অবিদ্যা-বিদ্যা: ৫৭



রমণ মহর্ষি বলেছেন, "In the Self there is no triputi of knower, knowledge, and known. When the ego dies, the triad vanishes, and what remains is the pure Awareness." অর্থাৎ, আত্মায় কোনো ত্রিপুটি নেই; অহংকার বিলীন হলে ত্রিপুরী মুছে যায়, এবং অবশিষ্ট থাকে কেবল বিশুদ্ধ সচেতনতা। এই উক্তিটি আত্ম-অনুসন্ধানের (Self-inquiry) মূল ভিত্তি। রমণ মহর্ষি শেখাতেন, “আমি কে?”, এই প্রশ্নের গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে অহং বা ব্যক্তিগত পরিচয়ের বিলোপ ঘটে। যখন অহংকার—যা জ্ঞাতা, জ্ঞান এবং জ্ঞেয়-এর বিভাজন তৈরি করে—লুপ্ত হয়, তখন এই ত্রিপুটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলীন হয়ে যায়। যা অবশিষ্ট থাকে, তা হলো বিশুদ্ধ 'সচেতনতা'—যা কোনো বিশেষ বস্তুর সচেতনতা নয়, বরং স্বয়ং সচেতনতা। এটি পরমাত্মা বা ব্রহ্মের অবস্থা, যেখানে কোনো প্রকার দ্বৈততা বা বিভাজন নেই। এটি অভিজ্ঞ, অভিজ্ঞতা এবং অভিজ্ঞেয়-এর ঊর্ধ্বে এক অখণ্ড সত্তা।


স্বামী বিবেকানন্দও একই সত্যকে ভিন্নভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, "The knower, the known, and knowledge are one in the Absolute. Duality is only in ignorance." অর্থাৎ, জ্ঞাতা, জ্ঞেয় ও জ্ঞান—এই তিনই পরমার্থিক স্তরে এক। দ্বৈততা কেবল অজ্ঞানতার স্তরে বিদ্যমান। বিবেকানন্দ বেদান্ত দর্শনের এই কেন্দ্রীয় ধারণাকে তুলে ধরেছেন যে, জাগতিক অভিজ্ঞতার স্তরে আমরা জ্ঞাতা (subject), জ্ঞেয় (object) এবং জ্ঞান (act of knowing)-এর মধ্যে একটি পার্থক্য অনুভব করি। কিন্তু এই পার্থক্য মায়ার কারণে উদ্ভূত, যা আমাদের সত্যস্বরূপকে আবৃত করে রাখে। পরমাত্মার স্তরে, যেখানে কোনো প্রকার সীমাবদ্ধতা নেই, সেখানে এই বিভেদ সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হয়। সেখানে জ্ঞাতা নিজেই জ্ঞেয়, এবং জ্ঞান প্রক্রিয়ার কোনো অস্তিত্ব থাকে না, কারণ সবই এক অখণ্ড সত্তার প্রকাশ। অজ্ঞতা হলো সেই অবস্থা, যখন আমরা এই একত্বকে উপলব্ধি করতে পারি না এবং নিজেকে শরীর-মন-বুদ্ধির সমষ্টি হিসেবে ভুল করি, যা দ্বৈততার জন্ম দেয়। আত্ম-জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে এই অজ্ঞতার অবসান ঘটে এবং একত্বের উপলব্ধি হয়।


