ক্ষা জন্মালে ফল হয় দুঃখ; কারণ আকাঙ্ক্ষা যত বৃদ্ধি পায়, ততই মন আবদ্ধ হয়। তাই যে জাগতিক ভোগে আমরা সুখ খুঁজে ফিরি, তা শেষপর্যন্ত দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।