অবিদ্যা-বিদ্যা: ৫০



“যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত” অর্থ—হে ভারত (অর্জুন)! যখনই (যদা যদা) ধর্মের হ্রাস বা অধঃপতন (গ্লানিঃ) ঘটে।


“অভ্যুত্থানম্ অধর্মস্য” অর্থ—এবং অধর্মের অভ্যুত্থান বা বৃদ্ধি ঘটে।


“তদাত্মানং সৃজাম্যহম্” অর্থ—তখনই (তদা) আমি নিজেকে সৃষ্টি করি (আত্মানং সৃজামি অহম্) বা অবতার গ্রহণ করি।


এই শ্লোকটিই অবতারবাদের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। এটি দেখায় যে, ঈশ্বর কেবল ব্রহ্মাণ্ডের নিষ্ক্রিয় দ্রষ্টা নন, বরং তিনি সক্রিয়ভাবে জগতের স্থিতিশীলতা (লোকসংগ্রহ বা লোকের হিতার্থে) এবং নৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সময়ে সময়ে পৃথিবীতে শরীরের আশ্রয় গ্রহণ করেন। যখন সমাজে অধর্ম এত শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, সাধারণ নিয়ম দ্বারা তা আর দমন করা যায় না, তখনই ঈশ্বর মানব-রূপে এসে ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এটি মূলত ভক্তদের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি এবং আশ্বাস, যা তাদের প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ধর্মপথে থাকতে অনুপ্রাণিত করে।


আদি শঙ্করাচার্যের ব্রহ্মসূত্র ভাষ্য এবং তাঁর অনুগামীদের টীকাগুলিতে, বিশেষ করে ভগবদ্গীতার অবতার-সংক্রান্ত শ্লোকগুলির (যেমন ৪.৬, ৪.৭) ব্যাখ্যায় পাওয়া যায়, “ঈশ্বরোঽপি স্বমায়া-উপাধিনৈব অবতরতি”, যার অর্থ: “ঈশ্বরও নিজের মায়ার উপাধি সহকারেই অবতরণ করেন।” অর্থাৎ, ঈশ্বর নিজে পরিবর্তিত হন না; তাঁর মায়া-উপাধি দ্বারা রূপ প্রকাশ করেন। তাই অবতার কেবল মায়িক প্রকাশ—লোকসংগ্রহ ও ধর্মসংস্থাপনার উদ্দেশ্যে।


এই সূত্রটি অবতারবাদের রহস্য এবং ব্রহ্মের নির্লিপ্ততা—এই দুইয়ের মধ্যেকার সমন্বয় সাধন করে। অদ্বৈত বেদান্ত অনুসারে, ব্রহ্ম হলেন নির্গুণ (গুণহীন), অপরিবর্তনশীল এবং উপাধিহীন। ব্রহ্ম সরাসরি জন্মগ্রহণ করতে বা পরিবর্তিত হতে পারেন না। এখানে পুরো ভূমিকাটিই মায়ার (উপাধির)। ঈশ্বর নিজের মায়া-উপাধি (স্বমায়া) ব্যবহার করেই স্বেচ্ছায় অবতরণ করেন। ঈশ্বর বা সগুণ ব্রহ্ম (যিনি জগৎ পরিচালনা করেন) হলেন মায়ার নিয়ন্তা। যখন তিনি অবতার গ্রহণ করেন, তখন তিনি সাধারণ জীবের মতো কর্মফলের বন্ধনে জন্ম নেন না।


তাঁর জন্ম কর্মের বাধ্যবাধকতার ফল নয়, বরং তাঁর নিজের ইচ্ছার ফল। তিনি দেহ ধারণ করলেও সেই দেহটি তাঁর পক্ষে বাস্তব বা বন্ধন সৃষ্টিকারী হয় না; এটি তাঁর মায়াশক্তি দ্বারা নির্মিত একটি রূপ মাত্র। এই সূত্রটি প্রমাণ করে যে, অবতার-রূপে পৃথিবীতে এসেও ঈশ্বর ব্রহ্মস্বরূপেই থাকেন। তিনি কর্ম করেন, কিন্তু সেই কর্ম তাকে বাঁধতে পারে না, যেমন গীতার ৪.১৪ শ্লোকে বলা হয়েছে: "ন মাং কর্মাণি লিম্পন্তি"।