স্বামী চিন্ময়ানন্দ এই বিষয়টিকে আরও সহজবোধ্য করে বলেছেন, "The Triputi is the play of the mind; when the mind is transcended, knowledge and the knower merge into the known—the Self." অর্থাৎ, ত্রিপুটি হলো মনের খেলা; যখন মনকে অতিক্রম করা হয়, তখন জ্ঞান এবং জ্ঞাতা জ্ঞেয়-তে মিশে যায়—যা আত্মস্বরূপ। চিন্ময়ানন্দজি জোর দিয়ে বলেছেন যে, আমাদের মনই এই দ্বৈততা এবং ত্রিপুটির ধারণা তৈরি করে। মন আমাদের অভিজ্ঞতাগুলিকে জ্ঞাতা, জ্ঞেয় এবং জ্ঞান—এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করে দেখে। কিন্তু যখন সাধনার মাধ্যমে মনকে শান্ত করা হয়, এর চঞ্চলতাকে অতিক্রম করা হয়, তখন এই কৃত্রিম বিভাজনগুলি অদৃশ্য হয়ে যায়। জ্ঞাতা এবং জ্ঞান তখন জ্ঞেয়-এর সঙ্গে এক হয়ে যায়, যা শেষ পর্যন্ত আত্মস্বরূপ। এই আত্মাই হলো সেই পরম সত্য যেখানে কোনো প্রকার ভেদাভেদ নেই, এবং যেখানে উপলব্ধিই স্বয়ং উপলব্ধি।


এই তিন মহান আচার্যের শিক্ষায় একটি সাধারণ বিষয় প্রতিফলিত হয়: পরম সত্যের উপলব্ধিতে দ্বৈততা বা ত্রিপুটির কোনো স্থান নেই। জাগতিক স্তরে আমরা নিজেকে স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে দেখি, যা জ্ঞেয় বস্তু থেকে পৃথক। কিন্তু আধ্যাত্মিক অগ্রগতির সাথে সাথে, বিশেষত আত্ম-অনুসন্ধান, জ্ঞানযোগ বা ভক্তিযোগের মাধ্যমে, আমরা এই বিভাজনকে অতিক্রম করি। মনের নিবৃত্তির মাধ্যমে অহংকার বিলীন হয়, এবং তখন জ্ঞাতা, জ্ঞেয় ও জ্ঞান—সবই এক পরম অখণ্ড সত্তায় বিলীন হয়ে যায়। এই অবস্থাই হলো মোক্ষ বা নির্বাণ, যেখানে বিশুদ্ধ সচেতনতা বা পরমাত্মার উপলব্ধি হয়। এই উপলব্ধি কেবল বৌদ্ধিক নয়, এটি এক প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, যেখানে কোনো প্রশ্ন বা সংশয় থাকে না। এটি পরম শান্তি, আনন্দ এবং সত্যের অবস্থা।


‘ত্রিপুরী’ মানে অভিজ্ঞতার সেই ত্রয়ীভাগ, যা চেতনার সীমাবদ্ধ প্রতিফলন। যতক্ষণ এই ভেদবোধ টিকে থাকে, ততক্ষণ দ্বৈততা ও বন্ধন থাকে; আর যখন তা বিলীন হয়, তখন প্রকাশিত হয় একমাত্র সত্য—চির-ব্রহ্ম-অনুভব। তখন জ্ঞাতা, জ্ঞেয়, জ্ঞান—সব একাকার, এক নির্ভেদ দীপ্তিতে প্রকাশিত হয় অদ্বিতীয় আত্মা—যিনি স্বয়ং ব্রহ্ম।


অদ্বৈত বেদান্তে জ্ঞান (Jñāna) কোনো মনস্তাত্ত্বিক বা ইন্দ্রিয়গম্য প্রক্রিয়া নয়; এটি আত্মার স্বরূপগত দীপ্তি—আত্ম-প্রকাশ (Ātma-Prakāśa)—যা কখনও উৎপন্ন হয় না, বরং সর্বদা উপস্থিত থাকে। জ্ঞান এখানে কোনো মানসিক ক্রিয়া নয়, কোনো চিন্তাভাবনার ফল নয়; এটি আত্মার নিজস্ব স্ব-প্রকাশ, যেমন আলো নিজের প্রকৃতিতেই প্রকাশিত, অন্য কিছু আলোকিত করতে গিয়ে নিজে আলোকিত হয় না, কারণ সে নিজেই আলো। আত্মা তেমনি চির-আলোকিত (Svayam-Prakāśa); সে নিজেকে বা অন্য কিছু জানার জন্য কোনো পৃথক যন্ত্রের প্রয়োজন করে না। তবু অভিজ্ঞতার স্তরে, অর্থাৎ ব্যাবহারিক স্তরে (Vyāvahārika Sattā) আমরা দেখি যেন এই জ্ঞান কোনো প্রমাণ (Pramāṇa) তথা জ্ঞানের যন্ত্র দ্বারা উদিত হচ্ছে। এটি এক আপাতদৃষ্টির (Avidyā-upādhi) প্রকাশ, যেখানে অচঞ্চল আত্মা যেন মানসিক প্রতিফলনের মাধ্যমে কিছু “জানছে” বলে মনে হয়।