আধুনিক বেদান্তিক স্বামী ব্রহ্মানন্দ এবং রমণ মহর্ষি, উভয়ই অবতারের ধারণাকে গভীর আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে অনেক বেশি সূক্ষ্ম। স্বামী ব্রহ্মানন্দ বলেছেন, "The Avatāra is not God becoming man; it is God revealing Himself through a transparent medium." এই উক্তিটি অবতারের দৈব প্রকৃতিকে তুলে ধরে, যেখানে ঈশ্বর মানবরূপে অবতীর্ণ হন না, বরং তিনি এমন এক স্বচ্ছ মাধ্যমের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেন, যা তাঁর ঐশ্বরিক গুণাবলী এবং জ্ঞানকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করতে সক্ষম। এই স্বচ্ছ মাধ্যমটি কোনও সাধারণ ব্যক্তি নয়, বরং এমন এক সত্তা, যিনি জাগতিক সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত এবং সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের সঙ্গে একীভূত। এটি অবতারের কর্মের ঐশ্বরিক উদ্দেশ্যকে প্রকাশ করে—মানবজাতিকে পথ দেখানো এবং আধ্যাত্মিক সত্যের উন্মোচন করা।


অন্যদিকে, রমণ মহর্ষি অবতারকে আরও অভ্যন্তরীণ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। তিনি বলেন, "The Avatāra is not different from the Self within you; to see Him outside is to see your own Self reflected through divine imagination." অর্থাৎ, অবতার আমাদের নিজেদের আত্মারই এক প্রতিফলন। এই উক্তিটি আত্ম-অনুসন্ধান এবং আত্ম-উপলব্ধির গুরুত্বকে তুলে ধরে। রমণ মহর্ষি বোঝাতে চেয়েছেন যে, অবতারকে বাইরে খোঁজা মানে নিজের ভেতরের ঐশ্বরিক সত্তাকেই বাইরের রূপে দেখা। এটি এক ঐশ্বরিক কল্পনার মাধ্যমে ঘটে, যেখানে অজ্ঞ ব্যক্তিরা এই বাইরের রূপকে ঈশ্বর বলে মনে করে এবং এর মাধ্যমে জ্ঞানের পথে ধাবিত হয়। এই ধারণাটি অদ্বৈত বেদান্তের মূলনীতিকে সমর্থন করে, যেখানে জীবাত্মা এবং পরমাত্মা মূলত অভিন্ন। অবতারের কাজ হলো এই অভ্যন্তরীণ সত্যকে বাহ্যিক রূপে প্রকাশ করা, যাতে সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারে এবং নিজেদের ভেতরের ঐশ্বরিক সত্তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে উৎসাহিত হয়।


অবতার হলো তাই নিজের আত্মারই এক প্রতিফলন, যা অজ্ঞদের কাছে ঈশ্বররূপে প্রকাশিত হয়ে জ্ঞানের পথ দেখায়। অবতারের আগমন শুধু কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য নয়, বরং মানবজাতিকে তাদের প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে এবং আত্মিক মুক্তি অর্জনে সহায়তা করার জন্য। অবতাররা এমন এক সেতু হিসেবে কাজ করেন, যা মানবজাতিকে জাগতিক মায়া থেকে মুক্ত করে পরম সত্যের দিকে পরিচালিত করে। তাঁদের জীবন ও শিক্ষা চিরকাল মানবজাতিকে আলোকিত করে রাখে এবং আধ্যাত্মিক উপলব্ধির দিকে অনুপ্রেরণা জোগায়।


দেবতা অদ্বৈতের দৃষ্টিতে কোনো স্বাধীন সত্তা নয়; তাঁরা ব্রহ্মের মায়াশক্তির বিভিন্ন কার্যরূপ। মায়া যখন ব্রহ্মকে বহু-রূপে প্রতীয়মান করে, তখনই ‘দেবতা’ ধারণা জন্ম নেয়। ঋগ্‌বেদে বলা হয়েছে, “একং সৎ বিপ্রা বহুধা বদন্তি” (ঋগ্‌বেদ, ১.১৬৪.৪৬)—“একই সত্য, কিন্তু পণ্ডিতগণ (বিপ্রগণ) তাকে বহুভাবে বর্ণনা করেন”, যা হিন্দুধর্মের সবচেয়ে প্রাচীন এবং অদ্বৈতবাদী ভাবনার অন্যতম ভিত্তি। এটি ঋগ্‌বেদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র, যা ধর্মীয় সহনশীলতা এবং পরম সত্তার একত্বকে ঘোষণা করে।


মন্ত্রটি ভারতীয় দর্শনে ব্রহ্মতত্ত্বের দুটি প্রধান নীতিকে প্রতিষ্ঠা করে:


“একম্ সৎ (Ekam Sat)” অর্থ—শুধু একটিই পরম সত্য (সৎ) বা অস্তিত্ব বিদ্যমান। এটিই হলো সমস্ত বৈচিত্র্যের মূলে থাকা একক আধ্যাত্মিক সত্তা। এই অংশটিই অদ্বৈত বেদান্তের মতো দর্শনের ভিত্তি, যা ঘোষণা করে যে, জগৎ বহু মনে হলেও, তার মূল স্বরূপ হলো এক ও অদ্বিতীয় ব্রহ্ম।


“বিপ্রা বহুধা বদন্তি (Viprā Bahudhā Vadanti)” অর্থ—পণ্ডিতগণ (বিপ্রাঃ, অর্থাৎ জ্ঞানী ব্যক্তিরা) সেই একই সত্যকে বহুভাবে (বহুধা) বা বিভিন্ন নামে বর্ণনা করেন। এই অংশে বেদ ধর্মীয় সহনশীলতার শিক্ষা দিয়েছেন সেই হাজার হাজার বছর আগেই। এই অংশটি নিশ্চিত করে যে, বিভিন্ন দেব-দেবী, উপাসনা পদ্ধতি বা দার্শনিক মতবাদ—যেমন ইন্দ্র, মিত্র, বরুণ, অগ্নি—এরা সবাই সেই একই পরম সত্তার ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ বা নাম মাত্র। শ্লোকটি হলো পরম সত্তার একত্বে বিশ্বাস এবং বিভিন্ন ধর্মীয় মতামতের প্রতি সহনশীলতার (Religious Pluralism) আদি ঘোষণা।


সত্য এক, কিন্তু মানুষ নানা-নামে তাকে অভিহিত করে। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র, সরস্বতী, লক্ষ্মী—সবই সেই এক চেতনার বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ। শঙ্কর বলেন, “দেবতা উপাসনা চিত্ত-শুদ্ধ্যর্থম্, ন তু ব্রহ্মজ্ঞানোৎপত্ত্যর্থম্”, যার অর্থ: “দেবতার উপাসনা হলো চিত্তশুদ্ধির জন্য, ব্রহ্মজ্ঞান লাভের জন্য নয়।”—অর্থাৎ, দেবতার উপাসনা মুক্তি দেয় না, কিন্তু মনকে পরিশুদ্ধ করে, যাতে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করা যায়।


এটি অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের একটি সিদ্ধান্তমূলক প্রবচন, যা উপাসনা (ভক্তি বা পূজা) এবং জ্ঞান—এই দুটির পৃথক উদ্দেশ্যকে ব্যাখ্যা করে। এই নীতিটি আদি শঙ্করাচার্যের দর্শনের ভিত্তি। তিনি তাঁর ভাষ্যগুলিতে প্রমাণ করেছেন যে, উপাসনা (কর্মের অন্তর্ভুক্ত) এবং জ্ঞান (উপলব্ধি) দুটি ভিন্ন ফল দেয়।