অবিদ্যা-উপাধি হলো অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের একটি মৌলিক ধারণা, যা জীবাত্মার বন্ধন এবং ব্রহ্ম থেকে তার আপাত পার্থক্য ব্যাখ্যা করে। অবিদ্যা (Avidyā)-র অর্থ হলো অজ্ঞান বা সেই শক্তি, যা ব্রহ্মের একত্বকে লুকিয়ে রেখে বহুত্বের ভ্রম সৃষ্টি করে (মায়া)। উপাধি (Upādhi)-র অর্থ হলো সীমাবদ্ধকারী উপাদান, উপকরণ বা প্রতিফলক মাধ্যম। এটি এমন একটি শর্ত বা বৈশিষ্ট্য, যা বস্তুর নিজস্ব স্বরূপকে প্রভাবিত না করেও তাকে সীমিত বা ভিন্ন রূপে প্রতিভাত করে। অবিদ্যা-উপাধি হলো সেই অজ্ঞানজনিত উপাদান, যা ব্রহ্মের অসীম চৈতন্যকে আবৃত করে তাকে সীমিত জীবাত্মা রূপে প্রতীয়মান করে।


অবিদ্যা-উপাধি বলতে প্রধানত কারণ-শরীর (Causal Body) এবং সূক্ষ্ম-শরীর (Subtle Body)-কে বোঝানো হয়, যা জীবকে সীমাবদ্ধ করে। কারণ-শরীর হলো অবিদ্যার সূক্ষ্মতম রূপ, যা সুষুপ্তি (গভীর নিদ্রা)-তে বিদ্যমান থাকে। সূক্ষ্ম-শরীর (লিঙ্গ শরীর)-এ রয়েছে মন, বুদ্ধি, অহংকার এবং ইন্দ্রিয়গুলি।


মহাকাশ হলো ব্রহ্ম (অসীম, অখণ্ড)। ঘট (কলসি) হলো উপাধি (দেহ/মন)। ঘটটি মহাকাশকে যে-আবরণে সীমিত করে, সেটি হলো অবিদ্যা-উপাধি। এই উপাধির কারণে অসীম ব্রহ্মই ঘটের অভ্যন্তরে থাকা ঘটাকাশ (জীবাত্মা) রূপে সীমিত বলে প্রতীয়মান হয়।


এই অবিদ্যা-উপাধিই জীবকে ভুল ধারণা দেয় যে, সে কর্তা, ভোগী, দুঃখী, জন্ম-মৃত্যুর অধীন। এই ভ্রমই বন্ধনের কারণ। আর মোক্ষ হলো জ্ঞান দ্বারা এই অবিদ্যা-উপাধিকে বিলীন করা। যখন উপাধি দূর হয়, তখন জীবাত্মা তার সীমিত রূপ ত্যাগ করে আবার অসীম ব্রহ্মের সঙ্গে একত্ব লাভ করে।


প্রমাণসমূহই হলো সেই সিঁড়ি, যার সাহায্যে সসীম মন ধীরে ধীরে অসীম আত্মচেতনার দিকে অগ্রসর হয়। ঐতিহ্যগতভাবে তিনটি প্রধান প্রমাণ স্বীকৃত—প্রত্যক্ষ (Pratyakṣa), অনুমান (Anumāna) এবং শ্রুতি-প্রমাণ (Śruti-Pramāṇa)। ‘প্রত্যক্ষ’ হলো ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে অর্জিত সরাসরি জ্ঞান; এটি আমাদের ইন্দ্রিয় ও মন-সংযোগের ফল। ‘অনুমান’ হলো যুক্তির দ্বারা অর্জিত পরোক্ষ জ্ঞান; যা প্রত্যক্ষের ওপর নির্ভর করে কোনো অদৃশ্য সত্য নির্ণয় করে। আর ‘শ্রুতি’ হলো সেই প্রমাণ, যা মানুষের বুদ্ধি বা ইন্দ্রিয়ের ঊর্ধ্বে—বেদের বাণী, যা অনাদি ও অপৌরুষেয় (a-pauruṣeya), অর্থাৎ মানবপ্রণীত নয়, বরং চিরন্তন সত্যের প্রতিধ্বনি।