সূত্রটি অদ্বৈত বেদান্তের সাধন-পদ্ধতির একটি মৌলিক বিভাজনকে তুলে ধরে:


উপাসনার উদ্দেশ্য হলো চিত্তশুদ্ধি (Citta-Śuddhyartham)। উপাসনা (কর্ম) তথা দেব-দেবীর পূজা, ভজন বা ভক্তি হলো কর্মের (সগুণ উপাসনা) অংশ। কর্মের ফল জাগতিক হলেও, যখন তা নিষ্কামভাবে করা হয়, তখন এটি মনের ময়লা (রাগ, দ্বেষ, কামনা) দূর করে। উপাসনার ফল হলো চিত্তশুদ্ধি বা মনের একাগ্রতা। এই শুদ্ধ মনই সাধন-চতুষ্টয় অর্জনে এবং ব্রহ্মবিচারে সাহায্য করে।


উপাসনা ব্রহ্মজ্ঞানের মাধ্যম নয়। জ্ঞানই মোক্ষের প্রত্যক্ষ কারণ। অদ্বৈত বেদান্ত অনুযায়ী, ব্রহ্মজ্ঞান হলো অজ্ঞানের অপসারণ, যা কেবল বিবেক বা বিচার দ্বারা সম্ভব। জ্ঞান হলো বস্তুর স্বরূপকে জানা। উপাসনা (কর্ম) এবং জ্ঞান দুটি ভিন্ন কাজ। উপাসনা মনকে তৈরি করে, কিন্তু জ্ঞান সরাসরি মোক্ষ দেয়। যেমন, রাস্তা পরিষ্কার করলে আলো ভালোভাবে দেখা যায় (উপাসনা), কিন্তু আলো নিজেই অন্ধকার দূর করে (জ্ঞান)। তাই এখানে বলা হচ্ছে, উপাসনা হলো ব্রহ্মজ্ঞান লাভের পথে একটি সহায়ক কারণ মাত্র, কিন্তু এটি প্রত্যক্ষ কারণ নয়। প্রত্যক্ষ কারণ হলো জ্ঞান।


স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, “Each god is but a concrete representation of the one Infinite Existence. Worship any and you worship the Whole.” রামকৃষ্ণ পরমহংস এই তত্ত্বকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন। তিনি বলতেন, “যেমন এক জল বিভিন্ন পাত্রে ভরে নানা রঙে প্রতীয়মান হয়, তেমনি এক ঈশ্বরই নানা নামে, নানা রূপে উপাসিত।” তাই দেবতা হলেন ব্রহ্মের শক্তির প্রতিফলন, যাঁদের মাধ্যমে সাধক চিত্তশুদ্ধি অর্জন করে ধীরে ধীরে অদ্বৈত জ্ঞানের দিকে অগ্রসর হয়।


জ্ঞানী হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি অবিদ্যা সম্পূর্ণরূপে দূর করেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন, “অহম্ ব্রহ্মাস্মি” (বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ১.৪.১০)—“আমিই ব্রহ্ম।” তাঁর কাছে আর কোনো কর্তা বা ভোক্তার ধারণা থাকে না।


৭.১৮ নং শ্লোকটি ভগবদ্গীতার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শ্লোক, যেখানে শ্রীকৃষ্ণ চার প্রকার ভক্তের কথা বলার পর জ্ঞানীর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছেন:

উদারঃ সর্ব এবৈতে জ্ঞানী ত্ব আত্মৈব মে মতম্।

আস্থিতঃ স হি যুক্তাত্মা মামেবানুত্তমাং গতিম্।।


সরল ভাবার্থ:

“উদারঃ সর্ব এবৈতে” অর্থ—অন্যান্য সকল ভক্তই (যেমন, আর্ত, জিজ্ঞাসু, অর্থার্থী) নিঃসন্দেহে উদার বা মহৎ।

“জ্ঞানী ত্ব আত্মৈব মে মতম্” অর্থ—কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তি তো আমার মতে স্বয়ং আত্মাই (অর্থাৎ, আমার স্বরূপের সঙ্গে অভিন্ন)।

“আস্থিতঃ স হি যুক্তাত্মা মামেবানুত্তমাং গতিম্” অর্থ—কারণ তিনি যোগযুক্ত মন (যুক্তাত্মা) নিয়ে আমাকে (ঈশ্বরকে) শ্রেষ্ঠ গতি (অনুত্তমাং গতিম্) রূপে আশ্রয় করেছেন।


এই শ্লোকটি জ্ঞানযোগের চরম মহিমা প্রকাশ করে। শ্রীকৃষ্ণ সরাসরি ঘোষণা করেন যে, যিনি জ্ঞানী—অর্থাৎ, যিনি ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেছেন—তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে অভিন্ন। অন্যান্য ভক্ত ঈশ্বরের উপাসনা করেন, কিন্তু জ্ঞানী ব্যক্তি ঈশ্বরকে নিজের স্বরূপ বলেই জানেন। জ্ঞানী ব্যক্তি জানেন যে, ঈশ্বরই তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং স্বরূপ। তাই তিনি ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর ঐক্য বা অভেদের ভিত্তিতে স্থিত থাকেন। এই কারণে, জ্ঞানীকে শ্রেষ্ঠ ভক্ত বা ঈশ্বরের প্রিয়তম বলা হয়, কারণ তিনি ঈশ্বরকে জানেন, যাঁর কাছ থেকে অন্য ভক্তরা কিছু কামনা করেন।


জ্ঞানী কর্ম করেন, কিন্তু তাতে লিপ্ত হন না। গীতায় (৫.৭) আছে—

যোগযুক্তো বিশুদ্ধাত্মা বিজিতাত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ ।

সর্বভূতাত্মভূতাত্মা কুর্বন্নপি ন লিপ্যতে।।


“যোগযুক্তো বিশুদ্ধাত্মা বিজিতাত্মা জিতেন্দ্রিয়ঃ” অর্থ—যিনি যোগে যুক্ত (যোগযুক্তঃ), যাঁর আত্মা বিশুদ্ধ (বিশুদ্ধাত্মা), যিনি মনকে জয় করেছেন (বিজিতাত্মা), এবং যিনি ইন্দ্রিয়সমূহকেও জয় করেছেন (জিতেন্দ্রিয়ঃ)।


“সর্বভূতাত্মভূতাত্মা কুর্বন্নপি ন লিপ্যতে” অর্থ—যিনি সকল প্রাণীর আত্মা রূপে নিজের আত্মাকে দেখেন (সর্বভূতাত্মভূতাত্মা), সেই ব্যক্তি কর্ম করেও (কুর্বন্নপি) লিপ্ত হন না (ন লিপ্যতে)।


শ্লোকটি জ্ঞানী কর্মযোগীর চূড়ান্ত বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরে। শ্লোকের প্রথম অংশটি সাধন-চতুষ্টয় এবং চিত্তশুদ্ধি-কে নির্দেশ করে। যোগযুক্ত, বিশুদ্ধাত্মা, বিজিতাত্মা, এবং জিতেন্দ্রিয়—এই চারটি গুণই প্রমাণ করে যে, সাধক জ্ঞান লাভের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। "সর্বভূতাত্মভূতাত্মা"—এই অংশটি অদ্বৈত জ্ঞানকে প্রকাশ করে। অর্থাৎ, তিনি উপলব্ধি করেছেন যে, তাঁর ব্যক্তিগত আত্মা (জীবাত্মা) এবং সকল প্রাণীর আত্মা (পরমাত্মা) একই সত্তা।