"অনাদি ও অপৌরুষেয়" দুটি শব্দ দর্শনে, বিশেষত বেদান্ত এবং মীমাংসা দর্শনে, বেদ এবং ব্রহ্মের স্বরূপ বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই ধারণাগুলি এই গ্রন্থগুলির চিরন্তনতা এবং ঐশ্বরিক উৎসকে প্রতিষ্ঠা করে। ‘অনাদি’ (Anādi) অর্থ হলো যার আদি বা শুরু নেই (Non-beginning; beginningless)। ব্রহ্ম বা পরমাত্মা হলেন নিত্য (চিরন্তন) এবং স্বয়ম্ভু (স্বয়ং উৎপন্ন)। যেহেতু তাঁর কোনো শুরু নেই, তাই তাঁর কোনো শেষও নেই। বেদকে এমন জ্ঞান বলে মনে করা হয়, যা কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সৃষ্টি হয়নি। এটি জ্ঞানস্বরূপ ব্রহ্মের সঙ্গে চিরকাল বিদ্যমান ছিল।


‘অপৌরুষেয়’ (Apauruṣeya) অর্থ হলো, যা কোনো পুরুষের (মানুষ বা দেবতা) দ্বারা রচিত নয় (Not of human origin; authorless)। এটি প্রধানত বেদ-এর ওপর প্রযোজ্য। বেদকে অপৌরুষেয় বলার অর্থ হলো, বেদের জ্ঞান কোনো মানুষের দুর্বলতা বা ভুলের দ্বারা প্রভাবিত নয়। এটি চূড়ান্ত প্রামাণ্য (Ultimate Authority) এবং অভ্রান্ত। বেদকে সৃষ্টি করা হয়নি, বরং ঋষিরা গভীর ধ্যান বা তপস্যার মাধ্যমে সেই জ্ঞানকে সরাসরি দর্শন বা প্রকাশ করেছেন। তাই বেদ হলো শ্রুতি (যা শোনা হয়েছে)।


অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে, "অনাদি ও অপৌরুষেয়" এই দুটি গুণ বেদের অলঙ্ঘনীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। যেহেতু বেদ অনাদি (চিরন্তন) এবং অপৌরুষেয় (মানুষ দ্বারা রচিত নয়), তাই এটি ব্রহ্ম সম্পর্কে যে-জ্ঞান দেয়, তা পরম সত্য এবং মোক্ষলাভের একমাত্র প্রামাণ্য পথ।


প্রত্যক্ষ ও অনুমান—এই দুটি প্রমাণ কেবল ব্যাবহারিক বাস্তবতার (Vyāvahārika Sattā) স্তরে কার্যকর। এগুলি সংসারের ক্রিয়া, দেহ, মন, ইন্দ্রিয় ও জগতের সম্পর্কে জ্ঞান দেয়, কিন্তু আত্মার প্রকৃতি বা পরম সত্যে পৌঁছাতে পারে না। কারণ আত্মা নিজেই সেই আলোক, যা দ্বারা প্রত্যক্ষ বা অনুমান সম্ভব হয়। যেমন চোখ দিয়ে সব কিছু দেখা যায়, কিন্তু চোখ নিজেকে দেখতে পারে না; তেমনি মন ও ইন্দ্রিয়ের দ্বারা আত্মাকে জানা যায় না, কারণ তারা আত্মারই প্রতিফলন।


অন্যদিকে, শ্রুতি-প্রমাণ (Śruti-Pramāṇa)—অর্থাৎ, বেদান্ত-বাক্য বা উপনিষদের বাণী—একমাত্র সেই প্রমাণ যা পরমার্থিক সত্য (Pāramārthika Sattā) প্রকাশ করে। শ্রুতি কোনো যুক্তি নয়, কোনো ইন্দ্রিয়গম্য উপস্থাপনাও নয়; এটি সেই চিরন্তন আলোকরশ্মি, যা মন, ভাষা ও বুদ্ধির সীমা অতিক্রম করে আত্মা ও ব্রহ্মের ঐক্য প্রকাশ করে। যেমন “তৎ ত্বম্ অসি” (Tattvamasi)—“তুমি সেই ব্রহ্ম”—এই মহাবাক্য আমাদের জানায়, যে-চেতনা দ্বারা আমরা সব কিছু জানি, সেই চেতনা ও সর্বব্যাপী ব্রহ্ম এক ও অভিন্ন।


অদ্বৈত বলে, আত্মা-ব্রহ্ম-ঐক্য-জ্ঞান (Ātma-Brahma-Aikya-Jñāna) অর্জনের একমাত্র নির্ভরযোগ্য কর্তৃত্ব হলো শ্রুতি, কারণ শ্রুতি-ই সেই প্রমাণ, যা আমাদের অজ্ঞতার সীমা ভেদ করে নিয়ে যায়। এটি মনকে একটি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করে—নিজের অন্তঃস্থ সত্তার দিকে। প্রত্যক্ষ ও অনুমান যেখানে বহির্বিষয়ের দিকে মনকে প্রবাহিত করে, শ্রুতি সেখানে মনকে অন্তর্মুখী করে—আত্মদর্শনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়।


এভাবে শ্রুতি-প্রমাণ কোনো নতুন জ্ঞান উৎপন্ন করে না, বরং যা সর্বদা বর্তমান—সেই আত্ম-চৈতন্যকে উদ্‌ঘাটন করে। যেমন মেঘ সরে গেলে সূর্যের আলো প্রকাশিত হয়, সূর্য তখনই উদিত হয় না—সে তো সর্বদাই ছিল; কেবল আচ্ছাদন সরে যায়। তেমনি শ্রুতির বাক্য—“অহং ব্রহ্মাস্মি”, “প্রজ্ঞানম্ ব্রহ্ম”, “অয়ম্ আত্মা ব্রহ্ম”—এই সমস্ত মহাবাক্য মনের উপর থাকা অজ্ঞতার মেঘ সরিয়ে দেয়, আর আত্মার দীপ্তি নিজেই প্রকাশিত হয়।


অদ্বৈত বেদান্তের চারটি প্রধান মহাবাক্যের উৎস এবং সংক্ষিপ্ত অর্থ—


১. তৎ ত্বম্ অসি (Tat Tvam Asi)। উৎস: ছান্দোগ্য উপনিষদ (৬.৮.৭)। সংক্ষিপ্ত অর্থ: তুমিই সেই (পরম সত্য বা ব্রহ্ম)। তাৎপর্য: এটি হলো গুরু কর্তৃক শিষ্যকে দেওয়া উপদেশের বাক্য, যা জীবাত্মা ও ব্রহ্মের অভেদত্ব নির্দেশ করে।


২. অহং ব্রহ্মাস্মি (Ahaṁ Brahmāsmi)। উৎস: বৃহদারণ্যক উপনিষদ (১.৪.১০)। সংক্ষিপ্ত অর্থ: আমিই ব্রহ্ম। তাৎপর্য: এটি স্বানুভূতির (মূলত ব্রহ্মজ্ঞান, যা তর্ক, যুক্তি বা পরোক্ষ জ্ঞান নয়, বরং আত্মার নিজের স্বরূপ সম্পর্কে সাক্ষাৎ-অভিজ্ঞতা) ঘোষণা। জীবাত্মা যখন নিজের স্বরূপকে উপলব্ধি করে, তখন সে এই সত্যটি ঘোষণা করে।